কারবালা টি গার্ডেন/গৌতম চক্রবর্তী
কারবালা টি গার্ডেন
গৌতম চক্রবর্তী
বানারহাট থেকে ইউবিআই রোড ধরে কারবালা টি গার্ডেন ৫.৩ কিমি। সময় লাগে ১৪ মিনিট। চলেছি কারবালা। হিমেল শীতের বেলা। সূর্য মাথার উপরে। তাও তাপ লাগছে না শরীরে। চারিদিকে কাটিং এবং প্রুনিং করা চা গাছের সারি। শীতে চা গাছে ভাল পাতা না হওয়ায় বাজারে চায়ের মান পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেই সঙ্গে চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি হয়ে গেলে দাম পড়ে যাবে এটাও চিন্তা বাড়ায় বাগানগুলির। এই কারণেই বছর পাঁচেক আগে থেকে শীতের সময়ে কয়েক মাস দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাগানে পাতা তোলা থেকে শুরু করে চা উৎপাদন পুরোটা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল টি বোর্ড। তার বদলে সেই সময়ে গাছের পরিচর্যা এবং বাগানের অন্যান্য রক্ষণাবেক্ষণের কাজে মন দেওয়ার কথা বলা হয়। প্রতিবছর চা বাগিচা শিল্পের গুণগত মানোন্নয়নের এ রাজ্যের পাশাপাশি বিহার, সিকিম, হিমাচলপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের জন্য এক নির্দেশিকায় শীতকালীন মরশুমে বাগানগুলিতে কাঁচা পাতা তোলার শেষদিন ধার্য করে দেয় টি বোর্ড। শীতের শুখা মরসুমে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত বাগানে পাতা তোলা এবং উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়। মোটামুটিভাবে এই সময়কাল থাকে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। যেমন ২০২০ সালের ৩১ শে অক্টোবর টি বোর্ড জানায় উত্তরবঙ্গের বাগানগুলিতে ১৫ ই ডিসেম্বর থেকে পাতা তোলা বন্ধ রাখতে হবে। আসলে শীতের মরশুমে কাঁচা চা পাতা তোলার সময়সীমার বিষয়টি চা গবেষণা সংস্থা ও উৎপাদক সংস্থার মতামতের ওপর নির্ভরশীল। ২০২০ সালে এই বিষয়ে মামলা মোকদ্দমাও হয়েছিল। পর্ষদ মনে করে পাতার গুণগত মান পড়ে যাওয়াতেই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে দাম কমছে। পাতার মান কমে যাওয়ার পিছনে বাগান কর্তৃপক্ষের একাংশের মনোভাবও দায়ী। কোনও পরিস্থিতিতেই শীতের সময়ে যেন চা পাতা উৎপাদন না হয় সেটা পর্ষদ নজরদারি করে। নির্দেশ মানা হচ্ছে কি না তা দেখতে চা পর্ষদের একাধিক দল বিভিন্ন চা বাগানে হানা দেয় টিম করে।
চা-বাগিচায় শীতকালীন পরিচর্যার কাজ শুরু হয় নভেম্বরের শেষ থেকে। চলে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। এ সময়ে নতুন কুঁড়ি পাওয়ার জন্য চা গাছগুলিকে ছেঁটে ফেলা হয়, যা চা-বাগানের ভাষায় ‘প্রুনিং’ নামে পরিচিত। এ ছাড়াও প্রতিটি চা গাছের গোড়ার চার ধারে ফুট দেড়েকের গর্ত খুঁড়ে তা থেকে বেছে বেছে বার করা হয় শামুকজাতীয় এক প্রকার প্রাণীকে, যে কাজটিকে বলা হয় ‘থালি’। চা গাছ ছাঁটার পর সেগুলির কাণ্ড চট দিয়ে ভাল করে ঘষে ফেলা হয় যাতে সহজেই নতুন পাতা আসতে পারে। এই কাজটিকে বলা হয় ‘স্যানিটেশন'। এ ছাড়াও ছায়াগাছগুলির গোড়ায় দেওয়া হয় চুন। মাটির পিএইচ ভ্যালু বজায় রাখতে মেশানো হয় ডলোমাইট। এইসব পরিচর্যার পাশাপাশি রয়েছে কৃত্রিম জলসেচের মতো ব্যয়বহুল অথচ অপরিহার্য কাজকর্ম। চা-মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, এসব কাজের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ নগদে কিনতে হয়। শীতকালীন পরিচর্যায় শ্রমিকদের ওভারটাইম বা নির্ধারিত সময়ে বেশি কাজ করানোটাও বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়। তাই যে মজুরি দিতে হয়, সেটা সাপ্তাহিক ভিত্তিতে নগদে দেওয়াই চা-বাগিচার দস্তুর। চা মালিকদের অন্যতম সংগঠন ডিবিআইটিএ সূত্রে জেনেছিলাম চির-আকাঙ্ক্ষিত অক্টোবর মাসের বৃষ্টির পাশাপাশি রাতের তাপমাত্রায় স্থিতাবস্থা না থাকলে প্রত্যাশিত ফলাফল পাওয়া যায় না। রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ার পাশাপাশি হৈমন্তী চায়ের ক্ষেত্রে রাতের তাপমাত্রায় স্থিতাবস্থা থাকলে উৎপাদন এবং দামে গুণগত পরিবর্তন আসে। টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (টাই)-র ডুয়ার্স শাখার সম্পাদক তথা বিশিষ্ট চা-বাগান বিশেষজ্ঞ রাম অবতার শর্মা একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, অক্টোবরে বৃষ্টির সুফল নভেম্বরে পাওয়া যায়। হেমন্তকালীন উৎকৃষ্ট চায়ের দাম অনেকটাই বাড়ে। যেহেতু বৃষ্টি হলে মাটি আর্দ্র থাকে তাই নভেম্বর মাসে বৃষ্টি হলে কৃত্রিম জলসেচের খরচ বাবদ যে সাশ্রয় হয় সেটাও স্বস্তিদায়ক হয়। ডিসেম্বর মাস থেকে কৃত্রিম জলসেচ প্রদান করার জন্য প্রয়োজনীয় খরচাও তুলনামূলকভাবে অন্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হয়। ডুয়ার্সে কারবালার মত প্রায় ২০টির মতো বাগান আছে যাদের তৈরি চা নিলামে ২০০ টাকা কিলোগ্রাম দরে বিক্রি হয় কেবলমাত্র গুণগত উৎকর্ষের জন্য।
শীতের সময় অনেক সময়ে অতিরিক্ত উৎপাদনের আশায় খারাপ পাতাও তোলা হয়। সেই প্রবণতাতে লাগাম টানতেই বারবার শীতের সময়ে পাতা উৎপাদন বন্ধ করতে চা পর্ষদ আসরে নামে। কারণ চা বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য অনুযায়ী শীতের সময়ে সাধারণত পাতা তোলা বন্ধ থাকে। কারণ এই সময়ে পাতার মান ভাল হয় না। অতিরিক্ত মুনাফার আশায় কেউ কেউ সেই খারাপ পাতাই তুলে পারেন বলে আশঙ্কা। তাই আগেভাগে সর্তক করে রাখে চা পর্ষদ। তাই একটি বা দু’টি বাগানের ভুল পদক্ষেপ পুরো শিল্পে প্রভাব ফেলতে পারে। কড়া মনোভাব নেওয়া হয়। সে কথাই বাগানগুলিকে আগে থেকে জানিয়ে রাখা হয়। শুনলাম কাঁচা পাতা এখন দু’ভাবে তোলা হয়। হাতে এবং মেশিনে। হাতে তোলাই শতাব্দী প্রাচীন প্রথা। মেশিনে তোলা একেবারেই সাম্প্রতিক। মেশিনে পাতা তুললে মান খারাপ হয় এমন অভিযোগ টি বোর্ড কর্তাদের একাংশের। জিজ্ঞেস করলাম দুইয়ে তফাত কোথায়? জানলাম হাতে তোলার চাইতে মেশিনে পাতা তোলার খরচ অর্ধেকেরও কম। হাতে পাতা তুলতে কেজি প্রতি খরচ প্রায় ৭ টাকা। সেখানে মেশিনে কেজি প্রতি খরচের পরিমাণ ৩ টাকা। মেশিনে কম সময়ে অনেক বেশি পাতা তোলা যায়। শ্রমিকও অনেক কম লাগে। হাতে পাতা তুললে পুরনো পাতা বা ডালের অংশ উঠে আসে না। গুণগত মান ভাল হয় বলে ধারণা। তাই ভাল দামও মেলে। একবার পাতা তোলার ৭-১০ দিনের মধ্যেই গাছে নতুন পাতা আসে। ৪ মাসে ৩-৪ রাউন্ড পাতা তোলা যায়। পাতা তোলার পরিমাণ কম হয়। ২০২৩ সালে বাগান বন্ধের দিনক্ষণ ঘোষণা করার ক্ষেত্রে টি বোর্ড বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল ১১ ডিসেম্বরের পরে দার্জিলিং, সিকিম, হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের চা বাগানে আর গাছ থেকে পাতা তোলা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্স ও তরাই এবং বিহারের বাগানে সেই সময়সীমা ২৩ ছিল ডিসেম্বর। দার্জিলিং, সিকিম, হিমাচলপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন বাগানের কারখানায় পাতা থেকে চা তৈরির শেষ দিন ছিল ১৩ ডিসেম্বর। ডুয়ার্স, তরাই ও বিহারের ক্ষেত্রে সেই সময়সীমা ছিল ২৬ ডিসেম্বর।
জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ি ব্লক এর কারবালা টি গার্ডেন এর পরিচালক গোষ্ঠী অ্যান্ড্রু ইউল অ্যান্ড কোং প্রাইভেট লিমিটেড এটি একটি অতি পুরনো বাগান যারা সুনামের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাগানে চা রপ্তানী করছে। গার্ডেনটি গড়ে উঠেছিল ১৮৬২ সালে। ডিবিআইটিএ ম্যানেজমেন্ট গোষ্ঠী বাগানটি পরিচালনা করে থাকে। বাগানে মোট ম্যানেজারিয়াল স্টাফ ৯ জন। কোম্পানির হেড অফিস কলকাতায়। বাগানটি জলপাইগুড়ি সদর মহকুমার বানারহাট থানার অন্তর্গত। স্বীকৃত ট্রেড ইউনিয়ন তিনটি। এগুলি হল এনইউপিডব্লিউ, পিটিডব্লিউইউ, এবং সিবিএমইউ। কারবালা চা বাগিচার আয়তন ১০২১.৯৫ হেক্টর। যদিও চাষযোগ্য আবাদিক্ষেত্র ৭৫৫.২৪ হেক্টর। এক্সটেন্ডেড জমি নেই। আপরুটেড এবং নতুন বপনযোগ্য আবাদীক্ষেত্র ১৭.০২ হেক্টর। ড্রেন এবং সেচের সুবিধাযুক্ত অঞ্চল ৭৫৫.২৪ হেক্টর। প্রতি হেক্টর উৎপাদনযোগ্য ড্রেন এবং সেচযুক্ত প্ল্যান্টেশন এরিয়া থেকে ১৩১২ কেজি করে চা ফ্যাক্টরিতে তৈরি হয়। চা বাগিচার সাব স্টাফের সংখ্যা ১১৮ জন। করণিক ৪ জন। ক্ল্যারিক্যাল স্টাফ ২০ জন এবং টেকনিক্যাল স্টাফ ১৮ জন। বাগানে শ্রমিক পরিবারের সংখ্যা ১২৭০। মোট জনসংখ্যা ৯১২৯ জন। স্থায়ী শ্রমিক ১৬১৭ জন। কম্পিউটার অপারেটর একজন। কর্মরত শ্রমিক ১৭৭৬ জন এবং শ্রমিক নয় এমন সদস্যদের সংখ্যা ৭৩৫৩ জন। চা বাগানে নিজস্ব কাঁচা চা পাতা উৎপাদনের গড় ৪০ লাখ কেজি। ফ্যাক্টরিতে নিজস্ব উৎপাদিত চা ৮-৯ লাখ কেজি। বাইরের বাগান থেকে সংগৃহীত কাঁচা পাতায় উতপাদিত চা ২-৩ লাখ কেজি। মোট বাৎসরিক উৎপাদিত চা ১১-১২ কেজি। বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বাগানে ইনঅরগ্যানিক সিটিসি চা উৎপাদিত হয়। বাগানটি ছোটো হলেও চরিত্রগত দিক দিয়ে উন্নতমানের বাগান। কারবালা চা বাগিচা এমজিএনআরইজিএস প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা লাভ করে না। আর্থিকভাবে ইউনিয়ন ব্যাংকের উপর বাগানটি নির্ভরশীল এবং আর্থিকভাবে দায়বদ্ধ। বাগানটির লিজ হোল্ডার অ্যান্ড্রু ইউল এন্ড কোম্পানি লিমিটেড। লিজের ভ্যালিডিটির সময়কাল ২০২৫ সাল।
ক্ষেত্রসমীক্ষায় এসে বাগিচার পর বাগিচা পরিভ্রমণ করতে করতে একটা কথা মনে হল, সবকিছু নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলেই হয় না। সমস্যা যেমন আছে, সমস্যার সমাধানও তেমন আছে। প্রয়োজন মালিক-শ্রমিক-সরকার পক্ষের মেলবন্ধন। গত বছর অক্টোবরের অপ্রত্যাশিত বৃষ্টি এবং তারপরই মেঘ কেটে গিয়ে শরৎসুলভ রোদ অটাম ফ্ল্যাশ বা হেমন্তকালীন উৎপাদনের পথ প্রশস্ত করেছিল। এমন পরিস্থিতি প্রায় এক যুগ পরে ফের তৈরি হয়েছে বলে চা-বাগিচাগুলি জানিয়েছিল। হৈমন্তিক চায়ের বিশেষত্বই হল অন্য মরশুমের থেকে গুণগতভাবে তা অনেকটাই আলাদা। ফলে দেখা গিয়েছিল প্রাকৃতিক কারণে যে নতুন কুঁড়ি বন্ধ্যা মরশুমেও চা-গাছগুলিতে এসেছে তা যে মোট উৎপাদনকে এক ধাক্কায় অনেকটা বাড়িয়ে দেবে শুধু তা-ই নয়, দামও মিলবে চড়া হারে। গড়ে ১৫ শতাংশ দাম বৃদ্ধি যে নিশ্চিত, সেটা চা শিল্পমহল থেকেই জানা গিয়েছিল। উৎপাদনও বেড়েছিল ১০-১৫ শতাংশ হারে। ডুয়ার্সের একটি প্রতিষ্ঠিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চা-বাগানের ম্যানেজারের কাছ থেকে জেনেছিলাম জানুয়ারি থেকে অগাস্ট পর্যন্ত তাঁরা নিলামে তৈরি চায়ের গড় দাম পেয়েছিলেন ১৭৫ টাকা। অটাম ফ্ল্যাশ-এর কারণে নতুন কাঁচা পাতা যে নিশ্চিতভাবে পাওয়া যায় সেটা নভেম্বর এবং ডিসেম্বর— এই দুই মাসে উৎপাদন বাড়ায় ১০ শতাংশ হারে। তাহলে এখানেই প্রশ্ন বাড়তি ১০,০০০ কিলোগ্রাম উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বর্ধিত দামের হিসেবে অতিরিক্ত আয়ের একটা অংশ তাহলে বাগানগুলির পরিচর্যা, শ্রমিকদের আবাস, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, পানীয় জল, শ্রমিক পরিবারগুলির সন্তানদের শিক্ষার জন্য ব্যয় করা হবে না কেন? অথচ লক্ষ্য করে দেখা যাচ্ছে, নানান ছুতোনাতায় বাগানগুলি শীতের মরশুমে বন্ধ করে দিতে প্রয়াসী হচ্ছেন মালিকপক্ষ। সরকারও উদাসীন।
আলোচনা হচ্ছিল কারবালা চা বাগিচার অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারের সঙ্গে চা বিপনন নিয়ে। তাঁর মতে, “বিকল্প ভাবনা যে কোনও ক্ষেত্রেই কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। উত্তরবঙ্গের চা শিল্পও এখন নতুন করে নানা কিছু ভাবছে”। গার্ডেন ফ্রেশ চায়ের নিজস্ব মৌতাত রয়েছে। আর তাতে বাড়তি ফ্লেভার জোগাতে আদা, কমলালেবু, পেস্তার মতো হরেক কিসিমের উপাদান যোগ করাটা নতুন কিছু নয়। আবার স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে কখনো-সখনো জুই-গোলাপের নির্যাস মিশিয়ে সুগন্ধও নিয়ে আসা হয় চায়ে। গ্রীষ্মকালে এখন আইস টি বা বরফ চা যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দেশ-বিদেশে। রয়েছে বিশেষভাবে তৈরি ধোঁয়ার গন্ধমাখা কুলহার চা বা মশলা দিয়ে তৈরি স্পাইস টি। রমরমিয়ে বহুদিন ধরেই এসব বাজারে চলছে। টিআরএ'র টোকলাই শাখার হাত ধরে এর আগে টি-কোলা, টি-বিস্কুট, টি- ট্যাবলেটের মতো নানা পণ্য বাজারে এসেছে। স্থান ও সময়ভেদে চায়ের স্বাদ ও গুণ অক্ষুণ্ণ রেখে তৈরি ওই সমস্ত পণ্য এখনও জনপ্রিয়। এর বাইরে রয়েছে গরম জলে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চা তৈরির ইনস্ট্যান্ট টি। ট্রেন বা প্লেনে যাত্রীদের ওই চা-ই দেওয়া হয়ে থাকে। ডুয়ার্সের একটি বাগানে ওই ইনস্ট্যান্ট চা তৈরির আলাদা ইউনিটই রয়েছে। ওই চা অবশ্য সেখান থেকে ১০০ শতাংশ রপ্তানি হয়। মূলত সেটা জাপানে যায়। চা গবেষণা সংস্থার (টিআরএ) উত্তরবঙ্গ আঞ্চলিক গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রের উপদেষ্টা ডঃ সোমেন বৈশ্যর কাছ থেকেও জেনেছিলাম ‘চা-কে জনপ্রিয় করে তুলতে নানা ধরনের পন্থা বহুদিন ধরেই বিভিন্ন উৎপাদক অবলম্বন করছেন।
বাগিচায় ব্যক্তিগত ইলেক্ট্রিক মিটার সহ পাকাবাড়ির সংখ্যা ১৩১২ টি। মোট শ্রমিক ১৭৭৬ জন। বাগানে শতকরা ৭৪ শতাংশ শ্রমিক আবাস এবং অন্যান্য বাসগৃহ আছে। বাগিচায় শৌচাগারের সংখ্যা ৯৪৭ টি। কারবালা চা বাগিচাতে হাসপাতাল আছে। মেল এবং ফিমেল ওয়ার্ডের সংখ্যা বারোটা করে। আইসোলেশন ওয়ার্ড আছে আটটা এবং মেটারনিটি ওয়ার্ড আছে দুটো। বাগানের হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার আছে, অ্যাম্বুলেন্স আছে, আছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। অল্টারনেটিভ মেডিসিনের আবাসিক ডাক্তারও রয়েছে চা বাগিচায়। আছে ট্রেন্ড নার্স একজন, তিনজন মিড ওয়াইভস এবং একজন করে কম্পাউন্ডার এবং স্বাস্থ্য সহযোগী। বাগিচায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করা হয়। চিকিৎসার জন্য শ্রমিকদের বাগানে অবস্থিত প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রেফার করা হয়। বাগিচায় ওষুধ সরবরাহ হয়। ওষুধের তালিকা স্টক অনুযায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নোটিশ বোর্ডে দেওয়া হয় না। উন্নত মানের পথ্য সরবরাহ এবং নিয়মিত ডায়েট চার্ট অনুসরণ করা হয়। ক্ৰেশে পর্যাপ্ত জলের ব্যাবস্থা, শৌচালয় আছে। দুধ, বিস্কুট বা পুষ্টিকর খাবার ক্রেশের শিশুদের দেওয়া হয় মাঝে মাঝে। পর্যাপ্ত পানীয় জল ক্ৰেশে এবং চা বাগানে সরবরাহ করা হয়। কারবালা চা বাগিচাতে স্থায়ী ক্রেশ একটা। অস্থায়ী ক্রেশ নেই। অ্যাটেন্ডেন্ট একজন। ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে নিয়ে যাবার জন্য বাগান থেকে বরাদ্দ করা ট্রাক আছে দুটো। ২০১১ সাল থেকে লেবার ওয়েলফেয়ার অফিসার আছে। বাগানে বিনোদনমূলক ক্লাব, খেলার মাঠ আছে। টি গার্ডেনে নিয়মিত পি এফ বা গ্র্যাচুইটির টাকা জমা হয়। বোনাস চুক্তি অনুযায়ী মিটিয়ে দেওয়া হয়। পি এফ বা গ্র্যাচুইটি বকেয়া থাকে না। শ্রমিকদের মজুরি, রেশন এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা চুক্তি অনুযায়ী দেওয়া হয়।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴