সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
05-December,2022 - Monday ✍️ By- সুবীর সরকার 486

ঢোলসানাই-৬/সুবীর সরকার

ঢোলসানাই/সুবীর সরকার
ষষ্ঠ পর্ব
""""""""""""'""""'"""""""""''''""""""""""

১৬.
"আর কত দিনে আসিবেন
ও মোর মাহুত বন্ধু রে"
 গোয়ালপাড়ার গান শুনি। উত্তরবঙ্গের গান শুনি। লোকগান। মাটির গান।
হাতি মাহুত মৈশাল গাড়িয়াল হস্তী কইন্যার গান।
লোকাচার আর বিবাহের গান।
লোকগানের মায়া আর তীব্র জাদু আমাকে সম্মোহিত করে।
জীবনের গহীনে ডুবিয়ে মারে।
এই সব লোকগান আদতে শিক্ষকের মতন।
আমি মানুষ আর জীবন ভালোবাসতে শিখেছি এই সব মহার্ঘ্য গানের কাছেই।
১৯৯৭ সালে গোয়ালপাড়ার এক লোকগানের আসরে পরিচয় হয়েছিল শ্রীমতী পার্বতী বড়ুয়ার সাথে। পার্বতী বড়ুয়া আজ নিজেই কিংবদন্তি।
তিনি এসেছিলেন তার দিদি লোকগানের রাণী প্রতিমা পান্ডে বড়ুয়ার গান শুনতে।
বাবা ছিলেন গৌরীপুরের রাজা প্রকৃতিশ চন্দ্র বড়ুয়া(লালজী)। এশিয়ার সর্বসেরা হস্তীবিশারদ।
জ্যাঠামশাই ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রবাদপ্রতিম ব্যাক্তিত্ব প্রমথেশ চন্দ্র বড়ুয়া।
পিসিমা গোয়ালপাড়ার লোকশিল্প ও লোকগানের সংগ্রাহক নিহারবালা বড়ুয়া।

১৭.
পার্বতী বড়ুয়া ছোট থেকেই বাবা লালজির কাছে হাতি ধরার প্রশিক্ষণ নেন।
লালজি তার সব স্বপ্ন দিয়েই তৈরি করেন কন্যা পার্বতীকে।
আর প্রতিমা বড়ুয়া চলে যান লোকগানের দিকে।
পার্বতী বড়ুয়া আজ এশিয়ার বিখ্যাত হস্তীবিশারদ।
দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়ান। হাতি প্রশিক্ষণ নিয়ে।
হাসিমারার কাছে মালঙ্গিতে রয়েছে পার্বতীর খামারবাড়ি।
তার নিজের দুটি হাতি কাঞ্চনমালা আর লক্ষীমালা এখন বনবিভাগের কুনকির কাজ করে।
মাঝে মাঝে পার্বতী আসেন। হাতি নিয়ে নানান কর্মকাণ্ড চালান।
১৯৯৮ এর এক শীতের সকাল রাত আর পরদিন দুপুর পর্যন্ত আমি সময় কাটিয়েছিলাম পার্বতী বড়ুয়ার সাথে।
একটা দীর্ঘ ইন্টারভিউ নেবার কাজে।
খুব কথালাপের ঘোরের ভেতর পার্বতীর বর্ণময় জীবনকে ছুঁতে চেয়েছিলাম।
আমি তখনও জানতাম না পার্বতী ভালো গোয়ালপাড়ার নাচ জানেন। গান জানেন।
রাতে ঢোল দোতোরা  বাঁশি সারিন্দা আর গানের পর গানের ঢেউ।
গলা মেলালেন পার্বতী। নাচলেন পার্বতী।
ছিলেন রঘুনাথ মাহুত।
ছিলেন আসুরুদ্দিন ফান্দি।
আজও চোখ বন্ধ করলে সেই দৃশ্য পরিষ্কার দেখতে পাই।
আর গান ডুবে যায়, ডুবে যেতেই থাকে মূর্তি নদীর জলে, গান ছুঁতে থাকে মেঘ অরণ্য মানুষ আর নিধুয়া পাথার_
"ও মোর গণেশ হাতির মাহুত রে
মোক ছাড়িয়া কেমনে যাইবেন হস্তির শিকারে"

১৮.
লুৎফর চাচার সঙ্গে মাঝে মাঝে দীর্ঘ সময় কেটে যায়। তোর্সা পারে কালপানী অঞ্চলে ওনার বসবাস।প্রবীণ মানুষ। মুরুব্বী মানুষ। আমার সঙ্গে অনেক দিনের পরিচয়। আমার শ্রদ্ধার মানুষ।
লুৎফর চাচা আসলে গল্পের খনি। আমি ওনার কাছে যাই পুরোন দিনের গল্প শুনতে।শুনতে শুনতে পুরোন কালখণ্ড তীব্র হয়ে বিনির্মিত হতে থাকে।
আজ শুনলাম ৫০/৬০ বছর আগেকার তোর্সা নদীর ভয়াবহতার গল্প। ভরা বর্ষায় তোর্সা তখন ভয়ংকর।
নদীর বুক জুড়ে অগণন ঢেউ বুঝি ফণা তোলা সহস্র সাপ। নদী জুড়ে কামানের গর্জন।
হিড়িক হিড়িক করে কাছার ভাঙছে।
তখন মালতীগুড়ির এরা ধনী আর কালপানীর কামদেব ধনীর সেই দাপ আর প্রতাপ।
কামদেব ধনী ঘোড়ার পিঠে ছুটে যেতেন কত তালুক মুলুক। কাঁধে ঝোলানো থাকত দো_নলা বন্দুক।
তখন সন্ধে হলেই দূরাগত বাঘের ডাক।চারপাশে কত নদী কত ফরেস্ট।কোচবিহারের মহারাজা শিকারে যেতেন পাতলাখাওয়ার জঙ্গলে।
চাপাগুরীর চরে ছিল ধরণী কার্জীর প্রায় ১০০ মহিষের বাথান।
রাতের বাথান জুড়ে ছড়িয়ে পড়ত গান। আর দোতারা বাজতো।
"দাদায়   মাছ   ধরে রে
ঐনা  ঝোকা    দিয়া,
ছড়ার পারত   খাড়ে থাকং
খলাই ধরিয়া...দাদা মাছ ধরে রে"
এখনো সব পরিষ্কার দেখতে পান লুৎফর চাচা।
সেই কালখন্ড থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি আজ।
সেই বাথান নেই।
সেই ভয়াবহ তোর্সা আর নেই।
ধনী বাড়ির খোলানে ভোর রাতে আর সার সার এসে দাঁড়ায় না ভইসা গাড়ির বহর।
বাচ্চা মইশালের গলায় তীব্র আকুতির মতন আর ছড়িয়ে পড়ে না গান_
"আজি বাথানে না যান
ও মোর মৈশাল রে"
আমি গল্প শুনি।আমি ছায়াছবির রিলের ভেতর তুমুল ঢুকে পড়তে থাকি।
এভাবে পুরোন রূপকথা নতুনভাবে ফিরে আসতে থাকে।
আমি জীবনের গাঙে গান ভাসাই_
"এপার থাকি না যায় দেখা রে
নদীর ওই পারের কিনার"।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri