সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
62.পইলা সাঞ্ঝির কথা-শেষ পর্ব/শুক্লা রায়

62.পইলা সাঞ্ঝির কথা-শেষ পর্ব/শুক্লা রায়

61.পইলা সাঞ্ঝির কথা-৬১/শুক্লা রায়

61.পইলা সাঞ্ঝির কথা-৬১/শুক্লা রায়

60.পইলা সাঞ্ঝির কথা-৬০/শুক্লা রায়

60.পইলা সাঞ্ঝির কথা-৬০/শুক্লা রায়

59.পইলা সাঞ্ঝির কথা=৫৯/শুক্লা রায়

59.পইলা সাঞ্ঝির কথা=৫৯/শুক্লা রায়

58.পইলা সাঞ্ঝির কথা-৫৮/শুক্লা রায়

58.পইলা সাঞ্ঝির কথা-৫৮/শুক্লা রায়

57.পইলা সাঞ্ঝির কথা-৫৭/শুক্লা রায়

57.পইলা সাঞ্ঝির কথা-৫৭/শুক্লা রায়

03-December,2022 - Saturday ✍️ By- শুক্লা রায় 1.08K

পইলা সাঞ্ঝির কথা-৬০/শুক্লা রায়

পইলা সাঞ্ঝির কথা
পর্ব - ৬০
শুক্লা রায়
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
হাতোত উকা
ইনিয়ে বিনিয়ে কান্নার ঝোঁক একটু থিতু হতে না হতেই হঠাৎ কোনো না কোনো আত্মীয় এসে উপস্থিত হচ্ছে আর নতুন করে কান্নার বেগ বেড়ে যাচ্ছে। দূর সম্পর্কের ভাস্তা, ভাস্তা বৌ, ভাগ্না-ভাগ্নী। যার যার সংসারে ব্যস্ত ছিল এতদিন। যোগাযোগ বলতে মাঝে মাঝে এর তার মুখে খবর নেওয়া অথবা অবরে সবরে হঠাৎ কোনোদিন চলে আসা। লোকমুখে খবরটা প্রায় দ্রুতই ছড়িয়েছে। যদিও মৃত্যুর খবর নয়, অসুস্থতার খবর পেয়েই সবাই দেখা করতে এসেছে।
শ্মশানে দেহ নামানোর পরে বুধেশ্বর ওর বাবার শরীর ছুঁয়ে বসে আছে। অবরুদ্ধ কান্না ফুটে আছে মুখের চেহারায়।
"আলোয়া চাউল, তিল, দুধ, হোরতোকি, পান সুপারী আনিসেন বারে? এদি দ্যাও।"
পুরোহিত মশাই চিতা উৎসর্গ পূজা শুরু করেন। আর বাকিরা হাতে হাতে চিতা সাজিয়ে ফেলে।
"গিহস্তা কায় হবেন?"
দোনোমনা করে সরেন এগিয়ে আসে।
"মুই হোইম।"
একজন বলে ওঠে,
"উকাটা ভাল করি বান্দি দ্যাও বাহে। সিন্ডার নগোত আমের ঠাইল নাগে। এখেনা পল্লব বান্দি দ্যাও, তাকে হবে।"
পাটকাঠির সঙ্গে আমের ডাল বেঁধে মুখাগ্নীর উকা প্রস্তুত। শবদেহ চিতায় তোলা হলে বুধেশ্বরের হাতে উকাটা ধরিয়ে দেয় একজন। সরেন গৃহস্থ হিসেবে জলের কলস নিয়ে আগে আগে, পেছনে বুধেশ্বর আর ওর কাকাতো ভাই একসঙ্গে সাতবার চিতা পদক্ষিণ করল। প্রতিবার সরেন চিতার চারটে বাঁশের খুঁটিতে জল ঢালছে আর বুধেশ্বর একটু করে আগুন ছুঁইয়ে দিচ্ছে। সপ্তমবার প্রদক্ষিণ শেষে বুধেশ্বর মুখাগ্নী করতেই দাউ দাউ জ্বলে ওঠে শুকনো কাঠ, খড়ি। উপস্থিত অনেকেই যাদের পিতা অথবা মাতা গত হয়েছেন, কিংবা উভয়েই গত হয়েছেন, চিতায় একটা করে খড়ি উৎসর্গ করল।
কিছুটা সময় বুধেশ্বর কেমন যেন একা হয়ে গেল। বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠল। এত লোকজনের ভিড়ে, এত হই হট্টগোল, লোকের কথাবার্তার মধ্যেও বুধেশ্বরের নিজেকে অসহায় লাগতে লাগল। চোখের সামনে একটা মানুষ কীভাবে পুড়ে ছাই হয়ে গেল। অথচ কিছুক্ষণ আগেও মানুষটা ছিল। আজকে বাপ-ব্যটায় একসঙ্গে লাল চা আর পানিকফালা খেয়েছে সকালে। তারপর বুধেশ্বর কাজে চলে গেছে। ওই শেষ দেখা। মানুষটা কাছে ছিল তখন কখনো সেভাবে বুঝতে পারেনি। আজকে চিতায় জ্বলতে দেখে বুধেশ্বরের বুকটা মুচড়ে উঠল।
"নে বাউ উটেক। তোর বাফোক শান্তি কর।"
ডাক শুনে চমকে উঠল বুধেশ্বর। তারপর ধীরে ধীরে উঠে নদী থেকে জল নিয়ে চিতায় ঢালল। তখনও আগুন ধিকি ধিকি জ্বলছে। মানুষের অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা, দুঃখ, কষ্ট, ক্ষোভের মতো। বুধেশ্বর জল ঢালে আর মনে মনে বলে,
"ঠান্ডা হ বাপ, ঠান্ডা হ।"
মৃতদেহ ঢাকা দেওয়া কাপড়টা ছিঁড়ে পাকিয়ে পৈতে করে বুধেশ্বর আর ওর কাকাতো ভাইকে পরানো হল। বুধেশ্বরের হাতে দেওয়া হল একটা হাতল ছাড়া ভোঁতা কাস্তে। চিতা জল ঢেলে পরিস্কার করে সর্ষে ছিটিয়ে ধীরে ধীরে সবাই বাড়ির পথ ধরল। শ্মশানযাত্রীরা আগে আগে আর বুধেশ্বর সবার পেছনে হাঁটতে লাগল।
"অসবালা, নে মাই। মানষিলা বোদায় আইসেছেকে। কাক ভুতি পাকের দিলু হোইসে না না হোইসে কনেক দ্যাখেক। আর ঢোনা কাটিসে? নাইগবে যে এলায়?" বসমতীর আশঙ্কাই সত্যি হল। বাইরে শ্মশান যাত্রীদের হাঁকডাক শোনা গেল। রসবালা একটা ঢোনায় আগেই সুকাতি আর গোবর জল দিয়ে ভিজিয়ে তৈরি করে রেখেছিল। এখন গিয়ে মনেশ্বরকে তাড়া লাগায়,
"এলাং তোর ভুতি পাকা হয়। মানষিলা ওদি হম হম করি আইসেছেকে।"
মনেশ্বর ভুতিটা রসবালার হাতে ধরিয়ে বলে নেক, ভাল করি ধরিস, মুই এখেরে ওগুনখেনা ধরে দ্যাং।"
বাড়ির বাইরে খোলান পেরিয়ে ঢোনাটা আর ভুতিটা রেখে রসবালা বলে,
"এটে এখেনা জল ছিটা দিয়া শুদ্ধি কর বারে। ভুতিটা আছে, হাতলা সেঁকি বাড়ি ঢুকো।"
আস্তে আস্তে উঠোন ভরে উঠল। কপাল থেকে ছিটকে আসা চাকতির মতো হাড়টাই অস্থি। যা সংরক্ষণ করা হয় গঙ্গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। একটা মাটির হাঁড়িতে একটা কাঁচাটাকাসহ মুখটা বেঁধে তুলসী মঞ্চের একপাশে অস্থিটা পুঁতে রাখা হল। উপরে মাটি দিয়ে ঢিবি করে দেওয়া হল। বুধেশ্বরের বৌ ওটা লেপে স্নান করে নিল।
রসবালা সবাইকে চা দিতে দিতে জিজ্ঞেস করল,
"পতিয়া গিলা তো দুধ চা খাবার পাবে হেনা বারে? বাপ মোইল্লে ঝোকোন দই খাওয়া না যায় আর মাও মোইল্লে দুধ।"
দাহকার্য শেষ হতে হতে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত। এখন আর খাওয়ার নিয়ম নেই। সবাই মোটামুটি নিয়ম জানলেও একটু জিজ্ঞেস করে নেয়। এ বাড়িতে এখন রসবালা আর সুকারুর বৌ রান্নাঘরের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে। সুকারুর বৌ রসবালাকে জিজ্ঞেস করে,
"পতিয়াগিলা এলা কী খাবে বারে। আতি হোইসে, পকি পয়াল ঘর ঢুকিসে, এলা তো বারান-কোরান করির না পাবে।"
"আতিটা চা পানি খায়ায় নৌক। ফলটল এলা থাকিলে সিনি দুইটা খাবার পাইল হয়।"
তবে বুধেশ্বর কিছুই মুখে দিতে চাইছে না। চা টুকু খেয়েই উদাস মুখে বসে আছে। ওকে ঘিরে বাকিরা গল্প করলেও ও যেন কিছুই শুনছে না। একটু পরে সজাগ হতেই শুনল পরকালের আলোচনা হচ্ছে। বুধেশ্বরের বিশ্বাস ওর বাবা স্বর্গেই যাবে। ও নিজে কোনোদিন বাবাকে কোনো অন্যায় কাজ করতে দেখেনি।
যে ঘরে ওর বাবা ঘুমাতো সেখানেই একটা প্রদীপ জ্বালিয়ে খড় বিছিয়ে মাটিতে বিছানা করে বুধেশ্বর আর ওর কাকাতো ভাইয়ের রাতে শোয়ার ব্যবস্থা। একে একে সবাই বাড়ি গেল। বুধেশ্বরের বোনও গেল। কারণ থাকলে টানা তিনদিন থাকতে হবে। বাড়িতে ভালো করে জানিয়ে আসেনি, সেজন্য সেও আর থাকল না। বাড়িটা ফাঁকা হতেই লোকটার অনুপস্থিতি যেন বেশি করে মনে পড়ছিল। একটা দীর্ঘশবাস ফেলে বুধেশ্বর শুয়ে পড়ল। কখন ঘুমিয়ে পড়েছে ক্লান্তিতে নিজেই জানে না।
.............................................................
আলোয়া চাউল - আতপ চাল
আমের ঠাইল - আমের ডাল
ভুতি - আগন ধরে রাখার জন্য খড় পাকিয়ে তৈরি করা হয়।
পকি-পয়াল - পাখ-পাখালি

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri