সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
35.চা-ডুবুরী-৩৫/সুকান্ত নাহা

35.চা-ডুবুরী-৩৫/সুকান্ত নাহা

34.চা-ডুবুরী-৩৪/সুকান্ত নাহা

34.চা-ডুবুরী-৩৪/সুকান্ত নাহা

33.চা-ডুবুরী-৩৩/সুকান্ত নাহা

33.চা-ডুবুরী-৩৩/সুকান্ত নাহা

32.চা-ডুবুরী-৩২/সুকান্ত নাহা

32.চা-ডুবুরী-৩২/সুকান্ত নাহা

31.চা-ডুবুরী-৩১/সুকান্ত নাহা

31.চা-ডুবুরী-৩১/সুকান্ত নাহা

30.চা-ডুবুরী-৩০/সুকান্ত নাহা

30.চা-ডুবুরী-৩০/সুকান্ত নাহা

29.চা-ডুবুরী-২৯/সুকান্ত নাহা

29.চা-ডুবুরী-২৯/সুকান্ত নাহা

28.চা-ডুবুরী-২৮/সুকান্ত নাহা

28.চা-ডুবুরী-২৮/সুকান্ত নাহা

27.চা-ডুবুরী-২৭/সুকান্ত নাহা

27.চা-ডুবুরী-২৭/সুকান্ত নাহা

26.চা-ডুবুরী-২৬/সুকান্ত নাহা

26.চা-ডুবুরী-২৬/সুকান্ত নাহা

25.চা-ডুবুরী-২৫/সুকান্ত নাহা

25.চা-ডুবুরী-২৫/সুকান্ত নাহা

24.চা-ডুবুরী-২৪/সুকান্ত নাহা

24.চা-ডুবুরী-২৪/সুকান্ত নাহা

23.চা-ডুবুরী-২৩/সুকান্ত নাহা

23.চা-ডুবুরী-২৩/সুকান্ত নাহা

22.চা-ডুবুরী-২২/সুকান্ত নাহা

22.চা-ডুবুরী-২২/সুকান্ত নাহা

21.চা-ডুবুরী-২১/সুকান্ত নাহা

21.চা-ডুবুরী-২১/সুকান্ত নাহা

20.চা-ডুবুরী-২০/সুকান্ত নাহা

20.চা-ডুবুরী-২০/সুকান্ত নাহা

19.চা-ডুবুরী-১৯/সুকান্ত নাহা

19.চা-ডুবুরী-১৯/সুকান্ত নাহা

18.চা-ডুবুরী-১৮/সুকান্ত নাহা

18.চা-ডুবুরী-১৮/সুকান্ত নাহা

17.চা-ডুবুরী-১৭/সুকান্ত নাহা

17.চা-ডুবুরী-১৭/সুকান্ত নাহা

16.চা-ডুবুরী-১৬/সুকান্ত নাহা

16.চা-ডুবুরী-১৬/সুকান্ত নাহা

15.চা-ডুবুরী-১৫/সুকান্ত নাহা

15.চা-ডুবুরী-১৫/সুকান্ত নাহা

14.চা-ডুবুরী-১৪/সুকান্ত নাহা

14.চা-ডুবুরী-১৪/সুকান্ত নাহা

13.চা-ডুবুরী-১৩/সুকান্ত নাহা

13.চা-ডুবুরী-১৩/সুকান্ত নাহা

12.চা-ডুবুরী-১২/সুকান্ত নাহা

12.চা-ডুবুরী-১২/সুকান্ত নাহা

11.চা-ডুবুরী-১১/সুকান্ত নাহা

11.চা-ডুবুরী-১১/সুকান্ত নাহা

10.চা-ডুবুরি-১০/সুকান্ত নাহা

10.চা-ডুবুরি-১০/সুকান্ত নাহা

9.চা-ডুবুরি-৯/সুকান্ত নাহা

9.চা-ডুবুরি-৯/সুকান্ত নাহা

8.চা-ডুবুরি-৮/সুকান্ত নাহা

8.চা-ডুবুরি-৮/সুকান্ত নাহা

7.চা-ডুবুরি-৭/সুকান্ত নাহা

7.চা-ডুবুরি-৭/সুকান্ত নাহা

6.চা-ডুবুরি-৬/সুকান্ত নাহা

6.চা-ডুবুরি-৬/সুকান্ত নাহা

5.চা-ডুবুরি-৫/সুকান্ত নাহা

5.চা-ডুবুরি-৫/সুকান্ত নাহা

4.চা-ডুবুরি-৪/সুকান্ত নাহা

4.চা-ডুবুরি-৪/সুকান্ত নাহা

3.চা-ডুবুরি-৩/সুকান্ত নাহা

3.চা-ডুবুরি-৩/সুকান্ত নাহা

2.চা-ডুবুরি-২/সুকান্ত নাহা

2.চা-ডুবুরি-২/সুকান্ত নাহা

1.চা-ডুবুরি-১/সুকান্ত নাহা

1.চা-ডুবুরি-১/সুকান্ত নাহা

06-December,2022 - Tuesday ✍️ By- সুকান্ত নাহা 482

চা-ডুবুরি-৭/সুকান্ত নাহা

চা-ডুবুরি : পর্ব-৭
সুকান্ত নাহা
^^^^^^^^^^^^^^^
          
হঠাৎ দেখা ও অশনি সংকেত

টিকিটটা হাতে পেয়েই দৌড়তে থাকে সুবর্ণ। কয়েক মিনিটের মধ্যে সকালের ধুবড়ি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে যাবে প্ল্যাটফর্ম থেকে। এটা মিস করলে পরের ট্রেন সেই সাড়ে সাতটায়। ওটায় গেলে এগারটার আগে অফিসে ঢোকা যাবে না। তিনদিন ছুটির পর দেরিতে অফিসে ঢুকতে নৈতিকতায় বাধে। যদিও বড়সাহেব ইদানিং সুবর্ণকে তেমন কিছু বলেন না। বাবার অসুখের ব্যাপারটা জানেন। তাছাড়া প্রতি সপ্তাহে সুবর্ণ বাড়িও যায় না। তা সত্ত্বেও সুবর্ণ বাড়ি গেলেই সদানন্দ পাঠকের বডি ল্যাঙ্গুয়েজে নিরানন্দ ভাব ফুটে ওঠে। উইকএন্ডের মস্তিটা না হলে বিরক্তিটা কোষ্ঠকাঠিন্যের অস্বস্তির মতো হপ্তাভর চেহারায় লেগে থাকে। 

কামরাগুলো সব ভরে গেছে। ডেলি প্যাসেঞ্জাররা সকলেই এই ট্রেনটা ধরতে চায়। এটাতে গেলে মালবাজার, নাগরাকাটা, বানারহাট, বীরপাড়া, হাসিমারা হয়ে আলিপুরদুয়ারে যাওয়া নিত্যযাত্রীরা সময়মতো অফিস করতে পারে। শনিবার বাড়ি গেলে বাইকটা নাগরাকাটা স্টেশনের কাছে পরিচিত ঠেক-এ রেখে যায়। যে কারণে ট্রেন থেকে নেমেই বাইকে দশ মিনিটে বাগানে পৌঁছে যাওয়া যায়। 

হুইসেল বেজে গেছে। একটা ফাঁকা জায়গা পাওয়ার আশায় অনেকগুলো কামরা ছেড়ে এসে উদভ্রান্তের মতো প্রায় ইঞ্জিনের কাছাকাছি চলে এসেছিল সুবর্ণ। হাতে একটা বড়সড় শপারস ব্যাগ। তাতে ঢাউস একখানা টিফিন ক্যারিয়ার। আগামী চার-পাঁচদিনের রান্না ওতে ঠেসে ভরে দিয়েছে তূর্ণা। অন্ধকার থাকতে ঘুম থেকে উঠে রান্না করেছে সব। গিয়ে ওগুলো হ্যান্ড ওভার করে দিতে হবে ফাগুকে। ও সেগুলো বুঝেশুনে রেখে দেবে ফ্রিজে। এব্যাপারে ফোনে ওকে ইনস্ট্রাকশন দেয়া আছে তূর্ণার। 

-' আরে, উঠে পড়ো, উঠে পড়ো । সুবর্ণ... এদিকে! উঠে পড়ো এইটাতে ...' 

ট্রেন ততক্ষণে চলতে শুরু করে দিয়েছে। বক্তাটি কে তা দেখার সময় ছিল না। উঠে পড়ে হাঁপাতে থাকে সুবর্ণ আর মনে মনে খিস্তি দিতে থাকে সিন্ডিকেটএর লাইনে দাঁড়ানো সিটি অটোর ছেলেটাকে । প্যাসেঞ্জার ভর্তি হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও কিছুতেই ছাড়ছিল না। আরো ঠেসে ভরার ধান্দায় স্টার্ট দিয়ে চেঁচিয়ে যাচ্ছিল ক্রমাগত। হাতে তখন মাত্র আধঘণ্টা সময়। জংশনে পৌঁছতে পারলেও টিকিটের লম্বা লাইনে পড়লে ট্রেন মিস করার চান্স প্রবলতর। সেই  উৎকন্ঠায় মেজাজ ধরে রাখতে পারেনি। বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে আরো কিছু সময় বেরিয়ে গেছিল। 

-'এদিকে চলে এসো । সিট রেখেছি তোমার জন্য। '
ভদ্রলোক করিডরে দাঁড়িয়ে দূর থেকে হাত নাড়ছিলেন। সারা মুখে সন্ন্যাসীর মতো সাদা দাড়ি। মাথার পাতলা চুলও তথৈবচ। চোখে পুরু ফ্রেমের চশমা। দেখে চট করে চেনা না গেলেও ভরাট কন্ঠস্বরটা চেনা চেনা ঠেকছিল। 

কাছে আসতেই ভদ্রলোক সামনের সিঙ্গল সিটের ছেলেটিকে পাশের খালি সিটটায় চলে যেতে অনুরোধ করলেন। তারপর সুবর্ণকে মাথার ওপর বাঙ্কটা দেখিয়ে বললেন, 'ব্যাগটা ওপরে তুলে দিয়ে চটপট বসে পড়।'
ব্যাগটা রেখে মুখোমুখি বসতেই একেবারে সরাসরি ধেয়ে এলো সেই অস্বস্তিকর প্রশ্ন, 'চিনতে পারনি নিশ্চয়ই? '
ঘামবাস্পে ঢেকে যাওয়া চশমাটা খুলে মুছে নিতে নিতে অচেনা ভাবটা আরো প্রকট করার চেষ্টা করতেই ভদ্রলোক নিজেই কিছুটা স্বস্তি দিলেন, 'অবশ্য না চেনারই  কথা। তখন তো আর চেহারায় এই ঝোপজঙ্গল ছিল না ... হস্টেলে তোমার রুমে যখন যেতাম...'
'আরেঃ,বি-জ-ন দা... তাই তো বলি গলাটা এত চেনা ঠেকছে অথচ...' সুবর্ণ উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠতেই সশব্দে হো-হো করে হেসে ওঠেন ভদ্রলোক। 

-' কতগুলো বছর পেরিয়ে গেল বলুন তো! সেই চেহারাটাই তো নেই আপনার। দাড়িতে ঢেকে ফেলেছেন পুরো একেবারে...!'

-'এটা ছদ্মবেশ, বুঝলে...। ভেতরের মানুষটা কিন্তু একই আছে।' গলা নামিয়ে বেশ একটা রহস্যময় ইংগিত ছুঁড়ে দিয়ে মিটমিট করে হাসেন বিজন।

মনের ভেতর অনেক ছবি একের পর এক জড়ো হতে থাকে। জলপাইগুড়ি কলেজ হস্টেলে থাকাকালীন এই বিজনদার হাত ধরেই ছিল রাজনীতির অলিতে গলিতে বিচরণ। ছাত্র রাজনীতির গড়পড়তা নেতাদের মতো লুক ছিল না বিজনদার। ক্লিন শেভড। হাফ-সার্ট,কাঁধে ঝোলা ব্যাগ। মাথায় কখনও সাধারণ সোলার ক্যাপ। ব্যাগে কিছু নথিপত্র এবং অবধারিতভাবে ত্রৈমাসিক কবিতার কাগজ 'দৃপ্তস্বর'। একটি বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়েও কবিদের জন্য দিতেন অপার স্বাধীনতা। স্বভাব কবি থেকে বিমূর্ততায় আস্থাশীল কবি, প্রকৃতি প্রেমিক থেকে শুরু করে প্রতিবাদী কলম, ক্ষুধার্ত প্রজন্মের কবি, প্রবীণ, নবীন, এলেবেলে থেকে শুরু করে সম্ভাবনাময় সমস্ত কবিদের যুগপৎ আশ্রয় ও প্রশ্রয়দাতা ছিলেন বিজনদা। উত্তর তথা দক্ষিণ বঙ্গের অনেক প্রথিতযশা কবিকে দিয়েও লিখিয়েছেন নিজের কাগজে। কবিতার বাৎসরিক অনুষ্ঠানে একবার শক্তি,সুনীল অমিতাভ দাশগুপ্তদের এনে চাঁদের হাট বসিয়েছিলেন। কেউ খুব জঘন্য কবিতা নিয়ে এলেও  পড়ে শোনাতেন সকলকে। এবং তা কবির সামনেই।কবিকে  বিন্দুমাত্র হতাশ না করে বিনীতভাবে বলে দিতেন, 'আরেকটু অনুশীলন করুন ভাই। আপনার মধ্যে কবিতা আছে। চাই শুধু আরেকটু কাব্যপাঠ ও নিবিড় অনুশীলন।' ভালোবাসতেন গান শুনতে। সুবর্ণর রুমে গায়ক বন্ধু শুভাশিস, গৌতম এরা গানের আসর বসালেই খবর পেয়ে চলে আসতেন। এক কোনে বসে চুপচাপ গান শুনতে শুনতে শেষ করে ফেলতেন একের পর এক সিগারেট। অভাবে বিড়ি। মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তবু রাজনীতির কারনে বছর লস করেছিলেন দু'বার। কখনো নিজে থেকে রাজনৈতিক প্রসঙ্গ টানতেন না। কিন্তু অদৃশ্য যাদুবলে দুর্দান্ত বাগ্মীতা আর যুক্তি জালে আকর্ষণ করে নিতেন বিরোধী পক্ষকেও নিজের পরিধির ভেতর। কলেজে বিরোধী রাজনীতির মৌরসীপাট্টা চলাকালীন শেষ বছরে ছাত্রসংসদের রঙ বদলে দিতে লড়ে গেছিলেন জান কবুল করে। প্রিন্সিপালের ঘরের সামনে অবস্থান চলাকালীন পুলিশ আর বিরোধী পক্ষের ছেলেদের যৌথ মারে ভর্তি হলেন হাসপাতালে গুরুতর আহত হয়ে। সে বছরই বদলে গেল রঙ। পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তায় পা রাখলেন বিজনদা। সেখানেও রাজনীতি, সেখানেও কবিতা। আরো ব্যপক ভাবে নিজেকে মেলে ধরলেন। লেখালেখির সূত্রে বহুদিন যোগাযোগ রয়ে গেলেও কখন যেন সেটা নিঃশব্দে ছিঁড়ে গেছিল। নানা কারণে ইউনিভার্সিটির চৌকাঠ মাড়ানো হয়ে ওঠেনি সুবর্ণর। বাবার অবসরের পর চা-বাগানে অপ্রত্যাশিত চাকরি সুযোগ এসে যাওয়ায় বৌদ্ধিক পরিমণ্ডল থেকে ছিটকে শুরু হল এক বিচ্ছিন্ন জগতে বসবাস। 
তবু  মাঝে 'উত্তরের কন্ঠস্বর' আর 'দৈনিক আলো' পত্রিকায় চা-বাগানের পটভূমিকায় কয়েকটি গল্প প্রকাশিত হওয়ার পর সেগুলো পড়ে একদিন চিঠি পাঠান। ' কেমন আছ? গদ্যে হাত পাকিয়েছ বেশ তা তো দেখতেই পারছি। কবিতা কী নির্বাসন দিলে? অনেক কষ্টে ঠিকানা যোগাড় করেছি। কবিতা পাঠাও। আগামী শারদ সংখ্যার জন্য।' সেই সূত্র ধরে আবার যোগাযোগ। মাঝে মধ্যে চিঠি। তাও প্রায় বছর পঁচিশেক আগের কথা। বিজনদা তখন জলপাইগুড়ির কাছে গ্রামের দিকে একটা স্কুলে চাকরি পেয়েছেন। একই সাথে চলছে সংগঠন। পত্রিকার কাজ। এই অবধি জানা ছিল। তারপর বারবার অনুরোধ সত্বেও লেখা পাঠাতে পারেনি সুবর্ণ। নানা কারণে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিল লেখালেখির জগৎ থেকে। 

'এদ্দিন বাদে দেখেও দেখছি চিনতে ভুল হয়নি দেখছি আপনার । আমি তো চিনতেই পারিনি।'

-' তুমি তো তেমনই আছ। বদলায়নি কিছুই। এদিকেই কোন চা বাগানে আছ যেন? '

'নীলপাহাড়ি , নাগরাকাটার কাছে?  তা আপনি এদিকে চললেন কোথায়? '

-'যাচ্ছি বিশেষ একটা কাজে। তার আগে আমাকে একটা কথা বলো, তোমাদের বাগানে আদিবাসীদের মধ্যে অসুর সম্প্রদায়ের মানুষ আছে?'
আচমকা এমন প্রশ্ন শুনে অবাক হয় সুবর্ণ
-' না নেই। তবে পাশে দু একটি বাগানে ....? 
-'জানি। কুর্তি আর ক্যারন চা বাগানের ভুটান বর্ডার সংলগ্ন অঞ্চলে আছে। তবে আরো কিছু জায়গায় যেমন আলিপুরদুয়ার ব্লকের মাঝেরডাবরি, চিলাপাতা অঞ্চল,কুচবিহারের বড় শৌলমারী অঞ্চল, দলসিং- পাড়া, সাতালি,হান্টাপাড়া,তুলসিপাড়া চা বাগান অঞ্চলে এঁরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। শেষ সমীক্ষা অনুযায়ী উত্তর বঙ্গে এঁদের সংখ্যা প্রায় ৬০০ জন। জানো তো, অসুর সম্প্রদায়ের লোককথা অনুযায়ী, তাদের রাজা মহিষাসুরকে বধ করেন দেবী দুর্গা। তাই  দুর্গাপূজার দিনগুলোতে তারা শোক পালন করেন। অরন্ধন হয় ঘরে ঘরে। এই অসুরদের সম্পর্কে কিছু তথ্য যোগাড় করতে চলেছি চিলাপাতার কাছাকাছি একটি গ্রামে। অসুরদের ওপর গবেষণা মূলক কাজ করে চলেছেন আমার এক বন্ধু। তার সাথেও যোগাযোগ করব। এঁদের ওপর লেখালেখি অনেকেই করেছেন বা করছেন। আমি উদ্দেশ্য একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম বানানো। '
- ফিল্ম! আপনি ফিল্ম তৈরি করবেন? '
-'কেন? করতে পারিনা বলছো। '
-না ঠিক তা নয়। আপনি তো সাহিত্যর সাথে যুক্ত। হঠাৎ ফিল্ম... '
-আরে সবই তো নিজেকে, নিজের আইডিয়া কে প্রকাশ করার মাধ্যম। না পারার কিছু নেই। তবে আমি একা করছি না। আমি শুধু স্ক্রিপ্টটা তৈরি করছি। ফিল্ম করবেন আমার এক পরিচিত বন্ধু। কলকাতায় থাকেন। প্রচুর খাটতে হচ্ছে এই প্রোজেক্টটার জন্য। বাদ দাও আমার কথা। তুমি লেখালেখি তো ছেড়েই দিলে।কেন?'
সরাসরি প্রশ্ন। এবং রীতিমতো জেরার সুরে। উত্তরে কী বলবে ভেবে উঠতে পারছিল না সুবর্ণ। পরিস্থিতি যে অনেক সময় বাধ্য করে অনেক ইচ্ছের গলা টিপে ধরতে একথা বলে সহজে রেহাই মিলবে না। পুলিশের মত জেরা করবেন বিজনদা। সহজে ছাড়নেওয়ালা নন। চট করে বুদ্ধি খেলে যায় মাথায়। যদিও চিন্তাটা কেবল চিন্তা হয়েই হামা দিচ্ছে মনের ভেতর।কবে উঠে দাঁড়াবে তার ঠিক নেই। তবু ভেসে থাকার জন্য খড়কুটো আঁকড়ে ধরার মতো সেই আইডিয়া টাই পেশ করে সুবর্ণ, 'একটা বড় লেখার কথা ভাবছি বিজনদা। এ ব্যাপারে কিছু কাজও শুরু করেছি। এমন একজনের জীবনের ওপর ভিত্তি করে লেখাটা ভেবেছি যার জীবনের প্রায় পুরোটাই কেটেছে ডুয়ার্স  অঞ্চলে। জীবনে অনেক ঘটনার সাক্ষী উনি। ডুয়ার্সের সাহিত্য জগতের পরিচিত মানুষ হয়েও আজ যাকে মানুষ প্রায় ভুলেই গেছে। যাঁর খোঁজও আর কেউ রাখেনা... '

-' তুমি কার কথা বলছো? সত্যপ্রিয় ঘোষ? '
-' হ্যাঁ, আপনি চেনেন ওঁকে! '
-' খুব ভাল করে। উনি যখন ওনাদের অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক স্যুভেনির বের করতেন, কি যেন  নাম পত্রিকাটির...'

'- সবুজ কন্ঠ। '

-' হ্যাঁ, ঐ পত্রিকার জন্য কিছু বিশিষ্ট মানুষের কাছ থেকে লেখা যোগাড় করতে উনি যখন খুব ছোটাছুটি করছেন, সেসময় আমার সাথে উনার পরিচয়। জলপাইগুড়ির একজন অধ্যাপকের বাসায়, আমাকে অনুরোধ করলেন লেখা দিতে। পরপর পাঁচটি সংখ্যায় লেখা দিয়েছিলাম। কেমন আছেন সত্যবাবু? '

-' ভাল নেই। বয়স হয়েছে যথেষ্ট। শরীর মন দুটোই ভেঙে গেছে। তবে সে তুলনায় স্মৃতি শক্তি এখনও বেশ ভালো।'
-' কাজটা কি শুরু করেছ?'
-' হ্যাঁ, প্রাথমিক স্তরে আছে। '
-' দেরি কোরো না। উনি যেন জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারেন। চা বাগানের চল্লিশের দশক থেকে শুরু করে দু হাজার দশ পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ের দলিল উনার কাছে পাবে। ওরকম ভদ্র মানুষ দুটো দেখিনি। ভাল কাজে হাত দিয়েছ। কীভাবে শুরু করবে ভাবছ? বায়োগ্রাফি জাতীয় কিছু.... '
-'আপাতত তথ্য জোগাড় করছি। দেখা যাক। '
- 'যাই করো, লেখাটা কিন্তু আমার চাই। আমি নতুন একটি পত্রিকা করছি জানো তো? '
- না তো '
- ' বছর খানেক হল। মাসিক কাগজ। সাহিত্য ও সংবাদ বিষয়ক। ' উপলস্বর'। গ্রাহক সংখ্যা ইতিমধ্যে দু হাজার ছাড়িয়েছে।কোয়ালিটি পাঠক পাবে ওতে ছাপলে। বড় লেখা হলে ধারাবাহিক বের করব। তারপর বই ছাপার দায়িত্ব আমার। আশা করি আর কাউকে শেয়ার করনি ব্যাপারটা। এই নাও আমার কার্ডটা রাখো।'

মাল্টি কালার্ড ল্যামিনেটেড রীতিমতো সুদৃশ্য কার্ড। লেখা আছে 'উপলস্বর' সাহিত্য ও সংবাদ ধর্মী মাসিক পত্রিকা"। সম্পাদকএর জায়গায় বিজন তালুকদারের নাম। 

- আপনার 'দৃপ্তস্বর'? 
- আছে। ওটা ওয়েব ম্যাগ করব ভাবছি। এখন কবিতার পত্রিকা কেউ কিনে পড়ে না। কবিতা ছড়িয়ে দিতে চাই মুঠোফোনে-মুঠোফোনে। বছরে একটি প্রিন্টিং এডিশন থাকবে। 'রীতিমতো আত্মপ্রত্যয়ী শোনায় বিজনদাকে। 
-'তবে তো আপনি ধীরে ধীরে মিডিয়া-মুঘল না কি যেন বলে সেটাই হতে চলেছেন। ' সুবর্ণ 
-' আরে না না।  সাহিত্য ভালবাসতাম। ওটা ছাড়া বাঁচবো না। রিটায়ারমেন্টের আর দেরি নেই। কিছু তো করতে হবে অবসরে। বসে তো থাকতে পারব না। তাই আগাম জমি তৈরি করে রাখছি। '

-'আর রাজনৈতিক কর্মকান্ড ? সেসব.. ?' কথাটা শেষ না হতেই গাড়ি নিউ মাল জংশনে ঢুকে পড়ে। হকারদের চিৎকারে ছেদ পড়ে আলাপচারিতায়। 
-'চা খাবে? ' বলেই দু'টো চা দিতে বললেন হকারকে। 
চা খেতে খেতে যেটা জানা গেল, প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে যোগাযোগ  ক্ষীণ হয়ে গেছে বিজনদার। বৌদি মারা গেছেন বছর তিনেক আগে। একটাই মেয়ে। বিয়ে দিয়েছেন দুর্গাপুরে। স্ত্রীকে হারানোর পর জলপাইগুড়ির স্মৃতিময় বাড়িটা ছেড়ে শিলিগুড়িতে ছোট্ট ফ্ল্যাট নিয়েছেন। সেই সাথে রাজনীতিও দূরে সরে গেছে। হলদিবাড়ির ট্রেনে নিত্য যাতায়াত করে শেষ ক'বছরের চাকরিটা ধরে রেখেছেন। বাকি সময়টা নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছেন সাহিত্য জগতের সাথে। 

কথায় কথায় নাগরাকাটা এসে পড়ে। সুবর্ণ নেমে পড়ে প্ল্যাটফর্মে। জানালা দিয়ে বিজনদা হাত নেড়ে বলেন, ' একদিন আসব তোমার বাগানে। ফোন নম্বর থাকল। যোগাযোগ কোরো। আর মনে রেখ, যেটা বললাম। '

ট্রেন ছেড়ে দিতেই উল্টো মুখে হাঁটা শুরু করে সুবর্ণ। বিজনদার সঙ্গে এভাবে যোগাযোগ হওয়াটা বড় অদ্ভুত মনে হয়। সময় কত বদলে দেয় সবকিছু। যে বিজনদা ছিল রাজনীতি অন্ত প্রাণ। যার মধ্যে অনেক সম্ভাবনা ছিল। মনে করা হত, সাংগঠনিক ক্ষেত্রে দ্রুত উঠে আসা এই  সৎ , দৃঢ়চেতা মানুষটা হয়ত একদিন জায়গা করে নেবে ক্ষমতার শীর্ষস্তরে। কিন্তু কেবল সততাই যে একমাত্র  সাফল্যের মানদণ্ড নয়, বরং বর্তমান সময়ে কিছু ক্ষেত্রে অন্তরায়ও বটে তা আবার প্রমানিত হল। 

হাঁটতে হাঁটতে যার কাছে বাইকটা রাখা থাকে সেখানে আসতেই ছেলেটা চাবি আর হেলমেট এগিয়ে দিয়ে বলে, 'আসলেন দাদা। এইবার অনেক দিন পার কইরে আসলেন? ছুটি নিসিলেন,না কি? '
সুবর্ণ উত্তর দেয়, 'হ্যাঁ রে ভাই। কিছু কাজ ছিল।'
'এইদিকে আপনেদের বাগানের খবর জানেন?' চাবি আর হেলমেটটা এগিয়ে দিতে দিতে ছেলেটা বলে। '
-'কী খবর? 'সুবর্ণ উৎসুক হয়। 
'বাগানে তো কাল থিকে গেট মিটিং চলতেসে। মালিক নাকি ৮.৩৩% এর বেশি বোনাস দিবে না নোটিশ দিসে। সেই নিয়ে লেবাররা কাল দিনভর ঘেরাও করসিল ম্যানেজারকে। 
ছোটো জায়গা। খারাপ খবর দ্রুত সকলে জেনে যায়।মনে পড়ে যায় অনেক রাতে সুমন্ত দুবার কল করেছিল।সাইলেন্ট করে ঘুমিয়ে পড়ায় শোনা যায়নি।হয়তো এই খবরটাই  জানানোর জন্য কি না। 
কথাটা শুনে আর একমুহূর্ত দাঁড়ায় না সুবর্ণ। এক আকাশ চাপা উত্তেজনার মেঘ বুকে নিয়ে গাড়ি ছোটায় নীলপাহাড়ির দিকে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri