লাল পরী-৪/মধুপর্ণা রায়
লাল পরী/৪
মধুপর্ণা রায়
মল্লিকার দুই চোখে ঝিকঝিক করছে কৌতুক। সে গ্লাসে বড় একটা চুমুক দিয়ে খিলখিল হেসে উঠল। এই অকারণ হাসিটাই অসহ্য বোধ হচ্ছে শাক্যর। হাসতে হাসতে কাশি উঠে গেল মেয়েটার। চোখে জল চলে এল। শাক্য কঠোর চোখে কঠিন চিবুকে তাকিয়ে রইল অনন্ত অন্ধকারের আলোর দিকে।
কাশি সামলে মল্লিকা বলল--: আমাদের পাড়ার একটা গুণ্ডাকে ভালোবাসত পদ্ম। পদ্ম তো পদ্মই যেন! এ--ই বুক, এ--ই পাছা, সরু কোমর। রঙটা অবশ্য চাপা ছিল। তবে সলিড মাল। ক্লায়েন্টের ভিড় লেগে যেত শালা। হল কী..... পদ্ম ওই শুয়োরের বাচ্চা চরণকে ভালোবেসে ক্লায়েন্ট আর বসাতেই চাইত না। পদ্ম পাবলিক নিচ্ছে না বলে চরণের মটকা গরম। ওর রোজগারে শুয়োরটা দিব্যি ছিল। একদিন দলবল নিয়ে এসে স্প্রিং চাকু দিয়ে ওর সুন্দর মুখটা ফালাফালা করে দিল। রক্ত..... কী রক্ত....উফ!!৷ দুই হাতে মুখ ঢাকল মল্লিকা।৷ --: মরে গেল পদ্ম। গায়ে আগুন দিয়ে।
--: আর চরণ? শাক্য জানতে চাইল।
জলে ভিজে আসছে চোখ। পাতলা লাল শিরা দেখা যাচ্ছে। দেখছে শাক্য। অমনি হত মধুমন্তীর। অথচ ছেড়ে চলে যাবার মুহূর্তে কী ভয়ংকর উদ্ধত ছিল শরীরের ভাষা! কত.... কতদিন তার আগে কেঁদেছে একা। শাক্য কেবল দূর থেকে শিল্পীর চোখে দেখেছে ওই বিখ্যাত চোখের শিরার কাঁপন!
দুই হাতে জোরে জোরে জল মুছে ফেলল মল্লিকা। বলল--: শাল্লা মাদারচোদ! দিব্যি আছে! চুল্লু, সাট্টা, ড্রাগস, জুয়া সব চালাচ্ছে! শালা আবার আমার নাঙ হতে চায়!!৷ হুইস্কি ঢেলে নিচ্ছে ইচ্ছেমত।
অনেকটা গিলে নিয়ে বলল-- এ্যাই, তোমার কাছে মিষ্টি জাতীয় কিচ্ছু আছে? আমার খেতে ইচ্ছে করছে।
--: এখানে মিষ্টি পাওয়া যাবে না এখন। মদের সঙ্গে মিষ্টি খাও কেন?
আচমকা শ্বাস ফেলে মল্লিকা বলল--: নুড়িটা বাদাম সন্দেশ ভালোবাসত।
--: কে নুড়ি?
--: আমার বন্ধু ছিল। মরে গেল। এইচ. আই. ভি পজিটিভ। খুব রোগা ছিল বলে প্যাড লাগিয়ে ব্রা পরত। খুব একটা ক্লায়েন্ট পেত না বেচারা।
--: এইচ. আই. ভি পজিটিভ?!!
--: আ-- ই ব্বাবা! তুমি মনে হয় এর নামই শোনোনি?! ভদ্দরলোকেরা তো এইসব খুব জানে। জ্ঞান মারে। মাইক ফোকে। বিদ্যে ফলায়। এসো, তোমার দুধের দাঁত ভেঙে দিই আমি।
মেয়েটা আবারও ওইরকম হাসছে।
--: তুমি কি........মানে.....আমি স্রেফ জানতে চাইছি......তুমি কি..... ঢোঁক গিলছিল শাক্য।
--: এ্যাই... তোমার নামটা কী যেন? এ্যাকরা- ব্যাকরা কথা একদম বলবে না। আমি কনডোম ছাড়া কাজ করি না। নুড়ি খদ্দের পেত না। করবে কী? আমরা বললেও শুনত না। কনডোম ছাড়াই কাজ করত। ব্যস। মরে গেল। আরশোলার জীবন শালা!
শাক্য তার ইনটেলেকচুয়াল ক্লাসের মাঝখানে অনেক স্থূল রসিকতা শুনেছে। হেসেছে। মদ্যপানের আসর জমে উঠতে নিজেও যোগ দিয়েছে কখনো। আর মধুমন্তী তীব্র অপলক চোখে দিনের পর দিন সেসবকে ঘেন্না করে গেছে কেবল।
সরু হাতের স্লিভলেস আর ঘননীল শিফন শাড়িতে এক পার্টিতে কবি রবিকিরণ বসু বলেছিলেন --: মধুমন্তী, আই ফিল ডিজায়ার টু কিস য়ূ! সো সেক্সি!
ঝাঁ করে ঘুরে তাকিয়েছিল মধুমন্তী। ঐ চোখের তারা! কাঁপেনি। অসম্ভব স্থির ছিল। চলে গিয়েছিল পার্টি ছেড়ে। অপমানিত বোধ করেছিল শাক্য মধুমন্তীর ব্যবহারে। তারপর বাড়ি ফিরে তুমুল ঝগড়া। শাক্য শ্বাস চেপে নিল।
--: আরো এইচ. আই. ভি পজিটিভ মেয়ে আছে তোমাদের ওখানে?
--: কেন? আপনি জেনে করবেনটা কী? তাদের নিয়ে গপ্প বানাবেন? ফ্লিম হবে? যার অদ্ধেকটাই বানানো বানানো কথা! এখন আর এক প্লেট পকোড়ার অর্ডার দিন তো।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴