বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/৮
বাংড়ি তিতি ও হাউড়ি শেষে
পর্ব-আট
মিশা ঘোষাল
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
টোটোপাড়ায় মারুয়ার চাষ
টোটোপাড়ায়
'মারুয়া' চাষের মরসুম হল জুলাই ও অগাস্ট মাস। টোটো ভাষায় 'মারুয়া' শব্দটির
প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। 'মারুয়া' হল এক প্রকার ক্ষুদ্র আকৃতির দানা শস্য।
এই মারুয়া বা মিলেট চাষের জন্য টোটোরা পাহাড়ের ঢালগুলি বেছে নেয়।
যেখানে প্রচন্ড বৃষ্টিপাতের পরও জল দাঁড়ায় না। ভূটান পাহাড়ের পাদদেশে এরকম
ডলোমাইট যুক্ত বালি ও পাথরের মাটিকে মারুয়া চাষের উপযোগী করে তোলা হয়।
টোটোপাড়ার মাটি এমনিতেই অনেক খনিজ পদার্থে (minerals) সমৃদ্ধ ও
উদ্ভিজ্জ জৈব সারে (bio-organic soil) ভরপুর। তাই এখানে মারুয়া বা মিলেট
চাষ একটি সহজ কৃষিজ উৎপাদন।
ধান গাছের চারার
মতো প্রথমে এই মারুয়ার চারা উৎপাদন করে নিতে হয়। মারুয়ার চারা একটু বড় হলে
ধানের চারা রোপনের মতো করেই (রোয়া গাড়া) এই মারুয়ার চারাগাছ রোপন করা হয়।
আগেই কোদাল চালিয়ে মারুয়া চাষের উপযোগী জমি তৈরি করে নেওয়া হয়। টোটোপাড়ার
জমি মিলেট বা মারুয়া চাষের উপযুক্ত।
টোটো মেয়ে ও
বৌদের মারুয়া চাষে অংশগ্রহণ ও মারুয়ার চারা রোপন করতে দেখা যায়। মারুয়ার
চারাগাছ বড় হয়ে গেলে তাতে ফুল আসে।এতে সময় লাগে প্রায় চার মাস। শীতকালে
মারুয়ার ফুল যখন ফোটে টোটোপাড়ার প্রকৃতি সেই সময় অসাধারণ সুন্দর লাগে দেখতে
।
মারুয়া একটি বিরুৎ শ্রেণির উদ্ভিদ, অর্থাৎ
মারুয়ার গাছ কাষ্ঠল হয় না। মারুয়া গাছে ফুল আসে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে
এবং সেই ফুল থেকে ফল ও তারপর মারুয়ার শস্য দানায় পরিণত হতে প্রায় তিন মাস
সময় লাগে।
ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারিতে মারুয়ার
শস্যদানা পরিপক্বতা লাভ করলে ক্ষেত থেকে মারুয়ার গাছ সহ এই ফসল তুলে
নেওয়া হয়। তারপর মাড়াই করে মারুয়ার দানা শস্য টোটোদের ঘরে তোলার
ব্যবস্থা হয়।
এই মারুয়া থেকেই টোটোদের "ইউ" (মদ্য) প্রস্তুত করা হয়। এই 'ইউ' টোটোদের একটি বহুল ব্যবহৃত পবিত্র পানীয়।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴