চামুর্চি চা বাগিচা (প্রথম পর্ব)/গৌতম চক্রবর্তী
চামুর্চি চা বাগিচা (প্রথম পর্ব)
গৌতম চক্রবর্তী
-------------------------------------
আজ রবিবার। বানারহাট হাটতলা ভিড়ভাট্টায় জমজমাট। জলপাইগুড়ি থেকে গয়েরকাটা হয়ে একটানা বাসযাত্রা বানারহাট পর্যন্ত। অবশেষে পৌঁছে গেলাম বানারহাট হাইস্কুলের দোরগোড়ায়। অদূরে রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং। সোজা পথটা মিশেছে চামুর্চি মোড়ে। ডানদিকে বানারহাট কালীবাড়ি। কর্দমাক্ত সরণি, দুপাশে দোকান পসার। ঘিঞ্জি পরিবেশের মধ্য দিয়ে বানারহাট রেলস্টেশনে যাবার পথ। অন্যপথ চামুর্চি মোড়ের দিকে চলে গেছে। গেটের কাছেই চায়ের দোকান। গাছ-গাছালির ছায়ায় কিছুটা হেঁটে গেলে স্কুলবাড়ি। বাঁদিকে সবুজ মাঠ, পাশে মিটারগেজ রেলপথ। এখন ব্রডগেজে রূপান্তরিত। শিলিগুড়ি জংশন থেকে আসা মিটারগেজ ট্রেনে চা-বাগিচার কোলে ছোট সুন্দর বানারহাট রেল স্টেশন। সেই নয়ের দশকে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় চামুর্চি বাজারে কমলালেবুর আড়তে রাত্রিযাপন করে পরদিন প্রভাতে দেখতে গিয়েছিলাম ঘন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে পাকদন্ডী, চড়াই, উৎরাই পেড়িয়ে চামুর্চি মহাকাল। বানারহাট থেকে খুবই কাছে সামচি লাগোয়া চামূর্চিতে এর আগে বার দুই এসেছিলাম। কিন্তু সামচি যাওয়া হয় নি। সামচির কথা মনে এলে অনেকেই ভুল করে বলে ফেলেন সামসিং। সামসিংও অসাধারণ সৌন্দর্যের খনি। কিন্তু ভুটানে নয়, ডুয়ার্সের রানী মেটেলি পাহাড়ের গায়ে। মূর্তি নদীর কোলে। সামচি চমৎকার জায়গা। পাহাড়, নদী, বন, ঝোরা, ঝর্ণা। গেলে আর আসতেই ইচ্ছা করবে না। সবুজ বন, নীল পাহাড়ের মধ্য দিয়ে জিপগুলো যেন ডানা মেলে উড়ে যায়। বানারহাট থেকে ১৪ কিমি দূরত্বে চামুর্চি। সময় লাগে আধ ঘন্টার মত। খিদে পেয়েছিল বলে বানারহাটের এক চা মিষ্টির দোকানে গরম গরম পুরি খেতে গিয়ে চামূর্চি যাবার বাস মিস করলাম। অবশেষে বানারহাট থেকে জিপ ধরে রওনা হলাম চামুর্চি। তাতে মুরগি-ঠাসা ভিড়। কোনওমতে কুঁকড়ে বসে থাকা। চামুর্চি হয়ে যাওয়া যায় ভুটানের সামচি।
ডুয়ার্সের ধূপগুড়ি ব্লকের বানারহাট চামুর্চি মোড় থেকে ভুটান সীমান্তবর্তী চামুর্চি পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার সড়ক বেহাল। এই রাস্তা মেরামত না করার ফলে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। ভারত এবং ভুটান এর মধ্যে প্রতিদিন বোল্ডার, বালি, নুড়ি বোঝাই ডাম্পার এবং ট্রাক চলাচল করে এই বেহাল রাস্তা দিয়ে। ফলে ধুলোয় ঢেকেছে এই রাস্তা এবং তার আশেপাশের পলাশবাড়ি, চুনাভাটি, ডায়না, নিউ ডুয়ার্স, আমবাড়ি, বানারহাট, চামূর্চি, রিয়াবাড়ি ইত্যাদি চা-বাগান। যেতে যেতে দেখলাম নতুন সবুজ চা পাতা এসেছে। কয়েকদিন পর থেকেই চা পাতা তোলার কাজ শুরু হবে। কিন্তু চা গাছের পাতা ধূলোর আস্তরণে ঢেকে গেছে। দেখলাম বানারহাট-চামুর্চি সার্ক রোডের পলাশবাড়ি চা বাগান সংলগ্ন এলাকায় হাঁটু সমান বড়ো বড়ো গর্ত সৃষ্টি হবার ফলে যান চলাচলে ব্যাপক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। অবশ্য চোখে পড়ল পুলিশ-প্রশাসনের সহায়তায় স্থানীয় কয়েকজন যুবক মাটি ও বালি ফেলে রাস্তার গর্তগুলিকে ভরাট করে রাস্তাটিকে কোনোমতে যান চলাচলের যোগ্য করে তোলার চেষ্টা করছে। ভোর পাঁচটা থেকে অনেক রাত পর্যন্ত গোটা এলাকা ধুলোর চাদরে ঢেকে থাকছে। জিপের ড্রাইভার আর নিত্য যাত্রীদের কথোপকথনে জানতে পারলাম ওই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন কয়েকশো বালি পাথর বোঝাই ভারী লরি বা ট্রিপার চলাচল করে। ধুলোতে ঢাকা রাস্তায় দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও বেড়ে গিয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা নানারকম অসুখে আক্রান্ত হতে শুরু করেছে। নাক-মুখ ঢেকে কোনোমতে শ্রমিকরা কাজে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রশাসনিক মহলে এই সমস্যার সমাধানের দাবি জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সমস্যা সমাধানের কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এমনিতেই পলাশবাড়ি, নিউ ডুয়ার্স সহ কয়েকটি চা বাগানের হাসপাতাল রাস্তার ধারে অবস্থিত। ফলে ধুলোতে ঢেকে যাচ্ছে হাসপাতাল। রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী, স্থানীয় বাসিন্দারা সবাই শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। শুনলাম প্রায় এক লক্ষ মানুষ চা বাগান এবং সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করেন। তাঁরা সকলেই সমস্যায় পড়েছেন।
ধুলোর ঝর সামাল দিয়েই পৌছালাম চামুর্চি। হাটবার নয় বলে চামুর্চি বাজারটা যেন ঝিমোচ্ছে। আসলে ধামসা মাদলের শব্দ, চা শ্রমিকদের গান, বানারহাট এর সবুজ গালিচার ভূচিত্র, চা বাগানের সমাজ জীবন, বানারহাট এর কাব্য-সাহিত্য সমাচার এসব নিয়েই ডুয়ার্সের মানুষের সহজ সরল জীবন। শীতের নিঝুম সন্ধ্যায় জোনাকি পোকার ফুলঝুড়ি। চুনাভাটি চা বাগানের পাশ দিয়ে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া চামুর্চি ব্র্যাঞ্চ। আপার ডিভিশন প্রাইমারি স্কুলের পাশ দিয়ে চামুর্চি টি গার্ডেন। ধূপগুড়ি ব্লক এর চামূর্চি টি গার্ডেনটির পরিচালক গোষ্ঠী চামূর্চি এগ্রো ইন্ডিয়া লিমিটেড কোম্পানি। ৪৫ বছরের পুরণো কোম্পাণী এটি। কোম্পানির মালিকের নাম আর পি তেওয়ারি। বাগানে ম্যানেজারিয়াল স্টাফ ৮ জন। ২০১৭ সাল থেকে শিবনারায়ণ পয়রা, দিব্যেন্দু ঘোষ এবং চন্দ্রজিত সিং বোর্ড অব ডিরেকটর হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। বাগানের প্রতিষ্ঠিত এবং স্বীকৃত ট্রেড ইউনিয়ন ৫ টি। এগুলি হল সিবিএমইউ, ডব্লিউবিসিএমএস, ডিসিবিডব্লিউইউ, এবং পিটিডব্লিউইউ। চামূর্চি চা বাগানের আয়তন এবং চাষযোগ্য আবাদিক্ষেত্র ৮৮৯.৪৭ হেক্টর। আপরুটেড এবং নতুন বপনযোগ্য আবাদিক্ষেত্র ১৩০.২৩ হেক্টর এবং সেচের সুবিধাযুক্ত অঞ্চল ২০৮.৯১ হেক্টর। মোট চাষযোগ্য উৎপাদনক্ষম আবাদীক্ষেত্র ৮৮৯.৪৭ হেক্টর। প্রতি হেক্টর উৎপাদনযোগ্য এবং সেচযুক্ত প্ল্যান্টেশন এরিয়া থেকে ৫০০ কেজি করে চা উৎপাদিত হয়। বাগিচায় সাব স্টাফ এর সংখ্যা ১৫ জন, করণিক ৭ জন, ক্ল্যারিক্যাল এবং টেকনিক্যাল স্টাফ ২ জন। বাগানের শ্রমিক পরিবারের সংখ্যা ৯৫০। মোট জনসংখ্যা ৪০০০। স্থায়ী শ্রমিক ১০১৫ জন। কম্পিউটার অপারেটর আছেন ১ জন। কর্মরত শ্রমিক ১০৫৩ জন। শ্রমিক নয় এমন সদস্যদের সংখ্যা ২৯৪৭ জন। আমার রাত্রিযাপনের ব্যাবস্থা হল চামুর্চি বাগিচার গুদামবাবুর বাড়িতে। রাত্রিতে বাবুদের সঙ্গে আড্ডা মারতে মারতেই পরিচয় হল বাগিচার প্রবীণ মানুষ মহেন্দ্র বড়াইকের সঙ্গে। প্রচুর পড়াশুনা এবং সাহিত্যচর্চাও করেন এই বয়সেও।
সে অনেক কালের কথা। পূর্ব হিমালয়ের শিবালিক পর্বতমালা থেকে নদীগুলি তখন বয়ে আনত পলি, নুড়ি, বালি। পাহাড়ের পাদদেশে তিল তিল করে জমত সেগুলি এবং ধীরে ধীরে তৈরী হয় আধপাহাড়ী ভূখন্ড। ভুটান লাগোয়া সীমান্ত গ্রাম চামুর্চীতে চড়াই উৎড়াই পাকদণ্ডী বেয়ে সোনালী কমলা, তুষারশুভ্র মাখন- সূরপী নিয়ে বোঝা পিঠে দুলকি চালে ঘোড়া– খচ্চরের পিঠে চেপে নেমে আসত মানুষজন। বাঁশের ডোকোতে ভরে নিয়ে আসত স্কোয়াশ, সবজি আরো কত কী। সমতলের ব্যাপারিরা আনতো ধান, চাল, খৈ, মুড়ি। হপ্তা শেষে ক্রেতা- বিক্রেতার কলহাস্যগীতে মুখরিত হত বিপণন প্রাঙ্গন। ক্রেতা- হাটুয়া দিনের শেষে বাড়ি ফিরতো এক গাল হাসি নিয়ে। এইভাবেই হাটের চত্বর ঘিরে গড়ে উঠেছিল জনবসতি। জলপাইগুড়ি মহকুমাতে চারটি বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮০০ থেকে ১৯১০ সালের মধ্যে। ১৮০৪ সালে বৈকুন্ঠপুরের রাজা জলপাইগুড়ি দিনবাজার প্রতিষ্ঠা করেন। দ্বিতীয় বাজারটি তৈরী হয় মালবাজারে ১৮৭৫ সালে। তৃতীয় বাজারটির নাম চামুর্চী যেটা তৈরি হয় ১৯০৫ খ্রীষ্টাব্দে। তারপর লুকসান বাজার। শেষ দুটি বাজার ভূটান সীমান্ত ঘেসা। ১৯৬২ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে এই পাহাড়ী রূপসীর সাজসজ্জা। সরকারী উদাসীনতা ও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বিবর্ণ হতে থাকে সব কিছু। সংস্কারের অভাবে নষ্ট হতে থাকে চারচালা দোচালা। (রেফারেন্স-West Bengal District Hand Book - এ.কে. মিত্র সম্পাদিত, ১৯৫১)। বানারহাট ব্লকের চামুর্চি চা বাগিচায় এমজিএনআরইজিএস এর প্রোগ্রাম কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে। পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক অর্থাৎ আগেকার ইউনাইটেড ব্যাংক এই বাগানের ফাইন্যান্সিয়াল পার্টনার। বর্তমান লিজ ভ্যালিডিটি আছে ২০৩৯ সাল পর্যন্ত। চামুর্চি চা বাগিচাতে মোট শ্রমিক সংখ্যা ১০৫৩। বাগিচাতে বিদ্যুৎ সংযোগযুক্ত কোন পাকা বাড়ি বা সেমি পাকা বাড়ি চোখে পড়ল না। বাগিচায় অন্যান্য বাড়িও খুব একটা বেশি দেখলাম না। সরকারি স্কিমে তৈরি হওয়া কোন বাড়িও খুব একটা চোখে পড়েনি।
ধূলোর দাপটে নাজেহাল চামুর্চি চা বাগানের বাসিন্দারা। প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বানারহাট চামুর্চি আন্তর্জাতিক সড়কের বেহাল দশায় চা গাছের ক্ষতি হচ্ছে। ধুলোতে ঢেকে যাচ্ছে সবুজ কচি পাতা। চা ফ্যাক্টরির ভেতরেও ধুলোর আস্তরণ জমে যাওয়ার ফলে চা উৎপাদনে ক্ষতি হচ্ছে। বানারহাট-চামুর্চি রোড সংলগ্ন এলাকা দিনভর ধূলোর চাদরে ঢেকে থাকে বলে ধুলোর কারণে চা বাগিচার পাশের রাস্তা দিয়ে চলাচল করাই দায়। ধুলোর জেরে অসুস্থও হয়ে পড়ছেন অনেকে। চা বাগানের উপরও ধুলোর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। অবিলম্বে সমস্যার সমাধান না হলে সংকটের মুখে পড়তে পারে বাগানের উৎপাদন। সহকারি ম্যানেজারের কাছ থেকে জানলাম প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল রাস্তা মেরামত না হওয়া পর্যন্ত যাতে চা বাগানগুলো থেকে ধুলো আটকাতে জল দেওয়া হয়। পালা করে বিভিন্ন চা বাগান থেকে রাস্তায় জল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চা পাতা তোলার মরশুম চলে আসার ফলে মোটর চালিয়ে ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন করে রাস্তায় জল দেওয়া সম্ভব হয় নি। কারণ চা গাছে সেচ দেওয়ার সঙ্গে রাস্তার জন্য জল তুললে মোটরে চাপ পড়বে। তাছাড়া চা বাগিচাগুলিতে বিদ্যুতের খরচ বেড়ে যাচ্ছে অনেকটাই। তাই রাস্তার ধুলো আটকাতে চা বাগান থেকে রাস্তায় জল ছেটানো বাগান মালিকদের পক্ষে সম্ভব নয় বলে পরিস্থিতি ভয়াবহ। এই রাস্তাটির দায়িত্বে রয়েছে রোড অর্গানাইজেশন। তাদের সঙ্গে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কথা বলা হয়েছে। এলাম চামুর্চি হাসপাতালে। চামুর্চি চা বাগিচায় হাসপাতাল এবং ডিসপেনসারির সংখ্যা একটা করে। আলাদা আলাদাভাবে ৫ টি মেল, ১০ টি ফিমেল এবং ৬ টি মেটারনিটি ওয়ার্ড রয়েছে। আলাদা অপারেশন থিয়েটারের অস্তিত্বও চোখে পড়ল। বাগিচাতে অ্যাম্বুলেন্স আছে। গড়ে প্রায় ১০০ জন রোগীকে ব্লক মহকুমা বা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।
বাগিচাতে ডাক্তারবাবু আছেন কিনা সে বিষয়ে বাগিচার হসপিটালের যে কর্মীটিকে প্রশ্ন করলাম সে কেমন যেন একটু বলতে ইতস্তত বোধ করল। তবে আগে অল্টারনেটিভ মেডিসিনে এমবিবিএস পাস নিতাই মাহাতো দীর্ঘদিন এই বাগানে আবাসিক ডাক্তার হিসেবে কর্মরত ছিলেন সেটা জানা ছিল। আমার সঙ্গে পরিচয়ও হয়েছিল প্রথমবারের বাগিচা সফরের সময়। প্রশিক্ষিত নার্স দুজন, মিড ওয়াইফ একজন এবং স্বাস্থ্যকর্মী একজন। বাগিচার হসপিটালে মোটামুটিভাবে সব ধরনের মেডিসিন পাওয়া যায়। যদি অন্য কোন মেডিসিনের দরকার পড়ে তাহলে ব্যক্তিগত দায়িত্বে বাইরে থেকে সংগ্রহ করতে হয়। গড়ে বছরে ৩০ জন মেটারনিটির সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। ভারত-ভুটান সীমান্তের চুনাভাটি এবং নিউ ডুয়ার্স এই দুই চা বাগানে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছে শিশু-কিশোরেরা। একই সমস্যায় ভুগছে বয়স্ক শ্রমিকেরা। বাগিচার স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছ থেকে যেটা জানতে পারলাম সেটা হল চা বাগানগুলির পাশ দিয়ে তৈরি হওয়া বানারহাট চামুর্চি সার্ক রোডের কাজের দীর্ঘসূত্রিতার জন্য প্রতিনিয়ত বাগানগুলোতে ধুলো ঢুকছে। ধুলোঢু কছে হাসপাতালগুলিতেও। চিকিৎসাধীন রুগীরা ঘুমোতে পারছে না। ধুলোতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে শ্রমিক পল্লীর বাসিন্দারা। শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে বলেও অভিযোগ জানালেন তারা। একই অভিযোগ জানালেন পলাশবাড়ি চা বাগানের ম্যানেজার জয়ন্ত সান্যাল, চুনাভাটি বাগানের ম্যানেজার রণেন মুখোপাধ্যায় এবং নিউ ডুয়ার্স চা বাগানের ম্যানেজার এল জে স্মিথ। তাঁদের বক্তব্য ধুলোয় ঢেকে যাচ্ছে শ্রমিক আবাসগুলি। বর্ডার রোডের অদূরেই ডুয়ার্সের অন্যতম প্রাচীন চুনাভাটি চা বাগান এবং নিউ ডুয়ার্স চা বাগান। চুনাভাটি চা বাগানে প্রায় ১৫০০ শ্রমিক কাজ করেন। ধুলোর জেরে দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। বাগানের দুই শতাধিক শ্রমিক চোখের রোগে আক্রান্ত। হাসপাতালে প্রতিনিয়ত ধুলো ঢুকছে। ঘরে ঘরে শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ দানা বেঁধেছে। শিশু-কিশোরদের অনেকের নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে।
চামুর্চি চা বাগিচায় লেবার ওয়েলফেয়ার অফিসার নেই। বাগিচায় একটি স্থায়ী ক্রেশ এবং ক্রেশে শিশুদের দেখভাল করার জন্য তিনজন অ্যাটেনডেন্ট আছে। ক্রেশগুলিতে পানীয় জল এবং সুলভ শৌচালয়ের ব্যবস্থা আছে। উৎসবে অনুষ্ঠানে ক্রেশের শিশুদের পোশাক দেওয়া হয়। চামুর্চি চা বাগিচা থেকে শিশুদের বিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোন পরিবহন বন্দোবস্ত নেই। বাগিচায় ক্লাব এবং খেলার মাঠ আছে। বাগিচার শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা প্রদান করার ক্ষেত্রে চামুর্চি চা বাগিচার সুনাম আছে। তবে কোন কোন সময় প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা অর্থনৈতিক সংকটের কারণে জমা না হলেও পরবর্তীকালে সেটা জমা হয়ে যায় নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে। গড়ে প্রতিবছর ৪০ লাখ টাকা প্রভিডেন্ট ফান্ড বাবদ জমা পরার কথা। মজুরি এবং রেশন নিয়মিত। জ্বালানি, ছাতা, চপ্পল, কম্বল সঠিক সময়ে শ্রমিকদের মধ্যে সরবরাহ করা হয়। শ্রমিকরা নিয়মিত নির্দিষ্ট হারে মজুরি পেয়ে থাকেন। বছরে গড়ে কুড়ি জন শ্রমিক দুই লক্ষ টাকা করে গ্রাচুইটি বাবদ পেয়ে থাকেন। চামুর্চি চা বাগিচাতে মোট প্রায় ১০৫০ শ্রমিক কুড়ি শতাংশ হারে বোনাস পায়। গড়ে বছরে ২৫- ৩০ লাখ টাকা বোনাস বাবদ খরচা হয়।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴