লাল পরী-৫/মধুপর্ণা রায়
লাল পরী
মধুপর্ণা রায়
মল্লিকার চোখ লাল হয়ে এসেছে। সামান্য হলেও জড়িয়ে আসছে গলা। এমনটা হলে বহ্নিকে ভারী চমৎকার দেখায়। খুব স্মার্ট আর ট্রেন্ডি বহ্নির অল্পেই নেশা হয়ে যায়। টপের বোতাম খুলে যায় -- ঝাঁকড়া স্টেপকাট চুল খুলে ফেলে সে -- একটানা বকতে থাকে-- আওড়াতে থাকে কবিতার পর কবিতা। শাক্য তার লক্ষ্য। অবশ্য সুশোভন মিত্রকেও পছন্দ করে বহ্নি। ওর ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে। মুখে অবিরাম খেউড় খিস্তি। কথায় না-কথায় এই মেয়েটার মতো খিলখিল করে হাসে। জল-স্থল- বন- বাদাড় কিছুকেই পরোয়া করে না।
শাক্য প্রথম দিকটায় খাবি খেয়েছিল ঠিকই, কিন্তু রঞ্জাবতীর সঙ্গে আলাপ হবার পর তার বোকা বোকা মনে হয় বহ্নিকে। বহ্নি কোনোদিন নিজেরই অসতর্কতায় এইচ. আই. ভি পজিটিভ হয়ে যাবে না তো?!
আরো এক প্লেট পকোড়ার অর্ডার দিল শাক্য। মল্লিকা বহ্নির মতো বকবক করে চলেছে।
:-- আছে। মুনিয়া। বিহারের মেয়ে। বারো বছর বয়সে ওর কাকি শাশুড়ি মাগী লোভ দেখাল বেড়াতে নিয়ে যাবে। ভোঁদাই মুনিয়াটা সাজগোজ করে রওনা দিল। দিল খুশ। বরটা তো ওকে তখনও ছোঁয়নি। মাগীটা ওকে নিয়ে গিয়ে পাঁচটা জোয়ান মর্দ ঢুকিয়ে দরজা আটকে দিল বাইরে থেকে। হাত ঘুরে ঘুরে মুনিয়া এখন এখানে। ততদিনে বেচারি পজিটিভ হয়ে গেছে। মদের নেশাতেই নাকি মল্লিকার চোখ জলে টলটল করছে।
:-- মুনিয়াটা তবু সাজে। খদ্দের নেয়। খেতে হবে। বাঁচতে হবে। বাঁচতেই চায় ও। একটা বাবু ছিল ওর। শ্যামলাল। ভেগেছে। তবে অবাক কী জানেন?
শাক্য একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল। অতল গভীরে চলছে বুনন। এখনও শুধু নক্সা আসেনি। তবে এসে যাবে। অনুভব করতে শুরু করেছে তার লেখক সত্তা।
অনিরুদ্ধ সান্যাল নতুন ডিরেক্টর। ভালো কাজ করছে। খুব জিল আছে ছেলেটার। সেক্স ওয়ার্কারদের ওপরে কাজ করার কথা বলছিল শনিবারের সন্ধের আড্ডায়। বলছিল -- শাক্যদা, একটু অন্যরকম গল্প চাই।
ওয়াক তুলছে মেয়েটা। ওয়াক ওয়াক করতে করতে দৌড়ল টয়লেটের দিকে। দেদার মদ গিলেছে। রঞ্জারও একবার হয়েছিল এমন। প্রথম সেবার রঞ্জাবতী তার ধ্রুপদী সৌন্দর্য নিয়ে মাতাল করে দিচ্ছিল ইনটেলেজিন্সায়ার আসর। এসেছিল শাক্যর হাত ধরে। আর, শাড়ি ছাড়া পরলই না কিছু কখনো। তাও আবার আঁচল সামান্য সরে গেলেই বড় শশব্যস্ত। বললেই হেসে বলে -- আমি প্রাচীন।
বমি করে ভাসিয়েছিল সেবার। আর কোনোদিন মদ ছোঁয়নি। পার্টি আড্ডাতেও খুব সিলেকটিভ। শাক্যকে বোকার মতো ভালোবাসল। লেখে ভালো। তবে তেমন উঠতে পারবে বলে মনে হয় না। শাক্যরও তো লিমিটেশন আছে।
মিস্টার জালান বড় ধরণের পৃষ্ঠপোষক। রঞ্জাবতীকে বলেছিল -- সমস্ত রাত ধরে তোমার একটা ছবি আঁকব রঞ্জা। য়ূ আর অসাম! ইন্ডিয়ান ক্লাসিকাল ওয়ান! প্রস্তাব ফিরিয়েছিল রঞ্জাবতী। বিনয়ের সঙ্গে। জালান বাঁকা হেসে বলেছিল -- আই অ্যাডমায়ার য়ূ। তারপর বহুদিন রঞ্জার লেখা এক বিশেষ পত্রিকায় থেকে গিয়েছিল উপেক্ষিত। শাক্যও তখন চেষ্টা করছিল রঞ্জাবতীকে এড়িয়ে চলার। সে তখন প্রতিষ্ঠিত। তবে প্রতিষ্ঠা ধরে রাখা এক কঠিন সাধনা। বরং বলা যায়, সেইটেই আসল।
ফিরে এসেছে মল্লিকা। পোশাক পরিবর্তন করে নিয়েছে। টোম্যাটো রঙের ফিনফিনে নাইটি। কালো ব্রা দেখা যাচ্ছে। সামনের দুটো বাটন খোলা। উঁকি দিচ্ছে শ্যামল ভাঁজ। তার একটাতে লালচে বড় তিল।
চমকে গেল শাক্য। মধুমন্তীর ডান বুকের ভাঁজে ঠিক অমনি বড় লালচে তিল! শাক্য হাঁ করে তাকিয়ে ছিল। মল্লিকা চোখ টিপে বলল :-- কেরদানি শুরু হয়ে গেল?
মেয়েটা ক্রিম ঘষে এসেছে মুখে। লিপস্টিক নেই। কাজল ঘষে গেছে। নাকের নাকছাবিটা ঝলসে উঠছে শুধু। শাক্য বলল :-- কী?
:-- তুমি এরকম ভ্যারেণ্ডা কেন বল তো? কোনো কথার মানে বোঝো না!
--- কথার মানে বুঝিয়ে দিতে আমার ইচ্ছে করে না। তোমরা তো সব লেখালেখি কর। মনের অতলের মণি মুক্তোর সন্ধান পাও। এত কম বোঝ কেন?
মধুমন্তীর শীতল কথাগুলো চাবুকের মতো পড়ছিল।আগুন হয়ে যাচ্ছিল শাক্যর রক্ত।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴