সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

28-November,2022 - Monday ✍️ By- বিমল দেবনাথ 644

শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

শালসিঁড়ি-৪০
বিমল দেবনাথ 
^^^^^^^^^^^^^

তাপস কন্ট্রোল থেকে খবর নাও সব পেট্রোলিং দলগুলো ফিরেছে কিনা। 
- কলিং কনট্রোল কলিং কনট্রোল।
- রেসপন্ডিং কনট্রোল। নির্মলবাবুর গলা ভেসে আসে। 
- সব পেট্রোলিং পার্টি ফিরেছে? 
- সবাই হেড কোয়ার্টারে ফিরে গেছে। 
- কোন খবর আছে।
- না তেমন কোন খবর নেই । তোমরা কখন ফিরছ? উৎকণ্ঠা নিয়ে জিজ্ঞাসা করে নির্মলবাবু।  
- দেখি, এখনো বনের ভিতরে। ওভার।   
তৃতীয়ার চাঁদ ওঠার মুখে ঢেকে যায় মেঘে। দূরে দক্ষিণ পূর্ব কোণে বিদ্যুৎ চমকানোর আলো দেখা যায়। বিকাশ আকাশ দেখে। বৈশাখী রাতের আকাশ যেন কালো মেঘের সমুদ্র। হাওয়ায় ভেসে আসা মেঘের দল যেন কালো কালো ঢেউ। সেই ঢেউ এসে ভাঙ্গছে বিকাশের বুকে। গজরাজ যতই বনের ত্রাস হোকনা কেন সেটাতো অভয়ারণ্যে। এটা তো টেরিটোরিরাল ফরেস্ট। এদিকে সে কোন দিন আসেনি। এই বন যে তার চেনা নয়। গজমুক্তার হাতির খোঁজ যে মনের মুক্তা মলিন করে দিচ্ছে। আজ রাতে যে কপালে কি আছে বিকাশ বোঝার চেষ্টা করে। বজ্র বিদ্যুতের চমকানি আর ঠাণ্ডা হাওয়ার তাড়া ভালো কথা বলে না। কয়েকটি টিটিভ পাখি (Red-Wattled-Lapwing) মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেল তীব্র স্বরে হটটিটি হটটিটি করে ডেকে। ওরা কি বলে গেল! কেমন যেন প্রশ্ন করে গেল- ডিড-হি ডু-ইট… ডিড-হি ডু-ইট… 
- মনে হয় বৃষ্টি আসবে। - কার্ত্তিক বলে।     
- আর কতক্ষণ লাগবে পৌঁছাতে।
- জানি না স্যার।
- মানে?
- গজরাজ নিজের মতো করে হাঁটছে। এই বনে যে আমি রাস্তা চিনিনা। 
- ভগবান তুমি বুঝতে পারব না?- বিকাশ জিজ্ঞাসা করে।     
- বুঝতে পারছি না স্যার। হাতির পিঠে বসে সব গুলিয়ে গেছে।  
- চিন্তা নাই, আমরা ঠিক জঙ্গল থেকে বাইরে বাইর হইয়ে যাবো। গজরাজ ঠিক বাইর করে দিবে। ও এমন হাতি যে ওর যাইবার পথে প্লাস্টিক বা ঐ রকমের জংগলের বাইরের কিছু পড়লেই সেখানে দাড়াই পড়ে। নতুন জিনিস আমার হাতে তুলে দিবে। ওর অনুমান ক্ষমতা খুব।  
- সেটা কেমন?   
- একদিন লালবাড়ি ক্যাম্প থেইকে বড় সাহেব মেনকার পিঠে উঠছে। আমি সাহেবের পিছনে পিছনে যাচ্ছি, জংগলের ভিতরে বিচনবাড়ি (plantation) দেখতে। হঠাৎ দেখি গজরাজ দাড়ায় পড়লো। আমি জানতাম ও নিচ্চয় নতুন কিছু পাইছে। কিন্তু আমিতো কিছু দেখছিনা। দেখি ও মাথার উপরে শুঁড় তুলে আছে। ওর শুঁড়ের মাথায় ধরা আছে একটা ছোট কালো গোল পাতলা জিনিষ, দেবারুও চিনলোনা। জঙ্গলে আবার প্লাস্টিকের জিনিষ না ফেইলে, পকেটে রাইখে দিলাম।   
- বড় সাহেব কেন গজরাজের পিঠে উঠল না?   
- জঙ্গলে পেট্রোলিঙ্গের সময় হাতির পিঠে ঘোড়ার পিঠে বসার মতো কইরে বইসতে হয়, দুই দিকে দুই পা দিয়া। গজরাজের পিঠ বেশী চওড়া। মেনকার পিঠে দুই পা দুই দিকে দিয়া বসতে সুবিধা হয়। 
- কালো চাকতিটি কি ছিল?   
- আমরা ডিউটি শেষ কইরে ক্যাম্পে ফিইরে আসি। জঙ্গলে বড় সাহেব অনেক ফটো তুলছিল। বেশ খুশি ছিলেন। হাতির পিঠ থেইকে নাইমে ওনার মেজাজ যেন কেমন খারাপ হইয়ে যায়। বলে “যাঃ, ক্যামেরার ল্যান্সের ক্যাপটা হারিয়ে গেল”। আমি বললাম, স্যার এটা কি। স্যার খুশি হয়ে ১০০ টাকা দিল…হে হে হে…    
অর্থের কথা কত অর্থ বোঝায়! এই অবস্থায়ও হাসতে পারে কার্ত্তিক! আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, গরম হাওয়া কখন উধাও হয়ে গেছে গজমুক্তার হাতির মতো। এখন দক্ষিণের ঠাণ্ডা হাওয়া শরীরে শীত ঢেলে দিচ্ছে আস্তে আস্তে ধীরবিষ চন্দ্রবোড়া-সাপের বিষের মতো। সারাদিনের উৎপাদিত ল্যাক্টিক অ্যাসিড মিশে যাচ্ছে কোষে ক্রমশ। শরীর যেন তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়তে চায়। টাস্কার হান্টারের কথা মনে পড়তে আবার মেরুদণ্ড শক্ত হয়ে ওঠে লোহা কাঠের মতো। হঠাৎ এমন বজ্রপাত হলো যেন কানের পর্দা ফেটে গেলো। বিদ্যুতের ঝলকানিতে দেখা যায় মেঘে ঢাকা অন্ধকার রাতে বনের ভয়ানক সুন্দর দৃশ্য। বজ্রপাতের গুড় গুড় শব্দ শেষ হতেই শুরু হলো মুষলধারে বৃষ্টি।    
মানুষের জীবনে মাঝে মধ্যে এমন দিন আসে যখন সব থাকতেও নিঃস্ব হয়ে থাকতে হয় সামান্য অদূরদর্শিতার জন্য। প্রয়োজনের সময় সঙ্গে নেই ছাতা, আলো। বৃষ্টিতে ভিজে বন্ধ হয়ে গেল ওয়াকিটকি। ছিন্ন হয়ে গেল সারা বিশ্বের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ। তুমুল বৃষ্টি আর হাওয়া; দুটি হাতি যেন উত্তাল সমুদ্রে শক্ত হালের ডিঙি। বৃষ্টির দাপটে বজ্র-আগুন  নিভে গেছে কিছুক্ষণ হলো। দিক ভ্রম হলেও প্রাণ বেঁচে যাবে এই যাত্রায় গজরাজের কৃপায়। হাতি বিশেষজ্ঞরা বলে হাতি নাকি সম্পূর্ণ পোষ মানে না। ৪০% বুনো মন থাকে। মনে হয় গজরাজ সে রকম হবেনা। তাহলে ওর এত নাম হতোনা। কিন্তু মেনকা? এই মাতাল বুনো ঝড়বৃষ্টির পরিবেশ যদি ওর বুনোত্ব ফিরে আসে! ঝড়বৃষ্টির ঠাণ্ডা জলের ফোঁটা কাঁটার মতো বেঁধে শরীরে ও মনে। মাঝে মধ্যে কেঁপে ওঠে সবাই। বিকাশ কথা বলে কাটাতে চায় কষ্ট। এই ঝড় বৃষ্টিতে কে শুনবে ওদের কথা। 
হাতির দল যখন এক জায়গায় অনেক দিন থেকে গিয়ে, কৃষকের উৎপাদিত ফসল বা অন্য কোন সম্পদ নষ্ট করে অতিষ্ঠ করে তোলে- তখন হাতিদের কথা ব্যথা ভুলে মানুষের সম্পদ জ্বলে ওঠে জ্বল জ্বল করে। হাতিদের পারিবারিক বন্ধন ভেঙ্গে দিয়ে হাতিদের মধ্যে তাদের বাসস্থানের উপরে ভীতি তৈরি করানোর জন্য ধরে নেওয়া হয় দলের প্রিয় সদস্য/ সদস্যাদের। জীবন্ত হাতি ধরার বিষয়টি বিকাশ পড়েছে অনেক লেখায়। কার্ত্তিক কয়েকটি হাতি ধরার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলো।  
- কার্ত্তিক তুমি তো গর্জন হাতি ধরার সময় দলে ছিলে। - বিকাশ জিজ্ঞাসা করে। 
- হ্যাঁ স্যার।   
- কি ভাবে গর্জনকে ধরে ছিলে।   
- সে অনেক কথা। 
- কি হয়েছিলো।
- হাতি জোত, একটা চার পাঁচশ হেক্টরের জঙ্গল। চার পাশে গ্রাম আর হাজার হাজার মানুষ। জঙ্গলে অনেক গাছ আছে, কিন্তু হাতির খাওয়ার মতো গাছ নাই। 
- কেন?
- কেন আবার সারা দিন হাজার হাজার মেয়েছেলে জংগলে ঢুকে সব সরু ছোট গাছগুলা কাইটে নিয়ে যায়- যার অনেক গুলাই হাতির খাওয়া। মেয়েছেলেরা তো বড় মোটা গাছ কাইটতে পারে না আর সব মোটা বড় গাছ হাতি খায় না।   
- তাহলে হাতি যায় কেন?  
- আপনি তো জানেন স্যার, হাতিরা ওদের রাস্তা বংশের পর বংশ ধইরে মনে রাখে।   
- আচ্ছা, ঐ বনটা হাতির রাস্তায় পড়ে।      
- হাতিগুলা এক বন থাইকে অন্য বনে যাইতে এই হাতিজোতে আসে। কিছু দিন থাইকে আবার চলে যায়। সেইবার জংগলের উপর নাকি খুব অত্যাচার হইছিলো। গরমের সময় আগুন লাইগে জংগলটা পুরা পুইড়ে যায়।  বর্ষার পরেও  জংগল তেমন ঘন হয় নাই। কিন্তু চারপাশে ধান হইছিলো খুব ভালো। হাতিদের কাছে ধান আর  ঘাস তো এক। সারা দিন জংগলে বিশ্রাম করতো আর রাত হইলে গ্রামের ধান খেতে চরে বেড়াইত। বনের স্টাফদের  হাতি তাড়াইতে তাড়াইতে ঘাম বাইর হয়ে যাচ্ছিল। গ্রামের মানুষ বারে বারে বনের অফিস ঘেরাও কইরতে থাকে। অবস্থা ভয়ানক হইয়ে ওঠে। তখন আমাদের ডাকা হয় সেই দলের একটি হাতি ধরার জন্য।    
- আচ্ছা। 
- আমি ছিলাম আর আসাম থেকে তিনটা হাতি আসে। আসাম থেকে বিখ্যাত ফাঁদি আসে।  
- ফাঁদি তো ফাঁদ ছোঁড়ে।    
- হ্যাঁ।    
- তারপর। 
- হাতিজোত বিটে আসামের তিনটি হাতি আর গজরাজকে একসাথে কাছা কাছি বান্ধা হয়। হাতিগুলাকে দুই দিন রেস্ট দিই। তাতে হাতিগুলা নিজেদের মধ্যে ভাব করে নেয়। হাতিগুলা সব মাহুতের কথা বুঝে যায়, এখানে কি করতে হবে। পর পর দুই দিন জংগলের হাতিগুলা আর বিটের দিকে বাইর হয়না। উল্টা দিকের গ্রামে বাইর হয়। রাইতে আমরা মাহুতরা ফাঁদির সাথে সেই গ্রামের দিকে যাই হাতিগুলাকে দেখতে। সার্চ লাইটের আলোতে হাতিগুলাকে আমরা দেখি। ফাঁদি বলে দুই তিনটা হাতি আছে যেগুলা ধরা যাবে।   
- কি ভাবে বুঝল?
- দলের সব হাতি ধরে তো লাভ নাই। খুব ছোট হাতি ধরলে তাকে বাঁচানো মুশকিল হবে, আবার খুব বড় হাতি ধরলে তাকে ট্রেনিং দেওয়া খুব কষ্ট। 
- তাহলে। 
- ফাঁদি বলছিল, ডিপার্টমেন্ট যেমন চায় তেমন হাতি ধরা হয়। 
- আচ্ছা।
- ধরেন, ধরা হাতি কাজে লাগাবে না। এক জংগলে ধরে দূরে অন্য জংগলে পাচার করে দেওয়া হব, তখন বড় হাতিও ধরা হয়। তবে ফাঁদিহাতি থেকে চেহারায় ছোট হইতে হবে।
- কেন?  
- না হইলে, ফাঁদির হাতিকে টাইনে নিয়ে যাবে।   
- তোমরা কি করলে।
- আমাদের বলা হইলো ৬-৭ ফুটের হাতি ধইরতে হইবে।  
- আচ্ছা।    
- তিন দিনের দিন সকালে সকালে ওইঠে গেলাম। ফাঁদি বলল সে গজরাজে উঠবে- ফাঁদ নিয়ে। আমি তো প্রথমে ভয় পাইয়ে গেলাম। ফাঁদি বলল- কোন ভয় নাই আমি তো আছি। গজরাজ খুব সাহসী হাতি ও ভালো হাতি। ওকে নিয়ে এবার ফাঁদ ছুঁড়বো। একবার হাতি ধরলেই, সাহস হয়ে যাবে ও ফাঁদি হাতি হয়ে যাবে। গজরাজের নাম সারা দেশে ছড়াই পড়বে। তখন আমার খুব আনন্দ হল। ফাঁদির কথা মতো পেট্রোলিং গদি করে, বুকে ফেরা বাঁধলাম। বার গুনের রশা দিয়ে। 
- বুক ফেরা তো সামনের পায়ের পিছনে বুকের কাছে এমন বাঁধ যে যতই টান পড়ুক বুকে চাপ লাগবে না।  
- হ্যাঁ। 
- আর বার গুন মানে একটা রশিতে বারোটি সরু রশি একসাথে পাঁক খাওয়ানো আছে, বেশ শক্ত। 
- হ্যাঁ।  
- তারপর।
- ফাঁদি বলল- ও আমার পিছনে ফাঁদ নিইয়া বসবে। গজরাজ আগে আগে যাইবে গজরাজের পিছনে একটা হাতি থাকইবে, আর দুই পাশে দুইটি হাতি থাইকবে।  
- আচ্ছা। 
- ফাঁদি দুই হাতে ঝাঁপি জালের মতো ফাঁদি রশা ধরে বইসে থাকবে আর যে হাতিটার কাছে যাইতে বইলবে সেই হাতিটার কাছে যাইতে হইবে লম্বা লম্বা পা ফেইলে। আর যদি জংলী-হাতি টার্গেট-হাতিকে বাঁচাতে ঘুরে অ্যাটাক করে তখন দুই পাশের হাতি ও পিছনের হাতি ফাঁদি হাতিকে বাঁচাইবে। জংলী হাতি ফাঁদি শিকারের সময় ফাঁদি হাতিকে বেশী আক্রমণ করে। এই রকমের আক্রমণে কত ফাঁদি মারা গেছে। 
- এতো ভীষণ রিস্কের কাজ।     
- হ্যাঁ স্যার। 
- তারপর।
- ফাঁদি যে সব সময় এক বার ছোঁইড়ে জংলী হাতির গলায় ফাঁদ লাগাইতে পাইরবে, তা কিন্তু নয়। কখনো কখনো দুই তিন বারও ছুঁইড়তে হইতে পারে। তখন জংলীর তালে তালে হাঁইটতে হয়।   
- আচ্ছা।    
- একবার ফাঁদির ফাঁদ জংলীর গলায় ঢুইকে গেলে, গজরাজকে প্রথমে জংলীর তালে তালে হাঁইটতে বা ছুইটতে হবে।  সেই ফাঁকে ফাঁদি তার ফাঁস টাইনে টাইট করে নিবে। বুক ফাড়ার সাথে ফাঁদি রশার বাঁধ দেইখে নিবে। তারপর ফাঁদির ইশারায় গজরাজের স্পীড কমে আইসবে ফাঁদের হাতি দল থেকে আলাদা হইয়ে যাবে। অন্য হাতি গুলো জংলী হাতিটিকে ঘিরে ফেলবে। এই সব শুইনে আমার ভয়ের মধ্যেও দারুণ উত্তেজনা হচ্ছিল।    
- তোমরা কি করে ধরলে।  
- আমরা সকাল সকাল বন্দুক সহ স্টাফ নিয়ে ঢুইকে গেলাম জংগলে। স্টাফের কথা মতো একঘণ্টার মধ্যে দলটিকে পাইয়ে গেলাম। ফাঁদি বলল, একটা ছোট দাঁতাল ধইরবে।   
- কেন। 
- দাঁতালগুলো অল্প সাহসী হয়। যাইতে যাইতে ঘুইরে দাঁড়ায়। সেই ফাঁকে ফাঁদ পরাইতে সুবিধা হয়। আর ছয় সাত ফুটের দাঁতালের উপরে দলের টান আস্তে আস্তে কইমতে থাকে। তাই ঢুঁই রাণীর আক্রমণের ভয় কম থাকে।       
- আচ্ছা।  
- আমাদের দেখে হাতিগুলা ছুটতে থাকে। আমরাও স্পীড বাড়াই। ছুটতে ছুটতে দাঁতাল হাতিটি ঘুইরে আক্রমণ কইরতে আসে। কিন্তু গজরাজের দাঁত ও চেহারা দেখে মনে হয় জংলীটি ঘাবড়ে যায়। জংলীটি ফিরে দলের দিকে যাবার মুখে ফাঁদি এমন ভাবে ফাঁদ ছুঁইড়ে দেয় যে একবারেই ফাঁদ গলায় লাইগে যায়। ফাঁদি ফটাফট ফাঁদ টাইনে নেয়, গজরাজ আস্তে আস্তে দাঁড়াই যায়। আর জংলীটি এমন বিকট চিৎকার করে যে সারা জংগল কাঁইপে ওঠে। জংলী দলটি নিমেষে হাওয়া হইয়ে যায়।  দাঁতালটি ফাঁদে ছটফট কইরতে কইরতে কুনকি হাতির গায়ে গায়ে লেগে একে অন্যের গন্ধ নিতে নিতে, আস্তে আস্তে ঠাণ্ডা হইয়ে যায়।      
- হাতিটির বিকট চিৎকারের জন্য কি গর্জন নাম রাখা হয়েছে?   
- মনে হয়, তবে ঠিক জানিনা। 
- সেই হাতিটি এখন কোথায়।
- আর বলবেন না স্যার, সেই হাতিটি আবার জংগলে হারাই গেছে।    
- কি ভাবে। 
- হাতিটি ছয় সাত মাসে বেশ ভালো ট্রেনিং হয়ে গেছিল। একদিন সকালে অন্য হাতির সাথে চরাতে নিয়ে গেছিলো ঘাস বনে। তখন হঠাৎ এমন ভাবে ছুটে পা লাই জংগলে চলে গেল, আর পাওয়া গেলনা।  
- তোমরা হাতিটিকে খোঁজনি।      
- কত খুঁজছি। সবার তো চাকরী চলে যাচ্ছিলো। টানা চার দিন এই হাতি নয়তো অন্য হাতির পিঠে বইসে, পায়ে হাইটে তন্ন তন্ন করে খোঁজা হইছে। দিন রাত, এই রকম ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়া। বিটবাবুর তো প্যান্টের পাছা ছিঁইড়া গেছিলো। কেউ কেউ বলে বালাবাড়ি বিটে হাতিটি নাকি রাইতে আইসে পিলখানা থেকে পোষা হাতিদের ঘাস খাই যায়।       
হাতি ধরা থেকে হাতি হারিয়ে যাবার কথা শেষ হয়ে যায়। বিপদের রাতের রাস্তা আর শেষ হয়না। ঝড়বৃষ্টির দাপট কমে গেছে অনেকটা। এখন ঘন কালো বনের মাথার উপর দেখা যাচ্ছে ধূসর চক্রবাল। বন শুধু কথা বলছে নানা কীট পতঙ্গের সাথে। তার মধ্যে ভেসে আসছে কাদা মাটিতে হাতির পায়ের চাপের ছোপ ছোপ শব্দ। কাছ থেকে ভেসে আসছে ঘাস তোলার আর ঝাড়ার ঝপ ঝপ শব্দ। কার্ত্তিক বলে-    
- স্যার, এখন একটা মজা হবে।
বিকাশ অবাক হয়ে যায়, কার্তিকের কথা শুনে। এখনো মজার কথা ওর মাথায় আসে কি করে। ম্যান অ্যান্ড মেশিন-এর কথা শুনেছে বিকাশ। এযে হাতি ও মানুষ।  
- কি মজা।
- গজরাজ এখন এক দল জংলী হাতির ভিতর দিয়া হাঁইটে যাবে। আপনারা কথা বললে কিন্তু বিপদ হবে। চুপচাপ শরীর ছেড়ে দিইয়া বইসে থকেন।     
কিছুটা সামনে দেখা যায় আকাশের ধূসর রঙ, চাদরের মতো কালো বনের মাথা অনেকটা ঢেকে দিয়েছে। সেই ধুসর চাদর মাঝে মধ্যে উঠছে নামছে- হাওয়ায় দোলা সামিয়ানার মতো। গজরাজ মেনকা ঢুকে যায় সেই সামিয়ানার তলায়। গজরাজ আর মেনকা হেঁটে চলে এক দল বুনো হাতির মধ্যে দিয়ে। কোন হাতি শুঁড় দিয়ে ঘাস তুলে ঝেড়ে ঝেড়ে খাচ্ছে। বাচ্চা কয়েকটা  হাতির পায়ের মাঝখানে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। কিছু হাতি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমাচ্ছে- ঘর ঘর করে নাক ডেকে।  তার মধ্যে কিছু হাতি আবার হেঁটে হেঁটে ঘাস খাচ্ছে। সেই হাতির সাথে হেঁটে গজরাজ মেনকাও পার হয়ে গেল জায়গাটা। কেউ কিছু টের পেলনা। শুধু বিকাশরা টের পেল খালি বুকের ভিতরে হৃদয়ের স্পন্দন। এই স্পন্দন কিসের বুঝতে পারে কেউ। জল জমে গিয়ে বরফ হয়ে গেলে যে পান করা যায় না।  শক্ত বরফ চেটে কি তৃষ্ণা মেটে! গজরাজ মেনকা হাতির দল পার হয়ে আবার বনে ঢুকে যায়। বনে ঢুকতেই সামনে পড়ে একটা উল্টে পড়ে থাকা মস্ত শাল গাছ। কার্ত্তিক যতই মাইল মাইল বলছে, গজরাজ শাল গাছটি পার হচ্ছেনা। বিকাশ মনে মনে শালসিঁড়িকে স্মরণ করে।  
- স্যার গজরাজ মনে হয় কিছু টানছে। 
- এত রাতে আবার কি টানবে। 
- গজরাজ একটা বস্তা শুঁড় দিয়ে মাথার উপর তুলে ধরে। কার্ত্তিক একটা মুখ বাঁধা প্লাস্টিকের বস্তা পিছনে বিকাশকে দেয়। বিকাশ বস্তাটি টিপে দেখে। বস্তার ভিতরে লম্বা শক্ত মতো কিছু রাখা আছে। 
- মনে হয় বস্তার ভিতরে কাঠ ফাট আছে; নিয়ে কি হবে, ফেলে দিই।
- না স্যার, ক্যাম্পে গিয়ে দেখবো। স্যার নেমে দ্যাখতে হবে। মনে হয় মোটা গাছের তলাতে কিছু আছে। 
- তাই, দেবারু ভগবান বন্দুক লোড কর। 
মনে হলো হঠাৎ সামনের বন থেকে সর সর করে তিন চারটা শুয়োর পালিয়ে গেল।
- স্যার স্যার, পালাচ্ছে। তিন চারটা মানুষ পালাচ্ছে।  
- কই … 
বনের অন্ধকারে আর কিছু দেখা যায় না। ভগবান দেবারু মেনকার পিঠ থেকে নেমে দেখে মোটা শালগাছটির তলায় কেউ প্লাস্টিক পেতে শুয়ে ছিলো। ভগবান প্লাস্টিক টানতেই প্লাস্টিকের উপর থেকে কি যেন ঝরে পড়লো ফর ফর করে। অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে যতটা সম্ভব তুলে প্লাস্টিকে পুঁটুলি করে বেঁধে ওরা ওঠে গেল মেনকার পিঠে। বিকাশ বলে-
- কার্ত্তিক যখন বলল মানুষ পালাচ্ছে, গুলি করোনি কেন। 
- স্যার গুলি করবো কি, কার্তুজ জলে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।    
বিকাশের মাথায় একটা চিন্তা ঘুরে ফিরে আসছে- এই বস্তার ভিতরে কি কোন আগ্নেয়াস্ত্র আছে?

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri