সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
16-December,2022 - Friday ✍️ By- নীলাঞ্জন মিস্ত্রী 447

তিস্তাবাথান-৭

তিস্তা বাথান
পর্ব:সাত
নীলাঞ্জন মিস্ত্রী
"""""""""""""""""""""
 
তিস্তার চরে সত্যি সত্যিই হাতি ডুবেছিল কিনা জানি না তবে মহিষ পুঁতে যাবার ঘটনা রয়েছে প্রচুর। মহিষেরা পুঁতে যায় চপচপিয়ার মাঝে। তিস্তাবক্ষের উপর পলি, মাটি, বালি আর জলের আলগা আস্তরণকেই স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘চপচপিয়া’ বা ‘প্যাক’ (ভ্যাক মাটি)। আবার অনেকে চপচপিয়াকে দেলদেলিয়াবাড়ি, দ্যামদেমারবাড়ি-ও বলেন। আসলে চোরাবালি, চপচপিয়া, প্যাক (ভ্যাক), দ্যামদেমা, দেলদেলিয়া, একই জিনিস। বৈশাখ মাস থেকে তিস্তাবক্ষের বিভিন্ন ভূ-ভাগে এধরনের গভীর ও নরম আস্তরণ তার সাম্রাজ্য বিস্তার করে। মহিষের বিচরণ ক্ষেত্র যেহেতু তিস্তা অববাহিকা তাই তার বিভিন্ন পলিচর, বালিচর বা মাঝিয়ালিতে লুকিয়ে থাকা ফাঁদ বিপদে ফেলে এই মহিষকূলকে। সাথে বিপদে পড়েন মৈষাল বন্ধুরাও।

ভইসডোবাতে দু’জন মৈষালবন্ধু ডুবে গেলেও চপচপিয়া বা দ্যামদেমাতে মৈষালের একেবারে পুঁতে যাবার তেমন কোন ঘটনা বলতে পারেননি বর্তমানের অভিজ্ঞ মৈষাল বন্ধুরা। তবে কোমর সমান দেলদেলিয়া বা প্যাকে (ভ্যাকে) যে তাঁরা ডুবে যেতেন তা জানিয়েছেন বহুবার। প্যাকে ডুবে যাওয়ার একটি মজার বিষয় রয়েছে। দেলদেলিয়া, চপচপিয়া বা প্যাকের মাঝে কিন্তু সকলে সমান ভাবে তলিয়ে যান না। যিনি প্রথমে থাকেন তিনি এক কোমর পর্যন্ত পুঁতে গেলেও তার ঠিক পেছনের জন কিন্তু তলাবেন এক হাঁটু সমান। তাই দলের যিনি প্রথমে রয়েছেন বিপদ কিন্তু তারই বেশি হয়ে থাকে। বাস্তবে একজনের এক কোমর সমান ডুবে যাবার পর পেছনের পলি বালি সাথে সাথেই কিছুটা শক্ত হয়ে যায়। আর এই শক্ত হয়ে যাবার ফলেই পেছনে যিনি থাকেন তিনি হাঁটু পর্যন্ত গেঁথে যান। এঘটনার শিকার কিন্তু আপনিও হতে পারেন। আপনি নিশ্চই মৈষাল বন্ধু নন। যদি আপনার বসবাস নদীঘেষা না হয়, যদি আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকে তবে দোহাই চোরাবালি, চপচপিয়া বা ভ্যাকের কাছাকাছি একেবারেই যাবেন না। এই বিপদ থেকে বেরিয়ে আসবার জন্য কিছু কৌশল রয়েছে। যে কৌশল শুধুমাত্র জানেন মধ্যতিস্তা বা তিস্তার সাথে পুরোপুরি নির্ভরশীল ব্যক্তিরাই।

পুরানো বার্ণিশের চরে নাকি এই প্যাকে পড়েই একটি হাতি কয়েকদিন ধরে ডুবেছিল। সেই ঘটনা দেখতে বা ডুবন্ত হাতিকে সেবা দিতে দূরদুরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ এসে ভিড় জমিয়েছিলেন তিস্তাচরে। বার্ণিশ অঞ্চলের বহু বয়স্ক মানুষের কাছে পৌঁছেছিলাম সেই ঘটনাটি জানতেই। জানতে চেয়েছিলাম হাতিডোবার ঘটনাটি বাস্তবে কোথায় ঘটেছিল? কেউ তার সদুত্তর দিতে পারেননি। একদা বার্ণিশ জংশনে যার চায়ের দোকান ছিল সেই ফণিভূষণবাবু (বর্তমান বয়স ৯১ বছর) তিনিও সরাসরি বলে দিলেন-না; এমন কোন ঘটনা তাঁর জানা নেই। নিরাশ হয়েছি তবে আশা ছাড়িনি এখনও।

'নাথুয়ার খাল' নামক স্থানটি এখনো রয়েছে তিস্তা ঘেঁষে। তার একটু উজানেই টাকীমারির চর। আর সেই চরের একটু আগেই দ্যামদেমিয়া ফাঁদ। এই ফাঁদে একহাল মহিষ আটকে পড়েছিল বছর চল্লিশ আগে। ডাঙ্গার মৈষাল তখন বাথানের মৈষালদের সাথে আড্ডায় মশগুল। ‘ভইস ডুবিল রে ভইস ডুবিল’ চিৎকার শুনে তাঁরাও ছুটে যান। মৈষাল নেপা দেখেন তাঁর জোড়া মহিষ ঘাস খেতে খেতে ঢুকে পরেছে দ্যামদেমিয়ার মাঝে। পা গুলি ততক্ষণে মাটির নীচে ঢুকে গেছে। মোটা শরীরটুকু ধীরে ধীরে ঢুকে যাচ্ছে বালির ভিতরে। দ্যামদেমিয়া থেকে উঠাবার জন্য মহিষ দু’টি যত চেষ্টা করছে ততই গেঁথে যাচ্ছে মাটির ভেতর। আশেপাশে কিছু মানুষ জড়ো হয়েছেন বটে কিন্তু মহিষকে মাটি থেকে টেনে তোলার কোন উপায় তাঁদের কাছে নেই। নেপাদা’র চোখের সামনে ডুবতে থাকে তাঁর জোড়ামহিষ। পুরো শরীর ঢুকে যাবার পর মহিষেরা আকাশের দিকে লম্বা মাথা করে শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু এই ভূগর্ভ যাত্রা ঠেকায় কে? মৈষালেরা মহিষের কাছে পৌঁছাবার চেষ্টা করলে তা আত্মহত্যারই নামান্তর হবে। তাই সবার চোখের সামনেই একে একে মহিষের শিং, মাথা, চোখ, নাক, মুখ তলিয়ে যায়। এতো গেল একহাল মহিষের মাটির ভেতর তলিয়ে যাবার ঘটনা। চপচপিয়ার মাঝে এরকম শ’য়ে শ’য়ে মহিষ ডোবার ঘটনা স্মরণ করে এখনও চোখের জল ফেলেন মৈষাল বন্ধুরা। নাথুয়ার খালেও মহিষ ডুবেছিল অনেক। মৈষালদের কাছে সে যেন আর এক বারমুডা ট্রায়েঙ্গেলস্।

ভ্যাকের মধ্যে জীবন্ত মহিষ তলিয়ে যাবার ঘটনা বর্তমানে তেমন আর ঘটে না। তিস্তা অববাহিকার চরিত্র একেবারেই বদলে গেছে। সেদিনের বিঘার পর বিঘা 'দ্যামদেমা' বা 'চপচপিয়া' আজ আর নেই। প্রত্যাশিতভাবে মহিষের সংখ্যাও কমে গেছে অনেক। তবে চোরাবালির মাঝে পরে মহিষেরা আজও মাটিতে গেঁথে যায়। সে গেঁথে যাওয়া ওই পা-পর্যন্তই। মৈষালেরা ছুটে গিয়ে মহিষদের পলি-মাটি থেকে তুলে দেন। এখন সারাদিন মহিষেরা চরে বেড়ালেও পেট ভরে না। তাই কোনো কোনো দিন সারা রাত ছেড়ে দেওয়া হয় বাথানের মহিষদের। নদী পেরিয়ে তারা পৌঁছায় নতুন নতুন চরে। সেখানে মেলে ভাবনি, ঘাস। রাতে বাথানে ফেরানো হয় না মহিষদের। মহিষের গলার ঘন্টি যোগাযোগ রক্ষা করে চলে মৈষাল ও মহিষদের মাঝে। ঘন্টির  আওয়াজে মৈষালেরা বাথানের ঘর থেকেই বুঝতে পারেন দূরে তার মহিষেরা কেমন রয়েছে। বিপদের ঘন্টি বাজলেই তাঁরা ছুটে যান মহিষের কাছে। উদ্ধার করেন মহিষদের। বর্তমানে এ বিপদ চোরাবালিতে বা দ্যামদেমাতে মহিষের পা গেঁথে যাওয়া। মাত্র কয়েক বছর আগে পর্যন্ত এভাবে মহিষদের সারারাত ছেড়ে দেওয়ার কোন প্রয়োজন হ'ত না। তখন বাথানের আশেপাশেই ছিল প্রচুর ঘাস। আয়েশি জীবনযাপন ছিল মহিষদেরও। কিন্তু আজ দিন বদলেছে, পরিস্থিতি বদলেছে। পেট ভরাবার জন্য কঠিন সংগ্রাম করতে হচ্ছে তাদের। কোনো কোণ দিনতো ঘন্টির সংকেত সঠিকভাবে না পৌঁছালে সারারাত টুমের মাঝে পা গেঁথে যাওয়া অবস্থাতেই কাটিয়ে দেয় মহিষেরা। ভোরবেলা গিয়ে তাদের প্যাক থেকে তুলে দিতে হয় মৈষাল বন্ধুদের।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri