কাঁঠালগুড়ি চা বাগিচা/গৌতম চক্রবর্তী
কাঁঠালগুড়ি চা বাগিচা
গৌতম চক্রবর্তী
ভোর হতে না হতেই বালতি, বোতল নিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা। চা বাগান থেকে জলের ট্যাংক এলে তা থেকে জল নিতে রীতিমতো হুড়োহুড়ি করা বা জল নিয়ে পাহাড়ের গা বেয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করা। প্রত্যন্ত ডুয়ার্স বা পাহাড়ের এলাকায় এ দৃশ্য বিরল নয়। পাহাড়ে জলের সমস্যা মেটাতে সরকারি স্তরে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বটে। তবে তা যথেষ্ট নয়। তবে বৃষ্টি, ঝরনার জল ব্যবহার করে সেখানে সমস্যা মেটাতে কাজ চলছে। জলকষ্ট মেটাতে নানা স্তরে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। মূলত প্রাকৃতিক জলকে সংরক্ষণ করেই জলের চাহিদা মেটানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ঝরনার জল পরিকল্পনামাফিক ব্যবহার করা, বৃষ্টির জল ধরে রেখে তা পরে ব্যবহার করার মতো পদ্ধতিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। ডুয়ার্সের মেটেলি, নাগরাকাটা ব্লক এবং পাহাড়ের গরুবাথান এলাকায় জলসমস্যা নিরসনে বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রসারী। চা বাগিচাতে কাজ করতে গিয়ে ডুয়ার্সের চামুর্চি এলাকাতে তীব্র জলকষ্ট নিরসনে কাজ চলছে দেখে এলাম। আজিম প্রেমজি ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগিতায় গ্রামীণ জল সুরক্ষা নিয়ে কাজ চলছে। ডুয়ার্স এবং পাহাড়ের উঁচু অনেক জায়গায় ছোট ঝরনা রয়েছে। এই ঝরনার জল পরিকল্পনামাফিক ব্যবহার করে অনেক এলাকাতেই জল সমস্যার নিরসন করে ফেলা হয়েছে। তুলনামূলক নীচু গ্রামগুলিতে বিশেষ উপায়ে জলাধার তৈরি করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। এই জলাধার তৈরির আগে অবশ্য সেখানকার মাটির জলধারণ ক্ষমতা, জল সঞ্চালনের অভিমুখ ইত্যাদি সমীক্ষা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। উঁচু ও পাহাড়ি এলাকায় পাইপের মাধ্যমে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরের ঝরনা থেকে জল নিয়ে আসা হচ্ছে। চা শ্রমিক মহল্লায় ১০টি পরিবার পিছু একটি করে পানীয় জলের কল বসানো হয়েছে, ২০টি পরিবার পিছু করে দেওয়া হয়েছে স্নানের ব্যবস্থা। জলের সরবরাহ যাতে অবিরাম থাকে তার জন্য সৌরশক্তিকে কাজে লাগানো হচ্ছে। মাল মহকুমার নাগরাকাটা ব্লকেও একই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যে মেটেলি চা বাগানের মূর্তি ডিভিশনের টপ, জুরন্তি চা বাগানে ধানু লাইনে এ ধরনের কাজ করা হয়েছে। গরুবাথান পাহাড়ে এবং প্রসারী সূত্রে জানা গিয়েছে, খঁজখবর নিয়ে জানলাম কেন্দ্রীয় জলসম্পদমন্ত্রক ও রাজ্য জলসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুসারে কাজ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ভূগর্ভস্থ জলের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে অনেক এলাকায় মাটির নীচে জলস্তর তিন থেকে পাঁচ মিটার নেমে গিয়েছে। সেই কারণে জল অপচয় রোধ ও জল সংরক্ষণের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বৃষ্টির জল ধরে রেখে-তা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও। সরকারি উদ্যোগে এমজিএনআরইজিএ প্রকল্পে মেটেলির পানীয় জলের সমস্যা মেটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জলসমস্যা নিরসনে সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে আশান্বিত স্থানীয় বাসিন্দারা। মেটেলি চা বাগানের মূর্তি ডিভিশনের নীরজ ওরাওঁ , কুর্তি চা বাগানের অশোক লামারা উপকৃত হবেন বলে আশাবাদী। কথা বললাম রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণী এবং আদিবাসী উন্নয়ন বিভাগের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী বুলু চিকবড়াইকের সঙ্গে। জানলাম রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই জল ধরো জল ভরো সহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে জলসমস্যা নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগকেও তাই স্বাগত জানানো হচ্ছে। ডুয়ার্সের অনেক চা বাগানে এখনও পরিস্রুত পানীয় জল মেলে না শ্রমিকদের। নদী, ঝোরা থেকে জল সংগ্রহ করতে হয় তাঁদের। ভুটান সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত এলাকায় একটি কলের ওপর অনেক পরিবারকে নির্ভর করতে হয়। জেলার অনেক ব্লকে গভীর নলকূপ খনন করেও জল মেলা কঠিন। বানারহাটের চামুর্চি, মেটেলির পাহাড়ি এলাকায় এই সমস্যা আছে। তাই সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে জলাধার থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি পানীয় জলের কল বসানোর কাজ জলস্বপ্নের মাধ্যমে রূপায়িত করছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর। জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদের তহবিলেও বিভিন্ন চা বাগানে পানীয় জল পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ডুয়ার্সের চা বাগানে পরিশ্রুত পানীয় জলের সমস্যা নিজের চোখে দেখে এসে সাংসদ তহবিলের প্রথম দফার অর্থের অধিকাংশ টাকা চা বাগানের শ্রমিকদের পানীয় জল পরিষেবা দিতে বরাদ্দ করেছিলেন ডাঃ জয়ন্ত রায়।
নিজে চিকিৎসক হওয়ার ফলে পাণীয় জল প্রকল্পকেই গুরুত্ব দিয়েছিলেন প্রথম থেকেই। এই সমস্যা অনেক বাগানে এখনও রয়েছে। পরিশ্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থাকে বাস্তবায়িত করতে রাজ্যকে আরও সতর্ক হতে হবে। তবে দীর্ঘসূত্রীতা নিয়ে প্রশ্ন আছে আমনাগরিকের। কাজে সমস্যা হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৪০০ টি বাড়ির পানীয় জলের কলের সংযোগ বসানোর কথা, সেখানে তার অর্ধেক বা কিছু বেশি কাজ হচ্ছে। তবে জেলায় আইসিডিএস কেন্দ্র, প্রাথমিক স্কুল, প্রত্যন্ত এলাকায় জল সংযোগ স্থাপনে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর। কাঁঠালগুড়ি চা বাগিচাতেও চলছে জলপ্রকল্পের কাজ। বানারহাট থেকে রিয়াবাড়ি টি গার্ডেন হয়ে কাঁঠালগুড়ি টি গার্ডেন ১০ কিমি৷ সময় লাগে ২৫ মিনিট। বানারহাটের একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক দীপু কামী আমার বিশিষ্ট বন্ধু। দীপুর বাড়ি কাঁঠালগুড়ি। দীপুই আমাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালো সবকিছু। ধূপগুড়ি ব্লক এর কাঁঠালগুড়ি টি গার্ডেন এর পরিচালক গোষ্ঠী আরিয়ান এজেন্সিস প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। বাগানটি ডিবিআইটিএর সদস্য। দীপুর কাছ থেকে জানলাম বাগানে মোট ম্যানেজারিয়াল স্টাফ চারজন। কোম্পানির মালিকের নাম নরেন্দ্র বেরেলিয়া এবং কোম্পানির হেড অফিস সেবক রোড, শিলিগুড়ি। বাগানে স্বীকৃত ট্রেড ইউনিয়ন নয়টি। তার মধ্যে প্রধান হল সিবিএমইউ, এনইউপিডব্লিউ, ডিসিবিএমইউ, পিটিডব্লিউইউ, ডিটিডিপিএল ইউ। তবে ট্রেড ইউনিয়ন থাকলেও ট্রেড নেই। বাগানটি বানারহাট থানার অন্তর্গত। কাঁঠালগুড়ি চা বাগানের আয়তন এবং ৭৭৭.০৬ হেক্টর। তবে এক্সটেন্ডেড জমির পরিমাণ ৪৯৯.২৯ হেক্টর। আপরুটেড এবং নতুন বপনযোগ্য আবাদিক্ষেত্র ২১৬.১৫ হেক্টর। ড্রেন এবং সেচের সুবিধাযুক্ত অঞ্চল ১৩০.১৭ হেক্টর। মোট চাষযোগ্য আবাদিক্ষেত্র ৪৯৯.২৯ হেক্টর। কাঁঠালগুড়ি চা বাগিচার সাব স্টাফ এর সংখ্যা ৫২ জন। করণিক ৭ জন। ক্ল্যারিক্যাল এবং টেকনিক্যাল স্টাফ ১৪ জন। বাগানের শ্রমিক পরিবারের সংখ্যা ১১১২ জন। মোট জনসংখ্যা ৬০০০। স্থায়ী শ্রমিক ১২৯০ জন। সর্বমোট সাবস্টাফ ৫২ জন। মোট কর্মরত শ্রমিক ১৩৫৬ জন এবং শ্রমিক নয় এমন সদস্যদের সংখ্যা ৪৬৪৪।
কাঠালগুড়ি চা-বাগিচায় ব্যক্তিগত ইলেকট্রিক মিটার সহ পাকাবাড়ির সংখ্যা ১৭ টি। সেমি পাকা বাড়ি ৬৪৭, বৈদ্যুতিক সংযোগবিহীন শ্রমিক আবাস ৫৭। অন্যান্য বাড়ির সংখ্যা ৩৯১। মোট শ্রমিক আবাস ১১১২। শ্রমিক সংখ্যা ১৩৫৬। বাগিচায় শতকরা ৮২ শতাংশ শ্রমিক আবাস এবং অন্যান্য বাসগৃহ আছে। কাঁঠালগুড়ি চা বাগান এমজিএনআরইজিএস এর সুবিধা ভোগ করে। আর্থিক ক্ষেত্রে বাগানটি কোন ব্যাংকের উপর নির্ভরশীল নয়। বাগানটির লিজ হোল্ডার আরিয়ান এজেন্সিস প্রাইভেট লিমিটেড। বাগানটি স্পেশাল কেস হিসাবে ফ্রেশ লিজ এর সুবিধা পেয়েছে। লিজের ভ্যালিডিটির মেয়াদকাল জানা যায়নি। কাঁঠালগুড়ি চা বাগিচায় হাসপাতাল নেই। ডিসপেন্সারি থাকলেও কোন প্রকার স্বাস্থ্য পরিষেবা নেই। কাঁঠালগুড়িতে দেখলাম স্থায়ী ক্রেশ একটা। ক্রেশে অ্যাটেনডেন্ট একজন। কোন পরিবহন নেই। ক্লাব এবং খেলার মাঠ আছে। লেবার ওয়েলফেয়ার অফিসার নেই। বাগিচাতে ঘুরতে ঘুরতে দীপুর কাছ থেকে অনেক তথ্য পেলাম। প্রতীক্ষিত প্রাক-বর্ষার বৃষ্টির সময় চায়ের গুল্মগুলি নতুনভাবে অঙ্কুরিত হতে শুরু করে যা ধীরে ধীরে নতুন সবুজ পাতায় পরিপূর্ণ রূপে বিকাশ লাভ করে। চা ঝোপের বৈশিষ্ট্যযুক্ত 'ফ্ল্যাট টেবিলে” একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় নতুন ক্রমবর্ধমান অঙ্কুরগুলি 'টিপিং এবং প্ল্যাকিং' এর দ্বারা তৈরি হতে শুরু করবে। সুপ্ত ঠান্ডা আবহাওয়ার মাসগুলিতে কারখানার পরিবেশ অন্যরক্ম থাকে বলে নির্দিষ্ট উষ্ণতাতে পাতাগুলিকে শুকাতে হবে। চা কারখানায় ব্যবহৃত লেগ-কাট মেশিনগুলি মূলত তামাক কাটার ছিল যা পরিবর্তিত হয়েছিল চা কাটার হিসাবে। দীপুর কাছ থেকে জানলাম 'অর্থোডক্স' বা 'সিটিসি' ধরনের উত্পাদনে সদ্য কাটা পাতাগুলি পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলির আগে কয়েক ঘন্টার জন্য প্রথমে 'শুকানো' হয়। বাগান থেকে সদ্য কাটা সবুজ চা পাতা আসার সাথে সাথে লেগ কাট চা তৈরি করা শুরু হয়। এই প্রক্রিয়াটির ফলে দুধ যোগ করা হলে চা একটি উজ্জ্বল তামাটে রঙ ধারণ করে। এই চা এর চাহিদা তখনও ছিল। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে। তারা সিটিসি এবং অর্থোডক্স চা পছন্দ করে। কলকাতা এবং লন্ডনের ব্লেন্ডাররা তাদের ব্র্যান্ডের জন্য 'ফিলার' হিসাবে শক্তিশালী এই তামাটে 'রঙের' ডুয়ার্স চা ব্যবহার করে। ফ্যাকাশে এবং সুগন্ধিযুক্ত 'দার্জিলিং'- চা এর পাশাপাশি ডুয়ার্স 'লেগ কাট'-এর স্বাদ বেশ কড়া। এটিতে অভ্যস্ত হতে কিছু সময় লাগে। ডুয়ার্স সহ ভারতে প্রতি বছর মে মাসের শেষ থেকে জুনের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত যে সুস্বাদু চা অঈরি হয় তা চা সম্প্রদায়ের সকলের কাছে 'সেকেন্ড ফ্লাশ' হিসাবে পরিচিত।
কাঠালগুড়ির সহকারি ম্যানেজারের কাছ থেকে শুনলাম রতনের গল্প। রতন ছিল নাগরকাটার হেড সরদার। লম্বা, চর্বিহীন ছিপছিপে মেদবিহীন চেহারার রতনের একটা আলগা চমক ছিল। মানুষ হিসেবে অত্যন্ত অমায়িক রতন আচার-ব্যবহারে শ্রমিকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং বিশ্বাসভাজন ছিলেন। কাজের ক্ষেত্রে সততা এবং আনুগত্যের ট্র্যাক রেকর্ড ছিল অনেক উচ্চে। প্রথম প্ল্যান্টেশন যখন হয়েছিল তখন রতনের বাবা লালমোহন ছোটনাগপুর মালভূমি থেকে প্রচুর সংখ্যক শ্রমিক নিয়ে এসেছিলেন। ফলে তিনি সিরদার পদে উন্নীত হন। বহু বছর পরে লালমোহনের মৃত্যুতে রতন তার পিতার পদের উত্তরাধিকারী হন। অর্ধ-অবসরের পর্যায়ে রতন মুন্সি তার কোম্পানির কোয়ার্টারে হাঁস এবং শুকর পালন করত এবং অতিরিক্ত আয়ের জন্য তাদের বিক্রি করত। ম্যানেজার সাহেব বলছিলেন, “বড়দিনের কয়েক সপ্তাহ আগে যখন ঠাণ্ডা আবহাওয়ার মরসুমে নতুন গাছ লাগানোর কাজ চলছে তখন রতন একদিন বিকেলে অফিসের বারান্দায় হাজির। প্রথাগত অভিবাদন শেষে যখন সে আমার সামনে নীরবে দাঁড়িয়েছিল তখন আমি তার উপস্থিতির উদ্দেশ্য জানতে চাইলাম। সে বিনয়ের সাথে জানাল বড়দিনের লাঞ্চের জন্য সে একটা মোটা হৃষ্টপুষ্ট হাঁস তরুণ ব্যাচেলর হিসাবে আমাকে ভেট দিতে চায় মাংস খাওয়ার জন্ত। আমি রতনকে সরাসরি না করে বুঝিয়ে দিলাম যে আমার বড়দিনের লাঞ্চের জন্য হংসের প্রয়োজন হবে না কারণ আমি গোরা সাব নই! বিক্রি কমে যাওয়ায় রতন একটু হতাশ হল। হতাশ হয়ে রতন যতটা নিঃশব্দে পৌঁছেছিল, ততটাই নিঃশব্দে চলে গেল। সরকারি গেজেট অনুযায়ী বড়দিন এবং জানুয়ারির প্রথম দিন ছিল কর্মদিবস। প্রবাসী ম্যানেজার তখনও প্রচুর ছিল। ভারতীয় সহকারী ম্যানেজারেরা বড়দিনের দিনে যদি কাজ করতেন তাহলে 'বড়া সাব' তাদের রোস্ট গুজ, কিমা পাই এবং বরই পুডিংয়ের মেনু সহ তাদের সঙ্গে বিশেষ মধ্যাহ্নভোজে লিপ্ত হত। সেক্ষেত্রে ভারতীয় সহকারীদের জানুয়ারির প্রথম দিনে কাজ থেকে ছুটি দেওয়া হত। তাই সহকারিদের আমাদের '৩১ তম রাত' এইভাবে পরের দিনের কাজের হতাশাজনক চিন্তা ছাড়াই আনন্দের একটি ছিল।
নাগরাকাটা প্ল্যান্টার্স ক্লাব থেকে প্রাপ্ত একটি অ্যানুয়েল রিপোর্ট বঙ্গানুবাদ করে যে সারমর্ম পাই তা হল বাগিচাগুলিতে স্কটসম্যানদের ব্যাপক উপস্থিতি বাগিচার বাঙ্গালী বিশেষ করে প্ল্যান্টার্সদের জীবনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল। এদিকে, সেই জানুয়ারিতেই নতুন বছরের পার্টি শেষে এস্টেটে ফিরে অসুস্থতা বোধ করে বৃদ্ধ রতন মুন্সীর কাজ বন্ধ করে দেয়। সে সত্যিই সুস্থ হয়ে ওঠেনি এবং পৃথিবী থেকে নিঃশব্দে অদৃশ্য হয়ে গেছে। প্ল্যান্টার্স ক্লাবে নৈশভোজে নাচ অর্থাৎ বলড্যান্স ছিল একটি সংগঠিত অনুষ্ঠান যেখানে কোন কোন সময় উপস্থিত থাকত কলকাতার লাইভ ব্যান্ড। মহিলারা এই বিশেষ রাতের জন্য অভিজাতপোশাকে আসতেন এবং পুরুষরা তাদের ডিনার স্যুট পরে শক্ত ফ্রন্টেড শার্ট, কালো টাই এবং সুটে উপস্থিত হতেন। মধ্যরাতের কাছাকাছি সমস্ত সদস্যরা ক্লাবের মূল হলটিতে জড়ো হয়ে একটি বৃত্ত রচনা করত এবং তারা হাতে হাত দিয়ে উভয় পাশের ব্যক্তিদের সাথে সংযোগ স্থাপন করত। ঠিক মধ্যরাতে ব্যান্ডটি নতুন বছরে বাজত। স্কটিশ বংশোদ্ভূত সাহেবদের সঙ্গে এদেশীয় ম্যানেজারেরা এইভাবে নতুনকে স্বাগত জানিয়ে পুরানো এবং অতিবাহিত বছরকে ঐতিহ্যগত বিদায় জানাতেন। এটি ভারতীয় ম্যানেজারদের দের যেমন আনন্দদায়ক ছিলো তেমনি স্কটদের জন্য ছিল ততটাই আবেগময় এবং আনন্দের মুহূর্ত। উপস্থিত সমস্ত সম্প্রদায়, ভারতীয়, অ্যাংলো ইন্ডিয়ান, ইংরেজ, আইরিশ, ওয়েলশম্যান এবং স্কটসম্যানরা নতুন বছরের সেই সূচনায় শুভ ইচ্ছার শপথ নিতেন।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴