হিলা চা বাগান/গৌতম চক্রবর্তী
হিলা চা বাগান
গৌতম চক্রবর্তী
-------------------
ভোট আসে এবং ভোট যায়। প্রতিশ্রুতি পূরণে একটির হিসাব নিকাশ শেষ হতে না হতে আরো প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে যায়। এবারের চা বাগিচা সফরে বের হয়েছি রাজনৈতিক দলগুলির চা বাগিচাকেন্দ্রিক অঞ্চলে শ্রমিক কল্যাণার্থে বিভিন্ন কাজের খতিয়ান এবং শ্রমিকদের পাওয়া না পাওয়ার তত্ত্বতল্লাশ করতে। আজকের সফর নাগরাকাটা ব্লকের হিলা চা বাগিচা। বাস্তবিক এখন কঠিন সময়ের মুখোমুখি উত্তরের চা শিল্প। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া সহ নানা ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধি হলেও গত কয়েকবছর ধরে বাড়ছে না চায়ের দাম। ফলে চরম দূর্দশার মধ্য দিয়ে চলছে চা শিল্প। ২০১৮ সালে দেশে চা উৎপাদন হয়েছিল ৯৭৯ মিলিয়ন কেজি। ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয়েছিল ১৩৩৯ মিলিয়ন কেজি। কিন্তু যে হারে উৎপাদন বেড়েছে তার সঙ্গে সমতা রেখে আন্তর্জাতিক বা জাতীয় বাজারে বাড়ছে না চায়ের দাম। এর নানা কারণ আছে। বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাঁচা চা পাতার ন্যূনতম বেঞ্চমার্ক মূল্য বেঁধে দেওয়া, নিলামের ক্ষেত্রে সংস্কার আনতে অধ্যাপক মহাদেবন এর সুপারিশগুলি কার্যকরের দাবি তোলা হয়েছে। সিসিপিএর বক্তব্য এই ক্ষেত্রে রপ্তানির পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। বাগিচা মালিকদের যৌথ মঞ্চ কনসালটেটিভ কমিটি অফ প্ল্যান্টেশন অ্যাসোসিয়েশন বর্তমান পরিস্থিতিকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে স্পেশাল প্যাকেজ চেয়েছে। পরিস্থিতির পরিবর্তনে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সাহায্য অত্যন্ত প্রয়োজন। একদিকে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন জোরালো করছে শ্রমিক সংগঠনগুলো, অন্যদিকে ২০২২ সালে শ্রমিকদের মজুরি ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি হওয়ায় চা শিল্পের ওপর চাপ পড়েছে বলেও দাবি। চা শিল্পে মন্দা চলছে বলেও দাবি চা বাগান মালিকদের সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ সিসিপিএ-এর। ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশন, ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, তরাই ইন্ডিয়ান প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশগুলি মনে করে বর্তমান পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন না ঘটলে চরম সমস্যায় পড়তে হবে শিল্পপতি থেকে শ্রমিকদের।
অন্যদিকে বাজার যখন ঠিক রয়েছে তখন কেন মজুরি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আপত্তি তোলা হচ্ছে এই প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। শিল্পপতিদের বক্তব্য গুণগতমান বজায় রাখতে গিয়ে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে অনেকটাই। তাই মন্দার বাজারে অতিরিক্ত ব্যয় কখনোই সম্ভব নয়। তাদের বক্তব্য উৎপাদনে তেমন হেরফের ঘটেনি। পরিবর্তন হয়নি দামের ক্ষেত্রেও। চা শিল্পপতিদের তরফে এই যুক্তি খাড়া করে তারা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিপক্ষে। এই কারণে আদালতের শরনাপন্ন হয়েছে তারা। পাশাপাশিভাবে চা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। ন্যায্য বেতনের দাবিতে আন্দোলনের মাঠে রয়েছে ফ্যাক্টরির বাবু ক্লার্ক সহ অফিস স্টাফেরা। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভুখা মিছিল এর ডাক দিয়েছিল কোন কোন শ্রমিক সংগঠন। এমন পরিস্থিতিতে মজুরি এবং বেতন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের একটা মহল সক্রিয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে শিল্পপতিরা চলছেন বলে তাদের প্রতিও বাড়তি সহানুভূতির দাবি শিল্পপতিদের। এই জটিল এবং টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে এলাম নাগরাকাটার হিলা চা বাগানে। উত্তরবঙ্গে দুটি বাগান আছে যে দুটির পরিচালক ওয়েস্ট বেঙ্গল টি ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড। কোম্পাণীর হেড অফিস কলকাতা। জলপাইগুড়ি জেলার নাগরাকাটা ব্লকের হিলা টি গার্ডেনটির ম্যানেজমেন্ট সহযোগিতা দিয়ে থাকে ডিবিআইটিএ। বাগানে মোট ম্যানেজারিয়াল স্টাফ তিনজন। বাগানে স্বীকৃত ট্রেড ইউনিয়ন বকলমে ০৫ টি। এগুলি হল এনইউপিডব্লিউ, পিটিডব্লিউইউ, টিডিপিডব্লিউইউ, সিবিএমইউ। হিলা চা বাগিচার আয়তন এবং চাষযোগ্য আবাদিক্ষেত্র ১৬৪০.২৯ হেক্টর। এক্সটেনডেড জমির পরিমাণ ৩১০ হেক্টর। আপরুটেড এবং নতুন বপনযোগ্য আবাদীক্ষেত্র ৮০ হেক্টর। ড্রেন এবং সেচের সুবিধাযুক্ত চাষযোগ্য উৎপাদনক্ষম আবাদিক্ষেত্র অঞ্চল ২৫০ হেক্টর। প্রতি হেক্টর উৎপাদনযোগ্য এবং সেচযুক্ত প্ল্যান্টেশন এরিয়া থেকে ১২০০ কেজি করে চা উৎপাদিত হয়।
হিলা চা বাগান রাজ্য সরকারের একটি কর্পোরেশন দ্বারা পরিচালিত। হিলা চা বাগিচার সাব স্টাফ ৩৮ জন, করণিক ৮ জন, ক্ল্যারিক্যাল এবং টেকনিক্যাল স্টাফ ৪ জন। বাগানে শ্রমিক পরিবারের সংখ্যা ৭৫০ জন এবং মোট জনসংখ্যা ৩০৪৯ জন। বাগিচায় স্থায়ী শ্রমিক ৭২৫ জন। ফ্যাক্টরিতে নিযুক্ত স্টাফ এবং শ্রমিক সংখ্যা ৮৫ জন। ক্ল্যারিক্যাল, টেকনিক্যাল এবং স্থায়ী শ্রমিক মিলে মোট শ্রমিক সংখ্যা ৮ জন। মোট কর্মরত শ্রমিক ৮৫৬ জন এবং শ্রমিক নয় এমন সদস্যদের সংখ্যা ২১৯৩ জন ।হিলা চা-বাগিচায় ব্যক্তিগত ইলেকট্রিক মিটার সহ পাকাবাড়ির সংখ্যা ১৭৫ টি। সেমি পাকা বাড়ি ৩৭৯, অন্যান্য বাড়ির সংখ্যা ৪১। মোট শ্রমিক আবাস ৫৯৫। বাগিচায় শতকরা ৭০ শতাংশ শ্রমিক আবাস এবং অন্যান্য বাসগৃহ আছে। চা বাগানে নিজস্ব চা পাতা উৎপাদনের গড় ১৪-১৫ লাখ কেজি। বাইরের বাগান থেকে কাঁচা পাতা সংগৃহিত হয় না। ছোটো এবং চরিত্রগত দিক দিয়ে অনুন্নত মানের এই বাগানে বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী মোট বাৎসরিক উৎপাদিত ইনঅরগ্যানিক সিটিসি চা ৩-৪ লাখ কেজি। সরকার তথা জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের কাছে বাগানটি আর্থিকভাবে দায়বদ্ধ। বাগান পরিচালনার কার্যকর মূলধন আসে রাজ্য সরকারের টি ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন থেকে। বাগানটির লিজ হোল্ডার বিশেষ ক্ষমতাবলে জলপাইগুড়ির জেলা শাসক। ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে করতে আর তথ্য সংগ্রহ করার সময় জানতে পারলাম ডুয়ার্সের বাগিচাগুলিতে আবার শুরু হয়েছে সর্দার বা আড়কাঠি ব্যবস্থা। নতুন করে চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকদের জন্যে আসছে শ্রমিক লাইন কথাটি, যাকে চা বাগান শ্রমিকদের নিজস্ব ভাষা শাদরিতে গিরমিক লাইন বলা হয়, তা চালু করা হয়েছে। অন্যদিকে চা সুন্দরী আবাসনের নামে রাজ্য সরকার কিছু আবাসন তৈরি করেছে, তাকে শ্রমিকরা বলে গিরমিক লাইন যা চা বাগান শ্রমিকদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তারা চায় বাস্তু জমির পাট্টা। আসলে গত দুই দশক ধরে উত্তরবঙ্গের চা বাগান শ্রমিকরা দাবি ও আন্দোলন করে আসছে ন্যূনতম মজুরি আইন ও শ্রমিকদের জন্য বাস্তু জমির নিরাপদ সত্ত্বা প্রদানের দাবিতে। আজও এই দুটি দাবি মানা হয়নি।
ডুয়ার্সে বহু চা শ্রমিক পরিশ্রুত পানীয় জল পান না। নদী, ঝোরা, কুয়ো থেকে জল নিয়ে আসতে হয় শ্রমিকদের। এমনকি চা বাগান থেকে পানীয় জলের ব্যবস্থা করে দেওয়ার পরেও সেই জল সবক্ষেত্রে পরিশ্রুত নয়। জানলাম এখানেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং রাজনৈতিক চাপানউতোর। চা বাগানগুলিতে জলপ্রকল্প তৈরিতে বাগানগুলির অনুমতিপত্র বা ছাড়পত্র প্রয়োজন। কারণ রাজ্য সরকার থেকে চা বাগানগুলিকে জমি লিজ দেওয়া হয়েছে। টাকা এসে পড়ে থাকলেও বহু চা বাগান থেকে কাজ করার ছাড়পত্র বা এনওসি সময়মতো না মেলায় জলপাইগুড়ির সাংসদের পানীয় জল প্রকল্পের কাজ দীর্ঘদিন শুরু হয় নি। পাশাপাশি কোন এজেন্সি কাজ করবে তা চূড়ান্ত হয়নি বলে সাংসদ তহবিলের দ্বিতীয় কিস্তির টাকাও সময়ে আসে নি। ফলে দীর্ঘদিন পানীয় জল প্রকল্পের উন্নয়নমূলক কাজ থেকে বঞ্চিত ছিল বহু বাগান। এর পরে পরেই জেলার ৬৪ টি চা বাগানেই পরিশ্রুত পানীয় জলের সমস্যা দূর করতে উদ্যোগী হয় রাজ্য সরকারের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর। ম্যানেজারের কাছ থেকে জানতে পারলাম নাগরাকাটার ভুটান সীমান্তের হিলা চা বাগানে ঘরে ঘরে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্প জলস্বপ্নের কাজ চলছে। আসলে বাগানটি উঁচু ঢালে অবস্থিত বলে বরাবর পানীয় জলের সংকট ছিল। গেলাম প্রকল্পটি দেখতে। এক বছর ধরে বাগান পরিচালকদের এনওসি দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রকল্প ঘিরে জটিলতা ছিল বলে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর কাজ করতে পারে নি। অবশেষে জলস্বপ্নের কাজ চালু নিয়ে বাগানে যান জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের মেন্টর অমরনাথ ঝা ও জেলা পরিষদের বন-ভূমি কর্মাধ্যক্ষ গণেশ ওরাওঁ। বাগিচা কতৃপক্ষের সঙ্গে তাঁদের বৈঠকের পর জট কেটে গিয়ে বাড়িতেই পরিশ্রুত জল মেলার সম্ভাবনা পাকা হয়। জানলাম জলাধারে জল উঠিয়ে তা বাগান জুড়ে সরবরাহ করা হবে। হিলায় এই প্রকল্পে দুটি বোরিং করা হবে। থাকবে দুটি পাম্পহাউস। ২০০ ঘনমিটার আয়তনের একটি জলাধার তৈরি করা হবে। জলের উৎস তৈরির জন্য বোরিং করার আগে সেখানে রেজিস্টিভিটি টেস্টের কাজ করা হবে। প্রকল্পটি শেষ হয়ে গেলে বাগানের ৬৪০টি পরিবার বাড়িতে বসেই জল পাবে। এতদিনে বোধহয় কাজ শেষ হয়ে গেছে।
কিছুদিন আগে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে বেশ কিছুদিন আগে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বাগানটি। এতে বিপদে পড়ে বাগান শ্রমিকরা। কীভাবে সংসার চলবে তাই নিয়ে শুরু হয় দুশ্চিন্তা। সংসারের খরচ জোগাড়ের পাশাপাশি ছিল ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য টাকার সংস্থান করা। জমানো টাকা থেকে বেশ কয়েকদিন চললেও খুব শিগগির অশান্তি শুরু হয়। উপায় দেখতে না পেয়ে লাগোয়া ভুটানে কাজের খোঁজে যায় শ্রমিকরা। এরপর থেকে সেখানেই চলছিল কাজ। সপ্তাহে তিনদিন ভুটানে গিয়ে কাজ করে তারপর ফিরে আসত কুলি লাইনে। এভাবেই চলত সংসার সামাল দেওয়া। বাকি দিনগুলিতে বাগান খোলার জন্য চলত লাগাতার আন্দোলন। বন্ধ বাগান খোলার জন্য বেশ কয়েকটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের সব কটাই ব্যর্থ হয়। এভাবে প্রায় মাসদুয়েক চলার পর শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে বসে বাগান কর্তৃপক্ষ। সেই বৈঠকেই মেলে বাগান খোলার সবুজ সংকেত। পরিস্থিতি অনুকূল হয়। নিয়ম মেনে খোলে চা বাগানটি। প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে বাগান খোলার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। হিলা চা বাগিচাতে ছোট হাসপাতালে মেল ওয়ার্ডের সংখ্যা ২ টি এবং ফিমেল ওয়ার্ডের সংখ্যা ৩ টি। আইসোলেশন ওয়ার্ড, মেটারনিটি ওয়ার্ড, বাগিচার হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার নেই। অ্যাম্বুলেন্স আছে। চা বাগিচায় আবাসিক ডাক্তার নেই। প্রশিক্ষিত নার্সের সংখ্যা ৩ জন। বাগিচায় নার্সের সহযোগী মিড ওয়াইভস ২ জন। কম্পাউন্ডার এবং স্বাস্থ্য সহযোগী ১ জন করে। চিকিৎসার জন্য শ্রমিকদের বাগানের পাশে অবস্থিত প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রেফার করা হয়। বাগিচায় লেবার ওয়েলফেয়ার অফিসার নেই ২০০৯ সাল থেকে। বাগিচায় ওষুধ সরবরাহ পর্যাপ্ত নয়। স্থায়ী ক্রেশের সংখ্যা ২ টি এবং অস্থায়ী ক্রেশ ১ টি। পর্যাপ্ত পানীয় জল ক্ৰেশে এবং চা বাগানে সরবরাহ করা হয়। শ্রমিক সন্তানদের বিদ্যালয়ে নেবার জন্য যানবাহনের ব্যাবস্থা হিসাবে একটা ট্রাক বা কেন্টার আছে। টি গার্ডেনে মাঝেমাঝে অনিয়মিত হলেও পিএফ বা গ্র্যাচুইটির টাকা জমা পড়ে। বোনাস চুক্তি অনুযায়ী মিটিয়ে দেওয়া হয়। শ্রমিকদের মজুরি, রেশন এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা চুক্তি অনুযায়ী দেওয়া হয়।
নাগরাকাটা ব্লকে কাজ করতে করতে জানতে পারলাম যেহেতু নাগরাকাটা মূলত চা বাগান অধ্যুষিত এলাকা তাই সেখানকার চা শ্রমিক পরিবারের মায়েরা তাদের সন্তানদের বাড়িতে কারও দায়িত্বে রেখে কাজে বেরিয়ে পড়েন। এতে তাদের অনেক রকমের সমস্যা হয়। তাই মহিলা চা শ্রমিকদের কথা মাথায় রেখে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর মহিলা শ্রমিকদের জন্য নাগরাকাটা ব্লকে পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার জন্য দু’টি করে মোট দশটি ক্রেসের প্রস্তাব পাঠায়। ব্লক প্রশাসন থেকে জেলায় ক্রেশের পরিকল্পনা প্রস্তাব আকারে জমা পড়ে। প্রস্তাবটি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরেও পাঠানো হয়। জানলাম নাগরাকাটা ব্লককে তিন কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসন থেকে যার মধ্যে থেকে ক্রেসের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৭৯ লক্ষ টাকা। বাসে করে ফিরছি জলপাইগুড়িতে। চোখে ভাসছে সেই দৃশ্য। পিঠে টুকরি, দুটো হাতের আঙুল চা গাছের পাতার উপর খেলে যাচ্ছে, হালকা হাতের ঝাঁকুনিতে পাতাগুলি প্রায় উড়ে গিয়ে পড়ছে পিঠে বাঁধা টুকরিতে, আর সবুজ পাতায় পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে পিঠের টুকরি। বুকে কাপড় দিয়ে বাঁধা ছোট্ট শিশুটি। মা-শ্রমিক তাকে নিরাপদে রেখে আসবে কোথায় ? তাই বৃষ্টিতে এবং রৌদ্রে বুকেই আশ্রয় শিশুটির। টুকরি ভরা পাতার বিনিময়ে যে শ্রমমূল্য নারী শ্রমিকেরা পায় তাতে উদর নামের গহ্বর তাদের কতটা পূর্ণ হয় সে প্রশ্ন তোলা যাবে না। তাহলে রাষ্ট্রশক্তি রে রে করে তেড়ে আসবে। কেননা ডুয়ার্সের চা বাগিচাগুলিতে রক্তাল্পতা আর অপুষ্টির সঙ্গে মা ও শিশুর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। এ বিষয়ে আলোচনা করা যাবে অন্য কোন বাগিচা সফরে।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴