বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে
পর্ব-পাঁচ
মিশা ঘোষাল
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
টৌটৌপাড়ায় এলাচ চাষ
~~~~~~~~~~~~~~
এমন তো শুনি নি কখনও ! দেখিও নি আগে ! এ যেন আর এক বিস্ময় টোটোপাড়ার...! অবাক চোখে তাকিয়ে দেখি-
গাছের গোড়ায় ফুল !
এলাচ
গাছের ক্ষেত্রে এমনটাই ঘটতে দেখেছিলাম সেদিন। গুচ্ছাকারে ইষৎ হলুদ রঙের
ফুল ফুটেছিল এলাচ গাছের গোড়ায়। সেই ফুলের ঘ্রাণে পিপড়ের দল ঘুর ঘুর করছিল
চারপাশে ।
শুধু কী সুগন্ধি এই ফুল ? না না...তা হয়তো নয়! শুনলাম,মধুতেও ভরপুর এই ফুল !
এই ফুলগুলি হল বড় এলাচের ফুল।
আর
এই ফুল থেকে যে ফল হয়,অর্থাৎ এলাচের এই ফলগুলিই হলো টোটোপাড়ার একটি
অর্থকরী ফসল। টোটোপাড়ার প্রায় প্রত্যেক টোটো,নেপালী ও অন্যান্য গোষ্ঠীর
বাড়িতেই এই এলাচ গাছ দেখতে পাওয়া যায়। শীতের মরশুমে, জানুয়ারী/ফেব্রুয়ারি
মাসে এই এলাচ গাছের ফুল ফোটে ৷ অদ্ভূত সুন্দর লাগে দেখতে সেই এলাচের বাগান
তখন। এলাচ গাছের নরম কান্ডগুলি গুচ্ছাকারে মাটির উপর দেখতে পাওয়া যায়। এই
গাছগুলি বিরুৎ শ্রেণীর উদ্ভিদ। কাষ্ঠাল নয়, নরম রসালো এই কান্ড। শীতকালে
যখন এই এলাচ ফুল ফোটে, তখন প্রচুর কালো পিঁপড়ে এসে ভিড় করে সেখানে, মধু
খেতে ৷ ফুলগুলির বৈশিষ্ট্য হলো এই ফুলগুলি এলাচ গাছের গোড়ায় ফোটে। ফুল
থেকে ফল হতে সময় লাগে প্রায় ছয় মাসের মতো। এলাচের ফল পাঁকে বর্ষাকালে।
আগষ্ট/সেপ্টেম্বর মাসে ৷
এলাচ চাষের জন্য বিশেষ
যত্নের প্রয়োজন হয় না ৷ একবার এলাচের চারাগাছ এনে লাগিয়ে দিলে বছরের পর বছর
এর মাটির নীচের কন্দ বা মূল থেকে আবার এলাচের চারাগাছ জন্মায়। গাছ পরিণত
হলে ফুল ফোটে আবার, ফল হয়। এভাবেই চলতে থাকে বছরের পর বছর। কোনো কোনো বাড়ির
সুপারি বাগানেও এই এলাচের চাষ করা হয়।
ফল পাঁকে
বর্ষাকালে। বর্ষায় জঙ্গল থেকে মাটিখুঁড়ে এলাচ বের করে আনা হয়। এই মাটি খুড়ে
এলাচ বের করে আনা একটু কষ্টসাধ্য ব্যাপার ৷ এলাচ গাছ উপড়ে ফেলে তার গোড়া
থেকে সংগ্রহ করতে হয় এই এলাচের ফলগুলি, সাবধানে।
তারপর সেখান থেকে এলাচগুলিতে লেগে থাকা মাটি ধুয়ে নিতে হয়। তারপর ওই
এলাচের ফলগুলি রোদে শুকোলে এলাচ পাওয়া যায় ৷ তবে টোটোপাড়ায় এত বৃষ্টি হয়
যে,বেশির ভাগ সময়ই মাঁচা বানিয়ে, তার উপর এলাচগুলি রেখে, নিচে আগুন
জ্বালিয়ে এলাচের ফলগুলি শুকোতে হয় ৷
এও এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। আগুন জ্বলছে ধোঁয়ায় ভরে যাচ্ছে, বাঁশের মাচার উপর এই এলাচ শুকোচ্ছে বাড়ি বাড়ি।
এলাচ চাষের জন্য বিশেষ যত্নের দরকার হয় না ৷ সুপারি বাগানে একবার
এলাচের চারাগাছ পুঁতে দিতে পারলে, বছরের পর বছর ফল দিয়ে যায় তারা ৷ অল্প
গোবর সার দেওয়া গেলে আরো ভালো ফল দেয় এই এলাচের চারাগুলি।
অদ্ভূত আরও যে, এলাচ গাছগুলি গোড়া থেকে উপড়ে ফেলা হয় ফল পাঁকলে ৷
তবুও যথাসময়ে মাটির নীচে থেকে যাওয়া কন্দগুলি থেকে আবার এলাচের চারাগাছ
জন্ম নেয় অত্যন্ত সহজে ৷ গাছগুলি আবার বড় হয়, ফুলে ফলে ভরে দেয় প্রকৃতির
নিয়মে।
ছবিতে টোটোপাড়ার একজন বিশিষ্ট
ব্যক্তিত্ব শ্রী বিনোদ টোটো মহাশয় তার বাড়ির এলাচ বাগান থেকে এলাচের এই
ফলগুলি তুলে আনার সময় সেই ছবিগুলি ক্যামেরাবন্দী করেছিলাম আমি। তিনি জমিতে
এলাচ তুলছিলেন তার একজন সহযোগীকে সাথে নিয়ে ৷