স্টাফ ও সাব-স্টাফদের বেতন জট আজও কাটল না-২/গৌতম চক্রবর্তী
স্টাফ ও সাব-স্টাফদের বেতন জট আজও কাটল না/২
গৌতম চক্রবর্তী
ছলে-বলে-কৌশলে, ভুলিয়ে-ভালিয়ে বা চোখ রাঙিয়ে অথবা গায়ের জোরে নানাভাবে চা বাগিচার উপজাতি শ্রমিকদের ধরে আনা হয়েছিল উত্তরবঙ্গ এবং আসামের চা বাগিচাগুলিতে। এদের বেশিরভাগ জানে না তাদের দেশ কোথায়। গাঁও কোথায়। কোথায় তাদের আদি নিবাস। কোথায় ফিরবেন তারা? কে ডেকে নেবে তাদের? অবশ্য এভাবে ভিটেমাটি উজার করে লোক চালান দেওয়া সারা পৃথিবী জুড়ে বাগিচা শিল্পের বৈশিষ্ট্য। সময়ের তালে হয়তো অনেকরকম আধুনিকতার মোড়কে সেজেছে এই শিল্প। কিন্তু মোটের ওপর বিষয়বস্তুটা একই রকম আছে। দাঁড়িয়ে থেকে ৮-১০ ঘন্টার হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম যাদের দস্তুর, তারা কম পারিশ্রমিকে নিরুপায় হয়ে চা বাগানে কাজ করতে বাধ্য। এদের অন্য কোন বিকল্প বাসস্থান নেই। চা বাগানের ভেতরে তারা থাকে। সাহেবরা তাদের যেখান থেকে ধরে এনে বা চুরি করে নিয়ে এসে তাদেরকে দিয়ে ঘন জঙ্গল কাটিয়ে চা-বাগানের পত্তন করেছিল, সেখানে তাদের ফেরার উপায় নেই। বাগানে কাজ না করলে তাদেরকে সেখানে থাকতে দেওয়া হবে না এবং তাদেরকে বের করে দেওয়া হবে। তাই একটু আশ্রয়ের জন্য হলেও তারা কম পারিশ্রমিকে এই কাজ করতে মজবুর। এর সুযোগ নিচ্ছে মালিকেরা। তাই চা বাগান ছেড়ে শ্রমিকেরা দলবল নিয়ে অন্য কোথাও ভাগ্যান্বেষণে যে পা বাড়িয়ে দেবেন তারও কোন পুরোপুরি উপায় নেই। আসলে যে কথাটা বলা হয়নি সেটা হল চা বাগান এক শ্রেণীর শিল্পপতি মালিকের পোশাকের আড়ালে বেচু এবং বেনিয়াদের মৃগয়াভূমি। শিল্পপতির তকমা আঁটা এই ফড়ে বা দালালরা যাবতীয় সরকারি সুযোগ নিয়ে কার্যত লুটপাট চালাচ্ছে। ইউনিয়ন নেতাদের কারো কারো অভিযোগ মালিক সংগঠনগুলো হিসাবকিতাবহীন ফায়দা লুটে চলেছে সরকারি অজ্ঞতা, দায়িত্বহীনতা, দায়বদ্ধহীনতা কিংবা উদাসীনতার কাঁধে চেপে। শ্রমিকেরা যেহেতু বাগানে থাকেন তাদের বাসস্থান এবং অন্যান্য মৌলিক বিষয় সুরক্ষিত রাখাকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় প্ল্যান্টেশন লেবার অ্যাক্ট ১৯৫১ অনুযায়ী। এই আইনের ফলে শ্রমিকদের পাকা বাড়ি, স্বাস্থ্য পরিসেবা, ক্যান্টিন, ক্রেশ, শ্রমিকদের বাচ্চাদের শিক্ষার ব্যবস্থা, রেশন এবং চা পাতা, শুকনো জ্বালানি কাঠ, পানীয় জল, মাতৃত্বকালীন সুযোগ সুবিধা ইত্যাদি দেওয়ার কথা। কিন্তু একে এই আইনের ফাঁকফোকর প্রচুর, তাছাড়াও মালিকেরা এই আইনকে যথেচ্ছ বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে যেখানে সেখানে শ্রমিক শোষণ চালাচ্ছে। সরকারের তরফ থেকেও এই আইনের প্রয়োগের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র উৎসাহ নেই।
আগের দিন বলেছিলাম চা বাগিচার বাবু সম্প্রদায়ও একই পরিস্থিতির স্বীকার। দ্রুত সঠিক সময়কাল থেকে বেতন চুক্তি সম্পাদনের দাবিতে স্টাফ, সাব-স্টাফদের যৌথ সংগঠন ডুয়ার্সের বিভিন্ন বাগানে লড়াইতে সামিল। স্টাফ, সাব-স্টাফদের পক্ষ থেকে বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে তাল রেখে সন্তোষজনক হারে মজুরি বৃদ্ধি করে ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে নয়া চুক্তি সম্পাদন করতে হবে বলে দাবি তোলা হয়। কোনও কোনও মহল ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এই চুক্তি সম্পাদনের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযাগ করা হয়। সেই সময়ে বিটিডব্লিউইউ-এর সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ হাতির সঙ্গে কথা বলে জেনেছিলাম ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে চুক্তি সম্পাদনের বিষয়ে শ্রমিকেরা অনেক শিথিল হয়েছে, অথচ মালিকরা তাদের অবস্থানে অনড়ই রয়েছেন। তারা সেটা কিছুতেই মেনে নেন নি। তিনি জানিয়েছিলেন প্রয়োজনে বড় আকারে আন্দোলন হবে। জেনেছিলাম এরপর প্রতিটি বাগানে রিলে অনশনে নামার কথা ভেবে রাখা হয়েছে। স্টাফ, সাব-স্টাফ জয়েন্ট কমিটির অন্যতম নেতা পার্থ লাহিড়ির মত ছিল যে চুক্তি হওয়ার কথা সেটি নিয়ম মোতাবেক ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। তাহলে দাবি মেনে নিতে মালিকদের অসুবিধা কোথায়? সময়মতো চুক্তি সম্পাদন না করায় ইতিমধ্যেই তো তাদের কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। মালিকপক্ষের শীর্ষ সংগঠন কনসালটেটিভ কমিটি অফ প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (সিসিপিএ)-এর সেক্রেটারি জেনারেল অরিজিৎ রাহা বলেছিলেন চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। ত্রিপাক্ষিক বৈঠকও হয়েছে। ফের হবে। এটা করে ফেলতে তাদের আগ্রহে কোনও খামতি নেই। স্টাফ, সাব-স্টাফদের জয়েন্ট কমিটি জানিয়েছিল, ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল পুরোনো বেতন চুক্তির মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পর গত ৪৬ মাস ধরে তারা বর্ধিত হারে বেতন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তবুও সমস্ত দিক বিবেচনা করে নয়া চুক্তি যাতে অন্তত ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর করা হয় সেই প্রস্তাব শিলিগুড়িতে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে রাখা হয়। ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নয়া চুক্তি যদি কার্যকর হত তাহলে সেটির মেয়াদ মাত্র ২৭ মাস থাকত যা চা শিল্পের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
নতুন চুক্তি তখনও সম্পাদিত না হওয়ায় ৪৪ মাসে একেকজন স্টাফ ও সাব স্টাফকে যথাক্রমে ১ লক্ষ ৪২ হাজার ৭৫৫ টাকা এবং ৫৬,৪০৪ টাকা করে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে বলে জেনেছিলাম। অন্যদিকে মজুরি চুক্তি সম্পাদিত না হওয়ায় শ্রমিকদের ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল দৈনিক ৫১.৮৫ টাকা। স্টাফ, সাব-স্টাফ জয়েন্ট কমিটির আহ্বায়ক আশিস বসু জানিয়েছিলেন এটা শ্রমিক-কর্মচারীদেরই আয়। অথচ তা মালিকদের পকেটে গিয়েছে। ২০১৭ র ১ এপ্রিল থেকে ২০২০-র ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সমস্ত শ্রমিক কর্মচারীর মজুরি ও বেতন মিলিয়ে মোট ১,২৫৬ কোটি ৪৮ লক্ষ ৬৩ হাজার ৪২৫ টাকা ক্ষতি হয়েছিল। রাজ্যের তৎকালীন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের নেতৃত্বে ন্যূনতম মজুরি নিয়ে ১৭টি বৈঠক হয়। হতো বা আরো বেশ হয়েছে বা হবে। সংশ্লিষ্ট কমিটিতে বিরোধী শ্রমিক সংগঠনের নেতারাও ছিলেন। ন্যূনতম মজুরি নিয়ে ওই কমিটি কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এদিকে শ্রমিক কর্মচারীদের মজুরি-বেতন বৃদ্ধি খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। এ কারণেই অন্তর্বর্তীকালীন ভিত্তিতে মজুরি বাড়িয়ে ২০২ টাকা করা হয় বলে জানিয়েছিলেন মন্ত্রী। চুক্তি সম্পাদনের আলোচনাও চলবে এবং যত দ্রুত সম্ভব সেটা করে দেওয়া হবে বলে সেই সময় জানান তিনি। শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ও মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে একটি মেমোরান্ডাম জারি করা হয় বলে শ্রম দপ্তর জানায়। ডিসেম্বরে পাওয়া গ্রস স্যালারির ওপর ১৫ শতাংশ হারে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে অন্তর্বর্তীকালীন ভিত্তিতেই বর্ধিত বেতন নিয়ে স্টাফ ও সাব-স্টাফদের জয়েন্ট কমিটি তাদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছিল। সংগঠনের অন্যতম নেতা পার্থ লাহিড়ি বলেছিলেন, নয়া বেতনক্রম তৈরি করে তা ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর করার দাবি ছিল তাদের। তা না করে ফের আরেক দফার অন্তর্বর্তীকালীন বেতন বৃদ্ধি ঘোষণা করা হল। রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা থাকলেও এর আগে শ্রমিকদের ১৭ টাকার আনুপাতিক হারে বাবু এবং সাব স্টাফেদের জন্যও এক দফার অন্তর্বর্তীকালীন বেতন বৃদ্ধি তখনও করা হয়নি। চা শ্রমিকদের যৌথ মঞ্চ জয়েন্ট ফোরামের অন্যতম আহ্বায়ক জিয়াউল আলম বলেছিলেন তাঁদের মূল দাবি ন্যূনতম মজুরি। বেতনবৃদ্ধি নিয়ে হতাশ উত্তরবঙ্গের চা বাগানের স্টাফ, সাব-স্টাফরা ফের আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।
রূপরেখা তৈরি করতে চালসার ডব্লিউবিটিজিইএ ভবনে সব বাগানের কর্মচারীদের নিয়ে একটি প্রকাশ্য সভার ডাক দেয় স্টাফ, সাব-স্টাফ জয়েন্ট কমিটি। বিষয়টি নিয়ে ডুয়ার্সের বেশ কিছু বাগানে আধ ঘণ্টার গেট মিটিংয়ে শামিল হন স্টাফ, সাব স্টাফরা। স্টাফ, সাব-স্টাফ জয়েন্ট কমিটির আহ্বায়ক আশিসকুমার বসুর যুক্তি ছিল, মাত্র ১৫ শতাংশ হারের অন্তর্বর্তীকালীন বেতনবৃদ্ধি নিয়ে সমস্ত বাগান কর্মচারীরাই হতাশ। শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক কথা দিয়েছিলেন নতুন বেতনক্রম নিয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি বৈঠকে বসবেন৷ সেই বৈঠক পরে আর ডাকাই হয়নি। তাই চায়ের ভরা মরশুমে নতুন করে আন্দোলন সংগঠিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্টাফ, সাব-স্টাফদের দাবি ছিল যতদিন চা শিল্পকে ন্যূনতম মজুরির আওতায় নিয়ে আসা না হচ্ছে ততদিন তিন বছরের চুক্তির মাধ্যমে নতুন বেতন কাঠামো তৈরি করা হোক। এই বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকমাস ধরেই স্টাফ, সাব-স্টাফ জয়েন্ট কমিটির আন্দোলন চলে। ২০ জানুয়ারি শিলিগুড়িতে শ্রমমন্ত্রীর উপস্থিতিতে একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে স্টাফ, সাব-স্টাফদের ডিসেম্বরে পাওয়া গ্রস স্যালারির ওপর ১৫ শতাংশ হারে বেতনবৃদ্ধির কথা ঘোষণা করা হয়। পরে অতিরিক্ত শ্রম কমিশনার এ বিষয়ে একটি সার্কুলারও জারি করেন। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে অন্তর্বর্তীকালীন ভিত্তিতে ওই পরিমাণ বেতন বৃদ্ধি করা হয়। পাশাপাশি শ্রমিকদের টাকা ১৭৬ থেকে বাড়িয়ে ২০২ টাকা করা হয়। স্টাফ, সাব-স্টাফদের বক্তব্য ছিল বারবার অন্তর্বর্তীকালীন ভিত্তিতে অল্প কিছু বেতনবৃদ্ধি করে দিয়ে তাদের চূড়ান্ত ক্ষতির মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ২০১৭ সালের ৩১ মার্চ শেষ হওয়া তিন বছরের বেতন চুক্তির পর আর কোনও নতুন চুক্তি হয়নি। পুরোনো ধাঁচের ওই চুক্তি প্রথাকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে আবার আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন শ্রমিক কর্মচারীরা। বিধানসভা নির্বাচনের আগে চা বাগানের স্টাফ এবং সাব-স্টাফদের বেতনের জট কাটাতে উদ্যোগী হয় রাজ্য সরকার। এই লক্ষ্যে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের উপস্থিতিতে শিলিগুড়িতে হয় ত্রিপাক্ষিক বৈঠক। বৈঠকটি দাগাপুরের শ্রমিক ভবনে হয়। এই সংক্রান্ত নির্দেশিকাও জারি করে শ্রম দপ্তর। বৈঠকে দৈনিক হাজিরার বাগান শ্রমিকদের নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা জানানো হয়।
টি অ্যাসোসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার তরাই শাখার সচিব সুমিত ঘোষ জানিয়েছিলেন শ্রম দপ্তর বৈঠক ডাকায় তারা যাবেন। কেননা তাঁরাও চান বেতন বা মজুরি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হোক। দার্জিলিং জেলা চিয়া কামান মজদুর ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি সমন পাঠক বলেন, স্টাফ, সাব-স্টাফ এবং দৈনিক হাজিরার শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠক হলেও সেটা আলোচ্যসূচিতে নেই। তবুও সিটু সহ বিভিন্ন সংগঠন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের সামনে বিষয়টি তুলে ধরার পরিকল্পনা নেয়। এর আগেও স্টাফ এবং সাব স্টাফদের বেতন নিয়ে বৈঠক হয়। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয় নি। ২০১৭ সালের পর কোনও চুক্তি না হওয়ায় তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে দাবি ছিল স্টাফ এবং সাব-স্টাফদের। এর আগের বৈঠকে মালিকপক্ষের তরফে ২০২১ সালের ১ এপ্রিল থেকে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকরের কথা বলা হয়। সরকারি তরফে প্রস্তাব রাখা হয় ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে, কিন্তু ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর এবং ২০১৭ সাল থেকে ২০২০-র ৩১ মার্চ পর্যন্ত এরিয়ারের দাবিতে অনড় থাকে স্টাফ এবং সাব-স্টাফ জয়েন্ট কমিটি। যার ফলে কোনও সমাধানসূত্র বের হয়নি। ২০ জানুয়ারির বৈঠকে একই অবস্থানে অনড় থাকেন সাধনবাবুরা। শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, স্টাফ এবং সাব-স্টাফদের বেতন বৃদ্ধি বিধানসভা নির্বাচনের মুখে কার্যত মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় রাজ্য সরকারের কাছে। কখনও দ্বিপাক্ষিক, কখনও আবার ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডেকেও সমস্যার সমাধানের রাস্তা বের হয় নি। মীমাংসা সূত্র বের না হলে তার প্রভাব বিধানসভা ভোটে পড়ার সম্ভাবনা ছিল। কেননা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সংগঠনের তরফে হুমকি দেওয়া শুরু হয়েছিল। লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল বিভিন্ন সংগঠন। এমন পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধানে ২০ জানুয়ারি শিলিগুড়িতে ফের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকে শ্রম দপ্তর। বিধানসভা নির্বাচনের আগে চা বাগানের সমস্যার সমাধান হবে কি না তা নিয়ে যথারীতি প্রশ্নও উঠে যায়। শ্রমমন্ত্রী জানিয়েছিলেন ১৪ ডিসেম্বর কলকাতায় নতুন করে যে বৈঠক হবে তাতে কর্মীদের বেতন স্কেল তৈরি করে মালিকপক্ষকে ওই বৈঠকে যোগ দিতে হবে। স্টাফ এবং সাব-স্টাফ জয়েন্ট কমিটির অন্যতম নেতা সাধন দাশগুপ্ত জানিয়েছিলেন মালিকপক্ষের অসহযোগিতার জন্যই বৈঠকে কোনও সমাধানসূত্র বের হয়নি।
ন্যায্য বেতনের দাবিতে পরিবার নিয়ে অগত্যা শিলিগুড়ির রাজপথে মিছিল বের করে স্টাফ এবং সাব-স্টাফ জয়েন্ট কমিটি। এই মিছিলে তরাই, ডুয়ার্স এবং পাহাড়ের চা বাগান কর্মীদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যরা যোগ দেন। মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খাব কী এই প্রশ্নকে সামনে রেখেই মূলত মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছিল। দার্জিলিং মোড় থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি শেষ হয় অ্যাডিশনাল লেবার কমিশনারের কার্যালয়ের কিছুটা দূরে। জয়েন্ট কমিটির তরফে সাধন দাশগুপ্ত জানিয়েছিলেন “নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়ছে। কিন্তু বাবু, স্টাফ এবং সাব স্টাফদের বেতন বাড়ানো হচ্ছে না। ফলে পরিবার নিয়ে চরম সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদেরকে। এই কারণে পরিবারের সদস্যরাও রাস্তায় নেমেছে। সংগঠনের নেতা শম্ভু ছেত্রীর সঙ্গে কথা বলে জেনেছিলাম উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় চা শিল্পে যে সংকটের কথা বলছেন মালিকরা, তা ঠিক নয়। বেতন বৃদ্ধি এবং বোনাস যাতে দিতে না হয় তার জন্যই তারা মন্দার কথা বলছেন। প্রত্যেক বছর পুজোর আগে দূর্দশার কথা বলা হয়। পরে ১৫ জনের একটি প্রতিনিধিদল ডেপুটি লেবার কমিশনার এস মাঝিকে স্মারকলিপি দেয়। তাদের আন্দোলনের জেরে জুলাই মাসে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের উপস্থিতিতে একটি বৈঠক হয়। কিন্তু ওই বৈঠক থেকে কোনো সমাধান সূত্র বের হয়নি। স্টাফ-সাব স্টাফদের বেতন চুক্তি নিয়ে শিলিগুড়ির দাগাপুরে উত্তরবঙ্গের অতিরিক্ত শ্ৰম কমিশনারের দপ্তরে শ্রমিক ও স্টাফ-সাব স্টাফদের সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বেতনবৃদ্ধির প্রক্রিয়া ও পরিমাণে অসন্তুষ্ট চা বাগানের স্টাফ ও সাব-স্টাফদের গেট মিটিং অব্যাহত থাকে। স্টাফ, সাব-স্টাফ জয়েন্ট কমিটির আহ্বায়ক আশিস বসু বলেন তাঁদের দাবি স্টাফ, সাব-স্টাফদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো তৈরি করা হোক। ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে শ্রমমন্ত্রী ১১ ফেব্রুয়ারি ফের বৈঠক করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। বাগানের কর্মচারীদের এই মিটিংকে কেন্দ্র করে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে চাপান উতোর শুরু হয়।
(আগামী সপ্তাহে শেষ পর্বে চোখ রাখুন)
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴