সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
06-December,2022 - Tuesday ✍️ By- নীলাঞ্জন মিস্ত্রী 464

সানিয়া-৬/নীলাঞ্জন মিস্ত্রী

সানিয়া
পর্ব-ছয়
নীলাঞ্জন মিস্ত্রী
"""""""""""""""

দেখতে দেখতে চার বছর পেরিয়ে যায়। যত দিন গেছে অভিজ্ঞ হয়েছে সানিয়া। এখন মৈষালী চালে চলমান তার কিশোর বেলা। সানিয়া কিছুতেই ভোলে না আঙুল কাটা সেইদিনের কথা। একবুক নিঃশব্দ যন্ত্রণা নিমেষেই উধাও হয়ে গিয়েছিল। মিলে গিয়েছিল কুয়াশা মাখা আকাশ-বালির দিগন্তরেখায়। রাতে মা-ও এসেছিল চুপি চুপি। এসেছিল তো ওই আকাশ পথ ধরেই। মাথায় হাত বুলিয়ে অভয় দিয়ে বলে গিয়েছিল, "তোকে আর কষ্ট পেতে হবে না সানিয়া। আমি তো আছি তোর সাথেই। নে এবার ঘুমিয়ে পর। আমি যাই তোর ভাই বোনের কাছে।"

সানিয়াকে আর কোনো দিন তুচ্ছ তাচ্ছিল্য শুনতে হয়নি মৈষালদের কাছ থেকে। মহিষকূলের সমস্ত খুঁটিনাটি এতদিনে হাতে-কলমে রপ্ত করে নিয়েছে সে। বাথানের সবাই সব কিছু শিখিয়েছে ভালোবেসেই। বড় মৈষালদের সাথেই এখন সে মহিষ চরিয়ে বেড়ায় নদীর চরে চরে। আবার কোন কোন দিন ডাক পরলে নদী পেরিয়ে যেতে হয় ওপাড়ের হাটে-বাজারে। বাকালীর বাজার, বার্ণিশের বাজার, রাজারহাটে তখন অনেক চায়ের দোকান। সেই দোকানে দুধ দিলে কিছু দস্তার পয়সা মেলে। সেই পয়সায় মৈষালদের সপ্তাহের পান সুপারি বিড়ি দেশলাই মশলা শাকসব্জী হয়েও বেশি।  বাথানে অনেক দুধ। দুধ খাবার লোকই নেই। চরের কুকুরেরাও খেয়ে শেষ করতে পারেনা দুধ। কেউ এসে নিয়েও যায় না। প্রায় প্রতিদিন টিন টিন ভর্তি দুধ ফেলে দিতে হয় তিস্তার জলে। কষ্ট করে কিছু দুধ নৌকা করে ওপারের হাট বাজারগুলিতে নিয়ে যেতে পারলে হাতে পয়সা আছে কিছু। সে পয়সায় জিলিপি, চপ, পিয়াজিও জুটে যায় মাঝে মাঝে।

চিতি, মাঞ্জন, ছোটমাঈ, বড় মাঈ, কালোমাঈ, সনতরা, খাইরি, মোটামালা, লালী, হাতিরামেরাও  আর ছোট্টটি নেই। চার-সাড়ে চার বয়স প্রত্যেকের। ওদের এখন আর পরু বলা হয় না। সাড়ে তিন-চার বছরের পর থেকেই বাথানে পুরুষ মহিষকে পারা ও মেয়েদের পারি বলা হয়। ওদের মাথার উপর এখন আর ছাদ নেই। সারা রাত থাকে খোলা আকাশের নীচে। পরুর ঘরে এখন সব নতুন অতিথি। এই অতিথিরা চিতি, মাঞ্জন, ছোটমাঈ, বড় মাঈ, কালোমাঈ, সনতরা, খাইরি, মোটামালা, লালীদেরই সন্তান। পরুদের জন্য ঘাস কাটতে এখন আর প্রতিদিন যেতে হয়না তাকে। রামুই ঘাস কেটে আনে ওদের জন্য। রামু প্রায় তার সমবয়সী বালক।  মাস তিনেক হল বড়দিঘী এলাকা থেকে এসে যোগ দিয়েছে বাথানের কাজে। তিস্তার বিস্তীর্ণ চরে এত দিন পর এমন বন্ধু মেলাতে সানিয়াও বেজায় খুশি।

মহিষ ছেড়ে দিয়ে পিঠে ছাতা ঝুলিয়ে বাটুল হাতে এচর-সেচর করে সানিয়া আর রামু। রামু তার মত মাতৃহারা নয়। তার একটা নয় দু’টা মা। বাবা আরও একটা বিয়ে করেছে বছরখানেক আগে। কাজকর্ম কিছুই করেনা। জমিজমা সব জুয়ার কোটে বন্দক রেখেছে। মদ খেয়ে বাবা অত্যাচার করে। বাদ যায়না সে নিজেও। মায়েরা চিৎকার করে যন্ত্রণায়। সহ্য হয়না রামুর। রাগে-দুঃখে ঘর ছেড়ে পালায়। পালাতে পালাতে ওলট পালট খায় অনেক।  অবশেষে তারও ঠিকানা হয় তিস্তাচরের এই মহিষ বাথান।

রামু বাড়ি ফিরতে চায় না মোটেই। সানিয়ার বাড়ি যাবার জন্য প্রাণ কাঁদে। চার বছর হয়ে গেল দেখা নেই তার ভাই বোনের সাথে। বাবা কি এখনও নাথুয়াতেই রয়েছে নাকি ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে গেছে অন্য কোথাও কিছুই জানে না সানিয়া। এখন তার মনের কথা বলবার সাথী হয়েছে। আড্ডা মারবার সাথী হয়েছে। জল-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে নাথুয়া যাবার মতলব করে চলে দুই বন্ধু। সুযোগ মিলে গেল একদিন। একজোড়া মহিষকে পায়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যেতে হবে পানবাড়ি এলাকায়। পানবাড়ি থেকে নাথুয়া বেশী দূরে নয়- তাই খুব সহজেই সেখান থেকে পৌঁছে যাওয়া যাবে ভাই-বোনের কাছে। সানিয়া এই দায়িত্ব নিতে এক পায়ে খাঁড়া। তবে বন্ধুর মুখের দিকে চেয়ে একটা আবদার করে বসে বাথান মালিকের কাছে। সে আবদার রামুকে সঙ্গে নিয়ে যাবার। বাকালী থেকে পানবাড়ি। অনেকটা দূরের পথ। নদী জমি পথ ঘাট জঙ্গল পেরিয়ে যেতে হবে সেখানে। তাই পথে বিপদ আপদ আসতেই পারে। রাজি হয় বাথান মালিক। 

অমাবস্যায় ভেজা ভেজা রাত। থুরকির উপর রাখা কুপিটার পেট খালি হয়েছে। রসদের অভাবে নেতিয়ে পরেছে তার আলো। নিভু নিভু করতে করতে অন্ধকারের ঘেরাটোপে অদৃশ্য হয় ঘরের আবছা আলো। চোখ বন্ধ করে সানিয়া। উত্তেজনায় মোটেই ঘুম আসতে চায়না। মাঝে মাঝেই আনন্দে জড়িয়ে ধরে রামুকে। রামুর গায়ে পা তুলে দিয়ে আনন্দ জাহির করে। আগামীকাল খুব ভোরে যাত্রা শুরু হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে মহিষ দুটিকে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে সন্ধ্যার নাগাদ নিজের বাড়িতে ঢুকে যেতে পারবে। এসব যত ভাবছে আনন্দে আত্মহারা হচ্ছে সানিয়ার মন। পরুর দলও বোঝে তার মনের কথা। নিকষ কালো অন্ধকারের মাঝে ওদের চোখগুলিও জ্বল জ্বল করছে। জোড়া জোড়া চোখগুলি ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে রয়েছে তার দিকে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri