সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
28.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৮

28.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৮

27.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৭

27.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৭

26.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৬

26.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৬

25.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৫

25.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৫

24.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৪

24.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৪

23.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৩

23.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৩

22.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২২

22.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২২

21.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২১

21.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২১

20.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২০

20.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২০

19.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৯

19.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৯

18.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৮

18.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৮

17.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৭

17.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৭

16.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৬

16.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৬

15.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৫

15.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৫

14.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৪

14.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৪

13.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৩

13.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৩

12.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১২

12.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১২

11.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১১

11.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১১

10.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১০

10.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১০

9.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৯

9.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৯

8.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৮

8.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৮

7.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৭

7.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৭

6.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৬

6.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৬

5.স্মৃতি দিয়ে ঘের্রিত-৫/রণজিৎ কুমার মিত্র

5.স্মৃতি দিয়ে ঘের্রিত-৫/রণজিৎ কুমার মিত্র

4.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৪

4.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৪

3.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা৩/রণজিৎ কুমার মিত্র

3.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা৩/রণজিৎ কুমার মিত্র

2.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা২/রণজিৎ কুমার মিত্র

2.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা২/রণজিৎ কুমার মিত্র

1.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১/রণজিৎ কুমার মিত্র

1.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১/রণজিৎ কুমার মিত্র

09-December,2022 - Friday ✍️ By- রণজিৎ কুমার মিত্র 355

স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৬

স্মৃতি দিয়ে ঘেরা/ষষ্ঠ পর্ব
রণজিৎ কুমার মিত্র
+++++++++++++++++

গত পর্বে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিমল কুমার বাজপেয়ী সম্পর্কে দু-চার কথা লিখেছিলাম, ভীষণ ইচ্ছে হয়েছিল স্যারের ছবি দেবার। শ্যামলিমা, উমা বাজপেয়ীর বোন আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত একই পেশার সূত্রে। শ্যামলিমা আমার বয়:কনিষ্ঠা, জলপাইগুড়ির আনন্দ চন্দ্র টিচার্স ট্রেনিং কলেজের গ্রন্থাগারিক। বাজপেয়ী স্যারের ছবি দিতে না পারার দুঃখের কথা ওকে জানালে, শ্যামলিমা সাহানাকে সব জানায়। সাহানা উমাদি ও বাজপেয়ী স্যারের কন্যা, ওকেও দেখেছি ছোট থেকে কিশোরীবেলা পর্যন্ত। রাজা রামমোহনপুর ক্যাম্পাসেই ওর বড় হয়ে ওঠা, সাহানা বাজপেয়ী এখন বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী। আমার এই স্মৃতি দিয়ে ঘেরা ওর কাছেও পৌঁছেছে। সাহানা ওর বাবা ও মা, উমাদি ও বাজপেয়ী স্যারের ছবিসহ নিজের ছবিও পাঠিয়েছেন খুব ভালোবেসে, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ওর শৈশব-কৈশোর কেটেছে, তার স্মৃতি এখনো ওকে টানে। ওর পাঠানো ছবিগুলো কয়েকটি এই পর্বের সাথে দিলাম। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম যোগদানকারী অধ্যাপকদের অন্যতম ছিলেন বিমলকুমার বাজপেয়ী পরে রেজিস্টার হন, সে সময়ের উমা দাসও ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী, পরে বাজপেয়ী স্যারের সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। উমাদি দীর্ঘকাল জলপাইগুড়ি প্রসন্নদেব মহিলা মহাবিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপিকা ছিলেন। বাজপেয়ী স্যার অবসর নেবার পর কিছুদিন ছিলেন, উমাদির কলেজ কোয়ার্টারে, তখন তিনি খুব অসুস্থ, এখান থেকেই শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে প্রয়াত হন। সেই কলেজ কোয়ার্টারে বাজপেয়ী স্যারের শ্রাদ্ধবাসরে উপস্থিত ছিলাম, মনে আছে সেদিন রেজিস্টার বিভাগের গৌরীদিও উপস্থিত ছিলেন। গৌরী সেনের মত সুদক্ষ কর্মী আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ম জীবনে খুব কম দেখেছি, পি-এইচ-ডি সেকশন কি দক্ষভাবে সামলাতেন, প্রতিটি সমাবর্তনে পদক দেওয়া ও অন্যান্য কাজগুলো সুচারুভাবে সম্পন্ন করতেন। বাজপেয়ী স্যার গৌরীদিকে যেমন স্নেহ করতেন তেমনি ভরসা করতেন ।
"স্মৃতি দিয়ে ঘেরা" নিয়ে অনেকেই উৎসাহ প্রকাশ করেছেন, যা আমার আগামী পর্বগুলি লেখার প্রেরণা।
গত পর্বে একটি তথ্যে ভুল ছিল, তা জানিয়ে আমার অনুজপ্রতিম সহকর্মী ফজলে রহমান কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করেছেন। সেই সময়ে ইতিহাসের প্রধান অধ্যাপক, পরবর্তী কালের ডীন ছিলেন ডি পি সিন্হা, দেবীপ্রসাদ সিনহা ।কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে নয় তিনি এসেছিলেন কলমবো ইউনিভার্সিটি থেকে। ফজলে রহমান উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগের কৃতী ছাত্র এবং মিউজিয়ামের কিউরেটর হিসেবে কর্মজীবন সম্পূর্ণ করেছেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। "স্মৃতি দিয়ে ঘেরা" পড়ে ভালোলাগাটুকু জানিয়েছেন, আমার পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মানুষ অধ্যাপক অর্ণব সেন।উত্তরবঙ্গের লেখালেখির জগতে অনেকের মতোই তাঁকে আমাদের অভিভাবক ও আশ্রয় বলে মনে করি। তিনি ফোনে আমাকে জিজ্ঞাসা করেন - তুমি কি উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস লিখছো? না ,স্মৃতি দিয়ে ঘেরা ইতিহাস নয়, এর একেকটি পর্বকে বলা যেতে পারে স্মৃতি আধারিত উপাখ্যান। অফুরান ছবির কোলাজ। টুকরো টুকরো স্মৃতি ছবি হয়ে ভেসে উঠছে এই উপাখ্যানে, সেই উপাখ্যানে আবার ফিরে যাই।
স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে রাজা-মহারাজাদের সাথে উপাচার্যের তুলনা করা সমীচীন নয়, তবে তাদের আগমন ও নির্গমন শেষ পর্যন্ত হয়ে যায় ওই রাজা বাদশাদের উত্থান-পতনের মতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক প্রধান হয়ে এসে তাঁরাই হন সর্বেসর্বা। দ্বিতীয় উপাচার্য অতুল চন্দ্র রায়ের আগমন ও নির্গমনও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ইতিহাস তৈরি করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠবার সময় থেকেই তাঁর যোগসুত্র ছিল, তিনি ছিলেন শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ ।জলপাইগুড়ির মানুষ, আড়ালে আবডালে অনেকেই তাঁকে বলতেন "ব্ল্যাকজুয়েল "। তাঁর সুপারিশেই ইটের, হলোব্রিকস-এর বাড়ি তৈরি হয়েছিল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিধানচন্দ্র রায়ের কাছের মানুষ, কর্মকুশলী ইঞ্জিনিয়ার এই উপাচার্যর কার্যকাল 01-6 -1966 থেকে 31-5-1970 পর্যন্ত। দ্বিতীয় উপাচার্য অতুল চন্দ্র রায়ের কার্যকাল ছিল খুবই ঘটনাবহুল ।
উপাচার্য অতুল চন্দ্র রায় উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়কৃষি বিজ্ঞান বিভাগ খুলতে চেয়ে ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সংস্থানকে স্বনির্ভর করে তুলবার জন্য স্থির করেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরের সমস্ত জমিতে ধান চাষ করে, সেই ধান দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থভাণ্ডার ভরিয়ে তুলবেন। মাগুররমারি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গা জমি চাষ করা হল, একদল নধর মোষ কেনা হল চাষের কাজের জন্য। মহিষগুলিকে রাখবার জন্য খামার তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের হোস্টেলের পেছনে "ভৈষাকুঠি" স্থান নামটি এখনও সেই মহিষের দলের স্মৃতি বহন করছে। স্থানীয় কৃষকদের কাজে লাগান হয়েছিল এই কৃষিকাজে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অত্যন্ত পরিচিত মুখ ছিল গোবিন্দবন্ধু অধিকারী, তিনি উপাচার্যের অনুগত কর্মচারী ছিলেন। পরবর্তীকালে এস্টেট অফিসার হন।উপাচার্যের সেই চাষবাসের কাজে গোবিন্দ অধিকারী ছিলেন তাঁর একান্ত অনুগত সহায়ক। অধিকারীবাবু ধানের চারা নিয়ে জিপের ট্রলারে চাপিয়ে কৃষি জমিতে পৌঁছে দিতেন। শুধু মাগুরমারি নয় ক্যাম্পাসের অন্যত্র ছিল ধান চাষের জমি। পরে পাকা ধান কেটে রাখা হল হেল্থ সেন্টার সংলগ্ন গোলায়। চষে ফেলা হয়েছিল ছাত্রদের খেলার মাঠ। সবশেষে পাকা ধান ঝাড়াই মাড়াই হল গোলাজাত করা হল। ধান বিক্রির টাকা, লাভ লোকসানের হিসেব ইত্যাদি নাকি অপরিজ্ঞাত থেকে গিয়েছিল। এখনো অনেকে তোলেন ওই ধান চাষের প্রসঙ্গ।বিশ্ববিদ্যালয় এখন চা বাগান হয়েছে, রাবার বাগান হয়েছে, এসবের পরেও মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এখনো মাইলের পর মাইল মানবজমিন পতিত রয়েছে যেখানে আবাদ করলে সোনা ফলত। শিক্ষাহীনতার অন্ধকার এখনো বিশ্ববিদ্যালয়কে বহু মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন অজ্ঞাত করে রেখেছে।
ধান চাষের খেয়াল উপাচার্যের একসময় শেষ হল। উত্তরবঙ্গের প্রথম মেডিক্যাল কলেজ রাজারামপুর ক্যাম্পাসেই শুরু হয়েছিল, উপাচার্য অতুল চন্দ্র রায়-এর উদ্যোগে। 18 নভেমবর,1968 ছিল মেডিকেল কলেজের সূচনা 35 জন ছাত্র নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ শুরু হয়। ছাত্ররা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে থাকতেন। পরে মেডিকেল কলেজ স্থানান্তরিত হল কাওয়াখালীতে। সেখানে মেডিক্যাল কলেজে নতুন ভবন হাসপাতাল তৈরি হল, যার বর্তমান নাম সুশ্রুতনগর ।
এই মেডিকেল কলেজ স্থাপনের একমাস আগেই চৌঠা অক্টোবরর 1968 , জলপাইগুড়িতে বিধ্বংসী বন্যা ঘটে গেল।তখন পুজোর ছুটি চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষাকর্মী আধিকারিক শিক্ষক, যারা পুজোর ছুটিতে জলপাইগুড়িতে ছিলেন তারা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন।জলপাইগুড়ি জেলার ক্ষতিগ্রস্ত কলেজ ও বন্যা দুর্গত অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্তদের ছাত্র ছাত্রীদের নানাভাবে সহায়তা করা হয়েছিল ।বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ফীজ মুকুব করা হয়েছিল, বই ও শীতের পোশাক কিনতে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছিল।
তখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশ ঘিরে ছিল ধানক্ষেত, সহজ-সরল জীবনের হয়তো অভাব ছিল, অসন্তোষ ছিল না। এই ধান ক্ষেত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকৃত জমির মধ্যেও ছিল। যারা সেসময় এইসব জমিতে চাষ বাস করতেন, বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলবার জন্য তাদের অনেকেই নিজেদের জমি থেকে উৎখাত হন, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ সেদিন তারা পেয়েছিলেন কিনা জানি না। অনেকের মনেই জমি হারানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি তীব্র হতাশা অভিমান জন্মেছিল। জমি থেকে উৎখাত হওয়া পরিবারের সদস্যদের কেউ কেউ চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী, মালী, শ্রমিক, সিকিউরিটি গার্ড এমনকি রাধুনী, পরিচারক হয়ে নিজেদের জমিতে হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের প্রবেশ ঘটল কিন্তু এরা মনের দিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একাত্ম হতে পারেননি, পিতৃ-পুরুষের জমি হারানোর বেদনা কিন্তু জেগে রইল। আরও যে ঘটনা ঘটল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষাকর্মী অর্থাৎ আর্থিক দিকে তুলনামূলক ভাবে সম্পন্ন অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জমি কেনা শুরু করলেন, জমির দালালদের হাতে বহু জমি চলে গেল দরিদ্র হতভাগ্য স্থানীয় কৃষি জমির মালিকরা পড়ল জমির দালালদের খপ্পরে। বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জমি বিক্রি করে অনেকে দূরে পেছনে চলে গেলেন, কেউ, কেউ বাগডোগরার দিকে, কেউ বা ফৈরাণীজোতের দিকে। এছাড়াও বৈরাতীসাল থেকে অনেকেই চলে গেলেন সলক ভিটা, ভরত বসতির দিকে। পাল্টে গেল জমি ও জনবিন্যাস।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে তখন নকশালবাড়িতে জমি হারানো-শোষণ-বঞ্চনা নিয়ে প্রতিবাদের বারুদে আগুন জ্বলছে, যার স্ফুলি‌‌ঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এসে পড়ছে। ইতিমধ্যে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। পশ্চিমবাংলার মসনদ বদলে গেছে। কংগ্রেসের প্রস্থান, রাইটার্সে প্রবেশ যুক্তফ্রন্টের। শিক্ষা মন্ত্রী হয়েছেন নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির নেতা সত্যপ্রিয়
মুখোপাধ্যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন উপাচার্যের বিরুদ্ধে অসন্তোষ ধূমায়িত হচছে। নকশালবাড়ি
আন্দোলনের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা যুক্ত হয়েছে। ক্লাস বয়কট, বুর্জোয়া শিক্ষা ব্যবস্থার বদল, মুক্তির দশকের স্বপ্ন, বিপ্লব, সাম্যবাদ, সব কিছু নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ উত্তাল। উপাচার্য এসবের বিরুদ্ধে ছিলেন। ইতিমধ্যে
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতি ও টিচার কাউন্সিল গড়ে উঠেছে। সে সব নিয়ে কারও কারও মনে ছিল সংশয় ও অদ্ভুত প্রশ্ন, মাথার ওপর রয়েছেন উপাচার্য তা সত্ত্বেও এসবের কেন দরকার? বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনুগত একদল শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সবসময় থাকতেন। আজও সেই ট্রাডিশন রয়েছে। উপাচার্যরা এসেই সর্বপ্রথম যে কাজটি করেন তা হল অনুগত একটি দল তৈরি করা, যাঁদের কাছ থেকে তিনি পরামর্শ নেবেন, যারা তার অঙ্গুলিহেলনে চলবেন, আজো চলছে সেই পুরোনো
পরম্পরা। শিক্ষাকে রাজনীতি মুক্ত রাখা, গণতন্ত্র সবই আজ পরিহাসের মতই শোনায়।
নকশালবাড়ি আন্দোলনের আঁচ বিশ্ববিদ্যালয় ছড়িয়ে পড়ল দাবানলের মতো, ছাত্রছাত্রীরা অনেকেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন এই আন্দোলনে। কিশানলাল চ্যাটার্জী, পবিত্র পানি সাহা, জলপাইগুড়ির মেয়ে কৃষ্ণা চ্যাটার্জী - এরা নকশাল আন্দোলনের শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতৃত্ব দিয়েছেন। নকশালবাড়িতে তখন জমি দখলের আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছিল জঙ্গল সাঁওতাল, কানু সান্যাল-দের নেতৃত্ব।এরই মধ্যে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ সোনম ওয়া‌‌যদিও নামে একজন পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর নিহত হন। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের কোনো প্রতিবাদ গণতান্ত্রিক আন্দোলন সহ্য করবেন না। সিকিউরিটি গার্ডদের দিয়ে পোস্টার ছিঁড়ে দিতেন, মিছিল করতে নিষেধ জারি করেন ,ক্রমশ ছাত্রছাত্রীরা অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্দোলন মুক্ত করে ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য উপাচার্য ব্যস্ত হয়ে উঠলেন ।
নকশালবাড়ি আন্দোলন নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সমর্থন সহযোগিতা ও অংশগ্রহণকে নানাভাবে দমন করতে চেয়ে ছিলেন। এরই মধ্যে একদিন ছাত্রছাত্রীরা উত্তেজিত হয়ে উপাচার্যের অফিস ঘেরাও করতে চাইলেন, মারমুখী হয়ে লাঠিসোটা এমনকি হোস্টেলের খাটের ডান্ডা নিয়ে, মাঠ পেরিয়ে উপাচার্যের অফিসের দিকে তারা এগোচ্ছিলেন, ক্যাম্পাসে তখন বেড়ে পুলিশ প্রহরা আর ধরপাকড় উপাচার্যের সিকিউরিটি বাহিনীর সংখ্যা বাড়িয়ে ছিলেন, তারা ছাত্র-ছাত্রীদের উপাচার্যের অফিসের দিকে এগোতে দেবেন না, সিকিউরিটি অফিসার উপাচার্যের অফিসের দরজার সামনে বন্দুক তুলে দাঁড়িয়ে পড়লেন ।ছাত্রছাত্রীরা সরল না, সিকিউরিটি বাহিনী ছাত্র-ছাত্রীদের সরে যাবার জন্য জোর করতে শুরু করলে ধস্তাধস্তি মারামারি শুরু হয়ে গেল। সন্ধ্যার আগেই উপাচার্যের নির্দেশে সব ছাত্র-ছাত্রীদের ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে হবে। হোস্টেলের সামনে স্টেট বাস দাঁড় করানো হল। উপাচার্য আদেশ দিলেন ছাত্র ছাত্রীদের হোস্টেলের ঘর খালি করে ছেড়ে দিতে হবে, তারপরে তারা বাসে উঠবেন, ক্যাম্পাসের বাইরে শিলিগুড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে যে যার বাড়ি চলে যাবে ।
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষিত হল বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই নকশালবাড়ি আন্দোলনের বলি হতে হয়েছিল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র পবিত্রপাণী সাহাকে। পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন পদার্থবিদ্যার উজ্জ্বল ছাত্র কিষান লাল চ্যাটার্জী, যার জীবনের সেরা সময়গুলো জেলখানাতে কাটাতে হয়েছে ।তিনি 2019এ সিউড়িতে দীর্ঘ
রোগভোগের পর প্রয়াত হন। সেই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা যারা তাদের দশককে মুক্তির দশকে পরিণত করতে চেয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই হয়তো আজ আর নেই, কিন্তু রয়ে গেছে তাঁদের সংগ্রাম সংঘর্ষের স্মৃতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এই জীবনকথা, বহু ঘটনার অনেক কিছুই এখনো অজানা, হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের নতুন নতুন ঘটনায় সেইসব চাপা পড়ে গেছে, কিন্তু একেবারে বিলীন হয়ে যায়নি। সেই সময়কার বিপ্লবের স্বপ্ন দেখা ছাত্রছাত্রীরা এবং স্থানীয় কিছু মানুষদের সমবেত ইচ্ছায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এক ক্ষুদ্র জনপদ গড়ে ওঠে, যার নাম তারা রেখেছিলেন "লেনিনপুর", সেই সব দিনের স্মৃতি হয়ে শুধু নামটুকুই আছে, বাকি সব কিছুই বদলে গেছে। এখন শুধু সেই স্মৃতি আর গণ আন্দোলনের ইতিহাস পাশাপাশি হাত রেখে চলে ধূসর অতীত হয়ে। স্মৃতিকথাও তো ইতিহাসের অংশ হয়ে উঠতে
পারে। এই অঞ্চলে নকশাল আন্দোলন নিয়ে বহু মানুষ, ছাত্র-ছাত্রীদের আত্মত্যাগ, শহীদ হওয়া, জেলে যাওয়া এসব নিয়ে আবেগ বর্জিত নিরপেক্ষ ইতিহাস উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অনুসন্ধানী ছাত্রর যথার্থ গবেষণাপত্র হয়ে নিশ্চয় রচিত হবে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri