সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
16-December,2022 - Friday ✍️ By- নীলাঞ্জন মিস্ত্রী 389

তিস্তাবাথান-৬

তিস্তা বাথান
পর্ব: ছয়
নীলাঞ্জন মিস্ত্রী
"""""""""""'''"""""""""

মধ্য তিস্তার চরে চরে এখন রাতের বেলায় সোলার ল্যাম্প জ্বলে। অথচ কয়েক বছর আগেই এই সমস্ত স্থান ছিল ঘন জঙ্গলে ভরা। ছিল জংলী জানোয়ার ও জীবজন্তুর উপদ্রব। এদের থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে মৈষাল বন্ধুরা আগুন জ্বালাতেন। তিস্তায় ভেসে আসা বড় বড় গাছের গুড়ির নরম কোনো স্থানে আগুন লাগালে সেই আগুন জ্বলতো একমাস বা তার বেশী  সময় ধরে। আজও ভরা বর্ষায় বড় বড় গাছের গুড়ি ভেসে আসে তিস্তার জলে। তবে সেদিনের সেই বিশালাকার কাঠের গুড়ির দেখা মেলে না। ভইসডোবার কাছেই ছিলো একটি ফরেষ্ট ডিপো। সেই ডিপোতে হাজার হাজার ছোট বড় কাঠের লগ সাজিয়ে রাখা ছিল। ১৯৬৮ সালের বন্যায় ডিপো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। সমস্ত কাঠের লগ সমেত ডিপোটিও চাপা পড়ে তিস্তার পলি বালির নীচে। বর্ষাকালে যখন তিস্তা তার যৌবন ফিরে পায় তখন আলগা হয়  নীচের পলি বালি মাটি। লগগুলি বেরিয়ে আসে মাটির ভেতর থেকে। ভেসে যায় তিস্তার স্রোত বরাবর। সেই কাঠ ধরবার জন্য জীবন বাজী রেখে তিস্তায় ঝাঁপান তিস্তাপারের হাজার হাজার মানুষ। স্থানীয়ভাবে এই কাঠের নাম ‘তিস্তাভাসা কাঠ’।

শুধুমাত্র মাটির নীচে চাপা পরা লগ নয়; নদীর পার ভেঙ্গে এবং পাহাড়ে ধ্বস নেমেও ভেসে আসে প্রচুর কাঠ। এই কাঠ সংগ্রহ করেই সারা বছরের জ্বালানী পেয়ে যান  তিস্তা পারের মানুষজন। বাড়তি কাঠ বাজারে বিক্রি করেও হাতে আসে ভালো পরিমান টাকা। মৈষাল বন্ধুদের রান্নাঘর ভরে থাকে তিস্তা ভাসা কাঠ দিয়েই। উনুনে  তাড়াতাড়ি আগুন জ্বালাতে মহিষের শুকনো গোবরও তাঁরা ব্যবহার করেন। অপ্রাসঙ্গিক হলেও বলে রাখি বর্ষাশেষে যখন নদীর জল কমে যায় তখন কিছু মানুষকে নদীতে পিঠে একটা বস্তা আর হাতে একটা লাঠি নিয়ে দেখে থাকবেন অনেকেই। ওই লাঠির মাথায় লাগানো থাকে একটি রড বা সিক। আসলে তাঁরা বালির মধ্যে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আগুন জ্বালাবার কাঠ খোঁজেন। খোঁচাতে খোঁচাতে নীচে শক্ত কিছু ঠেকলেই তাঁরা কাঠের অস্তিত্ব টের পান। এইভাবেই মাটির নীচ থেকে বেরিয়ে আসে ছোট বড় বহুপ্রকারের কাঠ। শুধু জল কমে গেলে নয়; নৌকা নিয়েও অনেকেই তিস্তার নীচে সন্ধান চালান কাঠের বড়ো লগের। কোনকোন সময় তো এত বড় লগ বা গাছ মিলে যায় যে দু’টো নৌকা জোড়া লাগিয়ে তা ভাসিয়ে নিয়ে আসতে হয় পাড়ে।

পুরণদা’র বাথানের সামনেই রয়েছে কিছু কাঠের গুড়ি। একেবারেই কালো রঙের। তিস্তার পাড় বরাবর যাঁরা ঘোরেন তাঁদের নিশ্চই এমন কাঠের গুড়ি নজরে এসেছে। প্রাথমিক ভাবে মনে হতেই পারে এগুলি পোড়া কাঠ। হয়তো বন্যার সময় তিস্তাপাড়ের কোন শ্মশান থেকে ভেসে এসেছে। কিন্তু এ’কথা বা এ’ভাবনা মোটেই সত্য নয়। এই গাছের গুড়ি গুলোও কিন্তু কালো হয়েই মাটির নীচ থেকে বেড়িয়ে আসে। কয়েকশ’ বছর ধরে মাটির তলায় চাপা পড়ে থাকবার জন্যই প্রায় কয়লার রঙে পরিণত হয়েছে। কুটুম কাটাম নামক শিল্পকর্মের জন্য শিল্পপ্রিয় বহু মানুষেরাই এসব কাঠের গুড়ির সন্ধানে থাকেন । আমারও সংগ্রহে রয়েছে কিছু।

বর্তমানে গজলডোবা থেকে বেলতলী পর্যন্ত তিস্তা অববাহিকায় যে ক'টি বাথান রয়েছে তার প্রত্যেকটিতেই কিছু কুকুরের দেখা মিলবে। ওনারাও থাকেন তিস্তাচরে। তবে সমতলের কুকুরের সাথে এদের গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। বাস্তবে এরা খুব হিংস্র স্বভাবের। চরের বড়ো বড়ো ছাগল, মোরগ এমনকি গরুকেও দলবদ্ধ ভাবে আক্রমণ করে তারা। এমনকি মেরেও ফেলে। অচেনা মানুষ দেখলেও স্বাভাবিক ভাবেই তারা তেড়ে আসে। ভয় পায় না কাউকেই। তাই হাতে লাঠি না থাকলে যখন তখন আপনি এই বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন। তবে মৈষাল বন্ধুদের সাথে এই সারমেয়দের সখ্যতা রয়েছে ভীষণ। মৈষালেরা যখন মহিষ নিয়ে বাথান থেকে বেড়িয়ে যান তখন বাথানের সুরক্ষা এনারা নিজেদের কাঁধেই তুলে নেন। এ এক দারুন বিষয়।

ফাল্গুন-চৈত্রে তিস্তার রুক্ষ্ম বক্ষ হঠাৎ আসা বৃষ্টির জলে সিঞ্চিত হয়। সেই জল পেয়ে  সবুজ ঘাস উঠে আসে চরের বালি ভেদ করে। ঘাসের লোভে গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে বিভিন্ন প্রজাতির খরগোস। কুকুরেরা এই খরগোশ শিকারে ভীষণ পটু। তারা শিকার করে ঠিকই কিন্তু নিজেদের জন্য নয়। তাদের এই খরগোশ শিকার করার পেছনে একটা মজাদার ব্যাপার রয়েছে। কুকুরেরা খরগোস শিকার করবার পর সেগুলিকে মুখে করে নিয়ে আসে বাথানে। মৈষাল বন্ধুদের জন্য যত্ন করে রেখে দেয় বাথানের খোলা ঘরের কোণায়। যতক্ষণ পর্যন্ত মৈষাল বন্ধুরা ঘরে না ফেরেন, নিজেরাই  খরগোসগুলিকে পাহাড়া দেয় যাতে অন্য কেউ নিয়ে না চলে যায়। মৈষালেরা (সানিয়াদা, পূরণদা) বাথানে ফিরে এসে সেই খরগোসের মাংস রান্না করেন। নিজেরা খান এবং খাওয়ান তাদের ভালোবাসার এই বাথান প্রহরীদের। তিস্তাচরে মানুষে পশুতে এ এক অদ্ভুত সম্পর্ক। 

একটা সময় চরের কুকুরেরা মোটেই পছন্দ করত না আমায়। দেখলেই তেড়ে আসত সামনে, ধাওয়া করত বাইকের পেছন পেছন অনেক দূর পর্যন্ত। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকত আমার দিকে। মনে মনে হয়তো বলত, 'ভাগ যাও হিয়াসে, ইয়ে হামারা ইলাকা হে'। কিন্তু ওদের বিশ্বাস আর ভালোবাসা  অর্জন করতে সফল হয়েছিলাম খুব অল্প সময়ের মধ্যেই। জানিনা এর পেছনে ঠিক কোন যুক্তিটি গ্রহণযোগ্য হবে। মৈষাল বন্ধুদের সাথে বা চরের মানুষদের সাথে আমার সখ্যতা না ওই ব্রিটানিয়া মারিগোল্ডের বিস্কুটের প্যাকেটগুলি।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri