সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

26-November,2022 - Saturday ✍️ By- বিমল দেবনাথ 425

শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

শালসিঁড়ি-৫
বিমল দেবনাথ
---------------------

মাধুরী ভাবে – রক্তের কি কোন টান হয়। বিকাশ কি বিশ্বাস করে রক্ত টানে।  কেন এমন একটা সাদা-মাটা কথা বলে বসল। উপহাস নাকি কথার মোড়। বিকাশ আখিতরু থেকে ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে রক্তন গাছের দিকে হাঁটতে শুরু করে। হাঁটতে হাঁটতে বিকাশ জিজ্ঞাসা করে - "ময়ূখ তুমি কী কী রঙের ফল দেখেছ?" ময়ূখ বলে- "হলুদ কালো। যেমন – আম জাম।" মাধুরী দেখতে পায় বিকাশ আবার গন্ধরাজ ফুলের কড়ির মতো স্মিত হেসে ময়ূখের কাঁধে অতি আদরে হাত রেখে বলে-  "বুঝলে ময়ূখ, রক্ত তো একটা অদ্বিতীয় প্রয়োজন-রস। জীবন রস। এই রস ছাড়া জীবন জড় হয়ে যায়। সে ঘাসের হোক বা গাছের। কীট পতঙ্গের হোক বা মানুষের। সে রঙ যাই হোক লাল বা বর্ণহীন। জীবন রসই জীবনের ধারা বাঁচিয়ে রাখে। এই রস অদ্ভুত - ডাকে না কিন্তু কথা বলে- টানে। এই নিপুণ কথার শব্দ শোনার ক্ষমতা আমাদের মতো মানুষের নেই। ছাপ বা চিহ্ন বা দাগ দেখতে পাই মাত্র।  তাই তো আম ফল কী সুন্দর হলুদ, জাম ফল কী সুন্দর কালো। শাল ফলের কী সুন্দর পাখির মতো পাখনা আর শিমূল ফলের কী সুন্দর কত সাদা পালক!" জেনেটিক্স-এ স্নাতকোত্তর মাধুরী ভাবে –  ময়ূখ কী রঙের কী রঙ বুঝল কে জানে। বনে আরো কত কী রঙের ফল আছে। আমি তো কিছুই জানি না। বিকাশ হয়তো বলবে। কত কি ভাবনা মাধুরীর মনে নানা বুনোফলের মতো উড়ে বেড়ায়। ভাবে- আচ্ছা, ময়ূখ কার মতো। আমার মতো না অপূর্বর মতো… নানা ভাবনায় মাধুরী শরীরে বা অশরীরে বিকাশ- ময়ূখের পিছনে পিছনে রক্তন গাছের কাছে কখন চলে এসেছে বুঝতেই পারেনি। মাধুরী দেখতে পায় বিকাশ রক্তন গাছটির ওপর হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ময়ূখও গাছটির গায়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।  
মাধুরী দেখতে পায় ঘূর্ণি ঝড়ের আগের মুহূর্তে কালো মেঘের আড়ালে ঢেকে থাকা সূর্যের আকাশের মতো লাল হয়ে আছে  বিকাশের  গাল। ময়ূখ যেন গাছের পাতায় আটকে থাকা শাল ফল। না আছে গাছে না আছে মাটিতে। ময়ূখের এমন ভ্যাবাচ্যাকা মুখ মাধুরী আগে কখন দেখেনি। পড়ন্ত বিকালে একজোড়া রাজধনেশ সাঁ সাঁ করে উড়ে গেল মাথার উপর দিয়ে। মাধুরীর মনে হল বিকাশের গরম শ্বাস বাতাস বেরিয়ে গেল। মাধুরীর মনে পড়ে বিকাশ ময়ূখকে বড় আফসোসের গলায় বলছিল- "শালসিঁড়ির সৈনিক হওয়া বড় কঠিন। নিজের সাথে লড়তে হয়, নিজেদের সাথে লড়তে হয়।" মাধুরী দেখতে পায় বিকাশের কানের নীচে গালের মাংস পেশী ফুলে উঠে, গলার রগ ফুলে উঠে। বিকাশ বলে - "আমার আশে-পাশেও রক্তনকে নিজের বুক চিরে প্রমাণ দিতে হল যে তার রক্ত আছে। আমার নিজের মানুষই এখনো ঠিক করে বুঝল না  অন্যদের কী করে বোঝাই।" মাধুরীর, কথাগুলো শুনতে শুনতে, মনে হল ওর হৃদয়ে যেন রক্তক্ষরণ হচ্ছে। একটা পরিমাপহীন অজানা ব্যথা  শরীর মন অবশ করে দিচ্ছে। ও দেখতে পায় কত চেনা মানুষ,  কত নরম নরম উষ্ণ বুক যা চিরে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত নিজের মানুষ। মাধুরী জানে রক্তন গাছের গায়ের চেরা দাগের মত মানুষের বুকের চেরা দাগ খালি চোখে দেখা যায় না। আয়নায় দেখা যায় না। অনুভব করতে হয়, অনুমান করতে হয়। এই ভাবতে ভাবতে মাধুরী কখন ময়ূখের পাশে এসে রক্তন গাছের গায়ে হাত রেখেছে বুঝতেই পারেনি। 
মাধুরীর মনে পড়ে – তখন ওরা তিন জন রক্তন গাছের গায়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়েছিল। এক পাশে বিকাশের হাত অন্য পাশে ওর হাত। মাঝখানে ময়ূখের হাত। বিকাশ বলে- বুঝলে ময়ূখ, জীবন থাকলেই জীবন রস থাকবে এই সহজ সত্যটা মানুষ বুঝতে চায়না। বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু প্রমাণ করে দিয়েছেন গাছের প্রাণ আছে, জীবন আছে, জীবন থাকলে জীবন-রসও আছে। এই টুকু কথা বোঝার ক্ষমতা নেই মানুষের – যে রক্তন গাছের গা চিরে দেখতে হবে। শুধু রক্তন গাছ কেন আমরা মানুষেরা গাছের গায়ে পেরেক গাঁথি কোন কিছু ঝোলানোর জন্য। গাছের কী ব্যথা লাগেনা। ময়ূখ বলে- খুব ব্যথা লাগে। একবার আমার জুতো ফুটো হয়ে পায়ের তলায় পেরেকের মাথা ঢুকে গিয়েছিল। তাতেই কি ব্যথা। গাছেদের তাহলে তো অনেক ব্যথা লাগে। বিকাশ বলে- "শুধু ব্যথা নয় ঐ জায়গা দিয়ে নানা রোগ হয় গাছেদের। তবু গাছ সব কিছু সহ্য করে শাল সিঁড়ি হয়ে। গাছ গডের থেকেও বেশি সহনশীল। জানো তো গড যীশু খ্রীস্ট-কে যখন ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল তখন যীশু সাতটি কথা বলেছিল। যার পঞ্চমটি ছিল  “I thirst”। আমার পিপাসা পেয়েছে। গড যীশুও পেরেকের ব্যথায় তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েন। আর গাছ শব্দ করে না, কথা বলে না। শুধু জীবন রস ঝরায়।" 

ওরা তিনজন রক্তন গাছের গায় হাত বুলায়। মাধুরীর মনে হয় ও যেন নিজের বুকে হাত বুলায়, ময়ূখের গা-য় বুলায়। হাতের তালুতে দাগগুলো খোঁচা মারে। কত কথা কত মরা দাগ আবার বেঁচে ওঠে। মাটিতে চাপা পড়া কাঠের গুঁড়ির মতো। কোনোটি শক্ত, কোনোটি পচা দুর্গন্ধ যুক্ত। 
মাধুরীর মনে হয় – পেরেক কি শুধু জড় পদার্থের হয়। কিছু পেরেক কথার হয়, কিছু পেরেক শব্দের হয়, কিছু পেরেক আঘাতের হয় আবার কিছু পেরেক হয় ঘৃণার আক্রোশের ভালোবাসার  যা গেঁথে থাকে চির দিন হৃদয়ের গভীরে। তোলা যায় না, ভোলা যায় না। একবার ময়ূখ ইতিহাসে ক্লাস সেমিস্টারে ৩০ নম্বরে ২১ পাওয়াতে অপূর্ব ময়ূখকে প্রচণ্ড মারে। ময়ূখের গায়ে দাগ বসে যায়। তীব্র যন্ত্রণায় ময়ূখের হৃদয়ে রাগ ও ঘৃণার পেরেক ঢুকে যায়। দাগ পড়ে মনে। এই দাগ পচা কাঠের মতো গন্ধ যুক্ত। মনে পড়লে এখনো মাধুরী আঁচলে মুখ ঢাকে। শালসিঁড়ি হয়ে ময়ূখকে জড়িয়ে ধরে।  সেই দিন ময়ূখের মনে যে আতঙ্ক ভয় ঘৃণার পেরেক  ঢুকে ছিল এত দিন  ময়ূখকে ভিতরে ভিতরে ক্ষত করছিল। এই অন্তঃস্রাবী ক্ষতের ব্যথা মাধুরী মা হয়েও এত দিন উপশম করতে পারেনি।  আজ এই প্রথম একটু আগে যেন মনে হল ময়ূখের মনে গেঁথে থাকা পেরেকটি একটু আলগা হয়েছে। ময়ূখ যখন শালসিঁড়িকে জড়িয়ে ধরেছিল – যখন ভারতীয় বাইসন ফোঁস করে বনে পালিয়ে গেল – যখন অপূর্ব গেল গেল করে ছুটে গিয়ে ময়ূখকে জড়িয়ে ধরেছিল -  বাবা-ছেলে যখন একসাথে শালসিঁড়িকে  জড়িয়ে ধরেছিল - যখন বাবা ছেলে হাত ধরা-ধরি করে মাধুরীর কাছে ফিরে আসছিল- মাধুরীর মনে হয়েছিল ময়ূখের মনে গেঁথে থাকা পেরেক আস্তে আস্তে আলগা হচ্ছিল। 
মাধুরীর ওর মায়ের  কথা মনে পড়ে। রক্তন গাছের মাথা ছাড়িয়ে পড়ন্ত বিকালের আকাশে উজ্জ্বল সোনালি মেঘে মা যেন হাসে। ওর মনে পড়ে – ওর মা জীবনের শেষ মুহূর্ত পযন্ত হেসে ছিলেন। মাধুরীর বাবাকে মনে পড়ে। ওর বাবাকে ওর অসাধারণ  লাগতো। নিজের বাবা বলে নয়- জানা সবার সাথে তুলনা করেই বাবাকে ওর অসাধারণ লাগে। ওদের বাড়ি ছিল বেড়ী ছিলনা। বাড়ির মস্ত উঠান ছিল উচাটন ছিলোনা। ওদের আনন্দের খুশির গর্ব ছিল - আলো হীন স্যাঁতস্যাঁতে অজানা গর্ভ ছিলনা।  মাধুরীর মা ওর খুব প্রিয় হলে বাবা ছিল ওর কাছে মহানায়ক। মার প্রিয় সংসার দেখে সে সংসার করল- বাবার বারণ সত্ত্বেও। ওর তরুণী মন ভাবত সব স্বামীরা ওর বাবার মতো। এখন ও বুঝতে পারে আসলে কেউ কারো মতো হয় না। মতের সাথে মতের অমত দীর্ঘ হলে হৃদয়ে পেরেক ফোঁটে। মাধুরীর ঘরের উঠান কোথায়। ঘর যেন ক্লোজড সার্কিট টিভি। মাধুরীর মনে পড়ে – ওর মার স্মৃতি নব রত্নের ললন্তিকা সহ আরো কত কী-র কথা। অপূর্ব অভাবে নয়- ব্যবসার সমৃদ্ধির সমুদ্রের জলে ঢেলে দিয়েছিল অধিকার বোধের শক্তিতে। অপূর্বও সমুদ্রের মতো ফিরিয়ে দিয়েছে কত কী দামী - হয়তো বা ওর যা গেছে তার থেকে অনেক বেশী দামী। মাধুরী ভাবে বস্তু মূল্য দিয়ে কি সব মূল্য পাওয়া যায়। এই সব তো মুক্তো হীন ঝিনুক, প্রাণহীন শঙ্খ। প্রাণহীন যা কিছু থাকে সে সব তো শব। দীর্ঘ দিনে পচা কাঠের গন্ধ  ছড়ায়। মাধুরীর দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়। এই ঘৃণার পেরেক উপড়ে ফেলতে চেয়েছিল কত বার। পারে নি। আজ কেন যেন পেরেকটি আলগা লাগছে।   শালসিঁড়ির রাজ্যে - বনে এমনই কাণ্ড ঘটে মনে হয়। রাগ ঘৃণা আক্রোশের পেরেক আলগা হয়ে যায়।  ভালোবাসার পেরেক অন্তরের গভীর থেকে গভীরে ঢুকে যায়। 
মাধুরীর মনে হয় – ওরা তিন জন রক্তন গাছের মোহে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। ভিজা মাটির সোঁদা সোঁদা গন্ধ চাপিয়ে বনচাঁপার গন্ধ ম ম করছিল। বনচাঁপার গন্ধ যেন শাল সিঁড়ির গন্ধ। পাশের একটি গাছে একটা বানর বসে ছিল- যা ওরা কেউ লক্ষ্য করেনি। বানরটি এই তিন মানুষের নির্বাক অবস্থান দেখে উঁকি ঝুঁকি মারছিল। ওদের তিন জনের ভাবনা মুগ্ধতা ভেঙে খ্যাঁক করে ডেকে উঠল।  ওরা তিন জন গাছটির দিকে তাকায়।  বানরের দিকে তাকাতেই বানরটি ভয় পেয়ে গাছের ডাল-পালা নাড়িয়ে পাশের একটি  গাছে লাফ দিয়ে চলে যায়। গাছটি  থেকে অনেকগুলো সাদা ফুল রক্তন গাছের তলায় ওদের মাথার উপরে, গায়ে ছড়িয়ে পড়ে। মাধুরী  দেখে গাছটি  সাদা ফুলে ভরে আছে । ওর মনে হয় সাদা ফুল যেন শালসিঁড়ির হাসি। গাছটির সাদা ফুল যেন শালসিঁড়ির আশীর্বাদ- ময়ূখের জন্য।  ময়ূখ জিজ্ঞাসা করে- "ওটা কি গাছ।"  বিকাশ কাঠ গলায় বলে – "কাঞ্চন।" মাধুরী ময়ূখ কাঞ্চন গাছ দেখে গাছের থোকা থোকা সাদা  ফুল দেখে। গাছের পাতা দেখে। ময়ূখ বলে- "মা, দেখ এই গাছের পাতাগুলো অন্য রকম। অন্য পাতাদের মতো নয়।" বিকাশ বলে- "মিলিয়ে দেখ পাতাগুলো উটের পায়ের মতো। এই জন্য অনেকে এই গাছকে উট পা গাছও বলে।"  ময়ূখ জিজ্ঞাসা করে- "যে গাছে বানরটি পালিয়ে গেল তার কি নাম?" বিকাশ বলে- "লালি।" মাধুরী বুঝতে পারে না ঘন সবুজ পাতার গাছের নাম কেন লালি হয়। মাধুরী জানে লালি আরবি শব্দ- যার অর্থ মুক্তো। এই গাছে কী মুক্তো থাকে। মাধুরী বিকাশকে দেখে। কাঞ্চন ফুল বিকাশের মাথায় অবিন্যস্ত ছড়িয়ে আছে- যেন মুক্তো। মাধুরীর দৃষ্টি এখন কেন যেন শালের শিকড়ের মত অনেক গভীরে যেতে চায়। জল মাটি বাতাস কাঞ্চন ফুল সব জড়িয়ে ধরতে চায় শালসিঁড়ির মত।  
বিকাশ বলে - "শালসিঁড়ির ক্ষত-রস ধরা যায় না। দেখা যায় না। দেখার মন সবার থাকে না।" মাধুরী বিকাশের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে  নিয়ে নিজেকে বিন্যস্ত করে নেয়। বিকাশ তখনো লালি ফলের মতো লালি কাঠের  লাল।  বিকাশ বলে- "মানুষের  মনে চোখ থাকলে কী গাছের গা চিরে রক্ত দেখত। গাছের গায়ে পেরেক মেরে নিজেদের বিজ্ঞাপন দিত? দিত না।"  ময়ূখ বলে – "কাকু, আমাদের স্কুলেও অনেক গাছে ঐ রকম অনেক পেরেক মারা আছে। আমি ও আমার বন্ধুরা এবার ঐ গুলো তুলে ফেলব।" মাধুরী ময়ূখের মাথায় হাত বুলায়। বিকাশ তখনো রক্তন গাছ থেকে হাত সরায়নি। রক্তন গাছের একটা চেরা দাগ চেপে  ধরে আছে। বিকাশ বলে – "ময়ূখ, আমি বলেছিলাম গাছের রক্ত হয়। তুমি বলেছিলে গাছের রক্ত দেখবে। আমি ভাবিনি তুমি সত্যি গাছের রক্ত দেখতে পাবে।" বিকাশের পরের কথাগুলো মাধুরীর কাট চেরা করাতের শব্দের মতো মনে হল। মাধুরীর মনে হল বিকাশের হৃদয় চিরে শব্দগুলো বেরুচ্ছে। বিকাশ বলে - "মন দিয়ে রক্ত দেখা আর ক্ষত করে রক্ত দেখার অনেক তফাত।" ময়ূখের দিকে তাকিয়ে বলে – "রক্ত দেখে ভয় পেওনা ময়ূখ।" ময়ূখ, মাধুরী রক্তন গাছটিকে ভালো করে দেখে। কোথাও কোন রক্ত দেখে না। মাধুরী রক্ত দেখে বিকাশের শিরা-উপশিরায়। ময়ূখ বলে কাকু কোথায় রক্ত। বিকাশ বলে – আমার ডান দিকে এস, দেখ আমার আঙ্গুল উপচিয়ে কেমন রক্ত ঝরছে। ময়ূখ বিকাশের আঙ্গুলে রক্তনের রক্ত দেখে… মাধুরী বিকাশের চোখে রক্ত দেখে…রক্তন গাছের গায়ে বিকাশের হাত খোঁজে…রক্তন গাছের তলা থেকে এক তাল মাটি নিয়ে গাছটির গায়ে লেপে দেয়।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri