সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
05-December,2022 - Monday ✍️ By- সুবীর সরকার 436

ঢোলসানাই-৪/সুবীর সরকার

ঢোলসানাই
পর্ব : চার
সুবীর সরকার
"""""""""""""""""""""

১০।

‘আইসো রে প্রাণনাথ বইসো

বইসো রে প্রাণনাথ আইসো’

দোলং নদীর পাড়ে নন্দকুমার দেউনিয়ার বাড়িতে কুশান পালার আসর ছেড়ে আসবার কালে মাঘমাসের শীতের জাড়ে ঈষৎ বিচলিত হলেও একসময় দোলগোবিন্দ ধনি নিজেকে সামলে নিয়ে কুশায়ায় স্থিরচিত্রের মত দাঁড়িয়ে থাকা তার দুধবর্ণ ঘোড়াটির পিঠে চেপে বসেন।তখনো তার সমস্ত শরীরে মিশে আছে কুশানের সুর, খোসা নাচের স্পন্দনগুলি। শীতকুয়াশায় ছুটে চলে দোল ধনির নির্জন অশ্বটি আটপুকুরির ধনিবাড়ির দিকেই।এই দৃশ্যে হয়তো একটা দার্শনিকতা থাকে। থেকেই যায়।

তখন ভ্রান্তি জড়িয়ে কিংবা বিভ্রান্তি জড়িয়ে মাঠ পাথার শস্যখেত বিল পুকুর পাখ পাখালি হাটগঞ্জ জড়িয়ে অপরূপ শীতের শেষরাত্রির এক পৃথিবীতে আশ্চর্য এক রহস্যময়তা মিশে যেতে থাকে। দোলগোবিন্দ ধনি বিড়বিড় করে গান ধরেন-

‘এপার থাকি না যায় দেখা রে

নদীর ওই পারের কিনার’

সেই কত কত সময় আগে থেকে মানুষের বেঁচে থাকবার ম্যাজিক ধরাছোঁয়ার খেলার মত ঘুরে ঘুরে আবর্তিত হয়। সে ফুলবাড়ি হোক ঘোকসাডাঙ্গা হোক শিলডাঙ্গা হোক সতীশের হাট হোক ভরা নদীর বর্ষায় ভেসে যাওয়া পাল তোলা মহাজনী নাও হোক চরদখল করতে আসা এক্রামুল ডাকাতের হাতের রামদা হোক, সব কিছু জুড়ে যেতে থাকে আরো কত কিছুর সাথেই।

১১।
ফুলবাড়ির সেই হাতিজোতদার যখন কোচবিহারের মহারাজার দরবার থেকে ফিরে আসতেন তার মস্ত হাতি ইন্দ্রকুমারের পিঠে চড়েই তখন জলঢাকার শীতের বিশাল চরে বসে যেত ‘তিন দিনিয়া মেলাবাড়ি’।হাতিজোতদার,লোকশ্রুতিতে হাতি দেউনিয়া মস্ত কাঠের খড়ম আর হস্তে গামারীর নকশাদার লাঠি নিয়ে সেই মেলাবাড়ির ভেতর উচ্চারণহীন এক জাঁক ও জৌলুশ নিয়েই ঢুকে পড়তেন। তখন একশো ঢাক একসাথেই বেজে উঠতো।মেয়েরা শরীরে নাচ নিয়ে কন্ঠে গান নিয়ে পরিসর ভরিয়ে ফেলতো সেই মেলাবাড়ির। হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে ছড়িয়ে পড়তো সুর_

‘ও জীবন রে

জীবন ছাড়িয়া

না যাইস মোকে’

এই কালখন্ডের ভেতর আমরা দেখি হাতিজোতদার তার নিঃসঙ্গতা তার অন্যমনস্কতা নিয়ে কেমন দুরাগত হয়ে উঠছেন।সেই মস্ত এক শিকারবাড়ির গল্প বুঝি ছড়িয়ে দিতেই চাইছেন এই দিকও দিগরের দিকে।ইকবাল পাগলের যাত্রার দলের পাশে তখন চুপচাপ এসে দাঁড়াতে থাকে ঝাম্পুরা কুশানীর কুষান পালার দলবল।সেই লুপ্ত সময়ের দেশে সেই পাখি ও ফড়িঙের দেশে সেই ডে লাইট ও নির্জনতার দেশে একসময় তো হাতি দেউনিয়া আর দোল ধনি একাকার হয়েই যেতে থাকেন এক আদি কিংবা অনন্ত হাহাকার হয়েই হয়তো!সমস্ত শূণ্যতা ঘিরে ফেলে সা্রাজীবন মানুষকে।আর মানুষ তার যাবতীয় বেঁচেবর্তে থাকবার চিরকালীনতায় বারবার গান টেনে আনে,নাচ টেনে আনে,ডাহুক ও শালিক টেনে আনে।আর দিনদুনিয়ায় রচিত হয় অনন্তের সব পদাবলী।

১২।

পুরোন সময়ের শ্যাওলা হাতাতে হাতাতে অনেক সময় উজিয়ে দোলগোবিন্দ ধনীর বাড়ির খোলানে দাঁড়িয়ে তার উত্তর প্রজন্মের এক যুবক হিমাদ্রিশেখর হয়তো একধরণের স্মৃতিপরব উদযাপন করতে থাকে এক চিরবিষ্ময়ের ঘোর জাগিয়েই।আর তখন,সেই মরা বিকেলের আলোর নিচ দিয়ে উড়ে যেতে থাকে অজস্র লাল টিয়া,হয়তো ঘোকসাডাঙ্গার হাটের দিকেই!

সাঁতার কাটা বা না কাটাটা বড় কথা নয়। সন্তরণশীল এক যাপন নিয়েই তো মানুষের জন্মের পর জন্ম কেটে যায়। ভাবনাস্রোতের বাঁধনহীনতায় টুংটাং দোতারার সুর জটপাকানো স্বপ্নের ভিতর অনেকানেক পাখির ডানাঝাপটের আশ্চর্য দৃশ্যপট হয়ে চোখে ভাসে। তখন আলোহীন সাঁতারহীন এক জীবনযাপনের নেশার টানে ইয়াসীন মাতব্বর উঠে দাঁড়ায়। দীর্ঘ হাই তোলে। শরীরের পেশীসমুহের ভিতর একসময় স্থিতাবস্থা এলে মাতব্বর দীর্ঘ এক হাঁটার জন্য পরিক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। কোথা থেকে যেন দোতারার আওয়াজ উঠে আসে। কে বাজাচ্ছে কে জানে! মাতব্বর হাঁটা শুরু করে জোতদারটারির জঙ্গলের দিকে। জঙ্গল অতিক্রম করে তাকে দ্রুত পৌঁছতে হবে একুশ ঘোড়ার ধনকান্ত জোতদারের বাড়ির খোলানে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri