সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
21-July,2023 - Friday ✍️ By- শুক্লা রায় 483

অসুখ/শুক্লা রায়

অসুখ
শুক্লা রায়

বাঁশঝাড়টার নিচে বেশ আরাম। বাড়িতে ওদের ফ্যান নেই। সরকারি বিজলি। তিনটা বাল্ব জ্বলে। বাবার খুব ইচ্ছে ছিল, ছেলে চাকরি পেলে হাফ ওয়াল ঘর দেবে, এল প্যাটার্ন, আর ফ্যান লাগাবে। বোনের শখ একটা ফ্রিজ। সময়ে অসময়ে ঠান্ডা জল খাবে। মা অবশ্য কিছু বলে না, খালি হাসে। ছেলের যত্নটা একটু বেশিই করে। হয়ত সবার স্বপ্নই মিলেমিশে মায়ের স্বপ্ন। সৌরভ দীর্ঘশ্বাসটাকে ঝট করে ছাড়ে না, বুকে চেপে ধরে আস্তে আস্তে যেন গিলে ফেলে, বিড়ির বিষাক্ত ধোঁয়ার মতো। ইংলিশে এম এ করেছে। বি এড করার প্রশ্নই নেই। ওদের এত পয়সা নেই। টিউশন করে। কিন্তু সে আর কতটুকু! সে টাকায় পেটের ভাতটুকু জুটে যায়। আর কী! চাকরি আদৌ হবে বলে এখন আর বিশ্বাস করে না। নেতাদের হাতে পায়ে ধরতে পারেনি বলে কোনোরকম ছোটখাট কাজও জোটাতে পারেনি কোথাও। একা হলেই এসব চিন্তায় সৌরভ আজকাল মগ্ন হয়ে থাকে। তবে আজকে বেশিক্ষণ আত্মমগ্ন থাকা হল না। বাড়ির দিক থেকে বোনের চিল-চিৎকার আর মায়ের কান্নার আওয়াজ ভেসে আসতেই হাতের বিড়িটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে অজানা আশঙ্কায় বাড়ির দিকে ছুটতে থাকে। 
উঠোনের এক কোণে বাবার কোদাল আর ঝুড়িদুটো ফেলে রাখা। দেখেই বুকটা কেঁপে ওঠে। সবাই মিলে ধরাধরি করে বাবাকে কাঁচা বারান্দার মেঝেতে চট আর কাঁথা পেতে শোয়াচ্ছে। পা দিয়ে দরদর করে রক্ত পড়ছে, শরীর প্রায় নুলো করে ছেড়ে দিয়ে ওর বাবা কেমন নিস্তেজ চোখে তাকিয়ে।  সারা শরীরটা বাঁশপাতার মতো কাঁপছে। সৌরভ কথা হারিয়ে ফেলল। নির্বাক তাকিয়ে থাকল। কাটা জায়গাটা ধুয়ে কলপাড়ে দুর্বাঘাস শিলে বেঁটে লাগিয়ে ওর মা কাপড়ের ছেঁড়া পাড় দিয়ে বেঁধে দিল। তবু রক্ত বন্ধ হচ্ছে না। কাপড়ের উপর দিয়ে রক্তে ভিজে উঠছে। বোঝাই যাচ্ছে ক্ষত বেশ গভীর। মায়ের কান্না থামলেও বোন তখনও কেঁদে চলেছে। ওকে চুপচাপ তাকিয়ে থাকতে দেখে ভানু কাকু এগিয়ে এল। কাঁধে হাত দিয়ে আন্তরিক গলায় বলল, চিন্তা করিস না। মাথা ঘুরে হঠাৎ পড়ে গেছে। ঠিক হয়ে যাবে। স্বপন ডাক্তারকে খবর দেওয়া হয়েছে এখনি হয়ত এসে পৌঁছাবে। অনুমান ঠিক। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাইক নিয়ে স্বপন ডাক্তার হাজির। একটু পান খাওয়া মুখের মাতব্বর গোছের চেহারা। জোরে জোরে কথা বলেন। সবার সাথেই খুব খাতির। হাতে একটা ব্রাউন রঙের চামড়ার ব্যাগ সবসময় থাকে। হরেক কিসিমের ট্যাবলেট ছাড়াও নানা ধরণের ইঞ্জেকশনে ভরা। রোগের বিবরণ বুঝে স্যালাইনও ওই ব্যাগের পেটে ঢুকে যায়। এই এলাকায় স্বপন ডাক্তারই একমাত্র ভরসা। জ্বর-জারি, পেটখারাপ, মাথা-ব্যথা থেকে শুরু করে মায় গাইনোকোলজিক্যাল সমস্যারও সমাধান তার কাছে। আগে তো প্রসবকালীন ব্যথা না উঠলে তার চিকিৎসাও এই স্বপন ডাক্তার। জাস্ট একটা ইঞ্জেকশন। প্রসূতির ব্যথা ওঠে, নির্বিঘ্নে প্রসবও হয়ে যায়। আর মহিলাদের প্রিয় স্বপন ডাক্তার অন্য কারণেও। কারো বাড়িতে পুজো আছে, অথচ মাসিক ঋতুস্রাবের তারিখ ওই সময়েই, কিংবা বিয়ে আছে, কনের সেই সময় তারিখ, বৌদিরা ছাড়বে কেন! শুধু কী তাই! কারো স্বামী অনেকদিন পরে বাড়ি ফিরছেন। সে ক্ষেত্রেও তো একই সমস্যা! সুতরাং স্বপন ডাক্তারের ওষুধ খেয়ে পিছাও তারিখ। নিশ্চিন্ত! ডাক্তারির সব বিভাগেই তিনি সমান পারদর্শি। লোকে অবশ্য তাকে মানে খুব। রুগী ভালো হবে না বুঝলে হাত তুলে নেয় না, কোন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে সব ব্যবস্থা করে দেয়। গ্রামে এরকম  স্বপন ডাক্তারের মতো একজন ডাক্তার থাকলে আর কী চাই।
ডাক্তারকে দেখে সবাই ঘিরে ধরল। ভালো করে প্রশ্ন করার আগেই বিষয়টা জানা গেল, একশ দিনের কাজে মাটি কাটছিল স্বামী-স্ত্রী মিলে। হঠাৎ মাথা ঘুরে যায়। হাতের কোদাল ছিটকে পায়ে এসে লেগেছে। ওষুধ ইঞ্জেকশন দিয়ে ডাক্তার এবার সৌরভের দিকে তাকায়। টিটেনাসও একটা দিলাম বাবা রে। আর ব্যথার ইঞ্জেকশন। এখন ঘুমাবে। ঘুমাক। বিকালে আসব। প্রেসারটা বেশি আছে। ওই জন্যই মাথা ঘুরেছে। সৌরভ পকেটে হাত দেয়। ফিজ বলে কিছু নেই। ওষুধের দামটুকু দিলেই হল। সবার কাছেই তাই নেন। বাইক স্টার্ট দিতে দিতে আরো একবার সবার সাথে নানা বিষয়ে কথা বলে স্বপন ডাক্তার বেরিয়ে যায়। সামনে আর এক পাড়ায় যাবে এখন, জ্বরের রুগী আছে একটা, খবর নিয়ে আসবে কেমন আছে।
ডাক্তার চলে যেতেই উপস্থিত ভিড়টাও ধীরে ধীরে কমতে থাকে। আবার কাজে যোগ দেবে সবাই। সৌরভের মা লাল চোখদুটো মুছে, নাকটা একটু ঝেড়ে, গলাটা পরিস্কার করে মেয়েকে নির্দেশ দেয় বাবার দিকে খেয়াল রাখার। তারপর আস্তে আস্তে ঝুড়িদুটো তুলে নিয়ে বেরোতে বেরোতে বলে, আমি যাই, কারো সাথে সঙ্গী করে যদি বাকি বেলার কাজটা করতে পারি তাহলে পুরো টাকাটাই পাওয়া যাবে। 
শূন্য উঠোনটায় একদিকে কোদালটা কাৎ হয়ে পড়ে আছে। যেন ওর বাবার মতোই। একটু ইতস্তত করে সৌরভ ওটা হাতে তুলে নেয়।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri