কুর্তি টি গার্ডেন/গৌতম চক্রবর্তী
কুর্তি টি গার্ডেন
গৌতম চক্রবর্তী
---------------------
এককথাতে ডুয়ার্সের পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। অস্বাভাবিক চড়া তাপমাত্রায় চা পাতার কুঁড়ির বৃদ্ধি, উৎপাদন এবং গুণমান ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে টিআরএ। বিরূপ আবহাওয়ার পাশাপাশি চা বাগানে কীটপতঙ্গের হানা ও গাছে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধিতে ধাক্কা খাচ্ছে দেশের চা শিল্প। টি রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার হিসাব এর ফলে চা পাতার উৎপাদন কমায় বছরে ক্ষতির পরিমাণ ২৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এই সময়কালে নাগরাকাটার বাগানগুলিতে সার্ভে করতে করতেই জানা গেল পরিস্থিতির মোকাবিলায় নতুন কয়েকটি কীটনাশক ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে কেন্দ্রীয় কৃষিসচিব মনোজ আহুজাকে চিঠি দিয়েছেন টিআরএ-র চেয়ারপার্সন নয়নতারা পালচৌধুরী। একই সময়কালে দূরভাষে টিআরএ-র সেক্রেটারি জয়দীপ ফুকনের কাছ থেকে জানতে পারলাম কেন্দ্র দ্রুত পদক্ষেপ করে দু’টি কীটনাশক ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। টিআরএ-র আর্জি মেনে অন্যগুলিকেও ছাড়পত্র দিলে এই মরসুমে চা শিল্পের উপকার হবে।
চিঠিতে সংগঠনের চেয়ারপার্সনের বক্তব্য ছিল একই সঙ্গে এই আবহাওয়া কীটপতঙ্গ ও রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়াতে সাহায্য করেছে। আগে তা ছিল না এমন নয়। তবে তখন ডুয়ার্স ও অসমের দক্ষিণ অংশে থাকলেও দ্রুত তা অসমের কাছাড়, ত্রিপুরা, অরুণাচল প্রদেশ, দার্জিলিং ও তরাই অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। টিআরএ-র বক্তব্য কেন্দ্রীয় কীটনাশক পর্ষদ এবং টি বোর্ডের নির্দেশ মেনে সাতটি কীটনাশক ব্যবহার করে চা শিল্প। তবে তাতে সব সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তাই এ বার আরও কিছু কীটনাশক দু’বছর ব্যবহারের জন্য সম্মতি চেয়েছে সংগঠনটি। চা শিল্পের দাবি গ্রীষ্মের তীব্র তাপপ্রবাহে কার্যত পুড়ছে উত্তরবঙ্গের বাগান। গত মাসে কিছুটা বৃষ্টির পরে আর তার দেখা নেই ডুয়ার্স, তরাই ও দার্জিলিঙে। পাল্লা দিয়ে চড়ছে তাপমাত্রার পারদ। আমজনতার মতোই যেন হাঁসফাঁস অবস্থা চা গাছগুলির। এই ভয়ঙ্কর তাপপ্রবাহের মধ্য দিয়েই একদিন পাড়ি দিলাম কুর্তি চা বাগানে।
নাগরাকাটা ব্লক এর কূর্তি চা বাগানটির পরিচালক গোষ্ঠী কোয়ালিটি টি প্ল্যান্টেশন প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। বাগানটি ডিবিআইটিএর সদস্য। বর্তমান কোম্পানি ১৯৯০ সালে বাগানটির দায়িত্বভার গ্রহণ করে। প্রথমে রজত ডালমিয়া বাগানটি কিনে নেন। পরে বালকৃষ্ণ ডালমিয়া এবং হরিশ্চন্দ্র পারেখ মানেকলাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হন ১৯৯২-৯৭ এর মধ্যে। বাগানে মোট ম্যানেজারিয়াল স্টাফ ১৩ জন। কোম্পানির হেড অফিস কলকাতায়। বাগিচাতে প্রতিষ্ঠিত এবং স্বীকৃত ট্রেড ইউনিয়ন দুটি। এগুলি হল পিটিডব্লিউইউ এবং সিবিএমইউ।
কূর্তি চা বাগিচার আয়তন এবং চাষযোগ্য আবাদিক্ষেত্র ৬৫৯ হেক্টর। ড্রেন এবং সেচের সুবিধাযুক্ত অঞ্চল ৪০৬.০২ হেক্টর। মোট চাষযোগ্য আবাদীক্ষেত্রও তাই। প্রতি হেক্টর প্ল্যান্টেশন এরিয়া থেকে ২৯৬৪ কেজি করে চা উৎপাদিত হয়। কূর্তি টি গার্ডেনটির সাব স্টাফ এর সংখ্যা ৮২ জন। করণিক ১২ জন, ক্ল্যারিক্যাল এবং টেকনিক্যাল স্টাফ ১৯ জন। বাগানের শ্রমিক পরিবারের সংখ্যা ৭৩১। মোট জনসংখ্যা ৫৭৮৫। স্থায়ী শ্রমিক ১১১৯ জন। এরা দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ পাতা তোলার জন্য নির্দিষ্ট মজুরী পায়। বিগত আর্থিক বছরে অস্থায়ী বিঘা শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৪৩৫ জন। ফ্যাক্টরিতে নিযুক্ত স্টাফ এবং শ্রমিক সংখ্যা ১৬৫ জন। চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক ৫২ জন। সর্বমোট সাব স্টাফ ৮২ জন। কম্পিউটার অপারেটর দুইজন। ক্ল্যারিক্যাল এবং টেকনিক্যাল স্টাফ এবং মোট শ্রমিক মিলে মোট শ্রমিক সংখ্যা ৩১। কর্মরত শ্রমিক ১৪৫১ এবং শ্রমিক নয় এমন সদস্যদের সংখ্যা ৪৪৩৪ জন। অফিস থেকে বেড়িয়ে ফিল্ড ওয়ার্কে যাবার জন্য টোটোতে উঠলাম।
দেখলাম মরসুমের শুরুতে বাজারে এই সময়ের ‘ফার্স্ট ফ্লাশ’ বলে পরিচিত চায়ের উৎপাদনে এই প্রতিকূল আবহাওয়ায় ধাক্কা লাগতে শুরু করেছে। চা শিল্প মহলের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দেখলাম তাদের আশঙ্কা চায়ের গুণমান খারাপ হওয়ারও। শিল্পমহলের ধারণা এই অবস্থা আরও কিছু দিন চললে প্রবল চাপ তৈরি হবে শিল্পের অন্দরে। বৃষ্টি হলেও ইতিমধ্যেই হওয়া ক্ষতি কতটা পূরণ করা যাবে তা নিয়ে সংশয়ে তারা। প্রখর তাপে চাতক পাখির দশা চা পাতার কুঁড়িরও। অভূতপূর্ব পরিস্থিতি।
বৃষ্টির অভাবে এ বার এখনও পর্যন্ত ‘ফার্স্ট ফ্লাশ’ চায়ের উৎপাদন ১৫-২০ শতাংশ কমেছে। গরমে কর্মীরাও ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না। তার উপর রফতানি বাজারে কমছে দার্জিলিং চায়ের চাহিদা। কারণ অর্থনীতিতে ঝিমুনির জন্য ইউরোপের অনেক দেশে একই চা পাতা দু’বার ফুটিয়ে খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। গত বছর উত্তরবঙ্গে চায়ের উৎপাদন নজির গড়েছিল। এ বার সংশয় বাড়াচ্ছে আবহাওয়া। এপ্রিলে আবহাওয়ার উন্নতি না হলে সব মিলিয়ে উৎপাদন মার খেতে পারে বলা হয়েছিল। অথচ মে মাসের মাঝামাঝি পরিস্থিতি ঘোরালো। ছোটো হলেও চরিত্রগত দিক দিয়ে উন্নত মানের কুর্তি চা বাগানে নিজস্ব চা পাতা উৎপাদনের গড় ৫৩-৫৫ লাখ কেজি। এবার ম্যানেজারের কাছ থেকে শুনলাম ৪০ লক্ষ কেজি হলেই তাঁরা খুশী থাকবেন। ফ্যাক্টরিতে নিজস্ব উৎপাদিত চা ১২-১৩ লাখ কেজি হয় প্রতিবছর। এবারে এখন পর্যন্ত কাজের যা ট্রেন্ড তাতে ১০ লক্ষ কেজি হলেই অনেক ভালো। বাইরের বাগান থেকে সংগৃহিত কাঁচা পাতায় চা তৈরি হয় না। মোট বাৎসরিক উৎপাদিত ইনঅরগ্যানিক সিটিসি চা ১২-১৩ লাখ কেজি হয় গড়ে। প্রত্যেকের কথাতেই চিন্তার ভাঁজ। বাগানটির লিজ হোল্ডার কোয়ালিটি টি প্ল্যান্টেশন প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। লিজের ভ্যালিডিটির সময়সীমা ছিল ২০০০ পর্যন্ত। লিজের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে যথোপযুক্তভাবে আবেদন করা হয়েছে।
এদিকে সমস্যা তীব্রতর। চা-বাগান শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করেছে রাজ্য সরকার। এ বার একলাফে ১৮ টাকা বাড়ানো হয়েছে দৈনিক মজুরি। আগে শ্রমিকদের মজুরি ছিল দৈনিক ২৩২ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ২৫০ টাকা। যদিও এই মজুরি বৃদ্ধিকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ‘দেখনদারি’ বলে কটাক্ষ করছে জয়েন্ট ফোরাম। রাজ্যে তৃণমূল সরকার আসার পর থেকে বেশ কয়েকবার চা-বাগানের শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে। ন্যূনতম মজুরি নিয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। বৈঠকও হয়েছে অন্তত ১৭ বার। কিন্তু সমাধানসূত্র বেরোয়নি। শিলিগুড়ির স্টেট গেস্ট হাউসে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের পর রাজ্য শ্রম দফতর চা-বাগানের মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসে। সেখানেই মজুরি বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। ন্যূনতম মজুরি চালুর বিষয়টি ঝুলে থাকায় বিরোধীদের প্রতিবাদের জেরে হট্টগোলও হয় বৈঠকে। পাশাপাশি বিরোধীদের দাবি বাগানের জমি কোনও বেসরকারি সংস্থার কাছে বিক্রি করা যাবে না। জয়েন্ট ফোরামের তরফে জিয়াউল আলম বলেন শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি চালু না করতে পেরে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মজুরি বাড়ানো হচ্ছে। এটা দেখনদারি ছাড়া কিছুই নয়। অবিলম্বে ন্যুনতম মজুরি চালু করতে হবে। তার প্রেক্ষিতে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন সরকার ন্যুনতম মজুরি দিতে প্রস্তুত। বিরোধীদের নিয়ে যে ন্যুনতম মজুরির কমিটি গঠন করা হয়েছে তারা বৈঠকে বসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারকে জানালে সরকার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ন্যুনতম মজুরি চালু করে দেবে। তবে ১৮ টাকা বৃদ্ধি পেলেও ন্যুনতম মজুরি নিয়ে যেমন আলোচনা চলছে তা চলতেই থাকবে বলেও মলয়বাবু জানিয়েছিলেন। শ্রমিক লাইনে ঘুরে ছবি তুলে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে আবার অফিসে এলাম। বড়বাবুর কাছ থেকে বিস্তাড়িতভাবে জানলাম ইউবিআই ব্যাংকের কাছে বাগানটি আর্থিকভাবে দায়বদ্ধ। বাগান পরিচালনার কার্যকর মূলধন আসে ব্যাংক এবং নিজস্ব অর্থনৈতিক সোর্স থেকে।
কুর্তি চা-বাগিচায় ব্যক্তিগত ইলেকট্রিক মিটার সহ পাকাবাড়ির সংখ্যা ৬৮৮ টি। সেমি পাকা বাড়ি ৪৩, বৈদ্যুতিক সংযোগবিহীন শ্রমিক আবাস নেই। সরকারি সহযোগিতাতে তৈরি বাড়ি নেই। মোট শ্রমিক আবাস ৭৩১। শ্রমিক সংখ্যা ১৪৫১। বাগিচায় শতকরা ৫০ শতাংশ শ্রমিক আবাস এবং অন্যান্য বাসগৃহ। চা বাগিচায় হাসপাতাল ১ টি। ডিসপেনসারি নেই । আবাসিক ডাক্তার আছে। প্রশিক্ষিত নার্সের সংখ্যা ১ জন। বাগিচায় নার্সের সহযোগী মিড ওয়াইভস ২ জন। কম্পাউন্ডার ১ জন, স্বাস্থ্য সহযোগী ১ জন। মেল ওয়ার্ডের সংখ্যা ৯ টি, ফিমেল ওয়ার্ডের সংখ্যা ৫ টি। আইসোলেশন ওয়ার্ড ২ টি, মেটারনিটি ওয়ার্ড ৪ টি।
বাগিচার হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার আছে। অ্যাম্বুলেন্স আছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। চিকিৎসার জন্য শ্রমিকদের বাগানে অবস্থিত প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রেফার করা হয়। বাগিচায় লেবার ওয়েলফেয়ার অফিসার ২ জন ছিলেন একসময়। আর বণিক এবং বি কে ঘোষ। বাগিচায় ওষুধ সরবরাহ করা হয়। উন্নত মানের পথ্য সরবরাহ এবং নিয়মিত ডায়েট চার্ট অনুসরণ করা হয়। বাগিচায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। বাগিচা সংলগ্ন উচ্চ বিদ্যালয় স্কুল নেই। নাগরাকাটা হাই স্কুল, নাগরাকাটা হিন্দী হাই স্কুল অনেকটাই দূরে। শ্রমিক সন্তানদের বিদ্যালয়ে নেবার জন্য যানবাহনের ব্যাবস্থা হিসাবে একটা বাস আছে। বাগানে খেলার মাঠ আছে।
কুর্তি টি গার্ডেনে নিয়মিত পি এফ বা গ্র্যাচুইটির টাকা জমা পড়ে। বোনাস চুক্তি অনুযায়ী মিটিয়ে দেওয়া হয়। ২০ শতাংশ হারে ১৫২০ জন স্থায়ী শ্রমিক গড়ে ৭০ লাখ টাকা বছরে বোনাস পায়। ২০১২ পর্যন্ত গড়ে প্রায় ৬০ লাখ টাকা করে বছরে পি এফ জমা পড়ত। গ্র্যাচুইটিও বকেয়া থাকে না। ২০১২ পর্যন্ত গড়ে ৩০ জন শ্রমিককে গড়ে ৬ লাখ টাকা করে বছরে গ্র্যাচুইটি দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের মজুরি, রেশন এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা চুক্তি অনুযায়ী দেওয়া হয়। দেখলাম কুর্তি চা বাগিচাতে ক্রেশের সংখ্যা ৩ টি। দুধ, বিস্কুট বা পুষ্টিকর খাবার ক্রেশের শিশুদের দেওয়া হয়। পর্যাপ্ত পানীয় জল ক্ৰেশে এবং চা বাগানে সরবরাহ করা হয়।
শুনলাম রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এবার চা বাগানের মায়েদের জন্য নয়া উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চা বাগান সংলগ্ন এলাকাতেই হবে বাচ্চাদের রাখার ক্রেশ। সব চা শ্রমিককে দেওয়া হবে পরিচয়পত্রও। রাজ্য সরকারের এমন উদ্যোগের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। অনেককে বাচ্চা পিঠে বেঁধে চা পাতা তুলতে বেরোতে হয়। এ বার থেকে বাচ্চা কোলে কাজে যেতে হবে না। বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করতে মায়েদের অসুবিধা হয়। ক্রেশে বাচ্চাদের রেখে মায়েরা নির্বিঘ্নে কাজে যেতে পারবেন। জানলাম এ বার থেকে বাচ্চা নিয়ে কাজে যেতে হবে না মায়েদের। ক্রশে থাকবে বাচ্চারা। ক্রেশে ৫০টি করে বাচ্চা রাখার ব্যবস্থা হবে। প্রথমে একটি ক্রেশে ৫০টি করে বাচ্চা রাখা গেলেও পরে সেখানে যাতে ৬০-৭০টি বাচ্চা রাখার ব্যবস্থা করা যায় সেই ব্যবস্থাও করা হবে। পশ্চিমবঙ্গের চা বাগানগুলিতে মোট তিন লক্ষ ৮৩ হাজার চা শ্রমিক রয়েছেন। প্রত্যেক চা শ্রমিকের জন্য পরিচয়পত্র তৈরি করা সরকারের আশু লক্ষ্য। ক্রেশ ও পরিচয়পত্র ছাড়াও আগামী ছ’মাসের মধ্যে চা বাগান জুড়ে বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে সরকারের। স্বাস্থ্য পরিষেবা দেবার জন্য চা বাগানে একটি অ্যাম্বুলেন্স দিতে পারে সরকার। শুনলাম ছ’মাসের মধ্যে ২০টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি হবে। সঙ্গে থাকবে ট্রমা কেয়ার সেন্টার-সহ অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবাও। চা বাগানের পানীয় জলের পরিস্থিতি ঠিক করতে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের মন্ত্রী পুলক রায়কে সেখানে পাঠানোর কথাও ভেবেছে সরকার।
চা-শ্রমিকেরা মুখ ফেরানোয় গত লোকসভা ভোটে শুধু জলপাইগুড়ি-আলিপুরদুয়ার আসনেই নয়, কোচবিহার এবং পাহাড়েও দল বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছিল। গত বিধানসভা ভোটেও চা-বলয়ের ভোট পায়নি তৃণমূল, হাতছাড়া হয়েছিল শ্রমিকপ্রধান এলাকার আসনগুলি। তৃণমূলের দাবি, চা-বাগানগুলিতে সংগঠন থাকলেও মূল দলের সঙ্গে সে সংগঠনের সমন্বয় ছিল না। যাঁরা সারা বছর চা-বাগানে সংগঠন করতেন ভোটের সময়ে তাঁদের অনেককেই ‘কোণঠাসা’ করে রাখা হত বলে দাবি। পাশাপাশি যাঁরা চা-বাগানে ভোটের প্রচারে যেতেন তাঁদের পক্ষে এক-দু’দিনে চা-শ্রমিকদের মনের কথা বুঝে ওঠা সম্ভবও নয়। এ সব কারণেই ভোটের সময়ে চা-শ্রমিকদের সঙ্গে তৃণমূলের মূল সংগঠনের দূরত্ব তৈরি হয়ে যেত বলে দাবি। সে দূরত্ব ঘোচাতেই পঞ্চায়েত এবং লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলের নজর চা-বলয়ে। চা-বাগানে তৃণমূলের যত সংগঠন ছিল, সব ক’টিকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসা হয়েছে। ওদিকে ধীরে ধীরে বাগিচাগুলিতে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করছে আরএসএস। ফলে পন্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে ডুয়ার্সের চা বলয়ে উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করেছে ক্রমাগতই।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴