সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
08-December,2022 - Thursday ✍️ By- শিশির রায় নাথ 333

বাগানিয়া জার্নাল-৭

বাগানিয়া জার্নাল
পর্ব।।সাত।।
শিশির রায়নাথ
^^^^^^^^^^^^^

আগের পর্বে বলা হয়েছে চা-পাতার ফার্মেন্টেশান কাজটা ভীষণ-ভীষণ-ভীষণ মূল্যবান ও স্পর্শকাতর (Sensitive)। এর ওপরেই নির্ভর করে তৈরি-চায়ের (Finished Product)  গুণমান।

এইখানে একটা কথা বলে নেওয়া যাক। 
ভারতীয়, ইংরেজ, আমেরিকান, জার্মান, আফ্রিকান ইত্যাদি সমেত পৃথিবীতে যত রকমের মানুষ আছে এবং ভারতীয়দের মধ্যে আবার যেমন বাঙালী, বিহারী,পাঞ্জাবী জাতভাগ আছে – তাদের গায়ের রঙ, চোখের মণির রঙ,উচ্চতা, চুলের আকৃতি ও ঘনত্ব যাই হোক না কেন সবারই কিন্তু প্রজাতি (species) এক – Homo sapiens । আরো ভাল করে বললে Homo sapiens sapiens।

তেমনি সারা পৃথিবীজোড়া চা-গাছেরও একটাই প্রজাতি - ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস (Camellia sinensis) । অনুমান করা হয় প্রাকৃতিক ভাবে এই গাছ প্রথম জন্মায় দক্ষিণ-পশ্চিম চিন, তিব্বত এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে – যেসব জায়গায় ওষধি হিসেবে কাঁচা চাপাতা চিবিয়ে খাবার চল ছিল বহু যুগ ধরে। চিনের ইউনান প্রদেশকেই চায়ের উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
পরে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ার কারণে তার চেহারা ও গুণে নানা রকম পরিবর্তন আসে।দেশভেদে যেমন মানুষে মানুষে ফর্সা, কালো, তামাটে, লম্বা,বেঁটে ইত্যাদি পার্থক্য তৈরি হয়ে গ্যাছে প্রাকৃতিক ভাবেই  - তেমনটাই হয়েছে চা গাছের ক্ষেত্রেও। অর্থাৎ মানুষের মত তারও নানা জাত-উপজাত আছে।ভ্যারাইটি আছে। লক্ষ করলে দেখা যাবে যে দার্জিলিং-এর চা গাছের পাতাগুলো খুব ছোট ছোট এবং ডুয়ার্স ও আসামের চায়ের পাতা খুবই বড় বড়। দার্জিলিং-এর চা গাছ হল চিনা ভ্যারাইটি (Camellia sinensis var. sinensis) আর ডুয়ার্স-আসামের চা গাছ হল আসাম ভ্যারাইটি (Camellia sinensis var. assamica) । তবে জেনেটিক বিশ্লেষণের পর এখন দুটোকেই ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস বলা হয়।
আগে কম্বোডিয়ার চা (Combod Tea) গাছকে আসাম-চায়ের একটা উপ-প্রজাতি ধরা হত (C. assamica  subsp. lasiocaly)। জেনেটিক বিশ্লেষণের পর তাকে চিনা ও আসাম চায়ের সংকর (hybrid)বলে মানা হয়।

সুতরাং অঞ্চলভেদে, জলবায়ুভেদে নানাজাতের চা গাছ আছে। তারপর আছে ক্লোন করা নানা হাইব্রীড গাছ।
এছাড়া, দেখা গেল, একই অঞ্চলের গাছ উচ্চতাভেদে এবং তাপমাত্রা ভেদে এক এক রকম গুণ অর্জন করছে। যেমন, উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং-এ চিনা ভ্যারাইটির গাছ ভাল হচ্ছে এবং তার নানা রকম সুবাস কিন্তু লিকার কম। অন্যদিকে  ডুয়ার্সের সমতলে আসাম ভ্যারাইটি গাছ ভাল হচ্ছে – তার লিকার অন্য রকম,সুবাসও অন্য রকম।আসামের চায়ের লিকার এদের থেকে অনেক বেশী গাঢ়।ওদিকে দক্ষিণের চা বছরে দুবার মৌসুমি বৃষ্টি পায়। তাই তাদের গুণমান আবার অন্যরকম। এসব কারণেই চালু হয়েছে ‘GI Tag’ বা ‘Geographical Indication Tag’ – যা দেখে বোঝা যাবে পণ্যের (এখানে ‘চা’) উৎস কোথায় অর্থাৎ কোথাকার চা।
   
এছাড়াও, একই চা-গাছের বর্ষার আগের পাতা, বর্ষার পাতা এবং হেমন্তকালের পাতার সুবাস, লিকারের গাঢ়তা ইত্যাদি এক এক রকম। তাই এক এক বাগানের এক এক মরশুমের চায়ের একেক রকম সুবাস ও লিকার।এখানেই ফার্স্ট ফ্লাশ (First Flush), অটাম ফ্লাশ (Autumn Flush) ইত্যাদির গল্প। ‘ফ্লাশ’-এর কথা পরে হবে।

তোলা পাতার (plucked leaf)  গুণমান ( অর্থাৎ শুধু মাত্র একটি কুঁড়ি, নাকি দুটি-পাতা-একটি-কুঁড়ি,না সঙ্গে আরও পাতা আছে ইত্যাদি), গাছের জাত, মরশুম ইত্যাদি ‘ফ্যাক্টর’ মিলে সেই ‘রোলড’ পাতা ‘ফার্মেন্টেড’ হয়ে কখন চরম সময়ে  (Full fermentation - যার পরে পাতা পচতে শুরু করবে) পৌঁছবে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ (Crucial)। কালো-চা (Black Tea) তৈরি হয় ‘ফুল ফার্মেন্টেড’ পাতা থেকে। অভিজ্ঞ প্ল্যান্টাররা সেইসব ‘ফ্যাক্টর’ মাথায় রেখে পাতাকে ফার্মেন্টেড করে নেন।
এর পরের ধাপ হচ্ছে সেই ফার্মেন্টেশানকে আটকানো – যাতে পাতা পচে না যায়। এজন্য ফুল ফার্মেন্টেড পাতাকে ‘ভাজা’ হয়। এই ‘ভাজা’ মানে  সেঁকা (Bake) বা ভুনা (‘Roast)। কখনো গরম হাওয়া দিয়ে কখনও বা তপ্ত ধাতুর পাত্রে – যাকে Pan Frying বলা হয় -যেভাবে মায়েরা গরম কড়াইতে তেল ছাড়া চিঁড়ে ভাজেন।
এখানেই চা তৈরি শেষ হয়ে গেল। এরপর হয় ঝাড়াই-বাছাই, গ্রেডিং, বাক্সে ভরা, প্যাকেটিং ইত্যাদি।
#
এতক্ষণ  সবুজ-চা থেকে কালো-চায়ে আসার গল্প এবং কাঁচা পাতা থেকে তৈরি-চা (processed Tea) তৈরি করার একটা রূপরেখা দেওয়া হল ।বাস্তবে পাতা তোলা থেকে তৈরি-চায়ের প্রতিটি ধাপে (step) আরও অনেক সূক্ষ্ম নিগূঢ়তা (intricacy) আছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি কর্‌ প্রতিটি ধাপেরই অনেক উন্নততর ক্রমবিকাশ হয়েছে...হয়ে চলেছে।.যা ছিল ‘হাত-মোলাই’ তা এখন মেশিন-নির্ভর। মেশিনও উন্নততর ও পরিবর্তনশীল। দশককে দশক যে ‘ফার্মেন্টেশান’ একটা ঠান্ডা ঘরের (যাকে বাগানিয়া ভাষায় বলা হয় ‘রঙঘর’ – এখানেই সবুজ পাতা রঙ পালটে বাদামী-লালচে হয়) মাটিতে/মেঝেতে বিছিয়ে করা হত  তা-ও এখন মেশিনে করা হচ্ছে। সেসব কথায় পরে আবার আসা যাবে। আপাতত চা-তৈরির একটা ধারণা দেওয়া হল মাত্র।
#
এখানে একটা জিনিষ বোঝা গেল যে চায়ের যত খেলা সবই মূলত ওই ‘ফার্মেন্টেশান’-এর ওপর নির্ভর করেই। 
চা-পাতা গাছ থেকে তোলা মাত্রই কিছু না কিছু ফার্মেন্টেশান শুরু হয়ে যায় – তবে খুব আস্তে আস্তে।সেই পাতা যত বেশী দুমড়ে-মুচড়ে যাবে তত ফার্মেন্টেশানের গতি বেড়ে যাবে, অনিয়ন্ত্রিত (uncontrolled) হয়ে যাবে।অথচ থাকে নিয়ন্ত্রিত ভাবে ফার্মেন্টেশান করা দরকার। তাই চা-পাতা তুলে ফ্যাকটরিতে নিয়ে আসার জন্য চালু হয়েছিল বেতের ঝুড়ি (cane/bamboo basket) – যাতে পাতাকে অহেতুক দোমড়ানো-মোচড়ানোর হাত থেকে অনেকটা বাঁচানো যায়। এবং এখনও এ ব্যাপারে বেতের ঝুড়ি-ই সবচেয়ে ভালো উপায়।
#
ফার্মেন্টেশানের মাত্রার ওপর ভিত্তি করেই তৈরি হতে লাগল এক এক রকমের চা।
কোনরকম ফার্মেন্টেশান ছাড়াই বা খুব অল্প ফার্মেন্টেশানে তৈরি হয় সবুজ-চা (Green Tea)। 
চিনারা গাছ থেকে পাতা তুলে এনে প্রথমেই ঝুড়ি,প্যান ,ধাতুর ড্রাম ইত্যাদিতে যান্ত্রিক ভাবে বা গরম হাওয়া দিয়ে, তাকে শুকনো-ভাজা (Pan frying) করে ফার্মেন্টেশান বন্ধ করে দেয়। এই প্রথা এখনও আমাদের অরুনাচল প্রদেশের সিংফো উপজাতির মধ্যে চালু আছে – তারা সরাসরি কড়াই জাতীয় পাত্রে তাকে ভেজে নেয়।)।কী ধরণের সবুজ-চা তৈরি করা হবে, মানে শেষ অবধি তার সুবাস (flavor) কী হবে, তার ওপর নির্ভর করে প্রয়োজনে তাকে একাধিক বারও ভাজা হয়। সাধারণত প্যান-ফ্রাই করা চিনা সবুজ-চা গাঢ় সবুজ বা হলদেটে সবুজ, একটু ঘাস-মাটি গন্ধ ও সেঁকা গন্ধের ( roasted flavor )মিশ্রণ হয়। ভালো চিনা সবুজ-চা হল ড্রাগনওয়েল (Dragonwell), গান পাউডার (Gunpowder) ইত্যাদি।

জাপানিরা আবার গাছ থেকে পাতা এনে, ঘন্টা খানেকের মধ্যেই, তাকে বাষ্প দিয়ে একটু সিদ্ধ করে ফার্মেন্টেশানকে বন্ধ করে।ফলে তাদের সবুজ-চায়ে ক্লোরোফিলের গন্ধ থেকে যায়। কখনও তাকে আবার একটু দলাই-মলাই করে প্যান-ফ্রাই করে তারমধ্যে অন্য সুবাস নিয়ে আসা হয়। আমাদের দেশে সবুজ-চা বানানোর জন্য মূলত জাপানি পদ্ধতিই অনুসরণ করা হয়।ভালো জাপানি সবুজ-চায়ের মধ্যে পড়ে সেন্‌চা(Sencha), হোজিচা(Hojicha), জেনমাইচা (Genmaicha),  গাইওকোরো মাটচা(Gyokoro Matcha) ইত্যাদি।
জাপানে প্রায় শতকরা আশী শতাংশই সেন্‌চা।খুবই জনপ্রিয়। এটা বাষ্পে সিদ্ধ করার পর ‘রোল’ করে লম্বা আকৃতি দেওয়া হয়।সেন্‌চা-কে খুব উঁচু তাপে ভেজে তৈরি হয় হোজিচা। ফলে এতে ভাজার গন্ধটাও লেগে থাকে।

ছবি সৌজন্যঃ ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইট থেকে নেওয়া...

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri