সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
35.চা-ডুবুরী-৩৫/সুকান্ত নাহা

35.চা-ডুবুরী-৩৫/সুকান্ত নাহা

34.চা-ডুবুরী-৩৪/সুকান্ত নাহা

34.চা-ডুবুরী-৩৪/সুকান্ত নাহা

33.চা-ডুবুরী-৩৩/সুকান্ত নাহা

33.চা-ডুবুরী-৩৩/সুকান্ত নাহা

32.চা-ডুবুরী-৩২/সুকান্ত নাহা

32.চা-ডুবুরী-৩২/সুকান্ত নাহা

31.চা-ডুবুরী-৩১/সুকান্ত নাহা

31.চা-ডুবুরী-৩১/সুকান্ত নাহা

30.চা-ডুবুরী-৩০/সুকান্ত নাহা

30.চা-ডুবুরী-৩০/সুকান্ত নাহা

29.চা-ডুবুরী-২৯/সুকান্ত নাহা

29.চা-ডুবুরী-২৯/সুকান্ত নাহা

28.চা-ডুবুরী-২৮/সুকান্ত নাহা

28.চা-ডুবুরী-২৮/সুকান্ত নাহা

27.চা-ডুবুরী-২৭/সুকান্ত নাহা

27.চা-ডুবুরী-২৭/সুকান্ত নাহা

26.চা-ডুবুরী-২৬/সুকান্ত নাহা

26.চা-ডুবুরী-২৬/সুকান্ত নাহা

25.চা-ডুবুরী-২৫/সুকান্ত নাহা

25.চা-ডুবুরী-২৫/সুকান্ত নাহা

24.চা-ডুবুরী-২৪/সুকান্ত নাহা

24.চা-ডুবুরী-২৪/সুকান্ত নাহা

23.চা-ডুবুরী-২৩/সুকান্ত নাহা

23.চা-ডুবুরী-২৩/সুকান্ত নাহা

22.চা-ডুবুরী-২২/সুকান্ত নাহা

22.চা-ডুবুরী-২২/সুকান্ত নাহা

21.চা-ডুবুরী-২১/সুকান্ত নাহা

21.চা-ডুবুরী-২১/সুকান্ত নাহা

20.চা-ডুবুরী-২০/সুকান্ত নাহা

20.চা-ডুবুরী-২০/সুকান্ত নাহা

19.চা-ডুবুরী-১৯/সুকান্ত নাহা

19.চা-ডুবুরী-১৯/সুকান্ত নাহা

18.চা-ডুবুরী-১৮/সুকান্ত নাহা

18.চা-ডুবুরী-১৮/সুকান্ত নাহা

17.চা-ডুবুরী-১৭/সুকান্ত নাহা

17.চা-ডুবুরী-১৭/সুকান্ত নাহা

16.চা-ডুবুরী-১৬/সুকান্ত নাহা

16.চা-ডুবুরী-১৬/সুকান্ত নাহা

15.চা-ডুবুরী-১৫/সুকান্ত নাহা

15.চা-ডুবুরী-১৫/সুকান্ত নাহা

14.চা-ডুবুরী-১৪/সুকান্ত নাহা

14.চা-ডুবুরী-১৪/সুকান্ত নাহা

13.চা-ডুবুরী-১৩/সুকান্ত নাহা

13.চা-ডুবুরী-১৩/সুকান্ত নাহা

12.চা-ডুবুরী-১২/সুকান্ত নাহা

12.চা-ডুবুরী-১২/সুকান্ত নাহা

11.চা-ডুবুরী-১১/সুকান্ত নাহা

11.চা-ডুবুরী-১১/সুকান্ত নাহা

10.চা-ডুবুরি-১০/সুকান্ত নাহা

10.চা-ডুবুরি-১০/সুকান্ত নাহা

9.চা-ডুবুরি-৯/সুকান্ত নাহা

9.চা-ডুবুরি-৯/সুকান্ত নাহা

8.চা-ডুবুরি-৮/সুকান্ত নাহা

8.চা-ডুবুরি-৮/সুকান্ত নাহা

7.চা-ডুবুরি-৭/সুকান্ত নাহা

7.চা-ডুবুরি-৭/সুকান্ত নাহা

6.চা-ডুবুরি-৬/সুকান্ত নাহা

6.চা-ডুবুরি-৬/সুকান্ত নাহা

5.চা-ডুবুরি-৫/সুকান্ত নাহা

5.চা-ডুবুরি-৫/সুকান্ত নাহা

4.চা-ডুবুরি-৪/সুকান্ত নাহা

4.চা-ডুবুরি-৪/সুকান্ত নাহা

3.চা-ডুবুরি-৩/সুকান্ত নাহা

3.চা-ডুবুরি-৩/সুকান্ত নাহা

2.চা-ডুবুরি-২/সুকান্ত নাহা

2.চা-ডুবুরি-২/সুকান্ত নাহা

1.চা-ডুবুরি-১/সুকান্ত নাহা

1.চা-ডুবুরি-১/সুকান্ত নাহা

06-December,2022 - Tuesday ✍️ By- সুকান্ত নাহা 415

চা-ডুবুরি-৮/সুকান্ত নাহা

চা-ডুবুরি : পর্ব-৮
সুকান্ত নাহা
^^^^^^^^^^^^^^^^
                     
বাতাসে যুদ্ধের আঁচ

' সন ১৯৪৪ । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখন চুড়ান্ত পর্যায়ে।সারা পৃথিবী জুড়ে অস্থিরতা। সেই অস্থিরতার আঁচ কমবেশি ডুয়ার্সের চা-বাগান অঞ্চলেও লেগেছিল। যুদ্ধের আবহে এদিকে আবার দেশজুড়ে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন মহাত্মা গান্ধী। কংগ্রেসের তাবড় নেতাদের জেলে পুরেছে ব্রিটিশ সরকার। পুনের আগা খাঁ প্যালেসে বন্দী মহাত্মা দিনের পর দিন অনশনে বসেছেন। তার মুক্তি র জন্য দেশজুড়ে মানুষ উত্তাল। অন্যদিকে একবছর আগে ১৯৪৩ এ  ঘটে যাওয়া দুর্ভিক্ষের আগুনে তখনও পুড়ে চলেছে বাংলা। যুদ্ধের বাজারে মাথা চাড়া দিয়েছে কালোবাজারি। দেশের খাদ্যশস্য সব পাচার হয়ে যাচ্ছে ব্রিটিশ ওয়ার-ফ্রন্টের সৈন্যবাহিনীর জন্য। দেশে অন্নসংকট ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। চালের অন্যতম রপ্তানিকারী দেশ বার্মার পতন চালসংকট কে আরো তীব্রতর করে তুলেছে। লন্ডন থেকে খাদশস্য পাঠানোর জন্য আবেদন করেছিলেন  ভাইসরয়। কিন্তু সেই আবেদন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল কানে তুললেন না। দুর্ভিক্ষ সামাল দিতেও কোনও পদক্ষেপও গ্রহণ করলেন না। কলকাতার রাস্তায় না খেতে পেয়ে লোক মারা যেতে লাগলো। হিসেব মতো প্রায় তিন লক্ষ মানুষ মারা যায় সেই দুর্ভিক্ষে। সেই ছবি আমি দেখেছিলাম খবরের কাগজে। এ প্রসঙ্গে বলি, সেসময় চা-বাগানের ব্রিটিশ সাহেবদের জন্য কিছু ইংরেজি খবরের কাগজ আসতো  লন্ডন থেকে। যেগুলো জাহাজে করে কলকাতায় পৌঁছতে লাগত একুশ দিন। সেখান থেকে বাগানে আসতে আরো দু'তিন দিন। অবশ্য সে কাগজে যুদ্ধের খবর ছাড়া ভারতের খবর তেমন কিছুই থাকতো না। কিন্তু কলকাতা থেকে প্রকাশিত 'দ্য স্টেটসম্যান' যার মূখ্য সম্পাদক ছিলেন ইয়ান স্টিফেনস, সেই পত্রিকাটিও কিছু আসতো বাগানে। ইয়ান স্টিফেনসের তোলা ছবি ও সম্পাদকীয় তখন সারা পৃথিবীর সামনে তুলে ধরছে দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা। 
একদিন বাবা আমাকে পাঠালেন বাগানের একমাত্র মুদি দোকান, যাকে স্থানীয় মানুষ 'কাঁইয়া' দোকান বলে সেখান থেকে জিনিস আনতে। নিয়ে আসার পর সওদা পাতি ঢেলে মা ঠোঙাগুলো ভাঁজ করে রেখে দিচ্ছিলেন। হঠাৎ আমার চোখ পড়লো ঠোঙার ছবিটাতে। আমার একটা অভ্যাস ছিল হাতের কাছে যে কোনও কাগজ পেলেই তা পড়ে দেখি তাতে কী লেখা আছে। যতদিন চোখে দেখতে পেতাম এ অভ্যেস আমার ছিল। যা হোক, ঐ বয়সে তো আর ইংরেজি ভাল পড়তে পারতাম না। ছবিটা আকর্ষণ করলো আমাকে। ঠোঙা ছিঁড়ে ছবিটা দেখে শিউড়ে উঠলাম। দুটি কংকালসার শিশু পড়ে আছে রাস্তায়। জীবিত কি মৃত বোঝা যাচ্ছে না। পাশে অসহায় মা। মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে শূন্য দৃষ্টিতে। দেখে কী বলব সুবর্ণ, সেদিন ভীষণ ভয় পেয়ে গেছিলাম। কোনও মানুষ যে অমন দেখতে হতে পারে ভাবিনি। ওপরের হেভিটা বানান করে পড়ার চেষ্টা করলাম। পারলাম না। বাবার কাছে নিয়ে গেলাম। তিনি পড়ে শোনালেন। আমার এখনও মনে আছে হেঠিংটা ছিল , ' হররিবল, বিয়ন্ড ডেসক্রিপশন' । বাংলা তর্জমা করে বাবা বললেন কথাটির অর্থ -ভয়ংকর, বর্ণনার অতীত। তারপর আমার নানা প্রশ্নের উত্তরে অনেকক্ষণ ধরে আমাকে বোঝালেন, দুর্ভিক্ষ কাকে বলে। সেই দুর্ভিক্ষের কারণ গুলোও ধৈর্য ধরে ব্যাখ্যা করলেন। শেষে একটি কথা বলেছিলেন  যা সারাজীবন ভুলিনি,'এক মুঠো ভাতের যে কত মূল্য এই ছবি তার সাক্ষ্য দিচ্ছে। সুতরাং কখনও অন্নকে অবহেলা কোরো না। '

-' সে সময় ডুয়ার্সের চা-বাগান অঞলেও কি এরকমই চাল সংকট হয়েছিল? ' সুবর্ণ জানতে চায়। 

-' না, সে সময় চা-বাগান অঞ্চলে ব্রিটিশ প্ল্যান্টাররা ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশন মারফতই হোক বা অন্য সূত্রে চালের যোগানটা অন্তত ঠিকঠাক রাখতে পেরেছিলেন। যে কারনে চা বাগান অঞ্চলের মানুষ সেভাবে ভাতের কষ্ট পায়নি। যদিও সেসময় চা বাগানে সেই অর্থে রেশন ব্যবস্থা চালু না হলেও বাগান কর্তৃপক্ষ চাল, তেল, চিনি, কিছু কেরোসিন এমনকি কাপড়ও যোগান দিত। ফলে চা বাগান অঞ্চলের মানুষকে তেমন সমস্যায় পড়তে হয়নি। তবে বাবা যেহেতু বাগানের কর্মচারী ছিলেন না, তাই বাবা সেই সুযোগ সুবিধা খুব সামান্যই পেয়েছিলেন। বাবাকে তাই খোলা বাজার থেকে চড়া দামেও চাল কিনতে হত। সেসময় বাবার মাইনে ছিল ৮ টাকা। 
দারিদ্রতা থাকলেও বাবা-মা আমাকে কোনওদিন তা বুঝতে দেননি। সে বছরই ক্লাস ফাইভে ভর্তি হলাম বাড়ির কাছে জটেশ্বর স্কুলে। সেবারই প্রথম খুললো জটেশ্বর স্কুল। আমরাই প্রথম ব্যাচ। তার আগে কাছাকাছি  হাইস্কুল বলতে ছিল সতের কিমি দূরে ফালাকাটা হাইস্কুল। বীরপাড়াতে তখনও হাইস্কুল হয়নি। কাজলিডাঙা থেকে জটেশ্বর স্কুল পাঁচ কিলোমিটার। পায়ে হেঁটে যাতায়াত করি। বাড়ি থেকে বের হই সকাল নটা নাগাদ। আমি একা। বেরোনোর সময় মা দাঁড়িয়ে থাকতেন গেটে। যতক্ষণ না আমি হারিয়ে যাচ্ছি রাস্তার বাঁকে ততক্ষণ তিনি দাঁড়িয়ে থাকতেন। বাঁক ঘুরতেই আমার বুক ঢিপঢিপ শুরু হয়ে যেত। তখন কতই বা বয়স আমার। দশ বছর। সারাটা রাস্তা ফাঁকা। একটিও জনমানব নেই।বাগানের সীমানা পেরোলেই গ্রাম্য পরিবেশ। দুধারে ধানক্ষেত। কিছুটা দূরে ডুডুয়া নদী। নদী পেরিয়ে স্কুলে যেতে হতো। ততদিনে অবশ্য যুদ্ধের কারণে সৈন্য বাহিনীর যাতায়াতের জন্য নদীর ওপর ব্রীজ তৈরি হয়েছে।ব্রীজ টা ছিল একটি বাঁকের মুখে। ব্রীজ পেরোলেই ঘন বেতের বন। সেই বেতবনের কাছে আসতেই ভয়টা আরও বেড়ে যেত। গলা শুকিয়ে আসতো ভয়ে। কেননা শুনেছিলাম যে শর আর বেতের জঙ্গলেই বাঘ লুকিয়ে থাকে। যা হোক, ভাগ্যক্রমে ঐ পথে কোনও দিন তার দেখা পাইনি। পরে যদিও অনেক বার দেখেছি। সে প্রসঙ্গে পরে একদিন বলব। 
স্কুলে যেতাম খালি পায়ে। হাতে বই খাতা। ততদিনে যুদ্ধের কল্যাণে রাস্তা পাকা হয়েছে। সেবক করোনেশন ব্রীজ খুলে দেয়া হয়েছে ১৯৪১ সালে। জাতীয় সড়ক যেটা এখন মালবাজার, নাগরাকাটা, বানারহাট হয়ে বীরপাড়া আসে সেটি ঐ সময়েই তৈরি হয়। পরে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ১৯৪৪ এ যে রাস্তাটি তৈরী হয় সেটা বীরপাড়া থেকে জটেশ্বর, ফালাকাটা, কুচবিহার আসাম হয়ে চলে গেছিল বার্মা সীমান্তে। সেখান থেকে আরাকান রেঞ্জের ভেতর দিয়ে যুদ্ধের অ্যাডভান্স ক্যাম্পে। সেখানে তখন ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ান-আর্মি সৈন্য মোতায়েন করছে। ওপার থেকে এগিয়ে আসা জাপানী ইম্পেরিয়াল ফোর্স কে প্রতিহত করতে। 
স্কুলে যাওয়ার পথে হঠাৎ এক একদিন দেখতাম মিলিটারি গাড়ির কনভয়। একসাথে একশ-দেড়শো গাড়ির কনভয়ও দেখেছি। একের পর এক গাড়ি যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। রাস্তা ছেড়ে ভয়ে ঘাসজমি ধরে সিঁটিয়ে জড়োসড়ো হয়ে হাঁটতাম। সেই সৈন্যবাহিনী তে ভারতীয় ছাড়াও অনেক আফ্রিকান, যাদের বলা হতো কাফ্রী, তারাও ছিলেন। মিশমিশে কালো, বিশাল চেহারা তাদের। দেখলে ভয় করতো। অথচ কেন যেন তাদের ভাল মানুষ বলেই মনে হত। কখনও চোখে চোখ পড়লে সাদা ঝকঝকে দাঁত বের করে হাত নেড়ে তারা হাসতেন। প্রত্যুত্তরে আমি যে হাত নাড়বো সে সাহস হত না। 
যা হোক, এভাবেই একা একা পথ চলতে চলতে একদিন ভয়কে কিছুটা জয় করতে শিখলাম।খালি পায়ে অনেক সময় কাঁটা, বা কাঁকর জাতীয় কিছু ফুটে রক্তপাত ঘটেছে। পথের ধারে খুঁজে নিয়েছি চেনা ঔষধি পাতা। ডলে দিয়েছি পায়ে, যা দিলে রক্তপাত বন্ধ হয়। এমনি ভাবে স্কুলে যেতে যেতে একদিন এমন একজনের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল, যাকে কোনোদিন ভুলব না। তিনি হলেন দুর্গা মুখার্জী। ব্যবসায়ী মানুষ। উনি প্রায়ই গয়েরকাটা থেকে ফালাকাটা উনত্রিশ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে যেতেন। পেছনে আরেকটি সাইকেলে থাকত তার একজন আর্দালি গোছের কেউ। তার ক্যারিয়ারে বাঁধা থাকত বিশাল এক বল্লম। 
একদিন আমাকে দেখে উনি সাইকেল থেকে নামলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ''তোমাকে এ রাস্তায় প্রায়ই দেখি। কোথায় যাচ্ছ তুমি? ''
বললেন, ''এভাবেই রোজ হেঁটে যাও? আর কেউ নেই সঙ্গে? ''
বললাম, ''না। ''
উনি তৎক্ষণাৎ আমার বইপত্র আর্দালির হাতে দিয়ে আমাকে তুলে নিলেন সাইকেলে। এভাবে অনেকদিন উনি আমাকে পৌঁছে দিয়েছেন স্কুলে।
স্কুলটা ছিল চারদিকে বাঁশের বেড়া। নিচে অনেকটা ফাঁকা।ওপরে টিনের চাল। প্রথম বছর একটি মাত্র ঘরে পড়ানো হতো। ছাত্র সংখ্যা ছিল কম। বেশিরভাগই স্থানীয় ছেলেপেলে। তাদের মধ্যে অনেকের নাম আমার এখনও মনে আছে। তমিজউদ্দিন,তফিরুদ্দিন, আফজল, জিতেন রায়, মন্টু। দূর থেকে একমাত্র যেতাম আমি। 
ক্লাস চলাকালীন একদিন অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটল। ব্যাপারটা ভারি মজার। একটা বাচ্চা ছাগল বেড়ার ফাঁক গলে হঠাৎ ঢুকে পড়লো ক্লাসে। মাস্টার মশায় তখন ক্লাসে নেই। ক্লাসে ঢুকে বেঞ্চের তলা দিয়ে কখন যে সে আমার পায়ের কাছে চলে এসেছে টের পাইনি। হঠাৎ পায়ের পাতায় সুড়সুড়ি পেয়ে চমকে দেখি, ও আমার পা চাটছে। প্রথম দিন ওকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু তারপর দেখতাম বাচ্চাটা রোজ স্কুল চত্বরে ওর মায়ের সাথে ঘাস খায়। আমাকে আসতে দেখলেই একবার জুলজুল করে তাকিয়ে ফের আপনমনে ঘাস চিবোতে থাকে। খোঁজ নিয়ে জানলাম কাছেই এক গৃহস্থ বাড়ির ছাগল। ক্লাস শুরু হতেই কখন যে নিঃসাড়ে ঢুকে পড়ত কেউ টের পেত না। ঢুকেই আমার পায়ের কাছে এসে যথারীতি ওর কাজ শুরু করে দিত। এমনটা কেন করত প্রথম প্রথম বুঝতাম না। পরে মনে হয়েছে আমার ঘামে ভেজা ধূলোমাখা পায়ের নোনতা স্বাদ হয়ত তাকে আকৃষ্ট করত। কখনও মনে হতো এতটা পথ হেঁটে আসার কষ্ট লাঘব করে দিতেই কি ও আমার পা চেটে দেয়! ও কি আমার গতজন্মের কেউ! মাস্টার মশায়রা দেখলেই ওকে তাড়িয়ে দিতেন। কিন্তু ক্লাস শেষ হলেই আবার সে ফিরে আসত। এভাবেই আমার সাথে ওর একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। সহপাঠীদের কাছেও সে ছিল আদরের । দেখতে দেখতে চোখের সামনে ছানাটা বড় হল । তবুও সে আসত নিয়ম করে।   একদিন হঠাৎ সে আর এলো না। তারপর দিনও না। পরের দিনও অপেক্ষায় থাকলাম, তাকে দেখতে পেলাম না কোথাও। খোঁজ নিয়ে জানলাম  আরো গোটাকয় অসহায়ের সাথে তাকেও দড়ি বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জটেশ্বরের হাটে।' 

-' বড় অদ্ভুত ঘটনা। পশুদের এমন অনেক আচরণ আমাদের বড় অবাক করে দেয়। আচ্ছা, কাকাবাবু, আবার একটু যুদ্ধ প্রসঙ্গে ফিরে যাচ্ছি। একটা কথা জানতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে, চা-বাগান অঞ্চলে কি যুদ্ধের সরাসরি কোনও প্রভাব পড়েছিল? '
সুবর্ণর প্রশ্ন শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন সত্যপ্রিয়। সামনে খোলা মাঠে ছড়িয়ে থাকা শরতের রোদ ঝলমলে বিকেলের আলোর দিকে তাকিয়ে যেন অতীতকে খোঁজেন। তারপর সুবর্ণর দিকে তাকিয়ে ধূলোঝেড়ে ধিরে ধিরে ওল্টাতে থাকেন স্মৃতির পাতা। 
' হ্যাঁ, ঐ বয়সে আমার যেটুকু দেখা সেটা বলি। সেসময় জাপানি বোমারু বিমান গুলো মাঝে মধ্যেই ঢুকে পড়ত দেশের সীমানায়। এসে বম্বিং করে চলে যেত। কলকাতায় এবং আরো দু এক জায়গায় বোমা ফেলেছিল তারা। সেই এয়ার রেড থেকে বাঁচতে এদিককার সব চা-বাগানেই ফ্যাক্টরি, অফিসের টিনের চালে, যেগুলো তে আগে সাদা অ্যালুমিনিয়াম পেইন্ট করা ছিল, সেগুলো রাতারাতি সবুজ রঙ করে ফেলা হয়। জানালার কাঁচে লেপে দেয়া হয় কালো রঙ। যাতে রাতের অন্ধকারে ভেতরের আলো বাইরে থেকে দেখা না যায়। এছাড়া ইংরেজ সাহেবরা বাগানে বাগানে অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট স্কোয়াড গড়ে তুলে তাদের দিয়ে জাপানি বাহিনীর বিরুদ্ধে শ্রমিকদের মধ্যে নানা প্রচার করতেন। জায়গায় জায়গায় জাপানি বাহিনীর নৃশংস অত্যাচারের ছবি টাঙিয়ে রাখা হত। 

-' চা- বাগানের মানুষ কেউ কি যুদ্ধে গেছিল? ' বলেই সুবর্ণর মনে হয় প্রশ্নটা কি বোকা-বোকা হয়ে গেল। 

-' না সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও কিছু প্ল্যান্টার যারা যুদ্ধে অংশ নিয়ে মারা যান তাদের স্মৃতিতে একটি স্মৃতিফলক আছে নাগরাকাটা ইউরোপিয়ান ক্লাবের বাইরে। এছাড়া আসামের দুটি চা-বাগান সম্পর্কে জানি। একটি হলো ছোটা টিংগারি চা বাগান। যেখানকার বাংলোর ভেতরে ছিল মিত্র শক্তির বাংকার। 

আরেকটি চা-বাগান, ডিব্রুগড় জেলার ডিকম চা বাগানের ডিভিশন, নাম চাউবুয়া সেখানে ছিল মিত্রশক্তির এয়ার বেস। যেখান থেকে চিনা বাহিনীকে বিমান সহায়তার জন্য  বিমান উড়ে যেত। পাইলটরা এই এয়ার রুটের নাম দিয়েছিল 'দ্য হাম্প'। খুব বিপজ্জনক বিমানপথ। যেপথে প্রায় পাঁচশ নব্বইটি বিমান নিখোঁজ হয় ও বারশো বিমান যোদ্ধা মারা যান। এছাড়া পূর্ব ভারতের চা-বাগানের শ্রমিকরা যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও উদ্ধারকাজে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নিয়েছিল। ১৯৪২ সালে যখন জাপানি সেনা বার্মা অবরোধ করল, সেসময় ভারতীয়দের সরিয়ে আনতে বলা হল। কিন্তু আনবে কোন পথে। বিমান ও জলপথ দুটোই তো বন্ধ। বাধ্য হয়ে মানুষ হাঁটা শুরু করল। ঘন জঙ্গল, নদী পেরিয়ে আসতে গিয়ে পথ হারিয়ে জঙ্গলে মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে থাকছিল মানুষ। সেসময় চা-শ্রমিকরা তাদের উদ্ধার করে সুস্থ করে তোলে। পরিসংখ্যান বলে যে প্রায় দু লক্ষ কুড়ি হাজার মানুষ ফিরে আসতেন পেরেছিল। যাদের অধিকাংশই সাহায্য পেয়েছিল চা-শ্রমিকদের। 

আরেকটা ঘটনা বলি, সেসময় সৈন্যবাহিনীর সাঁজোয়া গাড়ির যাতায়াতের জন্য তৎপরতার সঙ্গে তৈরি হচ্ছিল রাস্তাঘাট। সেরকমই দুটি রাস্তা, একটি মণিপুর থেকে বার্মার টেমু পর্যন্ত। অন্য রাস্তাটি হল আসামের লিডো থেকে চিনের কুনমিং পর্যন্ত। ব্রিটিশ সরকার দিল্লিতে তড়িঘড়ি বৈঠক ডাকলেন। সেই বৈঠকে ডাকা হল ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান কে। তাঁকে বলা হল, চা বাগানের শ্রমিকদের সেই রাস্তার কাজে পাঠানোর জন্য। এই ১৭৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ লিডো রোড ছিল যেমন অস্বাস্থ্যকর, তেমনি বিপজ্জনক। আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার দের সাহায্যে চা শ্রমিক ও আসামের কিছু তেল শ্রমিকদের দিয়ে শুরু হলো কাজ। সেসময় দেখতাম একটি ট্রেন আসামের দিকে শ্রমিক বোঝাই করে নিয়ে যেত এই ডুয়ার্স অঞ্চলের চা বাগান থেকে। প্রতিটি বাগান থেকে একজন করে বাবু তাঁদের নিয়ে যেতেন। তিন বছর ধরে লিডো রোডের কাজ চলে। কিন্তু ঐ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করতে করতে অর্ধাহারে, ঠান্ডায় বহু শ্রমিক প্রাণ দেয়। বলা হয় প্রতি এক কিলোমিটার অন্তর এক জন শ্রমিক মারা যায় রাস্তা তৈরির কাজে। শেষ পর্যন্ত ১৯৪৫ এ যখন রাস্তার কাজ শেষ হয় ততদিনে যুদ্ধ শেষ। ঐ রাস্তা আর ব্যবহৃত হয় না।'

-' নেতাজি তখন কোথায় ছিলেন, মানে নেতাজি সম্পর্কে সে সময় কিছু শুনতেন। ' সুবর্ণ প্রশ্ন করে। 

-' সে সময় তো উনি জাপানের সহায়তায় এগিয়ে আসছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজ নিয়ে ভারতের দিকে। প্রায় প্রতিদিন তাঁর বেতার বার্তা শোনা যেত। দেশের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে তিনি ভাষণ দিতেন। কখনো বার্লিন,কখনও সিঙ্গাপুর থেকে। আমরা মায়ের কাছে বসে তাঁর বীরত্বের কথা শুনতাম। সে সময় কাজলিডাঙার বড়বাবুর বাড়িতেই কেবলমাত্র একটি রেডিও ছিল। বিরাট আকারের সেই রেডিও চলত ডি. সি ব্যাটারিতে। সেই ব্যাটারি ফ্যাক্টরি থেকে চার্জ করে নিয়ে আসা হতো। দুজন মানুষ ধরাধরি করে নিয়ে আসত ব্যাটারি টি। একদিন বাবার সাথে গিয়ে বসেছি  সুভাষ বসুর ভাষণ শুনব বলে। আরো অনেকে এসে বসে আছেন। কিন্তু কি কারণে যেন ঘড়ঘড় শব্দ শুরু হলো রেডিওতে। ভাষণ আর শোনা গেল না। '

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri