বিবর্তনের পথে শহর দার্জিলিং-৪/রূপন সরকার
বিবর্তনের পথে শহর দার্জিলিং / পর্ব-৪
ড. রূপন সরকার
কোম্পনি কর্তৃক দার্জিলিং অধিগ্রহণ সময়কালে অর্থাৎ অষ্টাদশ শতকের চতুর্থ দশকে দার্জিলিং ছিল একটি গ্রামমাত্র। মেরেকেটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কয়েকটি পরিবারের বসবাস। ভারতে কর্মরত সাহেবদের ভারতীয় আবহাওয়া ও জলবায়ুর উত্তাপ থেকে রক্ষা পেতে এবং দীর্ঘ যুদ্ধে ক্লান্ত ইংরেজ সামরিক অফিসারদের স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য ইতিমধ্যেই ইংরেজদের হাত ধরে একে একে মুসৌরি, উটি, শিমলার মতো পার্বত্য শহর গড়ে উঠেছিল। কিন্তু সেগুলো ইষ্টি ইন্ডিয়া কোম্পনির তৎকালীন প্রশাসনিক ভরকেন্দ্র থেকে ছিল অনেকটা দূরে। সুতরাং কোলকাতার নিকটবর্তী কোন একটি স্থানে কোম্পনি আরেকটি স্বাস্থ্যনিবাস তৈরির সন্ধানে ছিল।
দার্জিলিং -এ এসে কোম্পানির উক্ত সন্ধানের সমাপ্তির আশা দেখা দেয়। এছাড়াও দার্জিলিং-এর বহুমুখী গুরুত্বের কথা উপলব্ধি করে মিঃ গ্রান্ট কোম্পনিকে দার্জিলিং - এ একটি স্বাস্থ্যনিবাস গড়ে তোলার প্রাস্তাব দেন। এই মিঃ গ্রান্ট সাহেবই ছিলেন দার্জিলিং - এ স্বাস্থ্যনিবাস গড়ে তোলার প্রথম উদ্যোক্তা। তাঁর যুক্তি ছিল শিমলা, মৌসুরি থেকেও দার্জিলিং ছিল মূল প্রাশাসনিক কেন্দ্র কোলকাতার অনেক কাছে এবং যাতায়াতের সুবিধাও মোটের ওপর ভালো। সমুদ্রতট থেকে ৭,৫০০ থেকে ৮,০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত হওয়ায় দার্জিলিং এর আবহাওয়া ও জলবায়ু অনেকটা লন্ডনের আবহাওয়ার ও জলবায়ুর মতো। তাছাড়া নেপাল, ভুটান, সিকিম লাগোয়া দার্জিলিং এর সামরিক গুরুত্বও যথেষ্ট বেশি ছিল। ফলে মিঃ গ্রান্টের প্রস্তাবে তাৎক্ষনিক সম্মতি দিয়ে কোম্পানি ক্যাপ্টেন জেমস হার্বাটকে ১৮৩০ সালে আরেক দফা দার্জিলিং পাঠায় সমস্তকিছু খতিয়ে দেখার জন্য। পাশাপাশি, ক্যাপ্টেন হার্বাটকে এ সম্পর্কে একটি পূর্নাঙ্গ রিপোর্ট জমা দেবার কখা বলা হয়। এবারও হার্বাটের সঙ্গী হন মিঃ গ্রান্ট। মিঃ গ্রান্ট এবং ক্যাপ্টেন হার্বাটের দ্বিতীয়বার পরিদর্শনের পর যে রিপোর্ট জমা দেন, তাতে হার্বাট দার্জিলিং কে ব্যাখ্যা করেন, 'range upon range of hills completely clothes with forest from the top to the very bottom. অথচ এর মাত্র এক বছর আগে অর্থাৎ ১৮২৯ সালে মেজর লয়েড কিন্তু অন্য কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, "Formerly occupied by a large village..... and some shops were set up in it..." কিন্তু ক্যাপ্টেন হার্বাটের রিপোর্টের পর কোম্পানি কোলকাতার গরম থেকে নিস্তার পেতে দার্জিলিং-এর পরিবর্তে শিমলার কাছে চেরাপুঞ্জিতে স্বাস্থ্যনিবাস গড়ে তুলতে মনোযোগী হয়। তবে চেরাপুঞ্জির অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত কোম্পানির পরিকল্পনার মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কোম্পানি পুনরায় দার্জিলিং এ মনোনিবেশ করে এবং স্থির হয় যে, ব্রিটিশ কোম্পানি দার্জিলিং -এ একটি স্বাস্থ্যনিবাস গড়ে তুলবে এবং এ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴