হোপ টি গার্ডেন/গৌতম চক্রবর্তী
হোপ টি গার্ডেন
গৌতম চক্রবর্তী
---------------------
পঞ্চায়েত নির্বাচন পরবর্তীকালে আবার শুরু করলাম বাগিচা সফর। বিগত তিনটি পর্বে চা বাগিচার ভোটের হাওয়া বোঝার লক্ষ্যে কিছু কিছু কাজ করতে গিয়ে যেটা অভিজ্ঞতা হল সেটা হল মানুষ সরকারি সুবিধা দুহাত ভরে নেয়। পাঁচটা পয়সা ছাড়ে না, আবার পাশাপাশিভাবে নিয়েই চোখ উলটে দেয়। এই প্রবণতা সমাজের একটি অংশে বাড়ছে। আর একটা অভিজ্ঞতা হল চা বাগান বেল্টে ৫০০ বা ১০০০ টাকা আর এক বোতল হাঁড়িয়াতে গণতন্ত্র এখনো রাতারাতি বিক্রি হয়ে যায়। সে আপনি শহুরে বাবুলোগ মানুন কি না মানুন। আর উন্নয়নের পরশ চা বাগিচার গরীব গুর্বো মানুষগুলো পায় না যদি না পরিবেশ অনুকূল থাকে। তাই গুডরিকস বা টাটা বা জয়শ্রী টি কোম্পাণী বা বিপ্রদাস চৌধুরীদের বাগানগুলি অথবা বনেদি পরিবারের বাগানগুলিতে যখন সার্ভে করি তখন বাগানগুলির শ্রমিকদের দেখলে কিছুটা আনন্দ হয় যে সামান্য চাহিদা পূরণ করে দিলেই ওরা কত খুশী! সেইজন্যই তো প্ল্যান্টেশন অ্যাক্ট করা হয়েছিল স্বাধীনতার পরবর্তীকালে চা শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য। কিন্তু ডুয়ার্সের চা বাগিচার নিরিখে প্ল্যান্টেশন অ্যাক্ট এখনকার এই প্রেক্ষাপটে কতটা জরুরী তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। কারণ প্ল্যান্টেশন লেবার অ্যাক্টের বেশ কিছু সুবিধা সরাসরি পৌঁছে দিচ্ছে সরকার যেখানে মালিকদের দায় থাকছে না। তাহলে উৎপাদন খরচ বেঁচে গেলে মালিকেরা শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরী দেবে না কেন তা নিয়ে চা বাগিচা মহল উত্তাল। এই প্রেক্ষাপটেই জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে নাগরাকাটার হোপ টি এস্টেট ঘিরে কাজ করতে গিয়ে মনে হল প্ল্যান্টেশন লেবার অ্যাক্টকে যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। একটা কথা বলে রাখি গুডরিকসের ম্যানেজমেন্ট কোন অবস্থাতেই তাদের চা বাগান বিষয়ক তথ্য অফিস থেকে সরবরাহ করে না। জিতি এবং হোপ উভয়ক্ষেত্রেই আমাকে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে আমি তাতে কিছু মনে করিনি। কারণ বড় বড় চা বাগিচার এখনও কিছু ব্রিটিশ ঠাটবাট এবং আদবকায়দা রয়েছে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় লেবার অফিস থেকে আমি আমার প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে যাই।
চলে আসি মূল কথাতে। জলপাইগুড়ি জেলার নাগরাকাটা ব্লকের গুডরিক গ্রুপ লিমিটেড পরিচালিত হোপ টি গার্ডেনটির ম্যানেজমেন্ট সহযোগিতা দিয়ে থাকে ডিবিআইটিএ। কোম্পানির হেড অফিস কলকাতা। বাগানে প্রতিষ্ঠিত এবং স্বীকৃত ট্রেড ইউনিয়ন হচ্ছে পিটিডব্লিউইউ। তবে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য এই দুই দলের ট্রেড ইউনিয়নই শক্তিশালী। মজুরী এবং শ্রমিক উন্নয়ন সংক্রান্ত দাবিদাওয়া করে জয়েন্ট ফোরামও তাদের হারানো জমি পুনরূদ্ধারের ক্ষেত্রে অনেকটা সফল। বাগানে ম্যানেজারিয়াল স্টাফ ৬ জন। হোপ চা বাগিচার গ্রস এরিয়া ৬৯৭.৫৭ হেক্টর, গ্র্যান্ট এরিয়া ৪৩২.১২ হেক্টর এবং চাষযোগ্য আবাদিক্ষেত্র ৪৩২.১২ হেক্টর। আপরুটেড এবং নতুন বপনযোগ্য আবাদীক্ষেত্র ৯.৮৭ হেক্টর। ড্রেন এবং সেচের সুবিধাযুক্ত চাষযোগ্য উৎপাদনক্ষম আবাদিক্ষেত্র অঞ্চল ৪৩২.১২ হেক্টর। অর্থাৎ বাগিচায় সেচ ব্যাবস্থা উন্নত। প্রতি হেক্টর উৎপাদনযোগ্য এবং সেচযুক্ত প্ল্যান্টেশন এরিয়া থেকে ২১৪১ কেজি করে চা উৎপাদিত হয়। চরিত্রগত দিক দিয়ে উন্নত মানের এই বাগানে ফ্যাক্টরিতে নিজস্ব উৎপাদিত কাচা চা পাতা ৩৫ লাখ কেজি। সংগৃহিত কাঁচা পাতায় তৈরি চা ৭-৮ লাখ কেজি। বাইরের বাগান থেকে সংগৃহীত কাঁচা চা পাতায় তৈরি চা আরো প্রায় ১ লক্ষ কেজি ধরলে মোট বাৎসরিক উৎপাদিত ইনঅরগ্যানিক সিটিসি চা ৮-১০ লাখ কেজি। হোপ চা-বাগিচায় ব্যক্তিগত ইলেকট্রিক মিটার সহ পাকাবাড়ির সংখ্যা ৫৫৪ টি। সেমি পাকা বাড়ি নেই, অন্যান্য বাড়ির সংখ্যা ৪১। সরকারি বাড়ি ২৪, মোট শ্রমিক আবাস ৬১৯। শ্রমিক সংখ্যা ১১৫৪। বাগিচায় শতকরা ৫৪ শতাংশ শ্রমিক আবাস এবং অন্যান্য বাসগৃহ আছে। চা বাগিচার সাব স্টাফ ৭০ জন। করণিক ১০ জন। ক্ল্যারিক্যাল এবং টেকনিক্যাল স্টাফ ৯ জন।বাগানে শ্রমিক পরিবারের সংখ্যা ৪৭৫ জন এবং মোট জনসংখ্যা ৩৫৪৫ জন। ফ্যাক্টরিতে নিযুক্ত স্টাফ এবং শ্রমিক সংখ্যা ৬০ জন। ক্ল্যারিক্যাল, টেকনিক্যাল এবং স্থায়ী শ্রমিক মিলে মোট শ্রমিক সংখ্যা ২৮ জন। মোট কর্মরত শ্রমিক ৯০৯ জন এবং শ্রমিক নয় এমন সদস্যদের সংখ্যা ২০৯১ জন।
১৯৭৭ সাল থেকে পথ চলা শুরু করে গুডরিক টি কোম্পানী। চা এবং কফি বাগানের চাষাবাদ করে আটটি স্টার্লিং চা কোম্পানির মাধ্যমে। এগুলি হল দ্য আসাম-ডুয়ারস টি কোং লিমিটেড, হোপ টি কোং লিমিটেড, দ্য লেবং চালসা টি কোং লিমিটেড, দ্য ব্রিটিশ দার্জিলিং টি কোং লিমিটেড, দ্য চালসা টি কোং লিমিটেড, দি লিস রিভার টি কোং লিমিটেড, দি ডেঙ্গুয়াঝার টি কোম্পাণী লিমিটেড, দি মীনগ্লাস টি কোম্পাণী লিমিটেড। ইংরেজ আমল থেকেই চা বাগানগুলিকে ‘এস্টেট’ বলা হতো। ইংরেজ শাসনের সময় চা বাগানে সমান্তরাল আইন চলত। স্বাধীনতার পরপর বলবত হওয়া চা বাগিচা আইনে ঔপনিবেশিক সময়ের অনেক প্রবণতা এখনও রয়ে গিয়েছে। ভারতীয় সিনেমা জগতের মাইল ফলক ‘দো বিঘা জমিন’ যে বছর মুক্তি পেয়েছিল, সে বছরই শ্রমিকদের অধিকার সুনিশ্চিত করতে চা আইন বলবত হয়েছিল দেশে। প্রায় ছ’ দশক পেরিয়ে যাবার পর সেই আইনের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। গুডরিক কোম্পানির সাথে একীভূত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার চা বাছাই করা বাগিচাগুলিও কোম্পানির সহায়ক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ১৯৯৫ সালে কোম্পানিটি ভারতের অন্যান্য বড় চা কোম্পানিগুলির সাথে একটি যৌথ উদ্যোগ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করে। সেখানে ঠিক করা হয় এই যৌথ উদ্যোগ একত্রে কর্মসূচী গ্রহণ করে রাশিয়ার বাজারে রপ্তানির জন্য ভারতীয় চায়ের একটি ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি করবে। কোপানীর বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফাইনান্স), বি এন ঘোষ কোম্পানির সর্ব সময়ের জন্য ডিরেক্টর (অর্থ) হিসাবে ২০০৪ সালের ১ লা জানুয়ারি থেকে কার্যকর গ্রহণ করেন। ২০০৪ সালে কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসাবে কে এস ডেভিডকে পুনরায় নিযুক্ত করা হয়। ২০০৫ সালে গুডরিক দক্ষিণ ভারতের জন্য নতুন একচেটিয়া ব্র্যান্ডের পরিকল্পনা করে। প্রদোষ কুমার সেনকে একজন স্বাধীন অ-নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তবে ২০০৮ সালে ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে এ এন সিং নিযুক্ত হবার পর জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গুডরিকের কাজে গতি আসে।
জলপাইগুড়ি, রাজগঞ্জ, নাগরাকাটা, মালবাজার, মেটেলি সার্কিটের চা বাগিচাগুলিকে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখতে পাচ্ছি প্রাচীন চা আইনের রদবদলের প্রয়োজন। পুরনো আইন বদল করে তাতে সংযুক্ত হোক নতুন ধারা-উপধারা যাতে বাগান মালিক এবং শ্রমিক উভয়েরই স্বার্থ সুনিশ্চিত হয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় চা যাতে তাদের সুনাম এবং ঐতিহ্য ফিরে পায়। পুরনো আইনের যে অংশগুলির বর্তমানে কোনও তাৎপর্য্য নেই সেগুলি বাতিল করা হোক। প্ল্যান্টেশন লেবার অ্যাক্ট বা চা আইনও নতুন করে পর্যালোচনা করা হোক। চা আইনের কড়াকড়ির কারণে অনেকসময়ে শ্রমিকদের কাছে সরকারি প্রকল্প পৌঁছে দেওয়া যায় না। চা বাগানের ভিতরে একটি খুঁটি পুঁততে হলেও বাগান কর্তৃপক্ষের অনুমতির পাশাপাশি আরও অনেক নিয়ম পালন করতে হয় যার জেরে চা বাগান শ্রমিকেরা সুযোগ সুবিধে থেকে বঞ্চিত হয়। চা আইনে অনেক কিছু ইংরেজ জমানার মতো রয়ে গিয়েছে। চা বাগানের ভিতরে জেলা প্রশাসনের কর্তারাও সহজে নাক গলাতে পারেন না। তার ফলে শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন। ২০২০ সালের ৭ জুলাই কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক ভারতীয় চা পর্ষদের (টি বোর্ড) ডেপুটি চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছিল চা ক্ষেত্রে দেশের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা টি বোর্ডের বৈঠকে চা আইনের রদবদল ঘোষণা হতে পারে। কিন্তু তারপর আর কোন উচ্চবাচ্য নেই। উত্তরবঙ্গের একাধিক বাগান বন্ধ, বহু বাগানে অচলাবস্থা রয়েছে। ২৩ টিরও বেশি বাগান ধুঁকছে। চা শিল্প সংস্থার সঙ্গে জড়িতদের দাবি বাগান বন্ধ এবং অচলাবস্থা নিয়ে চা আইনে নতুন সংস্থান জোড়া হোক। পুরনো একাধিক উপধারা ছেঁটে ফেলা হোক। নতুন কী কী যুক্ত হচ্ছে সে সব বাণিজ্যমন্ত্রক থেকেই জানানো হোক।
উৎপাদন এবং গুণগত মানের ক্ষেত্রে পার্থক্য তো রয়েছেই। সামঞ্জস্য নেই মজুরি কাঠামোতেও। রাজ্যভিত্তিক চা বাগানের এই তফাৎ ঘোচাতে টি প্ল্যান্টেশন লেবার অ্যাক্টকে সংস্কারমুখী করা প্রয়োজন। কারণ যুগ ও সময়ের পরিপ্রেক্ষিত ১৯৫১ সালের টি প্ল্যান্টেশন অ্যাক্ট দিনে দিনে অপ্রাসঙ্গিক এবং অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ছে। একসময় মূলত চা রপ্তানি প্রসারের জন্য ওই আইন বানানো হয়েছিল। এতদিন শ্রমিকদের রেশন এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করতো চা বাগান কর্তৃপক্ষ। মূলত সামাজিক সুরক্ষার দায়িত্ব থাকতো বাগান কর্তৃপক্ষের ওপর। এই রক্ষাকবচকে সামনে রেখে ন্যূনতম মজুরি দেওয়ার ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ গরিমসি করতো বলে অভিযোগ। কিন্তু বর্তমান সময়ে রেশন, চিকিৎসা এবং পাশাপাশি চা শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থা করছে সরকার। এতদিন যে আইন ছিল তা কার্যত ব্রিটিশ আমলের, যার সঙ্গে বর্তমান সময়ের কোন মিল নেই। তাই নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাই মজুরির অন্তত ৮৫ শতাংশ যাতে শ্রমিকদের হাতে যায় তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। চা উৎপাদনকারী প্রতিটি রাজ্যকে একসূত্রে বাঁধার সময়কাল এসে গিয়েছে। লক্ষ্য করে দেখা যাচ্ছে চা শিল্পে শ্রমিকদের মজুরী এক এক রাজ্যে এক এক রকমের। কোন সামঞ্জস্য নেই। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে নরেন্দ্র মোদী চা বলয় অধ্যুষিত রাজ্যগুলিতে প্রচারে গিয়ে শ্রমিক সমস্যায় জোর দিয়েছিলেন। মূলত এই রাজ্যে এসে শ্রমিকদের কম মজুরি দেওয়ার অভিযোগ তুলে রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করেছিলেন। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর চা বাগানের সমস্যার সমাধানে তিনি যে পদক্ষেপ করবেন সেই প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে বেতন এবং মজুরির ক্ষেত্রে পূনর্বিন্যাসের জন্য রাজ্যগুলিকে প্রস্তাব দেওয়া নয়, কেন্দ্র সরাসরি বাতিল করে দিতে চলেছে ১৯৫১ সালের প্ল্যান্টেশন লেবার অ্যাক্ট। পরিবর্তে আনতে চলেছে অকুপেশনাল হেলথ এন্ড সেফটি (ও এইচ এস) বিল।
মালবাজারের লেবার অফিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ীঅ্যাক্সিস ব্যাংকের কাছে বাগানটি আর্থিকভাবে দায়বদ্ধ। বাগান পরিচালনার কার্যকর মূলধন আসে নিজস্ব অর্থনৈতিক সোর্স থেকে। বাগানটির লিজ হোল্ডার গুডরিক গ্রুপ লিমিটেড। লিজের ভ্যালিডিটির সময়সীমা পেরিয়ে গিয়ে নতুন করে লিজ রিনিউ হয়েছে। চা বাগিচায় হাসপাতাল ১ টি। ডিসপেনসারিও ১ টি। অনেকদিন আগে স্বাস্থ্য বিষয়ক একটা সার্ভের সময়ে আবাসিক ডাক্তার জে কে চৌধুরী ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিলের অনুমোদিত এমবিবিএস ডাক্তার ছিলেন। এখন আছেন কিনা খবর নিতে পারিনি। মেল ওয়ার্ডের সংখ্যা ১০ টি, ফিমেল ওয়ার্ডের সংখ্যা ১২ টি। আইসোলেশন ওয়ার্ড নেই। মেটারনিটি ওয়ার্ড ১ টি। বাগিচার হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার এবং অ্যাম্বুলেন্স আছে। চিকিৎসার জন্য শ্রমিকদের বাগানের পাশে অবস্থিত প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রেফার করা হয়। বাগিচায় লেবার ওয়েলফেয়ার অফিসার ২০০১ সালে নিযুক্ত হয়েছিলেন। নাম লালচাঁদ দেওয়ান। জানিনা আজও আছেন কিনা। বাগিচায় ওষুধ সরবরাহ আছে। উন্নত মানের পথ্য সরবরাহ এবং নিয়মিত ডায়েট চার্ট অনুসরণ করা হয় রোগীদের ক্ষেত্রে। স্থায়ী ক্রেশের সংখ্যা ২ টি। ক্ৰেশে পর্যাপ্ত জলের ব্যাবস্থা, শৌচালয় আছে। দুধ, বিস্কুট বা পুষ্টিকর খাবার ক্রেশের শিশুদের দেওয়া হয়। পর্যাপ্ত পানীয় জল ক্ৰেশে এবং চা বাগানে সরবরাহ করা হয়। বাগিচায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। বাগিচা সংলগ্ন উচ্চ বিদ্যালয় নেই। শ্রমিক সন্তানদের বিদ্যালয়ে নেবার জন্য যানবাহনের ব্যাবস্থা হিসাবে একটা বাস আছে। বাগানে বিনোদনমূলক ক্লাব, খেলার মাঠ আছে। ৬০-৭০ লাখ টাকা বছরে প্রভিডেন্ড ফান্ড বাবদ জমা পড়ে হোপ টি গার্ডেনে। বোনাস চুক্তি অনুযায়ী মিটিয়ে দেওয়া হয়। শ্রমিকদের মজুরি, রেশন জ্বালানী, ছাতা, চপ্পল, কম্বল এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা চুক্তি অনুযায়ী দেওয়া হয়। গড়ে বছরে দশ লক্ষ টাকা গ্র্যাচুইটি বাবদ শ্রমিকদের দেওয়া হয়। গড়ে বছরে ৩০-৩৫ জন শ্রমিক কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর গ্রহণ করে এই গ্র্যাচুইটি পেয়ে থাকে। হোপ চা বাগিচাতে ২০ শতাংশ হারে বোনাস দেওয়া হয়।
শিলিগুড়িতে দার্জিলিং এর সাংসদ রাজু বিস্তার সঙ্গে ঘটনাচক্রে একটি সেমিনারে দেখা হয়েছিল। সেখানেই জানতে পারলাম কিছু পুরনো অপ্রয়োজনীয় আইনকে বাতিল করার কাজ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ওই তালিকায় রয়েছে ১৯৫১ সালের টি প্ল্যান্টেশন অ্যাক্টও। কেন্দ্রের শিল্প বাণিজ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে টি প্ল্যান্টেশন অ্যাক্ট তুলে দেওয়া নিয়ে মতামত চেয়ে ২০২০ সালের জুলাই মাসে টি বোর্ড এর কাছে চিঠিও পাঠানো হয়েছিল। খসড়া অনুসারে প্রত্যেকটি রাজ্যের চা শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতনের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য রাখা হয়নি। চা বাগানের বেতনভুক্ত কর্মীদের বেতনের ক্ষেত্রেও রাজ্যভিত্তিক সামঞ্জস্য রাখার কথা বলা হয়েছে। শ্রমিক-কর্মচারী কল্যাণে মালিকপক্ষকে কি কি করতে হবে, রাজ্যের ভূমিকা কী হবে, চা শিল্পের উন্নতিতে কেন্দ্রীয় সরকার কি কি পদক্ষেপ করবে এবং কিভাবে সাহায্য করবে সবকিছুর উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তারপর করোনা পরিস্থিতিজনিত কারণে এবং পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ভোট চলে আসার পর বিষয়টা ধামাচাপা পড়ে যায়। রাজু বিস্তার মতে, যে বিল আনা হচ্ছে তা আইনসভায় পাস হলে এর ফলে শ্রমিক স্বার্থ যেমন রক্ষিত হবে, তেমনি মালিকদেরও ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে না। টাইয়ের ডুয়ার্স শাখার প্রাক্তন সম্পাদক রাম অবতার শর্মাজীকে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন বিভিন্ন কারণে চা শিল্প সরকারি তত্ত্বাবধানে থাকাই ভালো। চা চাষীদের সর্বভারতীয় সংগঠন কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অর্থাৎ সিস্টার সর্বভারতীয় সভাপতি বিজয় গোপাল চক্রবর্তীর মতে চায়ের অপ্রয়োজনীয় আইন বাতিল করে সেই স্থানে যে আইনই আনা হোক না কেন তাতে ক্ষুদ্র চা চাষীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। চা শিল্পে যাতে লাইসেন্স রাজের কোন ব্যবস্থা না থাকে সেটাও দেখতে হবে। পুরনো আইন বাতিল করে নতুন আইন কি হতে চলেছে তা যেহেতু প্রস্তাব আকারে রয়েছে সেহেতু মালিকবর্গ বা বাগানের মালিকপক্ষের প্রতিনিধিবর্গ বা শ্রমিক সংগঠনগুলির প্রতিনিধিরা তাদের মতামত দিতে চান নি। তবে চা শিল্পের স্বার্থকে সুরক্ষিত রাখার দাবি জানিয়েছেন চা শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴