হলদিবাড়ি টি গার্ডেন/গৌতম চক্রবর্তী
হলদিবাড়ি টি গার্ডেন
গৌতম চক্রবর্তী
চা-এর কথা উঠলেই আমরা বলি ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’। চা গাছ থেকে সাধারণত ওই দুটি পাতা একটি কুঁড়ি তুলেই চা বানানো হয়। ঘুম কেটে যাওয়া, শরীর চনমনে হওয়া, হার্ট ভাল থাকা, এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করা – সে সব হয় চায়ের পাতায় থাকা কিছু রাসায়নিক উপাদানের জন্য। আসলে চায়ের যে গুণ, যার জন্য আমরা চা খাই সেইসব রাসায়নিক উপাদানগুলো সবচেয়ে বেশী থাকে চায়ের ডালের মাথার কুঁড়ি, মানে অগ্রমুকুলে, আর তার ঠিক নীচের দুটো পাতায়। তারপর ডাল ধরে যত নীচের দিকে নামা যায় তত সেই উপাদানের পরিমান কমতে কমতে তা একেবারেই হারিয়ে যায়। ফলে সবচেয়ে ভাল চা তৈরি করতে লাগে ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’। চা গাছের কাঁচা পাতা থেকে প্রথমে হয় তৈরি ‘চা’ বা প্রসেসড টি। আবার সেই ‘চা’ জলে ফুটিয়ে যা আমরা খাই তাকে বলি ‘পানীয়-চা’। চা-পাতা থেকে আজ যে ভাবে প্রসেসড চা তৈরি করা হয় সেখানে পৌঁছতে আমাদের লেগেছে হাজার বছরেরও বেশী সময়। দীর্ঘ সময়ে নানাভাবে, নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চা এর ফ্লেভার, সুবাস, স্বাদ, উন্নত করার লক্ষ্যে সবুজ চা, কালো চা, ওলং চা, সাদা চা, বেগুনি চা, হলুদ চা, অর্থোডক্স চা, সিটিসি চা ইত্যাদি কত নামে কত চায়ের দোকানে এখন কত রকমের চা বিক্রি হয়। এবারের বাগিচা সফরে চলে এলাম এই রকমেরই একটি বাগানে। বিন্নাগুড়ি থেকে ডিবিআইটিএ অফিসের পাশ দিয়ে ৫ কিমি গেলেই জলপাইগুড়ি সদর মহকুমার হলদিবাড়ি টি গার্ডেনটি ডিবিআইটিএ-র সদস্য। বাগানে মোট ম্যানেজারিয়াল স্টাফ ৮ জন। কোম্পানির ডিরেকটর হিসাবে ১৯৭৬ সাল থেকে ছিলেন প্রণব মুখার্জী। ১৯৮০ সালে শ্রীধর ঈশোর ১৯৯৪ সালে আনন্দ বাজোরিয়ার হাত ধরে ২০২১ সালে সঙ্গীতা বাজোরিয়া, ২০২১ সালে ধ্রুব বাজোরিয়া দায়িত্ব গ্রহণ করে। সেই অর্থে এটির মালিকানা এখন বাজোরিয়া পরিবারের হাতেই। বর্তমান কোম্পানি ২০১৯ থেকে বাগিচার দায়িত্বভার গ্রহণ করে। সেই অনুযায়ী কোম্পানির বয়স প্রায় পাঁচ বছর।
আসলে উত্তরের এই মাটিতে সবুজের গালিচায় যে কত তথ্য, কত ইতিহাস লুকিয়ে আছে তা জানতে পারতাম না চা নিয়ে এই গবেষণা করতে এলে। বেবেছিলাম দুই বছরের মধ্যেই কাজ শেষ করে ফেল্বো। কিন্তু ২০১৭ সাল থেকে শুরু করে মাঝের করোনা সময়কালের কিছুদিন বাদ দিলে এখনও জলপাইগুড়ি জেলাতেই পড়ে আছি। আলিপুরদুয়ার জেলাতে এখনো প্রবেশাধিকার ঘটে নি। আজকের এই বাগিচা সফরে বিভিন্ন ধরণের চা এর উৎপত্তি রহস্য নিয়ে আলোচনা করব। কাজ করতে করতে কত গুণী মানুষজনের তথ্যভান্ডার আমাকে সমৃদ্ধ করেছে। তার মধ্যে একজন শিশির রায়নাথ। তাঁর “বাগানিয়া জার্নাল” আমার বিভিন্ন ধরণের চা পাতাকে চেনার সুযোগ করে দিয়েছে। আজ বিভিন্ন ধরণের মানুষ বিভিন্ন ধ্রণের চায়ের নামে কি পান করেন সেটা তারাই জানেন। কিন্তু চা এর নামে আমাদের এই চা এর দেশে যে লোক ঠকানো কাজ কারবার চলছে সেকথা ভাবলে মন খারাপ হয়ে যায়। তাই চা এর অন্য জগতে প্রবেশের আগে হলদিবাড়ি চা বাগিচার তথ্যানুসন্ধান করতে সুপারিন্টেন্ডিং ম্যানেজারের অনুমতিক্রমে বাগিচার অফিসে এলাম। কোম্পানির স্বীকৃত ট্রেড ইউনিয়ন এনইউপিডব্লিউ, সিবিএমইউ, ডিসিবিডব্লিউইউ, পিটিডব্লিউইউ। বাগানটি ধূপগুড়ি ব্লক এর বানারহাট থানার অন্তর্গত। হলদিবাড়ি চা বাগিচার আয়তন এবং চাষযোগ্য আবাদিক্ষেত্র ১১৩০.০৩ হেক্টর। আপরুটেড এবং নতুন বপনযোগ্য আবাদীক্ষেত্র ৯১.২৩ হেক্টর। তবে সেচের সুবিধাযুক্ত অঞ্চল ৬৯০ হেক্টর হলেও মোট চাষযোগ্য উৎপাদন ক্ষেত্র ৪২১.৮৫ হেক্টর। প্রতি হেক্টর উৎপাদনযোগ্য এবং সেচযুক্ত প্ল্যান্টেশন এরিয়া থেকে ১৬৯৭ কেজি করে চা উৎপাদিত হয়। চা বাগানে নিজস্ব কাঁচা চা পাতা উৎপাদনের গড় প্রায় ৫০-৫৫ লাখ কেজি। ফ্যাক্টরিতে নিজস্ব উৎপাদিত রেডিমেড চা প্রায় ১৪-১৫ লাখ কেজি। বাইরের বাগান থেকে কাঁচা পাতা সংগৃহিত হয় না। মোট বাৎসরিক উৎপাদিত চা প্রায় ১৫ লাখ কেজি। বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বাগানে ইনঅরগ্যানিক সিটিসি চা উৎপাদিত হয়।
আমাদের দেশে চায়ের বিপণনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন ও মুখ্য বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বহুজাতিক চা প্যাকেজিং কোম্পানিগুলি। যারা একটা সময় চা বাগান পরিচালকের ভূমিকায় ছিল তারা বুঝতে পেরেছিল চা গাছ লাগানো বা তৈরির থেকে চা বিপণন অনেক বেশি মুনাফাদায়ক। প্রায় আশি শতাংশ প্যাকেট চায়ের বিপণনকারী এইসব বহুজাতিক সংস্থা অতিরিক্ত উৎপাদন, গুণগত মান, চাহিদা কমের জুজু দেখিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের নির্দিষ্ট দামে চা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে চা প্রস্তুতকারীরা। এ যেন কর্পোরেট দাসপ্রথার চূড়ান্ত উদাহরণ। পাড়ার চায়ের দোকানদারের এক কাপ চায়ের দাম নির্ধারণ করার ক্ষমতা আছে, অথচ চা প্রস্তুতকারীর নিজের উৎপাদিত পণ্যের দাম ঠিক করবার ক্ষমতা নেই। চা শিল্পে মনোপলি সিস্টেম চলছে। যার সুনিশ্চিত মুনাফা যাচ্ছে এক শ্রেণির হাতে। আবহাওয়ার আমূল পরিবর্তন হয়ত উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে, কিন্তু চায়ের বিপণনের সমস্যার এই মুখ্য অন্তর্জাল চা শিল্পের স্বাভাবিক উন্নতির প্রধান বাধা। অদূর ভবিষ্যতে মাত্র দুই ডলারের কেনিয়ার সিটিসি চা, চিনের কম দামের সিটিসি চায়ের আগ্রাসী বিপণন ভারতের চা শিল্পে নতুন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, চা প্যাকেটজাত বহুজাতিক সংস্থা ইতিমধ্যেই চা আমদানির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করছে। উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স ও তরাইয়ের সিটিসি চা সবসময় অসম চায়ের ফিলার হিসেবে বিক্রি হয়েছে। অতীতে চা শিল্পমহল কখনোই ডুয়ার্স বা তরাইয়ের চা-কে ব্র্যান্ড হিসেবে তুলে ধরতে চেষ্টা করেনি। অথচ উত্তরবঙ্গের অনেক বাগানের উৎপাদিত চায়ের গুণগত মান অসমের সেরা চা বাগানের গুণগত মানের সমান। আরও আশ্চর্যের কথা, দেশের টি বোর্ড মাত্র সাত বছর আগে উত্তরবঙ্গের চায়ের লোগো প্রকাশ করেছে। টি বোর্ড বিপণন পরামর্শদাতা কোম্পানি বিখ্যাত ডেলয়েটকে এক সমীক্ষার দায়িত্ব দিয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছে, দেশের ৮৮% পরিবারে প্যাকেটজাত চা পান পছন্দ করেন ৯০%। মাথাপিছু চা দিনে মাত্র দুই কাপ ধরে দেখা যাচ্ছে ৭৮% মানুষ চায়ের দাম বৃদ্ধি পেলেও অতিরিক্ত খরচে রাজি। ফলে বোঝাই যাচ্ছে দেশীয় বাজারে চায়ের কদর ক্রমবর্ধমান।
কোভিড কালে চা পান আরও বেড়েছে। ডুয়ার্স তরাইয়ের চায়ের বিপণনে আরও বেশি জোর দেওয়া উচিত। চা শিল্পের সঙ্গে জড়িত সবার ভাবা দরকার ব্যাপারটা। আমাদের রাজ্য সরকারেরও। তাতে বাংলারই লাভ। শুধুই বোধহয় নেপালে উৎপন্ন নিম্নমানের চা দার্জিলিং চায়ের বাজার বাড়ানোর পথে প্রধান সমস্যা নয়। সিটিসি চায়ের মধ্যে যৌগ থিয়াফ্লাভিন ইমিউনিটি রয়েছে যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশন ২০২৩ সালের মধ্যে আমেরিকা, পোল্যান্ড সহ নতুন নতুন চা বাজারে ঢুকে রপ্তানির বাজার ৩০ কোটি কেজির লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে। উদ্দেশ্য একটাই দেশীয় বাজারে চাহিদা ও সরবরাহ নীতির সামঞ্জস্য রেখে চায়ের দাম ঠিক রাখা। ম্যানেজারের সঙ্গে চা ফ্যাক্টরি ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম আর তথ্য নিচ্ছিলাম। হলদিবাড়ি চা বাগিচার সাব স্টাফ সংখ্যা ১৩৪ জন, করণিক ১৮ জন, ক্ল্যারিক্যাল এবং টেকনিক্যাল স্টাফ ১৭ জন। বাগানে শ্রমিক পরিবারের সংখ্যা ১৪২৭। মোট জনসংখ্যা ৯৫৫৪ জন। স্থায়ী শ্রমিক ১৯০৭ জন। বিগত আর্থিক বছরে অস্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ১৪ জন। ফ্যাক্টরিতে নিযুক্ত স্টাফ এবং শ্রমিক সংখ্যা ২১৮ জন। কম্পিউটার অপারেটর একজন। কর্মরত শ্রমিক ২৩০৮ এবং শ্রমিক নয় এমন সদস্যদের সংখ্যা ৭২৪৬ জন। হুলদিবাড়ি চা বাগিচা এমজিএনআরইজিএস এর সুবিধা ভোগ করে। বাগিচাটি আর্থিকভাবে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক এর উপর নির্ভরশীল। হলদিবাড়ি চা বাগানের লিজ হোল্ডার হলদিবাড়ি ইন্ডাস্ট্রিজ এন্ড প্লান্টেশন কোম্পানি লিমিটেড। চা বাগানটির লিজ এর ভ্যালিডিটির সময়কাল ২০২৫ সাল। বাগিচায় ব্যক্তিগত ইলেক্ট্রিক মিটার সহ পাকাবাড়ির সংখ্যা ১২৬৭ টি। আধা পাকাবাড়ির সংখ্যা ৬ টি। অন্যান্য শ্রমিক আবাস ১৭৫ টি। মোট শ্রমিক আবাস ১৪৪৮ টি। মোট শ্রমিক ২৩০৮ জন। বাগানে শতকরা ৬৩ শতাংশ শ্রমিক আবাস এবং অন্যান্য বাসগৃহ আছে।
উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি তিস্তা থেকে সঙ্কোশ পর্যন্ত বিস্তৃত ভূখণ্ডের নাম হয় ডুয়ার্স। এক সময় যে ভূখণ্ডকে ‘আনপ্রোডাক্টিভ’ ভেবে ভুটানকে উপঢৌকন দিয়ে দিয়েছিল সরকার, সেখানে চায়ের চাষ শুরু হয় ১৮৭৪ সালে। যতই দৃষ্টিনন্দন হোক চারদিক, এই বাগিচা অঞ্চলে জাঁকিয়ে বসেছিল ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর আর ডেঙ্গু। যোগাযোগ ব্যবস্থা বলে কিছুই ছিল না। তাই উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু আর মৃত্যুভয় এসে জমাট বেঁধেছিল এখানে। চা-বাগানের ইউরোপীয় মালিকরা নজর দিয়েছিলেন চিকিৎসা পরিষেবার দিকে। বাগান গড়ে উঠলে তার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালও গড়ে উঠেছিল। সেখানে নিযুক্ত হলেন লাইসেন্সড মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি বা এলএমএফ। জলপাইগুড়ির জ্যাকসন মেডিক্যাল স্কুল থেকে পাশ করে আসা অনেকেই চা-বাগানের হাসপাতালের ডাক্তার হয়ে গিয়েছিলেন। স্টেথোস্কোপ না আসা পর্যন্ত সেখানে দেখা মিলত নাড়িটেপা ডাক্তারদের। অনেক শিক্ষিত বঙ্গসন্তান চা-বাগানে চিকিৎসক হিসেবে যোগ দিলেন। তাঁদের বেতন আহামরি না হলেও প্রবল সম্মান ছিল। মানুষ প্রায় দেবতাজ্ঞানে দেখতেন তাঁদের। হলদিবাড়ি চা-বাগিচায় হাসপাতাল আছে।এলাম হাসপাতালে। দেখলাম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হাসপাতালে মেল ওয়ার্ড আটটা, ফিমেল ওয়ার্ড বারোটা, আইসোলেশন ওয়ার্ড চারটে এবং মেটারনিটি ওয়ার্ড আটটা। বাগানে হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার আছে। অ্যাম্বুলেন্স আছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রও চোখে পড়েছিল। বাগিচায় ডাক্তার রয়েছে। ট্রেন্ড নার্স এবং কম্পাউন্ডার রয়েছে দুজন করে, স্বাস্থ্য সহযোগী আছে একজন। হাসপাতালে ভর্তি হলে পর্যাপ্ত পরিমাণ সুষম খাবার সরবরাহ করা হয়। চিকিৎসার জন্য শ্রমিকদের বাগানে অবস্থিত প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রেফার করা হয়। বাগিচায় ওষুধ প্রাথমিক বা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহযোগিতায় সরবরাহ হয়।
চলতে চলতে বারেবারে চোখ চলে যাচ্ছিল কর্মরত নারী শ্রমিকদের দিকে। বিভিন্ন বেশভূষা, বিভিন্ন গায়ের রঙ। নেপালি, মদেশিয়া, উপজাতিই বেশি। তবে অনেকের বেশভূষা দেখে অবাক লাগলো। বেশ টিপটপ। চা বাগানের প্রবীণা মহিলা আদিবাসী শ্রমিকরা খুব দীর্ঘাকৃতি হন না। বরং নেপালী শ্রমিকদের মধ্যে তেমন দীর্ঘ শরীর দেখা যায়। চা পাতা তোলার মাঝে অবসরটুকুতে বাড়ির বেড়ার বাইরের আমগাছটির ছায়ায় দেখলাম এক মহিলা বসেছেন দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে। ম্যানেজার বাগানের এক ফ্যাক্টরি কর্মীকে দিয়ে দিয়েছিলেন গাইড হিসাবে। দেখলাম আদিবাসী সেই প্রৌঢ়া শ্রমিকের আদিম পুরাতন মুখশ্রীতে অজস্র কুঞ্চনের রেখা। বড় বিচিত্র সেই মুখ। কানে বড় করে ফুটো করা, তার মধ্যে শক্ত ফিতে গোল পাকালে যেমন হয় তেমনি একটা কিছু অদ্ভুত লাল রঙের অলংকার গুঁজে দেওয়া আছে কানের ফুটোর মধ্যে। বাঙালি মহিলাদের মতোই সাধারণভাবে শাড়ি পড়েছেন। গাইড আমাকে জানালো চায়ের লিকার দিয়ে ভাত মেখে নিচ্ছেন তিনি। সেই খাবার তারপর দ্রুত খেয়ে নেবেন। ওর ভাতের সঙ্গে আমাদের মতো মাছ/ডিম নেই কিংবা নিদেনপক্ষে ছিল না কোন ভদ্রস্থ ডাল-তরকারি। আসলে আমরা যে ড্রইং রুমে বসে চা পান করি। কিংবা বিনোদনের জন্য কোন ঠেকে। কোনদিন ভেবে দেখিনি ওদের চোখের তলে এত কালি এলো কোথা থেকে আর চলে গেল কী করে শরীরের এনার্জি এবং হয়তো রক্তের হিমোগ্লোবিন। এ সব কথা মনে হয়নি শুধু নয়, বিষয়টা আমাদের অস্বাভাবিকও ঠেকেনি। মনে হত এমন হওয়াই নিয়ম। ওদের কাজ হল চা পাতা তোলা, হাড়িয়া খাওয়া আর রাত্রে মাদল বাজিয়ে নাচা। ওদের ছেলেমেয়েদের কাজ হল লেখাপড়া না শেখা, অকথ্য গাল দেওয়া, একটু বড় হলে চা বাগানের লেবার হয়ে যাওয়া। হলদিবাড়ি চা বাগিচায় স্থায়ী ক্রেশ নেই। অস্থায়ী ক্রেশের সংখ্যা চারটে। ক্ৰেশে পর্যাপ্ত জলের ব্যাবস্থা, শৌচালয় আছে। দুধ, বিস্কুট বা পুষ্টিকর খাবার ক্রেশের শিশুদের দেওয়া হয়। পর্যাপ্ত পানীয় জল ক্ৰেশে এবং চা বাগানে সরবরাহ করা হয়। ক্রেশের মোট অ্যাটেনডেন্টের সংখ্যা চারজন।
বিদায় নেবার আগে জানলাম বাগিচাতে লেবার ওয়েলফেয়ার অফিসার আছেন। বাগিচায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও আছে। বাগিচা সংলগ্ন উচ্চ বিদ্যালয় বিন্নাগুড়িতে আছে। শ্রমিক সন্তানদের বিদ্যালয়ে নেবার জন্য যানবাহনের ব্যাবস্থা হিসাবে দুটো বাস আছে। বাগানে বিনোদনমূলক ক্লাব আছে। খেলার মাঠ আছে। টি গার্ডেনে নিয়মিত পি এফ বা গ্র্যাচুইটির টাকা জমা পড়ে। বোনাস চুক্তি অনুযায়ী মিটিয়ে দেওয়া হয়। পি এফ বা গ্র্যাচুইটি বকেয়া নেই বললেই চলে। বকেয়া থাকে না। শ্রমিকদের মজুরি, রেশন এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা চুক্তি অনুযায়ী দেওয়া হয়। মাঝেমাঝে বিভিন্ন ধরণের অভিযোগ শোনা যায়। তবে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সেগুলি মিটিয়ে নেওয়া হয়।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴