সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
28-November,2022 - Monday ✍️ By- অমিত কুমার দে 631

নুরের সঙ্গে সাতরঙা পাহাড়ের দেশে/অমিত কুমার দে

নুরের সঙ্গে সাতরঙা পাহাড়ের দেশে 
অমিত কুমার দে 
===============================

ভুটানঘাটে যেতে বন দপ্তরের অনুমতি প্রয়োজন। মুখপুস্তিকায় নিকটজনের আনন্দছবি দেখে ফোন করেছিলাম – তারা কোথায় ছিলেন, কীভাবে গেলেন ইত্যাদি জানতে। উত্তরে যেটা বুঝলাম – সেটা বেশ কঠিন কাজ! পরিচিতি প্রভাব না থাকলে সহজে মেলে না! আমি অতীব সাধারণ মানুষ, কোনো ধরাধরিই পারি না! কিন্তু সাতরঙা পাহাড় আমাকে যে ক্রমাগত ডেকেই চলেছে!

পাটকাপাড়া’র ‘ইষ্টিকুটুমে’ রাতের খাবার খেতে খেতে সুব্রতকে বললাম – “কি করা যায় বলুন তো?” সুব্রতই যোগাযোগ করিয়ে দিলেন নিমতির রেঞ্জ অফিসারের সঙ্গে। তাঁকে জানালাম আমার প্রিয় ছাত্র নুর ইসলাম এদিকেরই কোনো রেঞ্জের দায়িত্বে রয়েছে, ফোন নম্বরটা পাওয়া যাবে কিনা! জানা গেল, তাঁরই সঙ্গে একসঙ্গে বনবিভাগের কাজে তিনি যোগ দিয়েছেন। ব্যাস, ফোন নম্বর পেয়ে গেলাম। 

নুরকে ফোন করতেই চটজলদি আশ্বাস – "কোনো সমস্যা হবে না স্যার! আমি কার্তিকা-র রেঞ্জ অফিসারকে এখনই ফোন করে বলে রাখব, কাল সকালে আপনি দেখা করলেই অনুমতি মিলে যাবে। রওনা দেবার আগে আমায় একটু ফোন করবেন।"

স্যার হবার এই এক মস্ত সুবিধে। কৃতী ছাত্র ছাত্রীদের দেখা কোথাও গেলেই ঠিক মিলে যায়! মনে পড়ে ভুটানে ঢুকবার গেটে দাঁড়িয়ে আছি একবার। মোটরবাইকে অনেকে মিলে গেছি। চালকদের মাথায় হেলমেট, কিন্তু সঙ্গী আরোহীরা হেলমেটবিহীন। ভুটানে হেলমেট ছাড়া ঢুকতে দেবেই না! অথচ কাউকে বাদ দিয়ে ঢোকাও যাবে না। মনখারাপ সকলের। হঠাৎ কোথা থেকে একটি তরতাজা তরুণ হাজির। - “স্যার, ভুটান দেখতে এসেছেন? কতদিন পর আপনাকে দেখলাম। আমি আপনার কাছে পড়েছি।” 
ধপ করে সে প্রণাম করল। - সমস্যাটা বলতেই ত্রাতার ভূমিকায় সে। - “একটু দাঁড়ান স্যার। এখুনি আসব। আমার গ্যারাজ খুব কাছেই!” 
কিছুক্ষণ বাদেই সে ফিরে এল আটখানা হেলমেট নিয়ে! আমরাও তখন আনন্দে আটখানা! ফেরার সময় দেখি সামচি গেটের ওখানেই সে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। স্যারদের চা খাওয়াবে আর তার গ্যারাজ দেখাবে বলে!

চোদ্দ নভেম্বর একুশেও আমার তেমনি গর্বে আনন্দে বুক ভরে গেল, স্যার হবার আনন্দে। সকালে রওনা হবার আগে নুরকে ফোন করলাম – “আমরা বের হচ্ছি নুর। তুমি কার্তিকা-র রেঞ্জারকে বলে রেখেছ তো?”

সে বলল – “বলা আছে স্যার। কোনো অসুবিধে হবে না। আপনি যাবার পথে দমনপুর মোড়ে একটু দাঁড়াবেন!”

দমনপুর মোড়ে তখন কাঁচা রোদের আলো। শীত শীত হাওয়া। দূর থেকে দেখতে পারছি – রোদ ছুঁয়ে আমার প্রিয় ছাত্র নুর হাই-ওয়ের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর সঙ্গে একগুচ্ছ বনকর্মী। গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাস্তায় নামতেই নুর ঝুঁকে প্রণাম করল। কিছু কিছু পাওয়া জীবনের কাছে আরো ঋণী করে দেয়। 

নুর তেমনি লাজুক মুখে বলল – “স্যার, আপনাদের আমিই যদি ভুটানঘাটে নিয়ে যাই?” 
আমি বললাম – “সে তো আমার অনেকখানি পাওয়া। যাবে?”
সে বলল – “আমারও খুব ভালো লাগবে আপনার সঙ্গে যেতে। আর আপনাকে গভীর জঙ্গল দেখাতে দেখাতে নিয়ে যাব। জানি, আপনি জঙ্গল খুব ভালোবাসেন।” 

হাই-ওয়ে থেকে গাড়ি বাঁদিকে নেমে গেল। ফরেস্টের শক্তপোক্ত বড় গাড়ির পেছনে স্টিয়ারিং হাতে আমি। নতুন গাড়ি। দাগ পড়বার ভয়ে ভয়ে চালাচ্ছি। এ রাস্তায় কতকাল পড়ে মানুষ যাচ্ছে কে জানে। পথকে গিলে খেয়েছে ঝোপঝাড়! টাটকা হাতির বিষ্ঠা বলে দিচ্ছে তারা ধারে-কাছেই আছে। বনের এক অন্য রকম ঘ্রাণ। ঝিঁঝিঁ ডাকছে অনবরত। কাছাকাছি বনের চারটি রেঞ্জ – ইস্ট দমনপুর, ইস্ট রাজা ভাতখাওয়া, ওয়েস্ট রাজাভাতখাওয়া এবং জয়ন্তী। আমাদের সামনের গাড়িতে ইস্ট রাজা ভাতখাওয়ার রেঞ্জ অফিসার নুর ইসলাম, আমার ছাত্র এবং অরণ্যসাথী নীরেন নার্জিনারী, বনকর্মী সঞ্জয় মাহাতো, বন সহায়ক শুভম অধিকারী ও রাজেশ টুডু, রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের শরিয়তুল্লা এবং চালক রুয়েল নার্জিনারী। 

ঘন জঙ্গলের ভেতর এক জায়গায় এসে নুরদের গাড়ি থেমে গেল। ভাবলাম- সামনে হাতির পাল! আমি ব্রেক কষলাম। নুর গাড়ি থেকে নেমে এসে বলল – “স্যার, সময় দেখুন!” মুঠোফোনে আলো জ্বালতেই দেখি  সাড়ে নটা। একি কান্ড একটু আগেই তো নটা বাজতে দশ দেখলাম! নুর বলল – “ঠিক এই জায়গাটিতে সময় আধ ঘন্টা এগিয়ে যায়। এই জোন পেরিয়ে গেলেই আবার আগের ভারতীয় সময় ফিরে আসবে! কি অদ্ভুত, না?!”
জানলাম – এটা ফরেস্টের ভেতরে তেইশ মাইল রোড। 

কতগুলো নজরমিনারে নুর নিয়ে গেল! শুধু পাখি ঝিঁঝিঁ আর পাতার শব্দ। অদ্ভুত শান্ত সমাহিত বন। কোনো কথা বলতে ইচ্ছে করে না। শুধু অনুভব করতে মন চায়। এই বনেই দু একদিন আগে ব্ল্যাক প্যান্থারের খোঁজ মিলেছে। আবার এই বনেই তির ধনুক নিয়ে চোরাশিকারীরা হানা দেয় – সদ্য খবরে পড়েছি। আমার কিন্তু কোথাও গা ছমছমে কিছু লাগছিল না। বারবার মনে হচ্ছিল ঝোপের আড়াল থেকে হাতি বাইসনেরা উঁকি দিক, ময়ূর ডানা ঝাপটাক, ঝাঁপ দিয়ে বুনো পথ পার হোক হরিণেরা। কিন্তু এমন কিছুই ঘটল না। বন শুধু বলতেই থাকল – আমার দিকে নিস্পলক তাকাও ছেলে!!
বনপ্রান্তে তুরতুরি নদী। পরিষ্কার, টলটলে। রোদ ভাসাতে ভাসাতে বয়ে চলেছে খেয়ালি স্রোত! নুর বলল – জলের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে নদী পার হতে হবে। আমি একটু ঘাবড়ে গেলাম বৈকি! নুরের নির্দেশমতো তুরতুরির পাড়ে আমার গাড়ি রেখে ওদের গাড়িতে উঠে বসলাম। আমাদের পার করে ড্রাইভার রুয়েল দৌড়ে নদী পেরিয়ে আমার গাড়ির স্টিয়াংরিংয়ে বসে কী অনায়াসে খরস্রোতা নদী পার করে দিল আমার হালকা পলকা গাড়িকে! আবার আমি স্টিয়ারিং ধরলাম।

কার্তিকা রেঞ্জে পৌঁছে নুর রেঞ্জারের সঙ্গে দেখা করে এল। একটা ভালো খাবারের দোকান খুঁজে কিছুতেই মিলল না। চায়ের দোকানে মাত্র ১২৫ টাকায় ১১ জনের জলপান! সেই দোকানদার দিদির সঙ্গে এক মজার ঝামেলা। ১৫০ টাকা দিতেই তিনি ৩০ টাকা ফেরৎ দিলেন। আমি বললাম – “৫ টাকা কম নিলেন তো?” দশ টাকা দিয়ে বললাম ৫ টাকা দিতে হবে না। চায়ের দোকান ছেড়ে আবার গাড়িতে উঠতে চলেছি। একজন এসে আমার হাতে ৫ টাকা ধরিয়ে বললেন – দিদি ফেরৎ দিলেন।

এই আমার আসল ভারতবর্ষ। সৎ, সাধারণ, অনন্য। মাথা উঁচু করা। আমার সেই ঘৃণিত মুখগুলো মনে পড়ছিল – যারা নির্লজ্জের মতো ঘুষ খেয়ে নিজেদের জাহির করে চলেছে, লোক ঠকিয়ে মাতব্বরি করে চলেছে অনবরত! এখানে এই দিদিটার কাছে তাদের এসে নৈতিকতার দীক্ষা নিয়ে যাওয়া উচিত! আমি মনে মনে প্রণাম করলাম তাঁকে।

তারপর সাতরঙা পাহাড়! ভুটানঘাট। আলিপুরদুয়ার থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরত্বে এক নৈসর্গিক বিস্ময়। বক্সা জাতীয় উদ্যানের খুব কাছে। ভারত-ভুটান সীমানা। ভুটানি উপত্যকা থেকে নেমে আসা রায়ডাক এখানে স্বচ্ছ ধারায় বইছে। ময়নাবাড়ি ফরেস্ট রেঞ্জের মধ্যে পড়ে ভুটানঘাট। এই রেঞ্জেরই ডাকনাম কার্তিকা রেঞ্জ। জঙ্গুলে রাস্তায় যেতে যেতে ভেতরে গুনগুন করে বাজতে থাকে ভালো লাগা। শুদ্ধতম হাওয়া। নদীর ওপারে পাহাড়। অন্যরকম পাহাড়। ভেঙে যাওয়া ঢাল। সে পাথরে রঙের বৈচিত্র। আমি সাত রঙ মিলিয়ে নিচ্ছি। কালো, কালোর কত শেড, ধূসর, সাদা, হলুদ, হালকা গোলাপি ...। সকলেই ছবি তোলায় ব্যস্ত। মানুষ এখন নিজের চোখে দেখেন কম, ক্যামেরার চোখেই দেখে তাদের আনন্দ! আমি ভাবছি এখানে জ্যোৎস্না নামলে কেমন লাগবে। আমি ভাবছি এখানে ভোরবেলা আর সূর্যডোবার কালে কেমন লাগবে। কোলাখামে গিয়ে অত বিশাল জলপ্রপাত দেখে আমার যে বিস্ময় হয়েছিল, ঠিক তেমনি এই ভিন্নরঙা পাহাড় দেখে বিস্মিত হলাম আমি! আমাদের ডুয়ার্সের এ এক অসামান্য প্রাকৃতিক খেয়াল। অজানা স্রষ্টার প্রতি তখন মনে মনে প্রণত হতে হয়!

ময়নাবাড়ি ফিরে নুর সদলবলে বিদায় নিল। ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকাতে তাকাতে গর্বে বুকটা ভরে উঠল আবার। চিরন্তন পিতা তখন আমার বুকে, শ্বাসপ্রশ্বাসে! কোন প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে দারিদ্রতে মাথা না নুইয়ে, নিজের জেদে চেষ্টায় পরিশ্রমে মেধায় ছেলেটি এইটুকু বয়সে এত বড় পদে আসীন হয়েছে। ওকে যখন ওর সহকর্মীরা ‘স্যার’ বলে ডাকছিল, আমার বাচ্চাদের মতো অনাবিল আনন্দ হচ্ছিল। ভালো থাক নুর, আরো অনেক দূর যা ছেলে আমার! তোর হাতে রক্ষা পাক আমাদের অরণ্য।

ময়নাবাড়ি থেকে ডানদিকে এক বনগন্ধী পথে গাড়ি ঘোরালাম। পথের শেষ প্রান্তে পৌঁছে ‘অরণ্যকুঞ্জ’। সুব্রত এই হোম-স্টে ঠিক করে দিয়েছিল। রান্নার লোক ছুটিতে। দুই আনাড়ির হাতে দেশি মুরগির ঝোল, ত্যানত্যানে ঠান্ডা হওয়া বেগুনভাজা, বিস্বাদ ডাল!! তবু আমার ভালো লাগছিল। বেশ একটা আদিম আদিম ব্যাপার। নড়বড়ে যে কটেজটা আমাদের জন্য বরাদ্দ – তা একেবারে জঙ্গল ঘেঁষা। রাতে হাতি যদি পিঠ চুলকোতে আসে, আমরা নির্ঘাত ঘরের সঙ্গে চুরমার হব! টয়লেট দেখে আমার সঙ্গিনীদের অবস্থা কাহিল। কবে শেষ পরিষ্কার হয়েছিল কে জানে! আমি তখন ঝাড়ুদার! ঘষে ঘষে টয়লেট বাথরুমের মেঝে পরিষ্কার করলাম!  
একা একা হাঁটতে বেরোলাম। একটা ঘোড়া চড়ে বেড়াচ্ছে আপন খেয়ালে। অনেকগুলো আদিবাসী ছেলেমেয়ে হোম-স্টে প্রাঙ্গনের দোলনায় খেলছে। ওদের সঙ্গে আড্ডা দিতে বেশ লাগছিল। এ যেন এক অন্য ভারতবর্ষ! একটা ঝোপে ফিসফাস খচমচ শুনে এগিয়ে গেলাম। একটা তেরো-চোদ্দ বছরের মেয়ে মদ খেয়ে বেসামাল। দাঁড়াতেই পারছে না। তার তিন বান্ধবী দুই বন্ধু তাকে তুলবার চেষ্টা করে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ ঘরে ফিরতে হবে, বিকেল ঘনিয়ে আসছে। জানলাম – মেয়েটির জন্মদিন ‘সেলিব্রেট’ হচ্ছিল, তাই চোলাই নয় – দামি মদ এসেছিল, তা খেয়েই এই বিপত্তি। বার্থ-ডে-গার্ল নিজেকে সামলাতে পারেনি, একটু বেশিই খেয়ে ফেলেছে! বহু চেষ্টাতেও দাঁড় করাতে না পেরে অবশেষে পিঠে তুলে ধানকাটা ক্ষেত ধরে তারা এগোতে লাগল...! পড়ন্ত বেলায় তারা ক্রমে ছোট হয়ে যেতে লাগল।

ওদিকে আদিবাসী গ্রামে আধুনিক ঝাড়াই-মেশিনে ধানঝাড়াই হচ্ছে। আলপথ ধরে সেখানে পৌঁছলাম। আদিমতা আর আধুনিকতার এক দুরন্ত মিশেল!

তারপর ফসল চলে যাওয়া ক্ষেতের আলে বসে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে একসময় দেখি আকাশে চাঁদ! সামনেই রাসপূর্ণিমা!

আমার সঙ্গে যারা আছেন, তাদের বদ্ধমূল ধারণা রিসর্টমালিক তখন মদ্যপান করে ছিলেন নিশ্চই!! নইলে চোখ অত লাল লাল দেখাবে কেন! আমি বললাম – দূর থেকে কাউকে দেখে কিছু স্থায়ীভাবে কল্পনা করা ঠিক নয়। আমিও জীবনে কতবার ঠকেছি! 

হলও তাই। সন্ধ্যার পর তিনি এলেন আমাদের কটেজে। বিরক্তি জানাতেই তিনি বললেন – “কিছু করবার নেই দাদা। কোভিড শেষ করে দিয়েছে আমাদের। কতদিন টুরিস্ট আসেনি। এত বড় প্রপার্টি মেনটেন করা কতখানি কঠিন আপনারা ধারণাও করতে পারবেন না। তারওপর কত ধরণের চাপ। শেষ হয়ে যাচ্ছি। জানেন, আমাকে এখন সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে যেতে হচ্ছে! দিনে একগুচ্ছ  ওষুধ খাচ্ছি। কাজ করবার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। মদ? ছুঁয়েও দেখি না এখন।” কেয়ারটেকার ছুটি নিয়ে গিয়ে আর ফিরছে না। জমির সীমানা নিয়ে কোন্দল। জলের সঙ্কট। মানুষের বেইমানি। তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে চলেছেন। তার ডিপ্রেশনের শব্দমালা রাত্রির নৈ :শব্দ ভেঙে দিচ্ছে। 

-“জানেন, কত স্বপ্ন দেখেছিলাম অন্যরকম কিছু করব। ভালোবেসে, পর্যটকদের সত্যিকারের আরণ্যক ঘ্রাণ দেব ভেবে ২০১৯-এর ৬ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করেছিলাম সমারোহে। তুরতুরি খন্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের এই নির্জনে সাড়ে ছ বিঘে জমির ওপর। এমনকি একটা গাছবাড়িও বানিয়েছি। কিন্তু কোভিড সব ধ্বংস করে দিল!”

- “যদি নোংরামি করতে দিতাম, মদের আখড়া বানাতাম, হয়তো এত ডুবতে হত না।”
- “বিশ্বাস করে করে বারবার ঠকেছি!” 

তিনি বলে চলেছেন। হয়তো নিজেকে হালকা করছেন। দমআটকে পড়ে আছেন মানুষটা অনেকদিন। আমার মনে হচ্ছে – হালকা হোন উনি। আবার কাজের শক্তি ফিরে পান। 
আমাকে অবাক করে দিয়ে তিনি বললেন – “আমি গান লিখি, সুর করি, গান গাই। শোনাই?”

একের পর এক নিজের নির্মাণ শুনিয়ে চলেছেন তিনি। রাত অনেক ঠান্ডা নিয়ে জমে আসছে। 

রাত জুড়ে শুনতে পেলাম হাতি তাড়াবার চিৎকার, কোলাহল, আর পটকা ফাটার আওয়াজ। সকালে দেখা হতে শুভাশিস বললেন – “হাতিটা আমাদের হোম-স্টে অব্দি চলে এসেছিল। ওই কটেজটার পাশেই অনেকক্ষণ ছিল। ভাগ্যিস কোনো বিপদ ঘটেনি। দুদিকের তাড়া খেয়ে বেচারা বুঝতে পারছিল না কোনদিকে পালাবে!” 

আমি তার পায়ের গোদা গোদা ছাপ দেখতে পেলাম। বুঝতে পারলাম, কাল রাতে খোলা বারান্দায় এসে দাঁড়ালে তার সঙ্গে দেখা হয়ে যেত! 

কাজের তাড়ায় ঘরমুখী হচ্ছি সকালবেলাতেই। কিন্তু মনখারাপের বাঁশি বাজছে। ডোকসা পাহাড় তাকিয়ে আছে আমার দিকে। এবার যাওয়া হল না কালাপাহাড়, হাতিপোতা, দেবীথান, ফাঁসখাওয়া, জয়ন্তী বাগান, লিম্বুধোরা, রহিমাবাদ...।  

শামুকতলায় চায়ের দোকান খুলছে। আমি মনে মনে ভাবছি – কাকে যেন চিনতাম এই জনপদের। আবার আসব। এবং খুঁজে বের করবই তাকে!

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri