সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
12-May,2025 - Monday ✍️ By- শুভ্রজ্যোতি দাস 47

লে পাঙ্গা-৬/শুভ্রজ্যোতি দাস

লে পাঙ্গা/৬
শুভ্রজ্যোতি দাস

                    জোড়হাটির গেরোয়


- " না, না ও আমি শুনব না আমি এর শেষ দেখে ছাড়বো এসব কি?  এর নাম খেলা?  কি শেখাচ্ছেন ছাত্রদের? চুরি শেখাচ্ছেন?" 

এতখানি রেগে যেতে দিলীপদাকে কেউ কোনদিন দেখিনি রাগে দিলীপ দার হাত পা কাঁপছে মুখটা পুরো লাল টকটকে হয়ে আছে স্কুল টুর্নামেন্টের প্রথম খেলাতেই এরকম বিচ্ছিরি একটা পরিস্থিতি বিবেকনগর হাই স্কুলের সাথে খেলা ছিল বরাবরই ওই স্কুল টার এসব ব্যাপারে দুর্নাম ছিল ওদের ফাইনাল ইলেভেন মাঠে নামার পর দেবজিত বাইরে এসে কমপ্লেন করে- ওদের তিনজন প্লেয়ার নাকি ওই স্কুলে পড়েই না জেলা লিগে ওদের খেলতে দেখেছে, ওদের বয়স ও নাকি সতেরো বছরের অনেক বেশি নাম ভাঁড়িয়ে বয়স ভাঁড়িয়ে এখানে খেলছে আগে বললেই ব্যাপারটা এতদূর গড়ায় না শুনেই তো দিলীপ দার মাথায় আগুন সাথে সাথে রেফারিকে ডেকে খেলা থামানো হল প্রথমে তো বিবেকনগরের গেম টিচার ব্যাপারটা মানতেই চায়নি- কাগজ দেখাচ্ছে, সার্টিফিকেট দেখাচ্ছে উল্টে দিলীপদার উপরেই চোট পাট , তর্কাতর্কি........ সে এক বিতিকিচ্ছিরি কান্ড পরে ওই ছেলেগুলো নিজেরাই স্বীকার করে নিল সাথে সাথে ভোল বদল- তখন আবার কাকুতি মিনতি- “ব্যাপারটা এখানেই মিটমাট করে নিন” অফিসিয়ালরাও মিটমাট করতেই চাইছিল - না খেলেই আমাদের জয়ী ঘোষণা করা হবে, কিন্তু ব্যাপারটা যেন আর না গড়ায় ভুল ওনাদের পার্টেও হয়েছে কিন্তু ততক্ষণে ভোলানাথ দিলীপ দা একেবারে রুদ্রমূর্তিতে ঠান্ডা মাথার মানুষগুলো একবার রেগে গেলে প্রলয় অনিবার্য তাছাড়া দিলীপদা ব্যক্তিগত ভাবে একদম পরিষ্কার মানুষ, এসব ছ্যাঁচড়ামো সহ্য করতে পারেন না বরাবর জেতার থেকে স্পোর্টস ম্যান স্পিরিটকে বেশি গুরুত্ব দেন এমনকি জেতার প্রয়োজনে চোরাগুপ্তা ফাউল বা টাইম কিল - এসব ব্যাপার সুবীর ছাত্র দের যখন বলে- তখন উনি স্পষ্টতই অসন্তুষ্ট হন, বারণও করেন এবারও পনেরদিন মাত্র বয়স বেশি বলে শাজাহান কে বাদ দিয়ে খেলতে এসেছেন  যাহোক, বহুকষ্টে শেষপর্যন্ত দিলীপ দাকে ঠান্ডা করা গেল তবে মাঠ ছেড়ে যাওয়ার আগে ওই তিনটি ছেলেকে ডেকে সবার সামনে বললেন -"তোমরা নিজেদের ভুল নিজেরাই স্বীকার করেছ- এটা ভাল লাগল ভবিষ্যতে শিক্ষক হলে ছাত্রদের এই শিক্ষাটাই দিয়ো" বিবেকনগরের গেম টিচারের এসব শুনেও কোন বিকার হল বলে মনে হল না

না খেলেই প্রথম খেলায় জয়ী! তারপর অবশ্য জেলা ফাইনাল পর্যন্ত বীর নগর স্কুলের টিম মসৃন গতিতে এগিয়েছে যথারীতি দেবজিত অতুলনীয় নিজে খেলছে, বাকিদের খেলাচ্ছে কোন দলই  সেভাবে চ্যালেঞ্জে ফেলতে পারেনি কিন্তু ফাইনাল আবার সেই জোড়হাটি বনবস্তীর সাথে গতবার সেমিফাইনালে ওদের কাছেই হারতে হয়েছিল দেবজিতদের ওদের টিমটায় দেবজিতের মতো স্কিলফুল প্লেয়ার নেই কিন্তু ওদের বনবস্তির আদিবাসী ছেলেগুলোর যেমন তাগড়াই চেহারা, তেমনি অফুরন্ত দম তার সাথে যোগ হয়েছে ওদের ডাকাবুকো সাহস আর মরিয়া চেষ্টা এটাকেই পুঁজি করে দীর্ঘদিন ওরা জেলা চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসছে রোজকার জীবনের বেঁচে থাকার কঠিন লড়াই আর কঠোর পরিশ্রমের ফসল ওরা খেলার মাঠে তোলে!

               ----------                         

   খেলা শেষের বাঁশি পড়তেই দেবজিত তীব্র হতাশায় বলটাতে প্রচন্ড জোরে লাথি মেরে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দিল নাঃ, এবারও হল না ১ - ২ গোলে হারতে হল প্রথমার্ধেই খেলার ফল প্রায় নির্ধারিত হয়ে গেছিল প্রথম কুড়ি মিনিটের মধ্যেই জোরহাটি দুই গোলে এগিয়ে যায় সেকেন্ড হাফে একটা মরিয়া চেষ্টা চালালেও ওদের ডিফেন্সে দাঁত ফোটানো যায়নি ওদের দলেরও দুজন খেলোয়াড় জেলা লীগে খেলে দেবজিৎকে ওরা ভালোমতোই চেনে সেইমতো দেবজিতের জন্য ডবল কভারিংয়ের ব্যবস্থা করা ছিল আর দেবজিত আটকে যেতেই বীরনগরের খেলার ছন্দ টাই নষ্ট হয়ে গেল জোড়হাটিকে হারাতে গেলে আরও একটা দেবজিত দরকার শেষের দিকে ফ্রিকিক থেকে দেবজিতের সান্ত্বনা গোলটাই যা পাওনা

      ছেলেরা সব ক্লান্ত শরীরে ড্রেস চেন্জ করে ব্যাগ গোছাচ্ছে দিলীপদা রা মাঠে বসে খেলার ময়নাতদন্ত চালাচ্ছেন  বাঁশি বাজার পর থেকে সুবীর সেই যে মুখ বন্ধ করেছে, এখনো একটা কথা বলেনি এখনো শূন্য চোখে সবুজ মাঠ টার দিকে চেয়ে আছে খানিক তফাতে আরো একজন একই ভাবে নিশ্চল হয়ে ফাঁকা মাঠের দিকে তাকিয়ে আছে - দেবজিত! দিলীপ দা অবশ্য এসবে বিচলিত হন না - জয় পরাজয় দুটোই সহজ ভাবে নিতে পারেন জোরহাটির ছেলেগুলোর জীবন সংগ্রামের গল্প করছিলেন দিলীপ দা জঙ্গল ঘেরা বনবস্তির মানুষের জীবন - প্রতিদিন হাতি আর চিতার মুখোমুখি হয়ে বেঁচে থাকা - মাঠের পাকা ফসল হাতি খেয়ে যায়, বাড়ির ছাগল মুরগি চিতায়  নিয়ে যায় - ফসল বাঁচাতে ওরা সারারাত আগুন জ্বালিয়ে নাচ গান করে জেগে থাকে  

সহসা গল্পে ছেদ পড়ল DSSA-এর এক কর্তা দিলীপদার কাছে এগিয়ে এল -"ব্যাড লাক দিলীপদা তবে আপনাদের ছেলেরা ভালো খেলেছে'  দিলীপদা শুকনো মুখে হাসলেন

-" বাই দা ওয়ে, ডিস্ট্রিক্ট টিমের ট্রায়াল মাস খানেকের মধ্যে শুরু হবে আপনার স্কুল থেকে কেউ আসবে নাকি? কেউ থাকলে আজকেই নাম দিতে পারেন আমরা পরে যোগাযোগ করে নেব"

জেলা চ্যাম্পিয়ন স্কুল তো সুব্রত কাপ খেলতে যাবে কিন্তু অন্যান্য স্কুলের প্রতিভাকে এক্সপোজার দেওয়ার জন্য ডিস্ট্রিক্ট টিম তৈরি করে ইন্টার ডিস্ট্রিক্ট একটা টুর্নামেন্ট হয় যদিও এটা তেমন গুরুত্ব পায়না স্রেফ নিয়ম রক্ষার জন্য নমঃ নমঃ করে দায় সারা হয় 

       দিলীপদা উঠে দাঁড়িয়ে দেবজিত কে ডাকলেন -"ডিস্ট্রিক্ট টিমের ট্রায়ালে তুই যাবি তো?  সুব্রত, গৌরাঙ্গ, রফিক এরা কেউ থাকবে নাকি জেনে আয়"

       মাথা নাড়িয়ে দেবজিত চলে গেল খানিক বাদে ফিরে এসে বলল -"রফিক গৌরাঙ্গ থাকবে বলল সুব্রতর বাড়ি থেকে যেতে দিবে না"

-" আর তুই?  থাকবি তো? নাকি?"

মাথা নিচু করে দেবজিত বলল -"না স্যার, আমি যাব না"

  -"কেন? তোর আবার কি সমস্যা?"

 খানিকক্ষণ চুপ করে থাকল দেবজিত তারপর বলল -"গৌতমদা বলেছে এবছর কলকাতার ক্লাবে আমাকে ঢুকিয়ে দেবে তাই ক্লাবের খেলাটা এবছর মিস করব না আর সার, এই টুর্নামেন্টটা তো কেউ দেখতেই যায় না সবাই সুব্রত কাপটাই দেখে" বলেই আবার মাথা নিচু করল দেবজিত

দিলীপদার চোয়ালটা একটু শক্ত হল অবশ্য মুখে কিছু বললেন না  দেবজিত খানিকক্ষণ ওভাবে দাঁড়িয়ে থেকে মাথা নিচু করেই চলে গেল

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri