চা-ডুবুরি : পর্ব-৬
সুকান্ত নাহা
^^^^^^^^^^^^
সুধাময়: স্মৃতি বিস্মৃতির টানাপোড়েন
-'কেমন আছেন? ঘুম হচ্ছে এখন রাতে ?' ডাঃ সমাজদারের কথায় বাধ্য ছেলের মতো ঘাড় নাড়েন
সুধাময়।
সুধাময়ের হাতে বি. পি মেশিনের স্ট্র্যাপটা জড়াতে জড়াতে ডাক্তারবাবু
সুবর্ণকে দেখিয়ে ফের প্রশ্ন করেন, 'এ আপনার কে হয়? চেনেন একে? '
প্রশ্ন শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ার ভাব করেন সুধাময় ,'সে-কি,চিনব না কেন!ও আমার ছেলে। '
-' নাম কী, ছেলের? '
ঝপ
করে গুটিয়ে যান সুধাময়। কিছুটা অপ্রতিভ দেখায় । মাথাটা ঝুঁকে পড়েছে
সামনে। চোখ বন্ধ। কপালে অস্বস্তির ভাঁজ। যেন আপ্রাণ হাতড়ে চলেছেন
উত্তরটা।
রুটিন ব্লাড চেক- আপ এর রিপোর্টটায় চোখ বুলিয়ে নিয়ে ডাক্তারবাবু বলেন,
'
সুগার একটু বাড়লেও আগের ওষুধগুলোই চলবে।এরপর ইউরিয়া-ক্রিয়েটেনিন
টেস্টটা করিয়ে মাসখানেক বাদে আসবেন। ওষুধের সাথে রোজ একটা করে মুসাম্বি
জাতীয় ফল খাওয়ালে পটাসিয়াম লেভেল টা অন্তত বাড়বে। । "
প্রেসক্রিপশনটা
এগিয়ে দিতেই সেটা পকেটে রেখে সুবর্ণ বলে, 'আপনার সাথে একটু কথা আছে ।
উনাকে বাইরে বসিয়ে এক্ষুণি আসছি। চলো বাবা। বাবা...!'
-'অ্যাঁ....' , ঘোর ভেঙ্গে যেন জেগে ওঠেন সুধাময়।
-'যাবে
না? চলো ওঠো! ', হাত ধরতেই সুধাময় উঠে দাঁড়ান। ধরে-ধরে সুবর্ণ বাবাকে
ফার্মেসির বাইরে বেঞ্চে বসিয়ে কাউন্টারের ভদ্রলোককে অনুরোধ করে, 'একটু
দেখবেন প্লিজ। আমি কয়েকটা জরুরি কথা বলে আসি ডাক্তার বাবুর সাথে। '
ইতিমধ্যে
একজন পেশেন্ট ঢুকে পড়েছে ভেতরে। চেম্বারের বন্ধ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে
দূর থেকে সুধাময়কে লক্ষ্য করে সুবর্ণ। শূণ্য চোখে চারপাশটা দেখছেন।
খুঁটিয়ে জরিপ করে চলেছেন পথচলতি মানুষজনকে। সুগার বাড়ায় হঠাৎ করে শরীরের
ভাঙনটা যেন বড্ড চোখে পড়ছে। ফুলহাতা জামাটা শরীর ছেড়ে দিয়েছে। দুধসাদা
পাতলা চুলের নিচে শীর্ণ মাথাটার ভেতর চিন্তাশক্তি, মেধা, স্মৃতি সব যেন
দিনকে দিনকে জট পাকিয়ে যাচ্ছে। নিজেকে হারিয়ে সুধাময় এখন খোঁজেন অন্য এক
সুধাময়কে। চারপাশের প্রতিবেশ, মানুষ, প্রিয়জন সব তার কাছে এখন ধোঁয়াটে
ঠেকে। কাছের মানুষের নাম ভুলে গেলে এখন ভীষণ অসহায় বোধ করেন। তখন আঁকড়ে
ধরেন একটিমাত্র প্রিয়নাম। বাঁশের অবলম্বন আঁকড়ে ধরে যেভাবে লতানো বিরুৎ
আপ্রাণ মাথা তোলার চেষ্টা করে, সেভাবে জড়িয়ে ধরেন দুটি অক্ষর, তূর্য।
কারণে অকারণে নাতির নাম ধরে প্রাণপণে ডেকে ডেকে যেন ভেসে থাকার চেষ্টা করেন
স্মৃতির সমুদ্রে। সুধাময়ের গায়ের গন্ধ পেলে যে ছোট্ট রক্তের স্পন্দন
চঞ্চল হয়ে উঠতো, বুকের নিবিড় উষ্ণতায় মুখ গুঁজে যে ঘুমিয়ে পড়ত নানান
গল্প শুনতে শুনতে সেই স্পন্দনের ছোঁয়াই স্মৃতির তারকে যেন ঠিকঠাক বাজায়।
দীর্ঘক্ষণ চোখের আড়াল হলেই চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করেন সুধাময়। বাইরে
বেরোনোর আগে তাই পইপই করে দাদুকে বুঝিয়ে যেতে হয় তূর্যকে।
দরজা
খুলে পেশেন্ট বের হতেই সুবর্ণ ভেতরে ঢোকে। ডাক্তারবাবুকে একা পেয়ে অনেক
প্রশ্ন যেন আগল ঠেলে বেরিয়ে আসতে চায়। সামলে নিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু
প্রশ্ন করে সুবর্ণ, ' বাবা তো মানসিক দিক দিয়ে খুব শক্ত ছিলেন
ডাক্তারবাবু। হঠাৎ এই ডিমেনশিয়াটা কেন এত বাড়াবাড়ি আকার ধারণ করল ? '
-'
আপনার কাছে মনে হচ্ছে হঠাৎ। কিন্তু যেহেতু কাছে থাকেন না তাই হয়ত লক্ষ্যও
করেননি, উনি কিন্তু দীর্ঘ দিন যাবৎ একটু একটু করে ভুলে যাচ্ছিলেন অনেক
কিছুই। লাস্ট ভিজিটে আপনার মিসেসের কাছে উনার ডিটেল হিস্ট্রিটা জেনেছি,তাই
বললাম।"
কথাটা শুনে একটু যেন ধাক্কা খায় সুবর্ণ। তার
মানে তূর্ণা বাবাকে এর মধ্যে চেক আপ করিয়ে নিয়ে গেছে! জানায়নি তো! না
জানানোর কারণটা কী? জানালে সে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকবে বাগানে, আসতে চাইবে
না, এই ভেবে? প্রেসক্রিপশনটা খুলে আড়চোখে আগের তারিখটা একঝলক দেখে নেয়
সুবর্ণ। আশ্চর্য, আসার আগে চোখ বোলালেও চোখে পড়ে নি তো! নিজের উদাসীনতার
লজ্জা তূর্ণার ওপর চাপা রাগে পর্যবসিত হচ্ছিল সুবর্ণর। এতটা
দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাবে তূর্ণা তাকে!
"আপনার
মা মারা যাওয়ার পর ডিপ্রেশনটা আরো বেড়েছে। তার ওপর গতবছর যেবার
নার্সিংহোমে ভর্তি করেছিলেন সেসময় উনার ''হিক-আপ" এর একটা প্রব্লেম
হয়েছিল। আপনার মিসেস বলছিলেন তখন আপনাদের বাগানের ডাক্তার বোধহয় একটা
সিডাক্টিভ ইনজেকশন করেছিলেন.... তাই তো?'
-' হ্যাঁ, ঠিক তাই... '
-' সেই ওষুধ পুশ করার পর উনার নার্ভ সেটা নিতে পারেননি, উনি অসংলগ্ন আচরণ শুরু করেছিলেন, ঠিক কি না?
সুবর্ণ
মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতে ভুলে বিস্মিত হচ্ছিল ক্রমশ, তূর্ণা কত খুঁটিনাটি
বিষয় জানিয়েছে ভেবে। সে নিজেও হয়ত এতসব জানাতে কুণ্ঠা বোধ করতো।
-
'তা ছাড়া উনি ফুটবল খেলতেন।অনেক ক্ষেত্রে এমন হয় যে ফুটবলে হেড করতে
গিয়ে ইন্টারনাল হেড ইনজুরি হলো, যা সেসময় প্রকাশ পেলো না। পরবর্তীকালে তা
থেকেও নানান উপসর্গ দেখা দেয়। '
-' এ ক্রাইসিস থেকে কী রিকভারড হওয়ার কোনও চান্স নেই ? '
-'থাকবে
না কেন? তবে তার জন্য উনার চাই প্রপার ট্রিটমেন্ট, ঠিক সময়ে খাওয়া
দাওয়া আর বাড়িতে একটা কনজেনিয়াল পরিবেশ, যাতে উনি সহজভাবে নিজের সমস্যা
গুলো মেলে ধরতে পারেন। '
বাকি
সব কিছু সম্ভব হলেও টুয়েন্টি-ফোর- ইন্টু -সেভেন সুধাময় কে অ্যাটেন্ড
করার মত কেউ নেই বাড়িতে। তূর্যর পড়াশোনা আছে। তূর্ণার পক্ষে সবদিক সামলে
সুধাময়ের কাছে বসে থাকা কার্যত অসম্ভব। সুবর্ণকে চিন্তিত দেখে ডাঃ সমাজদার
আস্বস্ত করেন,
-' চিন্তা করবেন না। আসলে বয়সটা
একটা ফ্যাক্টর। এইট্টি ফাইভ রানিং। সেই হিসেবে জেনারেল হেলথ উনার বেশ ভাল।
সুগার লেভেলটাও খুব বেশি তাও নয়। আর ডিমেনশিয়াটা মারাত্মক কোনও রোগ নয়।
শুধু একটু ওয়াচ রাখাটা জরুরি। টাচে থাকুন, তেমন বুঝলে আমি নিশ্চয়ই কোনো
নিউরোলজিস্টকে রেফার করব ', পরবর্তী পেশেন্টের জন্য ডাঃ সমাজদার কলিংবেল টা
টিপতেই সুবর্ণ উঠে পড়ে।
ই-রিক্সায়
চেপে বাড়ি ফেরার সময় সুবর্ণর গা ঘেঁষে বসেছিল সুধাময়। শরত এসে গেছে।
সন্ধে নামতেই বাতাসে হিমেল ছোঁয়াটুকু বেশ অনুভূত হয়। ডান হাতটা পিঠে
রাখতেই মুখ ফেরান সুধাময়,
-' ঠান্ডা লাগছে বাবা? '
মাথা
নেড়ে অসম্মতি জানান সুধাময়। তারপর মুখ ফিরিয়ে নেন অন্ধকার নামতে থাকা
রাস্তার দিকে। ধীর গতিতে ই-রিক্সাটা এগিয়ে চলেছে। এবড়ো খেবড়ো রাস্তায়
ঝাঁকুনি দিচ্ছে বেশ। সুধাময়ের ডান কাঁধটা শক্ত করে ধরে আরো কাছে আসে
সুবর্ণ। রেল হাসপাতালের কাছাকাছি এসে রিকসাটা যখন বাঁক নিচ্ছে, রাস্তার
ধারে চায়ের স্টলটা চোখে পড়ে সুবর্ণর। ধোঁয়া ওঠা দুধ-চা ওপর থেকে বেশ
তরিবত করে গ্লাসে ঢালছে দোকানি। দেখে চা-তেষ্টা পেলেও একবার মনে হয়
বাড়ি তো আর খুব দূরে নয়। ফিরে গিয়ে তূর্ণার হাতের চা পাওয়া যেত। কিন্তু
সুবর্ণর কেন যেন মনে হয় আরেকটু সময় কাটানো দরকার বাবার সাথে। গতকাল রাতে
বাড়ি ঢোকার পর নিজে যেচে কথা না বললে সুধাময় একটিও কথা বলেননি। অথচ
তূর্যকে ডেকে চলেছেন অনর্গল। তূর্ণার নাম ভুলে 'মা-মা' করে চলেছেন থেকে
থেকে। কিন্তু কাছে এলেও একটি বার সুবর্ণকে নাম ধরে ডাকেননি। মাস কয়েক আগে
এলেও ডেকে জিজ্ঞেস করেছেন, 'কেমন আছ? কবে ফিরবে? ' ইত্যাদি। বেশকিছু কাল
যাবৎ পরিবর্তনটা লক্ষ্য করেছে সুবর্ণ। আগে 'তুই' করে সম্বোধন করলেও এখন
'তুমি' বলেন সুধাময়। নামটাও এড়িয়ে যাচ্ছেন বেশ কিছুদিন যাবৎ।
-'চা খাবে বাবা? '
সুধাময়
মুখ ফেরান। হাঁ বা না কিছুই বলেন না। রিক্সা থামিয়ে চালক ছেলেটিকে সুবর্ণ
অনুরোধ করে তিনটে চা আনতে। একটি চিনি ছাড়া। ছেলেটি চলে যেতেই হঠাৎ
সুবর্ণর ডান হাতটা চেপে ধরেন সুধাময়,' আমি ভীষণ লজ্জিত...! '
-' কেন, কীসের লজ্জা বাবা? '
-' না, মা-নে, তোমার নামটা... কিছুতেই ঠিক মনে পড়ল না তখন...। '
-' তাতে কী হয়েছে। তখন মনে পড়েনি তো কী হয়েছে... এখন তো পড়ল। তোমার সোনাকে কী তুমি ভুলতে পার বাবা? '
ঘুরিয়ে
নামটা বলে দিতেই মুখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে সুধাময়ের, 'হ্যাঁ, হ্যাঁ...
হ্যাঁ.. আসলে কী জানো, কখনো সব যেন কীরকম গোলমাল হয়ে যায়। তুমি তো আমার
সোনা... সুবর্ণময় মিত্র। আমার ছেলে। তুমি কলকাতায় থাক। কবে যাবে যেন? '
সুবর্ণর
চোখের সামনে আলোটা জ্বলে উঠেই ঝপ করে নিভে যায়। ততক্ষণে চা চলে আসে।
চায়ের গ্লাসটা সযত্নে সুধাময়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে সুবর্ণ বলে, 'নাও চা খাও
বাবা'।
দু'হাতে গ্লাসটা আঁকড়ে আয়েস করে সশব্দে
চায়ে চুমুক দেন সুধাময়। ভঙ্গিটা বড় বিসদৃশ লাগে সুবর্ণর। যে মানুষ
বাইরের খাবার পছন্দ করতেন না, রাস্তার ধারে চা খাওয়া দূর অস্ত কখনও বড়
রেস্তোরাঁয় যেতে চাইতেন না তিনি আজ নির্দ্বিধায় রাস্তার ধারে রিক্সায় বসে
চা খাচ্ছেন। মনে পড়ে বিয়ের পর প্রথম বছর পুজোয় সুধাময়কে না জানিয়ে
সুবর্ণ চারজনের জন্য টেবিল বুক করেছিল রেস্তোরাঁয়। খরচার দিকটা ভেবে মা
নিমরাজি হলেও পরে মেনে নিয়েছিলেন। সুধাময়কে সারপ্রাইজ দেওয়া যাবে ভেবে
বলা হয়নি। পুজো দেখে রেস্তোরাঁয় ঢোকার মুখে হঠাৎ বেঁকে বসেন সুধাময়, '
এসবের মানে কী। এভাবে গুচ্ছের টাকা খরচ করে বাইরে খাওয়ার কী মানে হয়?
তোদের কী খাওয়ার ইচ্ছে বললেই পারতিস। এনে দিতাম। তোর মা রান্না করে দিত।'
কিছুতেই খাবেন না। শেষে তূর্ণার অনুরোধ না ফেলতে পেরে যেন ছুঁচো গিলেছিলেন
সেদিন সুধাময়।
রাস্তার ধারে বাবাকে চা খাওয়াতে মন
না চাইলেও কেন যেন আরেকটু সময় বাবার সাথে একা থাকতে মন চাইছিল
সুবর্ণর।ছোটবেলা বাবা রোমশ বুকের ভেতর জড়িয়ে ধরলে যে গন্ধটা পেত বহুকাল
বাদে খুব কাছে এসে বসায় আবার সেই চেনা গন্ধটা এসে নাকে লাগছিল।
চা শেষ হতেই রিক্সাটা চলতে থাকে। আন্ডারপাস পেরোতেই সুবর্ণ জিজ্ঞেস করে সুধাময়কে, ' বাবা, নীলপাহাড়ির কথা তোমার মনে পড়ে? '
-' কই না তো? '
-'সে-কি, তুমি এত বছর নীলপাহাড়িতে কাটিয়ে এলে,
সেখানে চাকরি করতে, মনে পড়ে না সেকথা? '
সুধাময় যেন আতান্তরে পড়ে হাবুডুবু খেতে থাকেন। চোখ দুটো ফের বন্ধ হয়ে আসে। অস্বস্তির ভাঁজ ফুটে ওঠে কপালে।
' স্বপ্নপুরের কথা মনে পড়ে না? '
-'
হ্যাঁ, হ্যাঁ-হ্যাঁ.. স্বপ্নপুর চা-বাগান।' মুখটা আলোয় যেন উদ্ভাসিত হয়ে
ওঠে সুধাময়ের, ' হ্যাঁ,ওখানে থাকতাম। কী সুন্দর জায়গা।
আহা--স্বপ্নপুর,স্বপ্নপুর...কী সুন্দর নাম! ' বলতে বলতে ফের বিস্মৃতির
চোরাপাঁকে ডুবে যান সুধাময়।
-' হ্যাঁ, সে তো বহুকাল
আগের ঘটনা। স্বপ্নপুর লক-আউট হয়ে গেল বাহাত্তর সালে। আমরা চলে এলাম
নীলপাহাড়িতে। তুমি নীলপাহাড়ির স্কুলে জয়েন করলে। দিদির বিয়ে হল
নীলপাহাড়ি থেকে। মনে পড়ে না তোমার? '
-' হ্যাঁ,
নী-ল-পা-হা-ড়ি...'কেটে কেটে উচ্চারণ করে হারানো নামটা খুঁজতে থাকেন
সুধাময়। বাড়ির কাছে এসে রিক্সাটা থামলে সুবর্ণ জিজ্ঞেস করে,'এই বাড়িটা
চেনো? '
একমনে খানিক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে আদেশের সাথে বলেন, 'নামো , বাড়ি এসে গেছে তো। '
হাসি পেলেও নিজেকে সংযত করে সুধাময়ের হাত ধরে সুবর্ণ। হাতে ভর করে মাটিতে পা রাখেন সুধাময়।
সকালে
শরতের রোদটা ব্যালকনিতে এসে পড়ছিল। পুজো এবারে দেরিতে। তবু রোদের তেজ
কমছে না কিছুতেই। ব্যালকনিতে না দিয়ে কিছুটা ভেতরে চেয়ার পেতে দিয়েছিল
তূর্ণা। সেখানে বসে মুড়ি চিবোচ্ছিলেন সুধাময়। সামনে চা। হকার ছেলেটা কাগজ
ছুঁড়ে দিয়ে গেছে। সামনে এগিয়ে দিলেও এখন আর ওটা ছুঁয়ে দেখেন না তিনি।
কাগজ পড়তে ইচ্ছে করে না। শুধু কাগজ কেন, টিভির সামনেও বসেন না আর ইদানীং।
শুধু ব্যালকনিতে বসে আকাশ দেখেন। গাছে পাখি উড়ে এলে বিস্কুট ছুঁড়ে দেন।
তাদের সাথে কথা বলেন। কাউকে দীর্ঘক্ষণ কাছে না পেলেন একটানা ডেকে চলেন।
নয়ত এককোনে পড়ে থাকা ইজিচেয়ারে শরীর ছেড়ে ডুবে যান গভীর ঘুমে। এখন
অবশ্য বাধ্য ছেলের মত মুড়ি চিবোতে চিবোতে প্রকৃতি দেখছেন সুধাময়।
তূর্য
সকাল সকাল সাইকেল টা নিয়ে বেরিয়ে গেছে কোচিং সেন্টারে। নিচে সদর গেটটা
বন্ধ। গেটের সামনে গ্যারেজ ঘরের দরজায় পুরনো কার্পেটটার ওপর কুন্ডলী
পাকিয়ে বসে আছে চেনবাঁধা টমি। তূর্যর আদরের ল্যাব্রাডর। টমির আগে ছিল
পঞ্চু। নিখাদ দেশি। তূর্যর তখন ক্লাস সিক্স। শীতের সকালে দাদুর সাথে
বেড়াতে বেরিয়ে দেখে রাস্তার ধারে পড়ে কুঁইকুঁই করছে একটি মা হারা
কুকুরছানা। তুলে এনে শুরু হল তার পরিচর্যা। সুধাময় খুব একটি কুকুরপ্রেমী
না হলেও তূর্ণা অসম্ভব পশুপ্রেমী। মা ছেলে মিলে বড় করে তুলেছিল ওকে। এক
কুয়াশাঢাকা শীতের বিকেলে দৌড়ে রাস্তায় পেরোতে গিয়ে মোটরবাইকের ধাক্কায়
পঞ্চুর অপমৃত্যু হয়। ওর অকাল বিয়োগে ভীষণ ভেঙে পড়েছিল মা-ছেলে দুজনেই।
অনেকদিন কুকুর ছিল না বাড়িতে। শেষে হাতখরচ বাঁচিয়ে কাউকে না জানিয়ে
নিজেই এক বন্ধুর দাদার দোকান থেকে কিনে এনেছিল তূর্য টমিকে। দেখতে দেখতে
গায়ে গতরে বেশ বেড়ে উঠেছে টমি।
কুকুরে আসক্তি বা
বিরাগ কোনটাই তীব্র নয় সুবর্ণর। টমি হয়ত সেটা বোঝে। তাই সুবর্ণ বাড়ি এলে
বিশেষ উচ্ছাস প্রকাশ করে না কোনদিন। ভাবটা এমন, 'ঐ বাবু এলেন...দু'দিনের
মেহমান। এলেন আবার চলেও যাবেন। আপনার আর কী? ' সুধাময়ের প্রতি বরং যথেষ্ট
খেয়াল রাখে টমি। যতক্ষণ না মর্নিংওয়াক সেরে বাড়ি ফিরছেন, দরজার দিকে
চেয়ে বসে থাকবে। কাউকে না বলে বেরোতে চাইলে ঘেউ ঘেউ করে জানান দেবে।
চায়ের
কাপ ধরিয়ে দিয়ে তূর্ণা স্নানে গেছে। ফিরে এসে পুজো সেরে জলখাবার তৈরি
করবে। জলখাবার সেরে সুবর্ণকে বাজারে বেরোতে হবে। তার আগে বাবার পাশে বসে
একটু কথা বলতে ইচ্ছে হয় সুবর্ণর। আজ সুধাময়কে দেখে বেশ চনমনে মনে হচ্ছে।
সেটা সুবর্ণ বাড়ি আসায় না অন্য কারণে তা বোঝা যাচ্ছে না। । আসলে কখন যে
তাঁর মনের আকাশে মেঘ জমে, আর কখন ঝলমলে রোদে ভরে যায় বোঝা দুষ্কর।
প্রসন্নচিত্তে দূরে চেয়ে ছিলেন সুধাময়।
-' শরীর কেমন বাবা? ' চেয়ার টেনে কাছে বসে সুবর্ণ।
পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকান সুধাময় ছেলের দিকে। মুখে অদ্ভুত একটা হাসি, 'কাল রাতে তোমার মা কে দেখলাম। '
বুকের ভেতরে যেন আচমকা ঢেউ আছড়ালো সুবর্ণর। কতদিন পর মায়ের কথা শোনা গেল সুধাময়ের মুখে।
' তাই নাকি! কী দেখলে... '
কিছুটা
সময় নিয়ে সুধাময় বলে, 'তোমার মা এলো। ঠিক এই জায়গাটায় তুমি যেখানে
বসে, সেখানে বসে আমায় বললো, '' নীলপাহাড়ির কথা তুমি কী একেবারে ভুলে
গেলে? তুমি কি গো? মাথাটা সত্যিই তোমার একেবারে গেছে...।'' সত্যি কী আমার
মাথা খারাপ হয়ে গেছে? নাহলে আমি ভুলে গেলাম কি করে বলতো? তুমি আমাকে একবার
নিয়ে যেতে পারো ওখানে। ওই যে নীলপাহাড়ি নামের জায়গাটায়। ও, তোমার তো
আবার ছুটি নেই, কবে যাচ্ছ যেন কলকাতায়? '
রঙীন
বেলুনটা সবে উড়তে শুরু করেছিল। আচমকা ফুটো হয়ে হাওয়া বেরিয়ে গিয়ে কথা
সরছিল না সুবর্ণর মুখ থেকে। খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে বাবার গায়ে হাত বুলিয়ে
দিতে দিতে বলে,' নিয়ে যাব।নিশ্চয়ই নিয়ে যাব বাবা তোমাকে নীলপাহাড়িতে। '
বলতে বলতে চোখের তারায় কুয়াশা জমে, গলার কাছে পাথুরে ভার স্বর চেপে ধরে।
উঠে পরে সুবর্ণ।
বিকেল
নাগাদ একটু তূর্ণাকে নিয়ে শপিং এ বেরোতে হয়েছিল। এই দিনগুলোতে পুরনো
স্কুটারটা বড় কাজে আসে । ইচ্ছে করেই ওটা এখানে রেখে গেছে সুবর্ণ।জানে ওতে
তূর্যর হাত পড়বে না কোনদিন। এতটাই আউট-ডেটেট যে ওটা নিয়ে বেরোলেই
ফ্রেন্ড সার্কেলে ব্যাপক আওয়াজ খেতে হবে ওকে।যে কারনে তূর্ণাও নিশ্চিন্ত।
ছেলে সাইকেল চালাবে তবু ভুলেও ওটায় হাত দেবে না। একদিন শুধু বের করে কিক
মারতে মারতে প্রাণান্ত হয়ে সেই যে হাল ছেড়েছিল আর ওটা ধরেনি।
সপ্তাহান্তে
বাড়ি এলে ঝেড়ে-ঝুড়ে গ্যারাজ থেকে ওটা বের করে তূর্ণাকে নিয়ে বেরোয়
সুবর্ণ। পুরনো হলেও সে টিপটপ রাখে গাড়িটা। নতুন মোটরবাইক যেটা
নীলপাহাড়িতে নিজের কাছে রাখা ওটাও ছ'বছর হতে চলল । দেখে কে বলবে? পুজো
আসতে আর দেরি নেই। আগাম কিছু কেনাকাটা করে রাখতে পারলে বোনাসের টাকায় চাপ
পড়ে না। মাসের খরচ থেকে তাই একটু একটু করে সারা বছর ধরে জমায় তূর্ণা।
বোনাসের টাকাটা যতটা পারে ফিক্সড করে রাখে তূর্যর ভবিষ্যতের কথা ভেবে।
সুধাময় এই বাড়িটা করে রেখেছেন বলে ভবিষ্যতে মাথাগোঁজার চিন্তাটুকু নেই।
নইলে চা-বাগানে চাকরি করে জমি কিনে বাড়ি করা এ বাজারে অসম্ভব ছিল। সুধাময়
তাঁর পেনশনের টাকায় নিজের ওষুধের খরচা চালান। প্রয়োজনে ছেলেকেও কিছু
দিতেন। মেয়েকে পাঠাতেন। তখন হাত পেতে নিতে কখনও সংকোচ হত না সুবর্ণর। এখন
নিজে ব্যাংকে যেতে পারেন না। চেকবই, এটিএম সব সুবর্ণর কাছে। নিজে হাতে
সেখান থেকে বাড়তি কিছু খরচ করতে ভীষণ কুণ্ঠা বোধ হয়। সুতপার বর সরকারী
চাকুরে। সব দিক দিয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত। তবু মুখে কিছু না বললেও সেও তো
সুধাময়ের সন্তান। বাপের সম্পত্তিতে তারও যে সমান অধিকার। ডিমেনশিয়ায়
আক্রান্ত হবার পর থেকে তাই প্রতিমাসে সুধাময়ের অ্যাকাউন্ট থেকে যতটা কম
সম্ভব টাকা তোলে সুবর্ণ। হঠাৎ করে বাবার বড়সড় অসুখ করলে তখন কী হবে!
জমানো অর্থ বলতে কিছুই তো নেই তেমন। সামান্য বেতনের চা-কর্মচারীদের চাল চলন
দেখে আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধব কেউই বোঝেনা যে আর্থিক দিক দিয়ে কতটা
নিরাপত্তাহীন তারা।
সুবর্ণ ভেবেছিল শহর ছাড়িয়ে
উত্তরের ঝাঁ চকচকে শপিং মলটায় যাবে। ওখানে গেলে নিজেকে বেশ একটা কেউকেটা
মনে হয়। ছোট থেকে এই শহরে মা'র হাত ধরে হয় কালিবাড়ি রোড, নয়তো মহাবীর
স্থান, বড়জোর বিধান মার্কেটে বাজার করতে যাওয়া, এই তো ছিল। হকার্স কর্ণার
তো অনেক পরে হলো। ঘুরে ঘুরে ভীড় ঠেলে মা কিনতেন ছিট কাপড়। সেই কাপড়
দিয়ে নিজে হাতে সেলাই মেশিনে বানিয়ে দিতেন জামা। জুতো কেনার বাঁধা দোকান
ছিল বাটা বা পাদুকা। বড়জোর আলুপট্টির জুতোর দোকান। ভীড় ঠেলে, ঘেমেনেয়ে
অস্থির হয়ে ঘুরে ঘুরে বাজার করতো মা। কোথায় একটু সস্তায় পাওয়া যায়।
সুধাময়ের বেতন তখন বাগান থেকে পাওয়া অনারারিয়ামের একশো পাঁচ, আর স্কুল
বোর্ডের সামান্য বেতন। বোনাস জুটত না। সরকারি অনুদান সাকুল্যে পঁচাত্তর।
সেই টাকায় ছেলে, মেয়ে, স্বামী, আত্মীয়-স্বজন, মালি, সবার জন্য কেনার পর
যা থাকতো তাই দিয়ে মা খুঁজতেন কালিবাড়ি রোডের জয়গুরু বস্ত্রালয়, কিংবা
এস. জি বস্ত্রবিপনীর ছাপা কিংবা তাঁত। সেসময় পাড়ায় পাড়ায়
শাড়িওয়ালিরা কোমরে জর্জেট, অরগ্যান্ডি,গাজি সিল্ক ইত্যাকার নানান বিদেশী
চোরাই শাড়ি, গাবার্ডিনের কাপড়, জিনস, বাহারি চপ্পল,ইলেকট্রনিক্স জিনিস
লুকিয়ে চুরিয়ে এনে বিক্রি করতো। পাড়ার কাকিমারা, মাসিমা,বৌদি মহলে সাড়া
পড়ে যেত ওরা এলে। হামলে পড়তেন সবাই সেসব কিনতে। প্রকাশ্যে কাড়াকাড়ি
লেগে যেত শাড়ি নিয়ে। কাড়াকাড়ি থেকে ঝগড়া অবধি গড়াতো এক পরিবারের সাথে
অন্য পরিবারের। সুবর্ণ কখনো দেখেনি মা কে দামি শাড়ির পেছনে লোলুপের মতো
ছুটতে। সামান্য তাঁতের শাড়িতেই সন্তুষ্ট থাকতেন মা। তখন সুবর্ণর তবু মনে
হতো চাকরি পেয়ে মাকে দামি একটা শাড়ি উপহার দেবার। দিয়েওছিল সুবর্ণ
প্রথমবার বোনাসের টাকায়। সেই শাড়ি পেয়ে চোখে জল ধরে রাখতে পারেনি মা।
এখন
তাই ওদিকটায় গেলেই মন খারাপ হয়। ওই চত্বরে বাজার করতে গেলে পুরনো বিষাদ
মাথা চাড়া দেয়। মনে হয় ঝাঁ চকচকে শপিং মলে ঢুকে ইচ্ছে মতো বাজার করতে।
দুজনে মিলে বাজার করে কফি শপে বসতে। কাপুচিনোয় চুমুক দিতে দিতে গল্প করতে।
কিন্তু মা যে কখন অজান্তে ঢুকে বসে গেছে তূর্ণার ভেতরে কে জানে। একটু হাত
খুলে খরচা করতে গেলেই রাশ টেনে ধরবে। খুঁজে খুঁজে এক্সক্লুসিভ জিনিস যেটা
বার করবে সেটা হতে হবে আর দশজনের থেকে আলাদা। অথচ দামে কম। সেই ঘুরে ঘুরে
দশটা দোকান খুঁজে জিনিস কিনবে। একটু হাত খুলতে গেলেই বলবে, ' টাকাগুলো
আমায় দাও। বাজে খরচ না করে ওটা রাখলে কাজে দেবে।'
রাত
আটটা নাগাদ সামান্য কিছু কেনাকাটা সেরে বাড়ি ফেরা হলো । নিজের স্টাডিতে
পড়াশুনা করছিল তূর্য। পেছনে ভিভানটায় গায়ে চাদর জড়িয়ে চোখ বুজে
দুলছিলেন সুধাময়। দেখে মনে হচ্ছিল তিনিও পড়ছেন। ঘরে ঢুকতেই তূর্য তাকায়।
বলে, 'আজ একটা দারুণ ব্যাপার ঘটেছে বাবা। '
-'কী ঘটনা? ' বলে একটা চেয়ার টেনে নেয় সুবর্ণ।
-' দাদু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা বড় কবিতা গড়গড় করে রিসাইট করে শুনিয়েছে আমাকে। আমি তো অবাক '।
ঘরে কথাবার্তা শুনে চোখ মেলে তাকান সুধাময়। থেমে যায় দোলা। চোখ বড়বড় করে দুজনকে দেখতে থাকেন।
-'কী বাবা? কথাটা সত্যি? কোন্ কবিতা শুনিয়েছ তুমি ওকে? '
হাঁ
করে চেয়ে থাকেন সুধাময়। যেন বোঝার চেষ্টা করেন কী বিষয়ে কথা হচ্ছে। চুপ
থাকতে দেখে তূর্য বলে, ' কী হলো? চুপ করে আছো যে। শোনাও এখন ... তখন তো
খুব স্মার্টলি বলে যাচ্ছিলে, কী যেন...অন্ধকারে বনের ছায়া, সরস্বতীপুরে
.না কি যেন.. কই শোনাও এবার কবিতাটা...বিগ বস্,লেট স্টার্ট... '
-' আঃ, বাবান, তোমাকে না কতদিন বলেছি ও নামে দাদুকে ডাকবে না। ও আবার কি সম্বোধন? '
-'
ওহ্ নো.. দাদু ইজ মাই বেস্ট ফ্রেন্ড। তাই না বিগ... সরি দাদু। ' বলে
তূর্য জড়িয়ে ধরে সুধাময়কে। নাতির আদরের আতিশয্যে সুধাময়ের ফোকলা মুখে
হাসি খেলে যায়।
-শোনাও বাবা। তুমি বোধহয় রবিঠাকুরের 'ব্রাক্ষ্মণ' কবিতাটা শুনিয়েছ ওকে। ওটা তো বেশ বড় কবিতা। কই, শোনাও দেখি আমাদের। '
সুবর্ণর
অনুরোধ এড়াতে পারে না সুধাময়। অদ্ভুত সলজ্জ একটা হাসি দেন নাতির দিকে
তাকিয়ে। তারপর একটু ধাতস্থ হতেই চোখ বন্ধ হয়। ধীরে ধীরে কিছুক্ষণ ঠোঁট
নড়ে। ডিভানের এককোনে নিঃশব্দে এসে বসে পড়ে তূর্ণা। পরিস্কার উচ্চারণে
আবেগ জড়ানো স্বর খেলে যায় সুধাময় গলায়,' অন্ধকারে বনচ্ছায়ে সরস্বতী
তীরে, অস্ত গেছে সন্ধ্যাসূর্য আসিয়াছে ফিরে, নিস্তব্ধ আশ্রম মাঝে
ঋষিপুত্রগণ, মস্তকে সমীধভার করি আহরণ বনান্তর হতে...'। দশ বাই বারো ছোট্ট
ঘরের চার দেয়ালে ছড়িয়ে যেতে থাকে প্রতিটি শব্দের সুচারু উচ্চার। মাথা
নিচু করে স্তব্ধ হয়ে শোনে তূর্ণা। চেয়ারের ব্যাক রেস্টে থুতনি ঠেকিয়ে
ফ্রিজ হয়ে থাকে তূর্য। আর সুবর্ণ ফিরে যায় আশির দশকের কোনো এক সন্ধেয়।
স্কুলের রবীন্দ্র জয়ন্তীর জন্য তাকে শেখাচ্ছেন সুধাময় এই কবিতাটা। দরদ
দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন প্রতিটি প্যারাগ্রাফের অর্থ। অর্থ না বুঝলে কবিতা
পাঠ যে যথার্থ হয় না, কথাটা বাবার কাছেই শেখা। কিন্তু আজ কোনও হিসেব যে
মিলছে না বাবা! এ তুমি কোন তুমি! মনে মনে ভাবতে থাকে সুবর্ণ, এ কি সেই তুমি
যে ভুলে গেছে তার অতীত জীবন, না কি তোমার ভিতর প্রচ্ছন্নে লীন হয়ে আছে
আরেকটি সত্তা। যার স্মৃতিতে আজও কিছু কিছু সংস্কার, কিছু অভ্যাস, কিছু বোধ
অবিস্মৃৃত রয়ে আছে। যা কখনও হারায় না। হারাতে পারে না।