সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
14-July,2023 - Friday ✍️ By- শুক্লা রায় 465

সরেন পাইকার/শুক্লা রায়

সরেন পাইকার
শুক্লা রায়
---------------------

সরেন পাইকারকে চেনে না এমন বান্দা ভূভারতে নেই। মানে ভূভারতে থাকলেও অন্তত এই তল্লাটে নেই। লোকটা এমনিতে ভালোই, তবে যা একটু ধাপ্পাবাজ। কিন্তু মুখের হাসিটি সর্বদা প্রাণখোলা। সেজন্য অচেনা লোক চট করে বিশ্বাসও করে ফেলে। এই যেমন বিমল মার্চেন্ট! কয় দিনের পরিচয়! একেবারে উঠতে বসতে সরেন। সরেনের পাইকারির অবশ্য কোনো সীমারেখা নেই। ধানের সময় ধান, পাটের সময় পাট। তবে আলুর সময় আলুর পাইকার হতে পারে না। এখানে আবার একটু ট্যাঁকের জোর লাগে কিনা। গাছ পেলে গাছেরও পাইকারিতে আছে সরেন। এই করেই কিছুদিন হল বিমল মার্চেন্টের সঙ্গে খুব খাতির। বিমল হল এ তল্লাটের সবচেয়ে বড় কাঠের মার্চেন্ট। এক ডাকে মার্চেন্ট বলতে ওই বিমলকেই বোঝায়। অবশেষে সব ধান্দা বাদ দিয়ে এই বিমল মার্চেন্টের হয়েই গাছ কিনতে লাগল সরেন। মার্চেন্টের টাকাতেই কেনে, ওর আর অত পুঁজি কোথায়! গাছ ঠিক করে মার্চেন্টের কাছ থেকে আগাম নিয়ে দাম মেটায়। মাঝে দু'চারটাকা শুধু দালালি খায়। এটুকখানিই ওর লাভ। নইলে আবার ওর সংসার চলবে কী করে! এই করেই চলছিল। লোকে ধীরে ধীরে সরেনকে সম্মান দিয়ে ছোট মার্চেন্ট বলে ডাকতে শুরু করল। বিমলও বেশ খাতির করে লোকটাকে। লোকটা গাছ-টাছের বেশ ভালোই খবর রাখে। শুধু খবর রাখা নয়, কোনো গাছ একবার পছন্দ হলে গেরস্ত বেচতে না চাইলেও জোর করে রাজী করিয়েই ছাড়বে। একবারের জায়গায় দশবার গিয়ে টাকার লোভ দেখাবে। গ্রামের ছোট গেরস্ত, একটু এদিক-ওদিক ঠিক করে তাকালেই ফুটো চাল নজরে আসে। ওগুলোই হল ওর কথার মূলধন। 'তোর তো গোয়ালঘরটা ছাউনি না দিলেই দেখি চলে না। নে নে, টাকাটা নে। আর ভেজাল করিস না। লাগলে আরো দশটা টাকা বেশি নে।' কাউকে বা বলে, 'পূজা এসে গেল, বৌদিকে এবার একটা ভালো শাড়ি কিনে দে। বৌদি, দাদা তো গাছটা দিতেই চাচ্ছে না। তুমি একটু বল।' সেরকম সেয়ানা বৌদি হলে অবশ্য মোটে সরেনের কথায় সায় দেবে না। কখনও কখনও বাজি লেগে যায়। এই হল ওর কায়দা। এহেন লোককে খাতির না করে পারা যায়! বাজারে দেখা হলেই বিমল ডেকে চা টা খাওয়ায়। তবে সবদিন কী আর সমান যায়! এই খাতিরও ভাঙল একদিন। সরেনের কাছে গাছের খবর পেয়ে তো যথারীতি বিমল অগ্রিম টাকা দিয়ে দিয়েছে। তারপর আর সরেনের পাত্তা নেই। নেই নেই নেই তো নেই। পাক্কা একমাস আর দেখা নেই। এদিকে যার গাছ, সেও বিমলের কাছেই এসে টাকা চায়। মহা জ্বালা! বিমলের কথা বলেই সরেন গাছ কেটে লগ বানিয়ে ভ্যানে তুলে নিয়ে এসেছে। অনেক পরে এর রহস্যভেদ হল। কী কারণে টাকার দরকার ছিল, শোনা গেল আর এক মার্চেন্ট সেই স্বর্ণতলিতে বাড়ি, সরেন তার কাছে মাল বেচে দিয়েছে টাকার জন্য। গাছের মালিকের টাকা তো গেলই, বিমলেরও। কিছুদিন আচ্ছা করে গালি পাড়ল বিমল। 'শালাকে দেখলে গলায় পা দিয়ে আমার টাকা  আদায় করে ছাড়ব।' তখন কী আর সরেনকে দেখা যায়! শোনা যায় সরেন বাইরে বাইরে ব্যবসা করছে। ব্যবসা না ছাই! রাগে গজগজ করে বিমল।

সময়ের সাথে সাথে মানুষের রাগও কমে আসে। বিমলেরও তাই হল। টাকার কথা ভুলে আবার সরেনের সাথে অল্পস্বল্প ব্যবসাও শুরু করল। তবে অগ্রিম নৈব নৈব চ। কিন্তু সরেনের টাকা কোথায় মাল কিনে মার্চেন্টের কাছে এনে ফেলবে! তাও ব্যবসা তো আর ছেড়ে দেওয়া যায় না! ব্যবসায় হল কিনা বুদ্ধিই সব। বুদ্ধি খাটিয়ে খাটিয়েই ব্যবসাটা ধরে রাখতে হয়! কথাটাই হল ওর বড় মূলধন। এই কথার উপর ভরসা করেই মানুষ ঠকেছে এতদিন। কিন্তু এখন আর ঠকতে চাইছে না। লোকে কিছুতেই তার কথা  বিশ্বাস করছে না। যেমন এই রতন। এতবার করে বলছে মার্চেন্টের কাছে মালটা ফেলে দিয়েই টাকা দিয়ে যাবে, তা রতন কিছুতেই বিশ্বাস করে না। সেই এক কথা। তুই আগে টাকা দে তারপর মাল যাবে। এদিকে ভ্যান রেডি করে নিয়ে এসেছে। কী দিগদারি কান্ড ভাবুন তো! সরেনের খুব রাগ হল। মনে হচ্ছে পকেটে টাকা থাকলে ছুঁড়ে দিয়ে যেত এই লোকটার মুখে। সে তো নেই! কি আর করবে, মুখটা কাঁচুমাচু করে একটু হেসে রতনকেই বলে, 'ঠিক আছে, ঠিক আছে রে ভাই। তোরটাও বুঝছি। তুই আর আমাকে বিশ্বাস করতে পারছিস না তো। দে, তোর সাইকেলটাই দে। ধাঁ করে মার্চেন্টের কাছে গিয়ে টাকাটা নিয়ে এসে দিই। মাল দিতে দেরি হলে আবার মার্চেন্টের লস হয়ে যাবে'। রতন অতশত বোঝে না, ভাবেও না, সাদাসিধা মানুষ! চাইতেই সাইকেলটা সরেনকে দেয়। সরেন তো জানে মার্চেন্টও এখন আর মাল না পেলে ওকে টাকা দেবে না। সেজন্য সাইকেল নিয়ে ও আর ওই মুখোই হল না। সোজা বাজারে।  সঙ্গে সেই ভ্যানওয়ালাকেও নিয়ে এসেছে। ভ্যানওয়ালাকে একটু দূরে একটা দোকানে বসতে বলে পরিচিত একজনের কাছে সোজা গিয়ে সাইকেলটা বন্ধক দিয়ে টাকা নিল। তারপর ওই টাকাই আবার ভ্যানওয়ালার হাতে দিয়ে বলল, তুই টাকাটা দিয়ে মালটা তুলে নিয়ে আয়, আমি মার্চেন্টের বাড়ি যাচ্ছি।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri