সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
21-December,2022 - Wednesday ✍️ By- অমর চক্রবর্তী 330

শূন্য আমি পূর্ণ আমি/৭

শূন্য আমি পূর্ণ আমি/পর্ব : ৭  
অমর চক্রবর্তী
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^        

'অমন দিন নয়নে তুমি চেয়ো না।
অমন সুধাকরুণ সুরে গেয়ো না'।    
     
কোথায় পাবো দশ টাকা! অথচ কাগজে নিজের নামটি দেখার তীব্র বাসনা। আমাকে উপার্জনের আরো পথ খুঁজতে হবে। তখন ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের কাজ চলছে। ওয়ার্ল্ড হেলথ থেকে এক জার্মান বিশেষজ্ঞ এসেছেন। আমার এক বন্ধু খবর দিল সার্কিট হাউসে গিয়ে দেখা করতে। ওরা প্রচারের জন্য লোক নেবে। দেখা করলাম নাম বললাম। উনি উচ্চারণ করলেন ইমর চিকরবোরটি। যা হোক, তিনদিনের কাজ পেলাম। পোস্টার সাঁটতে হবে। আমাকে দেওয়া হল ইলেক্ট্রিসিটি বোর্ডের ওয়ালে পোস্টার লাগাতে। কত বড় ড্রেন। আঠা দিয়ে দুটো পোস্টার লাগাতে পেরেছি। তারপর ধপাস। ঐ ড্রেন আর কালো কাদা। কে তুলেছিল মনে নেই! এসে পুকুরে ডুব, জ্বর। হাজিরা দিতে পারিনি তাই টাকাও পাইনি।একটা ভরসা গেল! ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের কথা বলতে গিয়ে সেই কাকুর কথা মনে পড়ল। মুখটা আজো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ওনার কানে পেন্সিল বগলে একটা ফোলিও। আমাদের বাঁশের আর ধারার বেড়া। উনি কান থেকে পেন্সিল বের করে লিখতেন N.M.E.P বাঁশের বাতায়। তারিখ দিতেন। জ্বর হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করতেন আর জ্বর শুনেই ফোলিও থেকে একটা পিন আর কাঁচ বের করে পুটুস করে ফুটিয়ে রক্ত নিতেন। বলতেন মনে রাখবি এন এম ই পি হল ন্যাশনাল ম্যালেরিয়া ইরাডিকেশন প্রোগ্রাম। আমাদের অফিস পঞ্চরঙ্গি থেকে একটু আগে।

এই লেখার সময় মনে হল এই পথেও করোনা মোকাবিলা সম্ভব! শিল্প  বা পুষ্প ফুটিয়ে তোলার শক্তি কোথা থেকে আসে?শোপেনহাওয়ার মনে করতেন পাপ অনীহা বিশৃঙ্খলা দু:খভোগ উন্মাদনার পর আসে স্তব্ধ শান্তি। দারিদ্র্যের পীড়ন থেকে হঠাৎই বেরিয়ে আসে শিল্প আবার অতীব প্রাচুর্য এবং জীবনের গভীর দৃষ্টি-ভঙ্গি থেকে ট্রাজিক বেদনা। নিৎসের কবিতা পড়েও এমনটা মনে হয়েছে। আমার তো শুধু দারিদ্র্য। একটা দুর্ঘটনার উচ্চ মাধ্যমিকে রেজাল্ট গোলমাল হয়ে গেল। পাঠক গোলমাল শব্দটা মাথায় রাখুন। কি ঘটেছিল ক্রমশঃ বিবৃত হবে। রেজাল্ট খারাপ হল মানে কি আবার আমাকে ফিরে যেতে হবে বিড়ি বাঁধা, চাল, সবজি বিক্রয়ে। বিধাতার লিখন যদি তাই হয় তবে তাই হোক! কিন্তু মন মানে না। ততদিনে পড়াশোনার আলাদা স্বাদ অনুভব করছি। ঠিক আছে দুটোই একসঙ্গে চলবে। ভর্তি হলাম কলেজে। ভর্তি হলাম ইউনিভার্সিটি বি.টি এ্যন্ড ইভনিং কলেজ। দিনে কাজ সন্ধ্যায় ক্লাস। 

আঁধার তখন তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে যেয়ে/চুপ করে তাকিয়ে থাকে চেয়ে..  
         
আমার অবস্থা তদ্রুপ। এক পা এগোতে গিয়ে পিছিয়ে পড়ি দশ পা। বাবা বলেছিলেন আমার হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষার ফরম ফিলাপে বয়স বাড়িয়ে দেবেন। কেননা আঠারো না হলে চাকরি হয় না। তাকে কথা দিয়েছেন মাননীয় বিধায়ক ! ফলস্বরূপ একজন ইলেভেন অর্থাৎ হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করল উনিশ বছর ক'মাসে, কোনো ক্লাসে ফেল না করেই। আমরা দাদা ভাই এক বয়সী হয়ে গেলাম। আমার সেই দাদা যাকে পাড়ার মানুষজন বিদ্যাসাগর বলতেন সেই দাদা সমর চক্রবর্তী তলিয়ে গেল নিয়তির খেলায়। আর আমি ইলেক্ট্রিসিটি বোর্ডে চাকরি না পেলেও কাজ পেলাম এক কন্ট্রাকটরের প্রোজেক্ট ম্যানেজার নাকি দেখভাল কর্মীরূপে। প্রোজেক্ট দেওচড়াই বাঁধ। আজ যে বাঁধটি দেখা যায় তার প্রথম মাটি আমিও দিয়েছি। এই কন্ট্রাকটরের মেয়ে বাবার স্কুলে পড়ে অতএব চাকরিটি হয়ে গেল।ডেস্টিনেশন দেওচড়াই। ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাস শুরু। কানে ভাসছে অধ্যাপক আশিস চৌধুরীর কন্ঠ Wilfred Owen. say not the struggle not availth. আমাকে যেতে হবে।মা অসুস্থ। টাকা দরকার। একটা সতরঞ্চি বালিশ এই নিয়ে ইটবালির গাড়িতে উঠে বসলাম। প্রথম বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছি। মায়ের দিকে তাকাতে পারিনি। 

'দিনের শেষে মেতে পথের পরে
ছায়াখানি মিলিয়ে দিল বনান্তরে।'

সন্ধ্যায় পৌঁছালাম তোর্ষা কালজানি সঙ্গমে। আমার আগে পৌঁছে গেছেন আমার এসিস্ট্যান্ট এক বিহারী বৃদ্ধ মানুষ। একটা আম গাছের নীচে তাঁবু খাটানো। উনি রান্না করবেন আর আমি যেখানে যেখানে যাব সঙ্গী হবেন।
রাত বাড়ছে। দেওচড়াই মোড় থেকে আমাদের টেন্টে আসা পর্যন্ত খুব একটা বাড়ি ঘর চোখে পড়েনি। তবে আমি টেন্টে পৌঁছানোর পর এক বয়স্ক ভদ্রলোক এসেছিলেন খবর নিতে। উনি বোধহয় পঞ্চায়েত বা গ্রামের মাতব্বর হবেন। উনি খবর নিয়ে চলে গেলেন। আর একজন এলেন, এসেই বললেন একেবারে বাচ্চা ছেলে। উনি শোনালেন এখান থেকেই ঝড় উঠেছিল এই সঙ্গমস্থল থেকে। "যে ঝড় আসামের কালডোবাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।কালি দেখবেন ইস্কুল বাড়ির কলখান, চল্লিশ ফুট পাইপ তুলি নিছে। আজিও একখান এগারো ফুট টিনের চাল মাটির তলত।" দেওচড়াই বক্সিরহাট কালডোবার টর্নেডোর কথা শুনেছিলাম। ঐ বয়সে বেশি জানি না! তাছাড়া ঝড় বৃষ্টি নিয়েই বড় হচ্ছিলাম। কতবার আমাদের ঘরের চাল উড়ে গেছে। ফাঁকা ফাঁকা বাড়িঘর বলেই কারো গলা কাটেনি! মা ঝড় বুঝতে পারতেন। আকাশ দেখেই তিনি উঠোনে একটা পিঁড়ি পেতে দিতেন আর একটা হাত দাঁ মাটিতে কোপ দিয়ে রাখতেন। মা টাঙ্গাইলের মেয়ে, এসবে ভয় পান না। তিনি আমাদের বেড়াল ছানার মতো তুলে চৌকির নীচে ঢুকিয়ে দিতেন। তারপর আমাদের বুকে চেপে বলতেন "হে ঝড়ের দেবতা ইন্দ্রদেব বরুণদেব শান্ত হও।ঝড় থামাও"!
ঝড়! ঘুর্ণিঝড় যেন আমার জীবনে বারবার।যে মানুষ আমার সহকারী বড় অমায়িক কোনো চাহিদা নেই শুধু বারবার চা খাওয়া ছাড়া ! এমনকি ভাতের মাড়ে চা দিয়ে খেতেন। উনি সে রাতে আলু সেদ্ধ ভাত করে মুখে দিয়েই ঘুমিয়ে পড়লেন। আমি কি করি!শনশন বাতাস বইছে। তাঁবুর নীচে একটা লন্ঠনের আলো। এই বুঝি নিভে যায়। তাঁবুর বাইরে চরাচর গিলে খাচ্ছে সন্ত্রাসী অন্ধকার। এখানে মরে গেলেও কেউ জানবে না! ছায়া সরে সরে যায়। সে কি কোনও ভৌতিক ছায়া। কোথায় এসে পড়লাম মাগো! নদীর পাড় ভাঙার শব্দ কানে আসছে। কোনো গান যেন ভেসে আসছে মনে হল ! মানুষের তো! নাকি অন্য কারো! সতেরো থেকে আঠারোয় পা দেব কিছু দিন পর। 'আঠারো জানেনা কাঁদা'। ভয়, সেও কম! হোক না ভৌতিক সুর! তাঁবুর ভেতরে প্রবেশ করলাম। মানুষটি নাক ডাকছে তীব্র শব্দে। ওনাকেই আমার ভূত মনে হল! সব ভয় ভাবনা ছুঁড়ে বালিশের তলা থেকে বের করলাম একটা রুলটানা খাতা। লিখলাম : 
আকাশটাকে ছুঁয়ে দেখতে চেয়েছি পায়ে হেঁটে অথচ স্বপ্নের নীলিমা ছেড়ে যাচ্ছে আমায় দূরে বহুদূরে...

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri