লাল পরী-৬/মধুপর্ণা রায়
লাল পরী/৬
মধুপর্ণা রায়
মল্লিকা আবার সেই অনর্থক খিলখিল হাসছে।
:-- ভোঁদাই লেখক, আমার বুকের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে কী কেরদানি মারা হচ্ছে? তার চেয়ে চল, যে জন্যে এনেছ সেটা সেরে নাও। এমনিতেই বমি টমি করে আমার শরীরটা কেমন ঝাঁ ঝাঁ করছে! কণ্ডোম এনেছ তো? আমি কিন্তু.....
ঝাঁ করে উঠল শাক্যর মাথা। সে ধমকে উঠল আচমকা
:-- শাট আপ। স্কাউন্ড্রেল মেয়ে! নোংরা কথা ছাড়া কিছু জান না, না?!
ঝম করে উঠে দাঁড়াল মল্লিকা।
:-- এ্যাই! লেখক ফেখক যা--ইই হও, আমাকে শালা ধমকাবে না। চিৎকার করে কাঁদব।
বলেই ধপাস করে বসে পড়ল। হাসতে হাসতে লুটিয়ে গেল একেবারে।
শাক্য বুঝল, মদের নেশা কাটে নি। বহ্নির আহ্লাদের ধরণটা অনেকটা এরকম।
--- চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কাঁদব কিন্তু শাক্যদা। ভ্যাঁ করে কেঁদে দিই আমি! তখন সামলাতে পারবে না কিন্তু!
রঞ্জাবতীর দিঘি চোখ ধারে ধারে অশ্রু নামায়। নি:শব্দ। শাক্যর মনে হয় সে ওই জল শুষে নেবে ঠোঁটে। সবসময় তেমনটা হয়ে ওঠে না। রঞ্জার ব্যক্তিত্বে এক অদ্ভুত নির্জনতার একাকীত্ব আছে। কখনো শাক্যর অস্বস্তি হয়।
মল্লিকা বলল :-- মাথাটা ভোঁ ভোঁ করছে মাইরি। মনটা শালা ফুরফুর করবে তা না... নুড়িটার জন্যে খাঁ খাঁ করতে লেগেছে। ওর সম্পত্তি আমি নেবার কে বল তো?
:-- মানে? ওর সম্পত্তি মানে?
শাক্য শেষ পকোড়াটা তুলে নিল।
:-- আমাদের নিয়ম আছে। কেউ মরে গেলে তার যা যা কিছু আছে কাছের লোকরা ভাগ করে নিয়ে নেয়। ও একটা ফ্রিজ কিনেছিল। আর একটা গান শোনার ডেক। আমি নেব কেন?
আচমকা বলল:-- শোনো, আমি রাত্রে কিছু খাব না। তুমি খেলে খেয়ে নিও।
:-- এখন তো সবে সাড়ে সাতটা বাজে। ডিনার ন'টাতে করা যাবে।
:-- খাব না বললাম তো। বেকার ঘ্যানর ঘ্যানর কোরো না তো।
সেল বাজছে শাক্যর। সে দেখল, রঞ্জাবতী। একটু সরে গেল শাক্য।
বল।
কী করছ?
এমনিই। বসে আছি। জঙ্গল দেখছি।
ড্রিংক করছ। না?
এই সামান্য। ফোন করলে কেন?
মানে?! করব না?! আমাকে নিলে না কেন?
ওফ! রঞ্জা....
শাক্য, কেউ সঙ্গে আছে?
কে আবার থাকবে?
বহ্নি বোস?
বাজে বোকো না। ফিরে কথা হবে।
মানে, এখন কথা বলতে চাইছ না? আমার খুব একলা লাগছে শাক্য!
আমি পরশুই ফিরছি রঞ্জা। তোমার লেখাটা অঞ্জনদাকে দিয়েছ?
নাহ।
কেন?
লাভ নেই। আমি আর লিখব না। তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো।
রঞ্জা বোধহয় কাঁদছে। ওর লম্বা খোলা চুল। পাট ভাঙা শাড়ি। বড় টিপ। দুই চোখে জলের ধারা। শাক্যর বুকের ভিতর ঝাঁকুনি এল। সে ঘাড় ঘোরাতেই দেখল মেয়েটা আনমনে দূরের অন্ধকারে তাকিয়ে।
বলল-- লক্ষ্মী রঞ্জা, কেঁদো না। আমি আসছি। লেখাটা অঞ্জনদাকে দাও। পত্রিকাটা কোন লেভেলের তোমার জানাই আছে। আমি ওঁকে বলে রেখেছি। এখানে নতুন সাবজেক্ট আছে। গিয়ে বলব। এখন রাখছি।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴