সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
21-December,2022 - Wednesday ✍️ By- অমর চক্রবর্তী 344

শূন্য আমি পূর্ণ আমি/৮

শূন্য আমি পূর্ণ আমি
পর্ব : ৮
অমর চক্রবর্তী
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
                                    
পথের শেষ কোথায়? 

'পথের শেষ কোথায়, শেষ কোথায়, কী আছে শেষে। এত কামনা এত সাধনা কোথায় মেশে?'   

দ্যাও অর্থাৎ দেবতা। দেওচড়াই অর্থাৎ দেবতারা এখানে আছেন আসেন চড়ে বেড়ান। ওপার বাংলার মানুষ অবশ্য দ্যাও বলতে অপদেবতা বুঝতেন। মা একবার গল্প শুনিয়েছিলেন "তোর মাসীকে দ্যাও অর্থাৎ অপদেবতা ধরেছিল।" পরে বড় হয়ে বুঝেছি অপমানুষ ধরেছিল। মা বলেছিলেন তোর ছোট মাসী পরমা সুন্দরী ছিলেন। পরমা সুন্দরী! সে তো রূপকথার গল্পে পড়েছি। সে ওপার বাংলার কথা।
সেইরাতে অবশ্য আমি অপদেবতার দেখা পাইনি। বরং হাওয়ার শনশন নদীর গর্জন আমাকে নিয়ে যায় কোন অজানায়। কবি যেমন বলেছেন, 'হাল-ভাঙা, পাল-ছেঁড়া ব্যথা চলেছে নিরুদ্দেশে।' 
শুরু হল আমার কবিতার বইয়ের প্রস্তুতি 'বসন্ত এখনো বৃষ্টি পড়ছে'। 
পরদিন প্রাতে আর একটা টেন্ট। শতাধিক মাটি কাটার লেবার এসে গেল মালদহ থেকে। সরেজমিনে গেলাম এবং বিস্ময়ে দেখলাম।ওরা পাহাড়প্রমাণ ভাতের চূড়ায় রেখেছে তেল আর কাঁচা লঙ্কা। খেয়ে মাটি কাটতে নেমে পড়বে। কি অপূর্ব শৈলি এই মাটিকাটা।প্রান্ত থেকে মধ্যে প্রবেশ যেন অভিমন্যু প্রবেশ করছে চক্রব্যুহে। শেষে শিবলিঙ্গের মতো মাটির পাহাড়। আমি দেখি অন্য শিল্পকলা।এর মধ্যে এসে গেল আমার ওভারশিয়র।এসেই খাবারদাবারের খোঁজ নিলেন। মুরগি এনেছি কিনা! আমার কন্ট্রাকটর ব্যবস্থা রাখেননি আমাকে কথা শুনতে হল! যেন সবটা আমারই দোষ। শুরু হল বেসরকারি কর্মের দুর্দশার অভিজ্ঞতা। 
শুরু হল বাঁধের মাপজোক। কলা বিভাগের ছাত্র জানলাম থিয়োলাইট সমতল অসমতল আরো কত জ্যামিতিক বিষয়। এবার যেতে হবে বক্সাফোর্ট বালি পাথরের টিপি আনতে।একসকালে বৃদ্ধ এসিস্ট্যান্টকে নিয়ে রওনা হলাম বক্সাফোর্টের উদ্দেশ্যে। আমার পকেটে এগারো শ' টাকা। চল্লিশ বছরের বেশি হবে।বাস জার্ণি সান্তালবাড়ি পর্যন্ত! তারপর হেঁটে উঠতে হবে ফোর্ট পর্যন্ত। বুড়ো বিড়ি টানছেন আর কাশছেন। হাঁটছি হাঁটছি পথের শেষ পাচ্ছি না! মাঝে মাঝে এক দুজন নেপালি ছেলে দেখছি গোরু কিম্বা ছাগল চড়াচ্ছে। ছাগলের গলার ঘন্টা বাজছে আর চমকে উঠে দেখছি ওদের হাতে কুকড়ি। অজান্তে পকেটে হাত চলে যায়। ওরা আমাদের দেখে আবার নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সঙ্গী বললেন ওরা আমাকে চেনে। চিনতে পারে কারণ উনি কন্ট্রাকটরের পুরোনো ও স্থায়ী কর্মী। শুনে আরো ভয় বেড়ে গেল! তবে তো ওরা জানে আমাদের কাছে কি আছে! উনি বললেন "ভয় পেয়োনা, ওরা খুব ভালো।" উনি একজনকে ডাকলেন দাজু বলে। কি বললেন জানি না শুধু  ছ ছ বুঝলাম। পরে এই ভাষা কিছুটা আয়ত্ত করেছিলাম ওদলাবাড়ি হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে পড়াতে গিয়ে। ওখানে বেশ কিছু নেপালি ছাত্রছাত্রী পেয়েছিলাম। বক্সায় পি ডাব্লু ডি অফিস একেবারে ওপরে। দেখে নিলাম নেতাজিকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল যে কারাগারে। কিন্তু তখন তো ইতিহাসের এই পৃষ্ঠার প্রতি আগ্রহের জন্য হয়নি! তাই কোনো তথ্য সংগ্রহ করা হয়নি। নেই ক্যামেরা নেই গাইড। আহা এখনকার মতো যদি স্মার্ট ফোন থাকত! ওসব চিন্তার প্রেক্ষিতই ছিল না। অনুসন্ধিৎসা অপ্রাপ্তমনস্ক, বয়স তখনো বীরোচিত নয় ফলে সন্ধের আগে নেমে যাবার উদ্যোগ নিলাম। এসে শুনলাম কন্ট্রাকটর এসে কাজ এগোয়নি বলে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। দোষ‌ ওভারশিয়রের নয় আমার!

আমার সামনে চারটে চরিত্র এল। লোভী, কর্মনিষ্ঠ, অসহায় আর অল্পে সন্তুষ্ট। এরাই তো গল্পের চরিত্র। 'সহস্র বিস্মৃতিরাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি/তারই দু'চারিটি অশ্রুজল।' লিখতে হবে এদের কথা। কিন্তু সময় কোথায়! রাত জেগে লন্ঠনের আলোয় কবিতা লেখা যায়, কিন্তু গল্প! না সম্ভব নয়! মস্তিষ্কে রয়ে গেল! একমাসের ওপরে বাড়ি ছেড়ে এসেছি। বুকের ভেতর শূন্যতা। মায়ের কথা মনে পড়ে। সারাদিন না খেয়ে থাকে। সারাদিন কাজ। মুখে হাসি আর পান গুন্ডি।কি খুশি কি খুশি! মায়ের কাছে যেতে ইচ্ছে করে। ভগবান শুনলেন সেকথা। আমাকে বাড়ি ফিরতে হল একবারে। প্রতিদিন ঝোড়ো হাওয়া নদী বালি আর বাঁধের ধুলো আমার নাকেমুখে। ভয়়ংকর কাশি। ছুটি পেলাম কিন্তু আর সেখানে ফেরা হল না।সেই ব্রঙ্কাইটিস আজও আমাকে ভুগিয়ে চলছে! আসবার সময় সেই মানুষটির ভালোবাসার মুখটি হৃদয়ে গেঁথে নিয়ে এলাম।                                  কিন্তু আমাকে বসে থাকলে হবে না! কাজ চাই। পেয়ে গেলাম এক শহরের নামী ওষুধের দোকানে। আমার কাজ হোলসেলের স্টকের হিসেব রাখা। দশটা ছটা কাজ। ফেরার পথে কোনো কোনো দোকানে ইনভয়েস পৌঁছানো। বেশ চলছিল। হিসেবের পর অনেকটা সময় পাওয়া যেত। ব্যস্ গল্প লেখা। কিন্তু এখানেও টেকা মুশকিল হল। বেসরকারি কাজ হলেই মালিক চাকর ভাব সাদা-কালোয় ছবি হতে থাকে। এখানে থেকে বেরিয়ে এলাম। ততদিনে বি.এ পাশ হয়ে গেল। এবার!              
না আর চাকরবাকর নয়। অন্য পথ। টিউশন আর লেখা। এই পথে যেতে একটা ভালো টিউশন পেলাম সেও পিতৃদেবের কল্যাণে । পুরোহিত হিসেবেও বাবার নাম এই শহরে উজ্জ্বল রয়েছে। আটচল্লিশ বছর তিনি মিলন সংঘে দুর্গাপুজো করেছেন। বাবার খুব কাছের, দেশের মানুষ আর এক মেডিকেল স্টোর্সের মালিক।  শ্রদ্ধা ভালোবাসা কি এখানে জেনেছি। খুব মনে পড়ে সঞ্চিতাকে। আমার এই  ছাত্রী বলেছিল "কাকু তোমার তো ঘড়ি নেই অসুবিধে হয় এই আমারটা নাও।"  টিউশন বাড়তে শুরু করল। সকাল বিকাল। আমাদের একটা কফিহাউস-এর মতো আড্ডা আর একটা টিউশন সেরে সেখানে আধাকাপ চা এক সিগারেটে ভাগাভাগি টান দিয়ে আবার দৌড়। এই দোকানটা নতুন নাম সুইট কর্ণার। পাশে আরো দুটো নামী দোকান। আমাদের সিনিয়ররা বসতেন বি.টি.এস বা বাসন্তী টি স্টল। আমরা ত্রিদিব ভট্টাচার্য, সন্তোষ সেন, আশিস নাহা আরো যারা লেখা আর সংস্কৃতিতে আগ্রহী। ত্রিদিবদা ভালো আবৃত্তি করতেন। পরে টিভিতে সাংবাদিকতা করেছেন। আরো লেখক বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় হল। আমাদের শহরে তখন ত্রিবৃত্ত পত্রিকাকে ঘিরে একটা সাহিত্য পরিমন্ডল গড়ে উঠেছে। সব বিখ্যাত কবি গল্পকার। আমি তখনো এর বাইরে। কবিতা নিয়ে যাচ্ছি কোচবিহার সমাচার, নাগরিক, দেশবার্তা এই পত্রিকার দপ্তরে। মন ভরছে না । এবার আমরা ক'জন বন্ধু মিলে একটা পত্রিকা করার প্রস্তুতি নিলাম। স্বপন রায়, চিন্ময় রায়,শু ভ্রা চক্রবর্তী আমি মিলে বের করলাম একটা অন্যরকমের পত্রিকা 'হালফিল'। দুটো সংখ্যা তারপর অকাল প্রয়াণ। এদিকে কবি বন্ধু সংখ্যা বাড়ছে। এবং জন্ম নিচ্ছে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি। বাড়ছে  টিউশনির পয়সা দিয়ে বই কেনার আগ্রহ। সস্তা বই পাওয়া যায় রুশ পাবলিকেশনের। মার্ক্স থেকো তলস্তয়। পুরোপুরি বামপন্থী মতে স্ব-দীক্ষিত হয়ে গেলাম।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri