সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

28-November,2022 - Monday ✍️ By- বিমল দেবনাথ 625

শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

শালসিঁড়ি-৪৩ 
বিমল দেবনাথ
^^^^^^^^^^^^^

বিকাশকে কোলকাতা থেকে ফোন করে চিফ। 
টানা আঠারো ঘণ্টা হাতির পিঠে বনটহল এবং ৩০৩ রাইফেল ও সতেজ বুলেট উদ্ধার করে অনেক বন্যপ্রাণ হত্যা প্রতিরোধ করার জন্য সাধুবাদ জানায়। অনেক বন্যপ্রাণী বেঁচে থাকার অর্থ যে আনেক গাছ-গাছালির অস্তিত্ব দীর্ঘ স্থায়ী হওয়া। চিফ  দায়িত্ব দেয় কাঁঠালডাঙ্গা রেঞ্জে ধরে রাখা  আসামিদের বিষয়ে তদন্তে সাহায্য করতে। বিকাশের মন এখন খুব সতেজ - গজরাজের শুঁড়ে উঠে আসা সূর্যের মতো। অফিসের চেয়ারে বসে ফুরফুরে মেজাজে মগজ চর্চা করে বিকাশ। 
 
- স্যার আমরা এসেছি। - আলো বলে।  
-  জগনু, আলো। তোমরা এসে গেছ। -বিকাশ দরজা খুলে বলে। 
- স্যার আজ সময় হবে?  -জগনু বলে। 
- চলো, এসে গ্যাছ যখন একটু বসি।   
শালবাড়ি চা বাগানে ফুটবল খেলতে গিয়ে পরিচয় হয় জগনুর সাথে। জগনু এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে। কিন্তু ফুটবল খেলায় খামতি নেই। লেফট উংইগার। বাঁ পায়ে ফুটবল এঁটুলির মত আটকে থাকে। শ্যাম থাপার মতো ব্যাক ভলি  মারে। পায়ে বল আসলে কালো চিতার মতো ছোটে। ডুয়ার্সের বিভিন্ন চা বাগানে খেপে ফুটবল খেলতে যায়।  গ্যাবার্ডিনের প্যান্টের পিস উপহার পায়। একদিন খেলার শেষে জগনুকে উৎসাহ দিতে গিয়ে জানতে পারে- শালডাঙ্গা চা বাগানে বিজ্ঞানের শিক্ষক নেই। বিজ্ঞানের বিষয়গুলো ভালো করে জানতে হলে যেতে হয় ৩৫ কিমি দূরে সদরে।  কড়াইগ্রাম ব্লক সদর হলেও রেঞ্জ অফিসের কর্মী, থানার পুলিশ, হাসপাতালের কম্পাউন্ডার আর কয়েক জন নার্স ছাড়া আর কোন সরকারি কর্মী থাকেনা। কড়াইগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক আসে সদর থেকে। কড়াইগ্রাম চা বাগান ও বন পরিবেষ্টিত বলে  অন্য জায়গা থেকে বিচ্ছিন্ন। ম্যালেরিয়ার আঁতুড় ঘর। শিক্ষকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে থাকলে যে শিক্ষার কিরণ পুরো এলাকার উপর পড়ে তার প্রকৃত উদাহরণ মথুরেশ স্যার- মাধুরীর বাবা। পড়াশুনা আর   ছাত্রছাত্রীদের ভালোবেসে সদর ছেড়ে স্কুলের পাশে বাড়ি করে স্থায়ী ভাবে বসবাস করে ময়নাডাঙ্গাতে। শিক্ষার আলো দিয়েছে বিকাশদের মতো অনেক ছাত্রকে। কিন্তু জগনুদের সেই সুযোগ নেই। ভালো ফুটবল খেলার পরেও মন খারাপ করে ঘরে ফেরে। বিকাশ বলে- 
- আর মন খারাপ করো না। তুমি চাইলে আমার কোয়ার্টারে আসতে পার। আমি বিজ্ঞানের বিষয়গুলো দেখিয়ে দেব মাঝে মধ্যে। 
- দারুণ হবে স্যার। আমি যাবো। আমার সাথে আমার আর এক বন্ধুকে নিয়ে যাবো। এবার আমরা দুই জন শালবাড়ি বাগান থেকে মাধ্যমিক দেব।  
- ঠিক আছে। তোমরা চলে এসো। 
তখন থেকে জগনু ও আলো মাধ্যমিক টেস্ট পরীক্ষার পর বিকাশের কোয়ার্টারের আশে পাশে ঘুর ঘুর করতো। সময় পেলে বিকাশ ওদের নিয়ে বসে পড়তো। বিকাশ ওদের জন্য সদর থেকে টেস্ট পেপার নিয়ে এসেছিল। ওদের পড়াশুনার কোন  সময় সীমা ছিলোনা। বিকাশের পরবর্তী ডিউটি কল বা আলোদের ম্রিয়মাণ না হওয়া পর্যন্ত টেস্ট পেপার সলভ করতে থাকত। পড়াশুনার মাঝে মাঝে চলতো বন ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের কথা। জগনু ও আলোর মাধ্যমে বিকাশের একটা  আলাদা সংরক্ষণ চক্র তৈরি হয়েছিলো। চাবাগানের ছেলেদের পড়াশুনায় সাহায্য করার জন্য কাবুও খুব খুশি ছিলো। এই জন্য কাবু বিকাশকে খুব মানত। পড়ার ফাঁকে জগনু বলে – 
- স্যার আলোর দাদা বলেছে, কালু সিং নাকি তার বাড়িতে অনেকগুলো শাল লগ রেখেছে। কালকে ভোর রাতে গাড়িতে করে পাচার করবে। 
- কোন কালু সিং?
- স্যার আপনাকে যে জংগলে চপার চালিয়েছিল। আপনি আসার পর যে একটা শাহানশা ভ্যান ধরেছিলেন, সেই কালু সিং।  
- আচ্ছা তোমরা তাহলে আজকে যাও। আবার আগামী পরশু এসো।  
যাবার আগে জগনু বিকাশ কাগজে কি সব ছক আঁকে আরো কি সব কথা বলে। আলো আলো করে দাঁড়িয়ে থাকে একটু দূরে। আলোরা চলে গেলে বিকাশের ডাকে কাবু আসে। 
- কাবু, আলোদের বাড়ি যাব।  
- কেন। ওতো কিছুক্ষণ আগেই এলো, আজ কি ওরা পড়ল না।
- না। আলোর আজ জন্মদিন। নিমন্ত্রণ করে গেলো। চলো সবাই মিলে যাই। 
কাবুরা সবাই মিলে আসে সেজেগুজে। বনের গভীরে সামনের সারির কর্মীদের সাজাগুজা মানে খাকি শার্ট অন্য রঙের প্যান্ট বা খাকি প্যান্টের সাথে অন্য রঙের শার্ট। সব সময় একটা সরকারি ছাপ থাকবেই। 
- স্যার চলুন।
- তোমরা যে সবাই ইউনিফর্মে এসে গেছ। 
- স্যার ইউনিফর্মেই যাই। রাতের বেলায় কখন কি হয় বলা যায়না। 
- তাহলে বন্দুক নিতে পারতে।
- বন্দুক দিয়ে কী হবে স্যার। এখন এই দিকে হাতি নাই।  
- হাতে যে দড়ি লাঠি রেখেছ।  
- ওই দুইটা আমাদের সব সময়ের সঙ্গী। আর এই টর্চ।   
কাবু টর্চ জ্বালায়। টর্চের আলো গিয়ে পড়ে ১৯৫৪ সালের প্ল্যান্টেশনের শাল গাছের গায়ে। বিকাশ চলে শাখায় শাখায়, কাবু কি চলে পাতায় পাতায়। বিকাশ নিজে নিজেকে পরীক্ষায় ফেলে। কালু সিং এর কথাগুলো দলা পাকিয়ে উঠে আসে গলা পর্যন্ত। বিকাশ কষ্ট করে মুখ বন্ধ করে রাখে। বিকাশ জানে গত নয়মাসে ওর একটা পরিচিতি হয়েছে। সেই পরিচিতিতে কয়েক জন শত্রুর সাথে শুভাকাঙ্ক্ষীও হয়েছে অনেক। মথুরেশ স্যার বলতেন- তোমার উদ্দেশ্য যদি ভালো হয় আর খারাপ গুণের থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পার, কিছু শত্রু তৈরি হলেও, সাময়িক কষ্ট হলেও সাফল্য তোমার আসবেই। দুর্বল  ভালো মানুষ সাফল্য দেখলে শক্তি পায়। তুমি ওদের মেরুদণ্ড হও। এই কয়েক মাসে বিকাশ বুঝে যায় কারো মেরুদণ্ড হওয়া দূরের কথা  নিজের মেরুদণ্ড সোজা রাখাটাই একটা লড়াই। পদ্ধতির পাদানি দিয়ে যন্ত্র তন্ত্র মন্ত্র সব গিয়ে মিশে যায় এক সাগরে।   
- স্যার আলোদের বাড়িতে যে আলো নেই। জন্মদিনের বাড়িতে এত তাড়াতাড়ি সবার ঘুমানোর কথা নয়। তাহলে… 
- শোন কাবু, এটা কালু সিং এর বাড়ি। ওর খালি গরুর ঘরে শাল মাল আছে। ওকে তুলবো।  
- কিন্তু চা বাগানের লেবার লাইনে কেউ এই ভাবে কোন দিন লোক তুলেনি আজ পর্যন্ত। 
- দেখ ওর কাছে যদি শাল মাল পাওয়া যায় তবে কিছু হবেনা। আমি সব দেখে নেবো। তুমি দেখ গরু ঘরে কী আছে। কাবু গরু ঘরে ঢুকে বেরিয়ে এসে বলে- 
- স্যার খবর ঠিক। মোট নয় পিস আছে। মনে হয় দুইটা শাল গাছের হবে। 
- লবকৃষ্ণ তুমি ওকে ডাকবে। তোমার ডাকে ও ঠিক বের হয়ে আসবে। 
- ঠিক আছে স্যার, ঠিক আছে। 
কালু সিং এর ঘরের দরজার একপাশে বিকাশ আর একপাশে কাবু দাঁড়ায়। ওদের পিছনে অন্য স্টাফ। কথা হয়ে আছে কালু সিং বের হলেই অতর্কিতে বিকাশ ধরবে জামার কলার বা চুলের মুঠি আর কাবু ধরবে কোমরে প্যান্টের বাঁধন। টেনে দ্রুত ঢুকানো হবে ওর গরুর ঘরে। কোনো কিছু বোঝার আগে - গরুর মতো।   
- কালু কালু ওঠ। - লবকৃষ্ণ চুপি চুপি ডাকে। আবার দরজায় ঠক ঠক করে ধাক্কা মারে। 
লবকৃষ্ণ সহজ সরল স্টাফ। মাথা মোটা। ওর পেটটা  পেট না হাঁড়িয়ার হাঁড়ি বোঝা মুশকিল। মাঝে মধ্যে চা বাগানে হাঁড়িয়া খেয়ে পড়ে থাকে। শালবাড়ি বিটে আসা ইস্তক লবকে নিয়ে বিকাশের চিন্তা যায়নি- কখন খবর আসে, লব হাতির পায়ের নিচে পড়ে মরে গেছে। হাঁড়িয়া খেয়ে মাতাল হয়ে বলতে থাকে বনের নানা কথা গ্রামে, চা বাগানে। সেই কথায় যে বনরক্ষায় ক্ষতি হয়, বিকাশ বুঝিয়েছে লবকে অনেক বার। কতবার লব নিজের ইচ্ছায়, বিকাশের কথাকে মান্য করে  কান ধরে ওঠ বস করেছে। দাঁত দিয়ে জিহ্বা কেটেছে। কোন দিন বনের কথা বাইরে বলবেনা বলে নিজের মেয়ের নামে কিরা কেটেছে। কিন্তু হাঁড়িয়া খেলে মনের সব কথা যে ওর হারিয়ে যায়। সেই লবকৃষ্ণ আজ দায়িত্ব পেয়ে বুকের ছাতি ছত্তিরিশ ইঞ্চি করে নিয়েছে। আবার ডাকে নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে মাতালের মতো করে- 
- কালু ও কালু… ওঠ…
- কে।
- লবদা…
- যা এলায়, মুই না উঠ। হাঁড়িয়া নাই। কালি আসিস।  
- হাঁড়িয়া না নাগে। হাড়িয়া খাইতে খাইতে খিব দেড়ি হয়া গেইল। আজি তোর এঠে থাকিম।
- না হয় আজি নাহয়। তুই যা। 
- মুই না জাং। দুয়ার খোলেক… না হইলে তর গোয়ালিত থাকি নইম। 
গোয়াল ঘরের কথা শুনে ঘরের মধ্যে মচ মচ করে শব্দ করে ওঠে। কালু সিং বলে-
- তোক ধরি আর না পারং লব দা। তুই হাঁড়িয়া খায়য়া এমন করিস। এর জন্য তোর কত বদনাম হয়, তাও তুই ঠিক হলেক নাই। আয় আয় ভীতরত আয়…
কালু সিং দরজা খুলতেই বিকাশ কালু সিং এর জামার কলার আর চুল শক্ত মুঠ করে ধরে। কাবু প্যান্টের কোমর বন্ধনী শক্ত করে ধরে ফেলে। অন্যরা দুই দিক থেকে কালু সিং এর দুই হাত পিছনে মুড়ে বেঁধে দেয় দড়ি দিয়ে। সবাই মিলে ঠেলে ঢুকিয়ে দেয় গোয়াল ঘরে। সেই ফাঁকে শূয়রের মতো গত গত করে ছুটে পালিয়ে যায় তিন চার জন লোক। সেই দেখে স্টাফরা চিৎকার করে ওঠে – ধর ধর। অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়, পাশের ঘর থেকে বেরিয়ে আসে কালু সিং এর বাবা মা। পাশের বাড়ি থেকে ওঠে আসে আলোর দাদার বন্ধু- বন্ধন। কিছুক্ষণের মধ্যে জড় হয়ে যায় গোটা পঞ্চাশেক  লোক। বিকাশ কালুকে একটা অপেক্ষাকৃত সরু লগ কাঁধে নিতে বলে – গোয়াল ঘরের ভিতরে। বন্ধন  রে রে করে  তেড়ে আসে গোয়াল ঘরে। সাথে সঙ্গ দেয় কালুর মা বাবা আরও কিছু লোক। বিকাশ বলে-
- একদম হল্লা নয়।   কাবু টর্চ মারো।   
কাবু শালের লগ গোনে এক দুই তিন… নয়। বিকাশ বন্ধনকে বলে –
- কালুর সাথে একটা লগ নিয়ে যাচ্ছি। কালকে সকালে সব লগ বিট অফিসে পাঠাবে। তা নাহলে ওর বাবা মা সহ তোমাকেও চালান করব, কোর্টে। 
- আপনি এটা করতে পারেন না স্যার। 
- কি পারি আর পারি না, সেটা আমার জানা আছে। এখন রাস্তা ছাড়।   
বিকাশ গোয়াল ঘর থেকে বের হয়ে যায়। কালু সিং এর এখন কোমরে মোটা দড়ি বাঁধা। লব একটা লগের এক মাথা কাঁধে নেয় আর একমাথা কালুসিং এর কাঁধে। কোমরের দড়ি ধরে আছে বাকিরা। কাঠ উদ্ধারে বন কর্মীদের নিজেদের কাঁধ লাগানো এবং একরোখা মনোভাব দেখে উঠোনের মধ্যে জড় হওয়া লোকজন সরে যায়। বিকাশ জীবনে প্রথম এরেস্ট করে আসামি। বীট অফিসে এসে কাবু সটান স্যালুট মারে-বিকাশকে… 

বিকাশের ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে। নিজে নিজেকে তারিফ করে। পুরনো প্রবাদ এখন আর চলেনা। এখন নিজের ঢাক নিজেকেই পেটাতে হয়। গুপ্তচর হ্যান্ডেলে ও যেন বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছে। গুপ্তচরবৃত্তি পেশা হলেও এই পেশায় ডিভোশন না থাকলে গুপ্তচররা ব্ল্যাকমেইলার হয়ে ওঠে। গুপ্তচরেরা কেমন হবে তা নির্ভর করে হ্যান্ডলারের উদ্দেশ্যের উপরে। ৩০৩ রাইফেল উদ্ধারের পর বিকাশের আস্থা আরও বেড়ে যায় ওর গুপ্তচরের উপর। মথুরেশ স্যার বলতেন – উদ্দেশ্য যখন এক হয় তখন পাথেয় কোন ব্যাপার নয়। সে দেশের হোক বা বনের। বিকাশের ফোন বেজে উঠে-
- হ্যালো, নমস্কার বিকাশ বলছি।  
- দাদা মানব বলছি। 
- বল।
- ওরা স্বীকার করে নিয়েছে। সেই বস্তাটি ওদের ছিল। আপনার খবরটি যে কত সঠিক ছিল। 
- সে ঠিক আছে, তবে ওদের শাস্তি দিতে গেলে খুব সঠিক ভাবে এগুতে হবে।  
- প্রমাণ তো হয়েই গেল। ওরা স্বীকার করে নিয়েছে। 
- শুধু মুখের কথায় হবেনা মানব। ডিফেন্স লইয়ার সব উল্টে দেবে। আমাদের তদন্ত করে প্রমাণ জোগাড় করতে হবে।
- কী ভাবে।
- একসময় চলে এসো, তদন্তের বিষয়ে আলোচনা করা যাবে। ওকে। বাই।
নির্মল বাবু যেন অপেক্ষায় ছিল, কখন বিকাশের ফোন শেষ হয়। ফোনে কথা শেষ হতেই নির্মলবাবু ঢুকে পড়ে বিকাশের রুমে আদুরে জায়েন্ট স্কুইরালের মতো। 
-  স্যার আপনার শরীর ঠিক আছে? শুনলাম পা লক হয়ে গেছিল। 
- সে অনেকক্ষণ হাতির পিঠে বসলে ওরকম হয়। এখন ফিট। বলুন কোন খবর আছে। 
- না তেমন খবর কিছু নেই। তবে একটা কথা ছিল স্যার।
- কি বলুন। 
- স্যার আপনি যে বলেছিলেন এদিকে গজ মুক্তার হাতি এসেছে, তাহলে সেটা কি ঠিক।
- আমি কোথায় বললাম। সে তো গুপ্তচরের খবর।
- সে যা হোক। স্যার আপনি কি বিশ্বাস করেন গজ মুক্তা আছে!
- দেখুন আমার বিশ্বাস অবিশ্বাসের কিছু নেই। পুরাণশাস্ত্রে এর অনেক উল্লেখ আছে। এখনো অনেকে বিশ্বাস করে গজ মুক্তা হয়। 
- কিন্তু স্যার…
- দেখুন জীবন বিজ্ঞানের দরজা জানালা নেই। জীবন বিজ্ঞান উন্মুক্ত বিহঙ্গের মতো। জিনের খেলা বোঝা মুশকিল। 
- বুঝলাম না স্যার।
- আমার একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি। ছাতারে পাখি চেনেন। 
- হ্যাঁ স্যার। 
- একদিন বনে দেখি সাদা ছাতারে পাখি।
- কি বলেন স্যার সাদা ছাতারে পাখি! 
- হ্যাঁ তাই তো দেখলাম। পরে জানলাম টরেস বলে এক জন বিজ্ঞানী ১৯৮০ সালে গবেষণা করে জানায় ১৮০০ ছাতারে একটি সাদা ছাতারে হয়। ঐযে জিনের খেলা। জিন কি না করতে পারে।   হয়তো জিনের খামখেয়ালিতে একটি দাঁত বেরই হলোনা। রয়ে গেল ভিতরে, গজ মুক্তা হয়ে।  
- তাহলে গজ মুক্তা…
- শুনুন আর একটা কথা বলি – এশিয়ার হস্তি বিশেষজ্ঞ দলের শ্রীলংকার প্রতিনিধি ডক্টর নান্দনা আটাপাট্টু মনে করে গজ মুক্তা হয়। ওনার মতে হাতির দাঁতে গজ মুক্তা উৎপন্ন হয়। গজ মুক্তা তৈরি হয় দাঁতাল হাতির বয়স ৬০ বছরের বেশী হলে। 
- কি বলেন স্যার! 
- হাতির দাঁতের গোঁড়ার দিকে এক তৃতীয়াংশে স্নায়ু, শিরা উপশিরা রক্ত মাংসপেশি থাকে যাকে এক কথায় পাল্প বলে। হাতির বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই পাল্প আস্তে আস্তে শুকিয়ে যায়। ফলে বয়স্ক হাতির দাঁতের গোড়ায় শঙ্কু (Cone) আকারে একটা ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়।  সেই শঙ্কুর গা থেকে দাঁতের কয়েকটা অংশ ভেঙে পড়ে। আর হাতির সাধারণ প্রবণতা হলো মাথা দোলানো। সেই দোলে ভাঙ্গা অংশগুলো আস্তে আস্তে গোলাকার রূপ নেয়। কোন ভাবেই এর আকার একটি ছোলা বা একটি চাউলের থেকে বড় হয় না। তবে সব হাতির এই গজ মুক্তা হয় না। হাতির দাঁতের ভিতরে যখন গজ মুক্তো হয়, হাতির চলার তালে সৃষ্টি হয় শব্দ ঝংকার, হাতির মাথার ভিতরে মনের ভিতরে। হাতি যেন শুনতে পায় তার মৃত্যু ঘণ্টা ধ্বনি।  কিন্তু বনের বাইরে অপরাধীরা সুযোগ খোঁজে বার্ধক্যের গতিহীনতার। তুলে নেয় হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। স্তব্ধ করে দিতে চায় ঐরাবতীয় সুর শব্দ।    
- তাহলে স্যার আপনার খবর একদম সঠিক।   
- সব সঠিক কিনা জানিনা। দেখি তদন্তে কি বের হয়। তবে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে সব দাঁতাল কে।  
- স্যার আর একটা কথা ছিল। 
- কি?
- গতকাল অফিসে শিবু ঘোষ মানিক মিত্র ভীম ওড়াও আর একজন এসেছিল। 
- আর একজন কে?
- সাত্তার আলি। ওরা বলছিল সাত্তার আলির বাড়ির সামনেই নাকি অপূর্বর গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়েছিলো।
বিকাশের মোবাইল বেজে উঠে। অপরূপা বলে-
- ছুটি পেলে।
- হ্যাঁ। আজ আসছি।
- তাড়াতাড়ি এসো। মাধুরীর কাছে যেতে হবে। ও নাকি অপূর্বর একটা গুরুত্বপূর্ণ পেন ড্রাইভ পেয়েছে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri