সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
28-July,2023 - Friday ✍️ By- শুক্লা রায় 470

নগেন মাস্টার/শুক্লা রায়

নগেন মাস্টার
শুক্লা রায়

সকালের চা টা শেষ করে নগেন গরুগুলো খুঁটি থেকে খুলে নেয়। মাঠে বাঁধবে। যা রোদ। মাঠে বাঁধলেও দুপুরে একটু ছায়ায় না আনলে বিপদ। ভরদুপুরে সেজন্য অঙ্ক করতে দিয়ে চট করে সাইকেলটা নিয়ে বাড়ি আসে। গরুদুটো ঝট করে ছায়ায় টেনে বেঁধেই  আবার স্কুল। খাতা দেখতে বসে পড়ে। পাড়ারই প্রাইমারী স্কুলের মাষ্টার নগেন। রোদে-ঝড়ে কোনো কামাই নেই। আর একজন মাষ্টার আছে। তবে একটু দূরে বাড়ি বলে আসতে আসতেই এগারোটা বাজে। কোনো কোনো দিন তো সাড়ে এগারোটা পযর্ন্ত করে ফেলে। নগেন কিছু বলে না। নিজেই যতটা পারে সামলায়। তবে এই গরমের দিনে পোষ্যগুলোর মায়ায় একটু বাড়ি আসতেই হয়। অবশ্য স্কুলটা নিয়েই নগেন মাস্টার যেভাবে পড়ে থাকে তাতে কারো কিছু বলার থাকে না। ছাত্রীর থেকে ছাত্রের সংখ্যাই বেশি। নগেন মাস্টার সবার বাড়ি ঘুরে ঘুরে ছাত্র ভর্তির তদারকি করে। তবে মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে সেরকম কেউ আগ্রহ দেখায় না। ছোট ওয়ান, বড় ওয়ান, টু, থ্রি বড় জোর ফোর অবধি পড়তে পারে মেয়েরা। তবে টু থেকে থ্রীর মধ্যেই স্কুল ছাড়িয়ে বেশির ভাগ মেয়ে ঘরের কাজে লেগে যায়। ওইটুকু বয়স থেকেই রান্না-বান্না, ছোট ভাই অথবা বোনটির দেখাশোনা থেকে শুরু করে গোবর কুড়িয়ে নিয়ে এসে 'গৈটা' বানানো, গরু-বাছুর দেখাশোনা সবই করতে হয়। ছেলেরাও খুব যে পড়াশুনায় এগিয়ে যায় তাও নয়। তবে ছেলেদের উপর কাজের চাপ কম কিন্ত জোরও নেই কিছু। পড়লে পড়ে, না পড়লে খেলে বেড়ায়, বলার কেউ নেই। তারপর সংসার চাপে ঘাড়ে। তবু নগেন মাস্টার বাড়ি বাড়ি বেড়িয়ে আসে।
বেরোবার মুখেই মাস্টার রে, মাস্টার ডাক শুনে ওখান থেকেই মাথা তুলে দেখে কে ডাকে। বিষাদু একেবারে সেজেগুজে সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে। নগেন কিছু বলার আগে বিষাদুই বলে, 'আজকের দিনটা তুই একটু আমার সাইকেলটা নিয়ে তোর সাইকেলটা দে তো। ছেলেটাকে নিয়ে বড় ডাক্তারের কাছে যাব। জ্বর। দুইটা বাচ্চারই জ্বর।' নগেন অবাক হয়ে বলে, 'তুই জ্বরের বাচ্চাদুটোকে নিয়ে একা সাইকেলে করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবি? পড়ে টরে যায় যদি?'
বিষাদু ওর অজ্ঞতা দেখে হাসে। 'মেয়েটা থাকবে ওর ঠাকুমার কাছে। আমরা দুজনে যাব ছেলেকে নিয়ে। একই জ্বর। একজনকে ভিজিট দিয়ে দেখালেই হবে। একই ওষুধ দুজনকে খাওয়ালেই হল।'
এসব র্সটকাট বুদ্ধি নগেনের পছন্দ হয় না। গম্ভীর হয়ে বলে। 'না না। এরকম একদম করবি না। বাইরে থেকে দেখলে বোঝা যায় কার ভেতরে কী সমস্যা?'
বিষাদু পাত্তা দেয় না। প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলে, 'আমার সাইকেলটার শুধু চেন পড়ে একটু পর পর। চেনটা ঢিলা হয়েছে, কবে থেকে ভাবি মেকারের কাছ থেকে কাটিয়ে আনব। তা হয় আর কই!'
বিষাদু যেতেই নগেন একটু মনখারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। মেয়েটা বড়। ছেলেটাই ছোট। মনে পড়ল, মেয়ের জন্ম কাউকেই খুশি করতে পারেনি। কেমন একটা তাচ্ছিল্য আর অবিশ্বাস নিয়ে বিষাদুর মা বলেছিল, 'যে পোয়াতি, পইলাটাই বেটি। পরে যদি আরো একটা বেটি হয় তো হয়ে গেল।' ঠাকুরের কৃপায় পরেরটা ছেলে হওয়াতে মেয়েটাও যত্ন-আত্তি পায় কিছুটা। সেই মেয়ের জ্বরে যে এরকমই ব্যবস্থা হবে এ তো জানা কথাই। 
স্কুলে গিয়ে সাত তালে আর বাড়ির কথা মনে নেই নগেনের। সন্ধ্যাবেলা বিষাদু এসে সাইকেলটা দিয়ে নিজেরটা নিয়ে গেল। এই গরমের জন্যই জ্বর। আর কৃমি আছে পেটে। সাধারণ জ্বর-জারি ছাড়া বড় কিছু নয় তা নগেনও জানতই। তবু মনটা খুঁত খুঁত করে। 
রাতে এমনিতেই গরমে ঘুমানোর উপায় নেই। তার উপর উত্তর-পূর্ব কোণ থেকে যেন একটু মৃদু মৃদু কথার আওয়াজ আসছে! নগেনের বৌ ঠ্যালা দেয় একটা। নগেনের আবার ঘুমটা বেশিই। ঠ্যালা খেয়েও নির্বিকার ঘুমাতে থাকে। রাতের নিস্তব্ধতার জন্য নগেনের বৌ স্পষ্ট কথা-বার্তার আওয়াজ পায়। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই আওয়াজটা যেন কান্নায় বদলে গেল মনে হচ্ছে। এবার আর থাকতে পারল না। জোরে ধাক্কা দিল। নগেন বিরক্ত হয়ে উঠে বসলেও বুঝতে পারল কিছু একটা হয়েছে। দ্রুত দুজনে বাইরে বেড়িয়ে এসে দেখে বিষাদুর বৌ ভ্যানে মেয়ে কোলে বসে। সঙ্গে আর একজন বয়স্ক মহিলা, ফ্যানবালা আর বিষাদু নিজে। মেয়েকে নিয়ে রাত-বিরেতেই ভ্যান ছুটছে হাসপাতালে। ওদের আর কিছু জিজ্ঞেস করার উপায় নেই। একটু এগিয়ে বিষাদুর বাড়ি যেতেই দেখে অনেকেই উঠে পড়েছে। নানারকম আলোচনা চলছে। সবার কাছে শুনে যেটুকু বোঝা গেল তা হল। ওষুধ খেয়ে মেয়েটা এখন যায় তখন যায় অবস্থা। ডাক্তার কৃমির ওষুধ দিয়েছে ছেলেকে। একটাই ডোজ।  এক ছোট শিশি ওষুধ পুরোটা খাবে। ওকে খাইয়ে বিষাদুর বৌ ভাবল এখটু ওষুধ তো বোতলের গায়ে লেগে আছে, কেন আবার নষ্ট হবে ভেবে বোতলে জল ঢুকিয়ে ঝাঁকিয়ে সেই জলটা মেয়েকে খাইয়েছে। কিছুক্ষণ পরেই বিপত্তি। প্রথমে অতটা গা করেনি, মেয়েটা একটু বেশিই ঘ্যান ঘ্যান করে। ছেলেকে কোলে করে ঘুম পাড়াতে পাড়াতেই মেয়ে অস্থির। এবার বিষাদু নিজে মেয়েকে দেখতে এসে দ্যাখে কৃমি বের হচ্ছে। প্রথমে বমি। তারপর নাকমুখ দিয়ে অর্নগল বড় বড় কৃমি বেরিয়ে আসছে। তারপরের ঘটনা তো নগেনরা নিজেরাই দেখল।
ফিরে এসে রাতে আর ভালো ঘুম হল না, মেয়েটার কচি মুখটাই মনের ভেতর ভাসছে যেন। মেয়েটা সবে স্কুলে ভর্তি হয়েছে, এর মধ্যেই অক্ষর চিনে ফেলছে বড্ড তাড়াতাড়ি। ভাবতে ভাবতে চোখটা একটু লেগেছিল হয়ত, গুনগুন করে ইনিয়ে বিনিয়ে কান্নার শব্দ কানে আসতেই দরজা খুলে বেরিয়ে এল। সওয়ারীসহ ভ্যানটা ফিরছে। পরদিন আর স্কুলে যেতে পারল না। বাঁশ টাশ কাটায় হাত লাগাল। চিতা সাজানোর সবটা নিজে তদারকি করল নগেন। মনে মনে শুধু ছোট্ট ছোট্ট হাতের অ আ ক খ লেখাটা চোখে ভাসছিল। সদ্য নাক ফোটানো হয়েছে। কালো কচু পুড়িয়ে রস লাগালেও জায়গাটা আঁবের মতো ফুলে আছে। পেতলের নথ পরা মুখটা ঝাঁকিয়ে বলত, 'ব্যথা করে না তো! নাকে ফুল পরব তখন কত সুন্দর লাগবে আমাকে, হ্যাঁ  কাকা?'
স্কুলেও কাকাই বলত তাকে। ঝুলে পড়া ফ্রকটা সামলাতে সামলাতে কালো স্লেটটা আঁকড়ে ধরে লিখত আর নাক টানত। পেতলের গোল নথ ঝকমক করে দুলে উঠত নাক টানার সাথে সাথে। নথ খুলে তার আর দুল পরা হল না।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri