সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
08-December,2022 - Thursday ✍️ By- শিশির রায় নাথ 357

বাগানিয়া জার্নাল-৪

বাগানিয়া জার্নাল
পর্ব।। চার।।
শিশির রায়নাথ 
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^

[চা গাছের  কাঁচা পাতা থেকে প্রথমে যা তৈরি করা হয় তাকে বলি ‘চা’।আবার সেই ‘চা’ জলে ফুটিয়ে যা আমরা খাই তাকেও বলি ‘চা’। এই দুই রকমের ‘চা’-এর পার্থক্য বোঝানোর জন্য আমরা কাঁচা পাতা থেকে তৈরি প্রথম ‘চা’-কে বলব ‘তৈরি-চা’ (processed Tea)। আর জলে ফোটানো চা-কে বলব ‘পানীয়-চা’(Liquid Tea)] 

চা-এর কথা উঠলেই আমরা বলি ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’।
বলি এই কারণে যে চা গাছ থেকে সাধারণত ওই দুটি পাতা একটি কুঁড়ি তুলেই চা বানানো হয়।
কিন্তু কেন... একটা চা গাছে তো অনেক পাতা থাকে। তেজপাতার গাছ থেকে আমরা তো ডালপালা সমেত কেটে নিয়ে আসি; তাহলে চায়ের ক্ষেত্রে কেন ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’?

আসলে চায়ের যে গুণ, যার জন্য আমরা চা খাই - ঘুম কেটে যাওয়া, শরীর চনমনে হওয়া, ডাক্তারদের মতে হার্ট ভাল থাকা, এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করা – সে সব হয় চায়ের পাতায় থাকা কিছু রাসায়নিক উপাদানের জন্য। মজা হচ্ছে এইসব রাসায়নিক উপাদানগুলো সবচেয়ে বেশী থাকে চায়ের ডালের মাথার কুঁড়ি, মানে অগ্রমুকুলে, আর তার ঠিক নীচের দুটো পাতায়।তারপর ডাল ধরে যত নীচের দিকে নামতে থাকা হবে তত সেই উপাদানের পরিমান কমতে কমতে পাঁচ/ছয় নম্বর পাতা্র পর তা একেবারেই হারিয়ে যায়। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে সবচেয়ে ভাল চা তৈরি করতে লাগে ওই ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’।

চা-পাতা থেকে আজ যে ভাবে চা তৈরি করা হয় (processed tea) সেখানে পৌঁছতে আমাদের লেগেছে হাজার বছরেরও বেশী সময়।এই দীর্ঘ সময়ে নানা ভাবে, নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে করে দেখা হয় কী ভাবে তার গুণগুলো, যেমন সুবাস (Falvour/aroma), স্বাদ (Taste), কষাটে ভাব (astringent), অনেকদিন ধরে জমিয়ে রাখা ক্ষমতা (preserve) ইত্যাদি সবচেয়ে ভাল করা যায়, উন্নত করা যায়।আর এই সব করতে করতেই নানা রকম চায়ের (variety) উদ্ভব হয় – যেমন, সবুজ চা (Green Tea), কালো চা(Black Tea), ওলং চা (Olong Tea), সাদা চা (White Tea), বেগুনি চা (Purple Tea),হলুদ চা (Yellow Tea), অর্থোডক্স চা, সিটিসি (CTC)চা ইত্যাদি।

আগেই বলা হয়েছে যে প্রথমে চা-র ব্যবহার ছিল ওষধি হিসেবে।শুরুতে মানুষ অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝেছিল যে চায়ের কচি পাতাগুলোই সবচেয়ে কাজের। একদম শুরুতে সেই সিংফো ভাইদের মত কাঁচা পাতাই চিবানো হত। সর্দি-জ্বরে্র ওষধি হিসেবে ব্যবহার করা হত।সব্জীর মত অন্য শাকপাতার সঙ্গে মিশিয়ে রান্না করেও খাওয়া হত।তাজা চা পাতাকে পিষে লেই বানিয়ে তাতে ভাত, আদা, লঙ্কা, নু্‌ন, কমলার খোসা ইত্যাদি মিশিয়ে খাওয়া হত।চিনের ইউনান প্রদেশের এক ছোট জনগোষ্ঠী জিনো (Jino) এখনও এই ভাবেই চা খেতে অভ্যস্ত।

তারপর জলে সিদ্ধ করে ব্যবহার শুরু হল – সেই চিনা উপকথার হাত ধরে।
এই যে জলে সিদ্ধ করে ব্যবহার করা – তা হত সদ্য তুলে আনা বা তাজা চা পাতা দিয়ে।কিন্তু তাজা চা পাতা তো সব জায়গায় পাওয়া যায় না। আবার তা দূরে পাঠালে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় - সতেজতা (freshness) বজায় থাকে না।ফলে চা-চাষীরা তার উপায় খুঁজে বার করার চেষ্টা করতে লাগল নানাভাবে।
দেখা গেল তাজা চা পাতাকে যদি কিছুক্ষণ বাষ্পে সিদ্ধ করে তারপর গোল করে গুটিয়ে, শুকিয়ে রাখা হয় তাহলে পাতার সবুজ রঙটা দীর্ঘস্থায়ী হয়। এবং সেই পাতাকে আবার জলে সিদ্ধ করলে প্রায় তাজা পাতার গুণগুলো ফিরে পাওয়া যায়।অর্থাৎ চা পাতাকে দীর্ঘ সময় ধরে জমিয়ে রাখা (preserved) যাচ্ছে। 
আর এভাবেই জন্ম হয় আজকের ‘সবুজ চা’ (Green Tea)-র। অর্থাৎ, সবুজ চা-ই মানুষের তৈরি প্রথম processed tea।

খৃষ্টীয় চতুর্থ শতক থেকেই চিনে সবুজ-চা খাবার প্রচলন বেড়ে যায়। তখন চা আর ওষধি হিসেবে না থেকে শরীর তরতাজা রাখার পানীয় হিসেবে প্রতিদিনের ব্যবহারে ঢুকে পড়ে।
তাং (Tang) রাজবংশের আমলকে (খৃষ্টীয় ৬১৮-৯০৭)বলা হয় চায়ের সর্বোত্তম যুগ – সে সময়ে গোটা চিনেই চা-পান ছড়িয়ে পড়েছিল। ফলে গোটা চিনেই চা-চাষ ক্রমে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।  চা-পান যে কত লোকপ্রিয় হয়েছিল তা বোঝা যায় সেসময়ে চা-এর ওপর রাজকর চাপানোতে।চা তখন চিনের জাতীয় পানীয়। সমাজের উঁচুস্তরে চা পান একটা অনুষ্ঠানে পরিণত হয় এবং ধীরে ধীরে তা এক শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

চিন সম্রাটরা চা-চাষ ও তা তৈরির পদ্ধতি খুব কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করত। শোনা যায় সে সময়ে শুধুমাত্র তরুণীরাই, তাদের শুচিতার জন্য, চা পাতায় হাত লাগাতে পারত। সেই তরুণীরা রসুন, পেঁয়াজ বা কোন রকমের তীব্র গন্ধযুক্ত মশালা খেতে পারত না যাতে তাদের আঙুল থেকে সেসবের গন্ধ দামী চা পাতায় লেগে যায়।

সে সময়ে বৌদ্ধ মঠগুলোতেও চা খুব জনপ্রিয় ছিল – কেননা তা সন্ন্যাসীদের দীর্ঘ সময়ের ধ্যানে জাগিয়ে রাখতে সাহায্য করত। সেকারণে বহু মঠেই বিশাল জায়গা নিয়ে চা-চাষ করা হত।চায়ের ওপরে প্রাচীনতম বই ‘Cha Jing’ (The Classic of Tea)-র লেখক লু ইউ ( Lu Yu)। তিনি অনাথ বালক হিসেবে বড় হয়েছিলেন এক বৌদ্ধ মঠে। সম্ভবত মঠের বিশাল চা বাগান আর তার কাজকর্ম নিজের চোখে দেখাই তাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল এই বই লিখতে। এতে তিনি বিস্তারিত ভাবে চা-চাষ পদ্ধতি, চা-তৈরির পদ্ধতি, চা-পানের রীতিনীতি, কোন জলে সবচেয়ে ভাল পানীয়-চা তৈরি হয় এবং চায়ের বিভিন্ন শ্রেণীভাগ ইত্যাদি লিখে গ্যাছেন সেই তাং-আমলেই।তখন পানীয়-চা তৈরিতে কখনও নদীর জল ব্যবহার করা হত না। তার বদলে ঝর্ণার জল। তবে সবচেয়ে ভাল হত বরফ গলানো জল দিয়ে।

ঘরোয়া বাণিজ্য ও রপ্তানীতে ব্যবহার করার জন্য সে সময়ে চা পাতাকে একসাথে চাপ দিয়ে কেক বা ইঁট বা বলের মত গোল চেহারা বানিয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য জমিয়ে রাখা হত এবং সেই চা-ই ভোক্তার হাতে পৌঁছত।  

নবম শতকের শুরুর দিকে চিনারা তিব্বতে পানীয়-চায়ের প্রচলন শুরু করে।তিব্বতের রুক্ষ,শুষ্ক পাথুরে ভূখন্ড চা-চাষের অনুপযুক্ত ছিল। সুতরাং ইয়াকের ক্যারাভান করে চিন থেকে চায়ের রপ্তানী শুরু হয়।সে যাত্রা ছিল দীর্ঘ ও পরিশ্রমের। ইয়াকের পিঠে চিন থেকে তিব্বতে পৌঁছতে প্রায় এক বছর লেগে যেত। উপরন্তু পথে শুধু মাত্র পৃথিবীর উচ্চতম পাহাড়গুলোই পড়তো না চা-চোর এবং ডাকাতদেরও উপদ্রব ছিল। কিন্তু তিব্বতীদের চায়ের চাহিদা এত বেশী ছিল যে একসময়ে প্রতিদিন প্রায় দুশ থেকে তিনশ চা-বোঝাই ইয়াক ও ব্যাকট্রিয়ান উটের ক্যারাভান তিব্বতে প্রবেশ করত।

তিব্বতে এবং তার আশেপাশের অঞ্চলে চা এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে কারেন্সি হিসেবে তার ব্যবহার  হত। কেক-চা বা ইঁট-চাকে প্রায় সবকিছু  লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে এবং চাকর-বাকর ও কর্মচারীদের বেতন হিসেবে নিয়মিত ব্যবহার করা হত।

প্রথাগত ভাবে তিব্বতী পানীয়-চা বানানো হয় ওই কেক-চা বা ইঁট-চা দিয়ে।প্রয়োজনের হিসেবে ইঁটের কিছুটা ভেঙে তাকে গরম জলে প্রায় আধ ঘন্টা সিদ্ধ করে, ঘোড়ার লেজের চুল দিয়ে বানানো ছাকনিতে ছেঁকে, বাঁশের লম্বা খোলে ঢালা হয়। তারপর তাতে ইয়াকের মাখন এবং নুন মিশিয়ে ভাল করে অনেকক্ষণ ধরে ঘোলানো (churn) হয়। নুন-মাখন ভরা এই চা-কে তিব্বতি ভাষায় বলে পো-চা (po cha)। হিমালয়ের উঁচু অঞ্চলে থাকা তিব্বতী মানুষদের শরীরের প্রতিদিনের ক্ষয় হয়ে যাওয়া নুন ও ফ্যাটকে পুরিয়ে দিতে খুব সাহায্য করে এই চা।

চা এখনও তিব্বতীদের প্রধান পানীয় এবং একজন তিব্বতী দিনে প্রায় চল্লিশ কাপের বেশী চা খায়। তিব্বতীদের শিষ্টাচার বলে কোন অতিথিকে চা না খাইয়ে ছাড়া যায় না এবং অতিথির চায়ের পাত্র যেন কখনও খালি না হয়।
**********************************
ছবিঃ ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইট থেকে নেওয়া...

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri