সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

26-November,2022 - Saturday ✍️ By- বিমল দেবনাথ 463

শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

শালসিঁড়ি-৭
বিমল দেবনাথ
---------------------

ময়ূখ ডাকে- মা মা … 
মাধুরী ডাইনিং টেবিল থেকে উঠে বেসিনে হাত ধুতে যায়। কিছু ডাক এমনই হয়। যার উত্তর বা প্রতিউত্তর দেওয়া যায় না। শুধু বিবশ হয়ে মানতে হয়। ফুল ফোটার মত স্বতঃস্ফূর্ত। মাধুরী হাত ধুতে ধুতে গুন গুন করে…
সখী, ভাবনা কাহারে বলে। 
সখী, যাতনা কাহারে বলে। 
তারপর গেয়ে ওঠে… 
…আমার চোখে তো সকলই শোভন, 
সকলই নবীন, সকলই বিমল, 
সুনীল আকাশ, শ্যমল কানন …
উঠে আসে জিপসিতে। জিপসি ধীরে চলতে শুরু করে।  
ময়ূখ মাকে ছুঁয়ে বলে- মা বন দেখ।
মাধুরী দেখে এক ঝাক পাখি উড়ে এসে একটি গাছে বসে। মাধুরী জানে না কি পাখি … মাধুরীর কত জানা চেনা ভাবনার ছন্দ পতন ঘটে। গানের কলি বন্ধ হয়ে যায়। ময়ূখের কথা মতো দেখতে থাকে গভীর বনের দিকে…
ময়ূখ বলে- ঐ যে গাছটা। কালচে সবুজ পাতার গাছটি – থোকা থোকা হালকা সবুজ কুলের মত ফল ধরে আছে। ঐ শাল গাছের নীচে। ঐ গাছটা নাকি কথা বলে। কাকু বলছিল গাছটির নাম- থালী। 
মাধুরী এখন ময়ূখের চোখে শালসিঁড়ি’র রাজ্য দেখে। লম্বা লম্বা শাল গাছ। তার থেকে একটু ছোট আরও কিছু গাছ। তারপর আরও ছোট কিছু গাছ। তারপর আরও ছোট কিছু গাছ এবং তার নীচে ছোট ছোট ঝোপঝাড়। 
ময়ূখ বলে - মা, বুঝতে পারলে না। ঐ যে ঝোপের উপরে। দ্বিতীয় সারির উচ্চতায়, শাল গাছের ডান দিকে দেখ। 
মাধুরী ভালো করে বনটা দেখতে থাকে। 
মাধুরী বলে - ময়ূখ কোনটা।
অপূর্ব সামনের সীট থেকে ড্রাইভারকে ইশারা করে গাড়িটা দাঁড় করাতে।
ময়ূখ বলে - ঐ তো মা। 
অপূর্ব তার দামী ক্যামেরার সেটিংএর খুঁটি-নাটি দেখতে থাকে। অপূর্ব, ওর মতো, ওর সময় মতো মাধুরীর সব কথা রাখে। অপূর্ব’র সমৃদ্ধি মাধুরীর সব চাহিদার থেকে অনেক বেশী- অপূর্ব ভাবে, এটাই ওর ভালোবাসার প্রকাশ। 
মাধুরী বুঝতে পারে  সবুজের মধ্যে সবুজ খোঁজা বেশ কষ্টকর। মাধুরীর ওর বাবার উপর রাগ হয়। মা’র উপর অভিমান হয়। ডান হাতে বাঁ হাতে সমান ভাবে কাজ করতে শেখালেও  কোনো দিন কোনো কিছু ময়ূখের মতো খুঁজতে বাধ্য করেনি। ওর মনে হত সব সংসার ওর মার সংসারের মতো। সব মানুষ ওর বাবার মতো। সব বন্ধু বিকাশের মতো। এই জন অরণ্যে মানুষ খুঁজতে হয়নি কখনো। যদি খুঁজতে হত …
ময়ূখ বলে – কী গো মা। বুঝতে পারছ না। তখনই একটা সাদা বক একটা গাছে এসে বসল। 
ময়ূখ বলে- মা ঐ দেখ গাছটাতে একটা সাদা বক বসেছে। 
হ্যাঁ দেখলাম। 
ময়ূখ বলে – জান মা, কাকু বলেছিল ঐ সাদা বকেরা তৃণভোজীদের খাবারের সন্ধান দেয়; আবার তৃণভোজীরা সারা বন থেকে ঘুরে ঘুরে সাদা বকদের জন্য নানা ধরনের খাদ্য বয়ে নিয়ে আসে। সাদা বকেরা তৃণভোজীদের গায়ে বসে মহা আনন্দে তাদের শরীর থেকে নানা ধরনের এঁটুলি ইত্যাদি খায় আর তৃণভোজীরা ঘাস ফল খায়। 
মাধুরী জানে এটা একটা পারস্পরিক বোঝাপড়া। এই বোঝাপড়া শালসিঁড়ি রাজ্যের এক অমোঘ নিয়ম। এই পরস্পর বোঝাপড়া না থাকলে শালসিঁড়ি কবেই ভেঙ্গে যেত। 

মাধুরীর আজ কী হয়েছে সে বুঝতে পারে না। বনের সব কিছুতেই নিজেকে খুঁজতে চায়। ভাবে বন কত রোমাঞ্চকর। সব এক রকম দেখতে মনে হলেও এক নয়। কেউ যদি বুঝতে না পারে, প্রকৃতি তার বিভিন্নতা বোঝাতে কত উপাদান তৈরি করে রেখেছে। সাদা বকটি উড়ে এসে না বসলে ও বুঝতেই পারত না ওটা থালী গাছ। মাধুরী ভাবে বনের বৈচিত্র্য খুঁজতে  চাইলে শালসিঁড়ি তার সাথীদের দিয়ে সব খুঁজে দেয় সঠিক ভাবে। কিন্তু এই মানুষের অরণ্যে মানুষ বড় অসহায়। কেউ কারো সঠিক সাথী হয়ে ওঠে না। মাধুরীর মনে হয় বিকাশ যেন এই জনঅরণ্যে ওর সাদা বক। ওকে বিশ্বাস করা যায়। 
ময়ূখ বলে - কাকু বলছিল, যেখানে বক উড়ে এসে বসে সেখানে বড় কোন তৃণভোজী প্রাণী আসে।
অপূর্ব নড়ে-চড়ে বসে। থালী গাছের দিকে ক্যামেরা তাক করে। 
মাধুরী বলে - আর কী কী বলেছিল তোর কাকু?
ময়ূখ বলে - ঐ গাছের ফল নাকি কখনো কখনো ভারতীয় বাইসন বা গাউর খায়। তারপর হাতিপাইলা গাছের পাতার মতো বিস্ফারিত চোখে বলে - জান মা, কাকু বলেছিল ঐ গাছের গা’য় কান পাতলে কথা শোনা যায়। 
মাধুরী জানে লজ্জাবতী গাছ ছুঁলে কেন গাছটি নেতিয়ে যায়। কিন্তু তা বলে গাছ কথা বলে! ময়ূখের উৎসাহ উল্লাস দেখে বলে - তাই নাকি। 
ময়ূখ বলে- হ্যাঁ মা, কাকু বলছিল। ঐ গাছে কান পেতে তুমি যা যা ভাববে, তাই শুনতে পাবে। কাকু চলে গেল, আমার আর গাছের সাথে কথা বলা হল না। 
-সে কেন। এর পর দেখা হলে বলো। ও নিশ্চয় শোনাবে। 
অপূর্ব ড্রাইভারকে আবার ইশারা দেয় জিপসি চালাতে। 
মাধুরী বলে - আর একটু দাঁড়াই। বক যখন এল কোনো না কোনো প্রাণী আসতে পারে। 
অপূর্ব বলে - না না ওসব বক-টক ফালতু কথা। চল চল টাওয়ারের যাই। ওখানে সল্ট পিট আছে। তৃণভোজীরা নুন খেতে আসবেই।  
জিপসি চলতে শুরু করে। কিছুটা যেতেই ময়ূখ আবার বলে উঠে- মা মা, দেখ শিয়ালের লেজ। মাধুরী খিল খিল করে হেসে উঠে বলে - ময়ূখ তুই যা তা শুরু করেছিস। গাছের উপর শিয়ালের লেজ। 
ময়ূখ বলে- বারে তুমি কি দেখছ না। ঐ যে শাল গাছের গা’য়ে কী সুন্দর ঝুলছে।
-ওটা তো অর্কিড
-হ্যাঁ তো। কাকুর কোয়ার্টারের পিছনে যে শাল গাছটি আছে সেই গাছটিতে অনেকগুলি ছিল। কাকু আমাকে দেখিয়েছিল। নাম বলেছিল- ফক্স টেইল। আমি শুধু বললাম - শিয়ালের লেজ।
অপূর্ব কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল। অর্কিডটির সৌন্দর্য দেখে ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নেয়। ময়ূখ মাধুরী ক্ষণে ক্ষণে অর্কিডটিকে দেখে। মাধুরী মনের মধ্যে অর্কিডটির ছবি আঁকে। কী সুন্দর ল্যাভেণ্ডার রঙের ছোট ছোট ফুলের তুলতুলে ফুলানো- ফাঁপানো লম্বা লম্বা মালা ঘন সবুজ পাতার বুক থেকে ঝুলে আছে। যেন শালসিঁড়ির মুকুটে গৌরবের পালক। ময়ূখ মাধুরী জিপসি’র সাথে সাথে সবুজের বুকে ভাসতে ভাসতে এগিয়ে চলে গহন বনের ভিতর। পড়ন্ত সূর্যের তির্যক রশ্মি শালসিঁড়ি’র ফাঁকে ফাঁকে ঝরে ঝরে পড়ছে ওদের গায়ে। মাধুরীর মনে হয় এই সূর্যরশ্মি যেন শালসিঁড়ির আলতো ছোঁয়া। 
ময়ূখ বলে - মা দেখ দেখ। সুঁচ গাছ। 
- কী গাছ। 
ময়ূখ বলে - হ্যাঁ মা। সুঁচ গাছ। কাকু বলে নিডিল ট্রি। এই গাছগুলো শাল গাছের সহচরী। শাল গাছ তার সহচরী গাছের সাথে ভালো থাকে। সহচরী গাছেরাও শাল গাছের সাথে ভালো থাকে। কাকু অনেকগুলো সহচরী গাছের নাম বলেছিল যেমন- চাপ, চিলৌনী, চিকারাসি, টুন ইত্যাদি কত কী। ঐ যে দ্বিতীয় সারির গাছগুলো দেখছ শাল গাছের সাথে, সেই গুলো এই সব গাছ।  
মাধুরী বলে- সে তো বুঝলাম। কিন্তু তোর সুঁচ গাছ কোনটা? কী করে বুঝি। 
ময়ূখ বলে - মা ঐ দেখ পাঁচ পাপড়ির সাদা ফুল আর মাঝখানে একটা হলুদ বোতাম। পুরো গাছ ঢেকে আছে। ওটাই সুঁচ গাছ। 
আহা, কী সুন্দর রে ময়ূখ। গাছটা ফুলে ফুলে ভরে আছে। যেন গাছেদের ময়ূর - পেখম মেলে আছে। 
মাধুরী বলে - ময়ূখ এত সুন্দর গাছকে তোর কাকুরা কেন নিডিল ট্রি বলে। 
ময়ূখ বলে - এই গাছের বাকলে লক্ষ লক্ষ সুঁচ আছে। তাই এই বাকল ধরলে মানুষের গায়ে সেই সুঁচগুলো ফুটে যায় আর চুলকোতে থাকে। তাই মানুষ এই গাছকে চিলৌনী বলে। 

অপূর্ব কোন চলমান বড় বন্য প্রাণ না দেখে অধৈর্য হয়ে যায়। পকেট থেকে সিগারেটের প্যকেট বার করতে গিয়ে ড্রাইভারের ধমক খায়। 
মাধুরীর শরীরে যেন লক্ষ লক্ষ চিলৌনীর সুঁচ ফুটে যায়। ও ভাবে শালসিঁড়ির দেশে শাল ও তার সহচরীরা কত সুন্দর ভাবে আলোর ব্যবহার করে। সূর্যকে ভালোবাসে। মাটি কে ধরে রাখে। জল বুকে ধরে। কিন্তু মানুষ এক সাথে থাকে বটে - সহচরী হয়ে উঠতে পারে কয়জন। ময়ূখ মাধুরী অপূর্ব কেউ আর কোনো কথা বলে না। জিপসির চাকার সর সর শব্দ আর  মাঝে মধ্যে গাছের শুকনো পাতা চাকার চাপে মুচড়ে যাওয়ার মড় মড় শব্দ যেন মাধুরীর পাঁজরে লাগে। গাছ থেকে খসে পড়া পাতার খস খস শব্দ মাধুরীর কানে আটকে থাকে। এই শব্দ যেন শালসিঁড়ির চুপ কথা। মাধুরীর চুপ কথা… 
নীরবতা ভেঙে ময়ূখ বলে - মা দেখ হরিণ। রাস্তের মাঝখানে দাঁড়িয়ে কী যেন খাচ্ছে। 
ড্রাইভার আস্তে করে গাড়ি থামিয়ে দেয়। অপূর্ব অক্লান্ত ক্যমেরা ক্লিক করতে থাকে - যেন তৃষ্ণার্ত জল পান করছে। অপূর্বর অতি উৎফুল্লতায় হরিণটি সতর্ক হয়ে যায় এবং লাফ দিয়ে বনে মিশে যায়। 
অপূর্ব বলে - হরিণটি দেখতে বড় সুন্দর কিন্তু স্বভাব বড্ড নোংরা। কোন কিছুর পটি খায়।
ময়ূখ বলে- না বাবা, তুমি ভালো করে দেখ, হরিণটি মাশরুম খাচ্ছিল। অপূর্ব ওর ক্যমেরার ল্যান্স দিয়ে আবার দেখে ঐ জায়গাটা। 
-ময়ূখ ঠিক বলেছিস, ঐ খানে কারো পটির উপর মাশরুম হয়েছ। ওগুলো খাচ্ছিল।
ময়ূখ বলে - ঐ গুলো হাতির পটি। কাকু বলছিল হাতি বনের প্রভু। বনের সব প্রাণকে কিছু না কিছু দিবেই। 
মাধুরী বলে- জানিস ময়ূখ, হাতি নিজে সারা বন থেকে নানা ধরনের খাদ্য জোগাড় করে খায় কিন্তু সব হজম করে না। মানুষের মতো। ও যা খায় তার অর্ধেক নিজের শরীরে নিয়ে বাকি অর্ধেক শরীরের বাইরে বের করে দেয় - যাতে অন্যান্য ক্ষুদ্র প্রাণেরা খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। আর একটা কথা, বনের প্রাণীরা সব থেকে পরিষ্কার পরিবেশে থাকে, মানুষের মত দুর্গন্ধময় নালা- নর্দমা সহ প্লাস্টিক নিয়ে বেঁচে থাকে না। 
ময়ূখ বলে- মা জান ঐ হরিণটির কি নাম? 
-কি? 
ময়ূখ বলে- বার্কিং ডিয়ার। কাকুর অফিসে চার ধরনের হরিণের ছবি লাগানো ছিল, তুমি দেখনি। কাকু বলছিল এই হরিণটি ভয় পেলে কুকুরের মত ডাকে। তাই একে বার্কিং ডিয়ার বলে। মাধুরীর মনে পড়ে- সেদিন ময়ূখ আর বিকাশ এত একাত্ম ভাবে বনের গল্পের মশগুল ছিল যে ও শুধু বিকাশ ও ময়ূখ কে দেখছিল। অফিসের আর কোথায় কী ছিল খেয়াল করে নি। এত দিন এটাও খেয়াল করেনি যে পুঁথিগত বিদ্যার সাথে বনের মাঠে-ঘাটের জানার মধ্যে কত ফারাক। পড়াশুনার এখনো যে ব্যবস্থা আছে তাতে মনে হয় বই আর বাস্তব যেন নদীর দুই কুল। এক কুল ভাঙে আর এক কুল গড়ে।  মেলে না কখনো। মাঝে মধ্যে বিকাশের মতো কিছু মানুষ সাঁকো তৈরি করে যোগাযোগ করে দেয়। 
মাধুরী বলে- ময়ূখ, এই হরিণটিকে মায়া হরিণ বা সোনার হরিণও বলে। ওর শরীরের আকার ও স্বভাবের  জন্য কাকরও বলে। 
জিপসি ততক্ষণে টাওয়ারের সামনে এসে দাঁড়ায়। অপূর্ব তাড়াতাড়ি নেমে টাওয়ারের দিকে এগিয়ে যায়। ময়ূখ মাধুরী জিপসি থেকে নেমে টাওয়ারের চার পাশ দেখতে থাকে ও টাওয়ারের দিকে এগোতে থাকে।
ময়ূখ বলে- মা দেখ ঐ গাছটা। বড় বড় পাতা। ডালের গা’য় ছোট ছোট হলুদ ফুল ফুটে আছে।  
মাধুরী বলে – ওটা কি গাছ?
- রুঞ্চি। রেস্টহাউসের রান্না ঘরের পিছনে ছিল। আমাকে সেবার কাকু দেখিয়েছিল। জানত মা, কাকু বলছিল এই গাছের পাতা কোন শিশুর বালিশের তলায় রেখে দিলে, শিশুটি সারা দিন কাঁদতে থাকবে। 
- কী বলিস! এইরকম বলেছে। 
হ্যাঁ মা। কাকু বলেছিল- রুঞ্চি মানেই নাকি কাঁদুনি। 
মাধুরী গাছেদের মজাদার কথা ভাবতে ভাবতে টাওয়ারের মঞ্চে এসে দেখে সল্ট পিট খাঁ খাঁ করছে। একটা ময়ূর পর্যন্ত নেই। মাধুরী মনে হলো অপূর্বর মনের ভীতরে কে যেন অনেক গুলো রুঞ্চি পাতা ঢুকিয়ে দিয়েছে। ঝড়ে ভেজা ফেটে যাওয়া শিমূল ফলের স্বরে অপূর্ব বলে - মাধুরী চল, আমার আর ভাল লাগছে না। মাধুরী ময়ূখ কোন কথা বলে না। জিপসিতে ওঠে বসে। জিপসি ফিরে আসতে থাকে বিকাশের অফিসের দিকে। মাধুরী দেখে অস্তমিত সূর্যের নুইয়ে পড়া আলো যেন শালসিঁড়ির পা ধুইয়ে দিচ্ছে। সেই আলো কিছুতেই পড়ছেনা অপূর্বর মনে। ময়ূখ যেন দিনের শেষ সূর্য কিরণ চোখে নিয়ে ফিরছে। বনে আসলে- শালসিঁড়ির দেশে আসলে ওর এই রকম আনন্দ হয়। উজ্জীবিত হয়ে ওঠে।
ময়ূখ বলে – মা জান তো, রুঞ্চি গাছের ফল ধনেশ পাখি খায়। বলতে বলতে ড্রাইভার থালী গাছের কাছে এসে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দেয়। দেখা যায় শেষ বেলায় ২০-২৫ টি  গাউরের একটা দল রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে আছে। ময়ূখ অতি উৎসাহে বলে উঠে- বাপি গাউর।
শব্দ শুনতেই গাউর গুলো ফোঁস করে ঝপাঝপ ছুটে বনে মিশে গেল। গাউরের হঠাৎ দৌড়ে অপূর্বর হাত কেঁপে গেল। ছবি তোলা হলো না ওর, আবার। গাউরের লাফ ও দৌড় দেখে মাধুরীর রমেশের কথ মনে পড়ে। সেই দিন বিকাশ বলেছিল, মাহুত- রমেশকে গাউর আহত করেছিল। সে এখন কেমন আছে, কী জানি। মাধুরীর কত কথা মনে আসে। রমেশকে কোনো দিন দেখেনি, চেনেনা তবুও ওর জন্য মন কেমন করে। মাধুরীর মনে হয়, সব নারীই শালসিঁড়ির মত হয়। কত কী লতা- পাতা মস অর্কিড প্রাণী পাখি গা’য়ে মনে লেগে থাকে, বয়ে নিয়ে চলে। মাধুরীর মনটা চঞ্চল হয়ে উঠে রমেশের জন্য।
ময়ূখ বলে - দেখলে মা, সাদা বক শালসিঁড়ির ঠিক খবর দেয়। 
মাধুরী বলে - তাই তো। 
ততক্ষণে জিপসিটি ফিরে এসে দাঁড়ায় বন বাংলোর কাছে। কানাই বলে – স্যার, আসুন চা দিচ্ছি। অপূর্ব বলে - না কানাই, আজ আর নয়। অন্ধকার হয়ে যাবে। আর একদিন হবে ক্ষণ। কানাই কে বাই বলে ওরা ফিরে আসে বাড়ি। মাধুরীর মনে হয় - সাদা বক যেন বাসা বাঁধে ওর বুকের ভিতর…

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri