নাগরাকাটা চা বাগিচা/গৌতম চক্রবর্তী
নাগরাকাটা চা বাগিচা
গৌতম চক্রবর্তী
----------------------------
ছুটি পেলেই বেরিয়ে পড়ি কাছে দূরে যেখানেই হোক। আর এখন তো বাগিচা সফরের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছি গোটা ডুয়ার্স। চালসা থেকে মূর্তি নদী পেরোলেই শুরু হলো চাপড়ামারি অভয়ারণ্য। নাগরাকাটার গা ঘেঁষে চাপড়ামারির অরণ্য শেষ হলেই দেখা যায় জলঢাকা নদী। আজ যাচ্ছি নাগরাকাটা সার্কিটে। রমণীয় ডুয়ার্সের আনাচে কানাচে এমন সব সৌন্দর্য্য ছড়ানো ছিটানো রয়েছে যা ভ্রমণপ্রিয় পর্য্যটককে প্রলুব্ধ করে তুলতে পারে। ডুয়ার্সকে ঘিরে এমন সব ছড়ানো ছিটানো অসংখ্য সৌন্দর্য্যখনি আজও অনুচ্চারিত। কিন্তু এই সৌন্দর্যখনির আপাত বহিরঙ্গ সৌন্দর্যের অন্তরালে যে কত দুঃখ, কষ্ট এবং বেদনা লুকিয়ে আছে তার সীমা পরিসীমা নেই। আগামী ১লা জুন থেকে মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের শ্রম দপ্তরের ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫০ টাকা করে মজুরী পাবে ডুয়ার্সের চা শ্রমিকেরা। রাজ্যের শাসক দলের সমর্থক শ্রমিক নেতৃত্ব দুহাত তুলে নৃত্য করলেও না খুশী চা শ্রমিক, না খুশী মালিকেরা। শ্রমিকদের দাবি ন্যূনতম মজুরী। অন্যদিকে মালিকদের বক্তব্য উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা, চায়ের আন্তর্জাতিক এবং নিলাম বাজারে দাম না বাড়া, সর্বোপরি সরকারের ট্যাক্সেশন পলিসি, বাগিচাতে ডিজিটাল লেনদেনের অকার্যকারিতা সবকিছু মিলেমিশে এই বাড়তি মজুরী দেওয়াটা তাদের কাছে চাপের। ফলে সব মিলিয়ে ডুয়ার্সের যেসব পর্যটকেরা নাগরাকাটাকে কেন্দ্র করে জিতি, কুর্তি বা চাপরামারি, গরুমারা বা সাইলির বাগানের চা বাংলোতে রেস্ত খরচ করে প্রমোদভ্রমণে আসবেন তাঁরা জানেন না সকালের এক কাপ চায়ে আছে ডুয়ার্সের চা শ্রমিকদের চোখের জল। এই প্রেক্ষাপটে নাগরাকাটাকে কেন্দ্র করে সফর শুরু হল আমার। নাগরাকাটা ব্লকের নাগরাকাটা টি গার্ডেনটির পরিচালক গোষ্ঠী কোয়ালিটি টি প্রডিউসিং কোম্পানি। কোম্পানির মালিকের নাম সঞ্জয় ডালমিয়া। অন্যান্য বোর্ড ডিরেকটর হরিশ্চন্দ্র পারেখ মানেকলাল, প্রদ্যুম্ন ডালমিয়া, বিপিন কুমার কাজারিয়া, কৃষ্ণ কুমার ডালমিয়া প্রমুখ আরো অনেকে আছেন। ১৯৭১ খ্রীষ্টাব্দে কোম্পাণী পথ চলা শুরু করে। ৫০ বছরের বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই বাগানে উন্নত কোয়ালিটি চা উৎপাদন হয়।
নাগরাকাটা, ভগতপুর চা বাগান ডুয়ার্সের নামকরা বাগান। উত্তরে ভুটান রাজ্য, দক্ষিণে বানারহাট এবং ময়নাগুড়ি থানা, পূর্বে বানারহাট আর পশ্চিমে ধূপগুড়ি নাগরাকাটার ভৌগোলিক সীমানার অন্তর্গত। ডিবিআইটিএ এর সদস্যভুক্ত নাগরাকাটা চা বাগানে সর্বমোট ম্যানেজারিয়াল স্টাফ ১০ জন। গুণগতমানের বিচারে নাগরাকাটা চা বাগিচাতে চরিত্রগত দিক দিয়ে উন্নতমানের ইনঅরগ্যানিক সিটিসি চা উৎপাদিত হয়। চা বাগানে নিজস্ব চা পাতা উৎপাদনের গড় ৫০ লাখ কেজি। ফ্যাক্টরিতে নিজস্ব উৎপাদিত চা ১১-১২ লাখ কেজি। বাইরের বাগান থেকে সংগৃহিত কাঁচা পাতায় উৎপাদিত তৈরি চা গড়ে আড়াই লাখ কেজি। মোট বাৎসরিক উৎপাদিত তৈরি চা ১৪-১৫ লাখ কেজি। নাগরাকাটার গা ঘেঁষে চাপড়ামারির অরণ্য শেষ হলেই দেখা যায় জলঢাকা নদী। চালসা থেকে মূর্তি নদী পেরোলেই শুরু হলো চাপড়ামারি অভয়ারণ্য। নাগরাকাটাকে কেন্দ্র করে বেড়ানো যায় থালঝোরা চা বাগান, হোপ, জিতি, কূর্তি, হিলা চা বাগান। শিবচু, শুল্কাপাড়া, ধরণীপুর, রেডব্যাংক ইত্যাদি প্রতিটি জায়গাই অসাধারণ বিউটি স্পট। মাঝেমাঝেই হাতিরা দল বেঁধে বা দলছুট হয়ে ঘুরে বেড়ায়। একদিকে ডায়না, অন্যদিকে জলঢাকা। এছাড়াও অজস্র ঝোরা এবং খোলায় ঘেরা দিগন্তবিস্তৃত চা বাগান শেষ হয়েছে ভুটানের পাদদেশে। সেখানে পায়ে চলার পথ কিংবা খচ্চরের পিঠে যেতে যেতে শোনা যায় ওঁরাও, মুন্ডা, খেড়িয়া, নেপালিদের নাচগান, ঘর গেরস্থালি। শিমূল, কৃষ্ণচূড়া, চাপরাশি, শিরীষ, ছাতিম, বকুল ছায়াতে ঘেরা নিঝুম পথ। কখনো দুটি পাতা একটি কুঁড়ি তোলার ছন্দময় দৃশ্য। চা বাগিচা, বাবু কালচার সবমিলিয়ে অপরূপ সমন্বয়। বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে নাগরাকাটা চা বাগানটি আর্থিকভাবে দায়বদ্ধ। বাগান পরিচালনার কার্যকর মূলধন আসে ব্যাংক এবং নিজস্ব অর্থনৈতিক সোর্স থেকে।
নাগরাকাটা চা বাগিচাতে স্বীকৃত ট্রেড ইউনিয়ন তিনটি। এগুলি হল এনইউপিডব্লিউ, পিটিডব্লিউইউ, সিবিএমইউ। তাই বাগিচাতে ন্যুনতম মজুরী এবং অন্যান্য দাবিদাওয়া নিয়ে মাঝেমাঝেই গেটমিটিং সহ ডেপুটেশন এবং অন্যান্য কর্মসূচী লেগেই আছে। ২০১৫ সালে রাজ্য সরকার ন্যূনতম মজুরী সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করে বিভিন্ন সংগঠন এবং শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে। কিন্তু ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ কমিটির রিপোর্ট জমা পড়লেও রাজ্য সরকার তা ঘোষণা করছে না বলে অভিযোগ চা-শ্রমিকদের মিলিত মঞ্চের। রাজ্য সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে ন্যূনতম মজুরি আটকে রেখেছে বলে তাদের অভিযোগ। রাজ্যের এই ভূমিকার প্রতিবাদে এবং দ্রুত ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে জয়েন্ট ফোরাম। তাদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা নিয়ে অযথা কালবিলম্ব করছে। ন্যূনতম মজুরি নিয়ে চূড়ান্ত কথাবার্তা হয়ে গেছে বলে দাবি ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ কমিটির সদস্য জিয়াউল আলমের। জিয়াউল আলমের বক্তব্য অনুযায়ী মালিকপক্ষ এবং শ্রমিকপক্ষ সবার মতামত নেওয়ার পরে কমিটির সচিব জাভেদ আখতারের ঘোষণা ছিল পরের দিনই এই রিপোর্ট সরকারের হাতে তিনি তুলে দেবেন। ২০২২ সালের ১৩ ই ডিসেম্বর এই কমিটির শেষ বৈঠক হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই কমিশনার এই কথা বলার পর শ্রমিক নেতৃত্ব ধরেই নিয়েছিলেন যে ইতিমধ্যেই রিপোর্ট জমা পড়ে গেছে। কিন্তু পরবর্তীকালে মন্ত্রী জানান রিপোর্ট জমা পড়েনি। ফলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। চা শিল্পে সমস্যা বহুমুখী। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে শুধু নিরীহ, নির্বিরোধী শ্রমিকেরা তার মাশুল দেবে কেন? তাই কেন্দ্রীয় সরকার মান্ধাতার আমলের প্ল্যান্টেশন অ্যাক্ট বাতিল করে যদি সত্যিকারের কমন ওয়েজ সিস্টেম বা ঐ জাতীয় কিছু চালু করে তাহলে প্রতিবছর এই চাপান উতোর বন্ধ হবে মালিক এবং শ্রমিকদের মধ্যে। মালিকেরাও লভ্যাংশ পাক, শ্রমিকেরাও ন্যায্য মজু্রী যা তাদের জীবন ধারণের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
অতীতে নাগরাকাটা এলাকায় কোনো হাট-বাজার, এমনকি বিশেষ কোন দোকানও ছিল না। চা বাগান পত্তনের পর নাগরাকাটা থানা এলাকায় দুটি হাট স্থাপন সম্পর্কে জানা যায়। সপ্তাহে একদিন হাট বসত চম্পাগুড়িতে আর লুকসানে। সেখান থেকেই প্রয়োজনীয় খাদ্য এবং অন্যান্য সামগ্রী কেনা হত। নাগরাকাটা চা বাগিচার আয়তন ৯২৩.৬৮ হেক্টর। চাষযোগ্য আবাদিক্ষেত্র ৫৪৯.৭৮ হেক্টর। আপরুটেড এবং নতুন বপনযোগ্য আবাদীক্ষেত্র ১৫.৩৮ হেক্টর। ড্রেন এবং সেচের সুবিধাযুক্ত অঞ্চল ৫৪৯.৭৮ হেক্টর। অর্থাৎ বাগিচায় সেচ ব্যাবস্থা উন্নত। চাষযোগ্য উৎপাদনক্ষম আবাদিক্ষেত্র ৫৪৯.৭৮ হেক্টর। প্রতি হেক্টর উৎপাদনযোগ্য এবং সেচযুক্ত প্ল্যান্টেশন এরিয়া থেকে ২৩৮৫ কেজি করে চা উৎপাদিত হয়। নাগরাকাটা চা বাগিচার সাব স্টাফ ১০৪ জন। করণিক ১৩ জন। ক্ল্যারিক্যাল এবং টেকনিক্যাল স্টাফ ২২ জন। বাগানে শ্রমিক পরিবারের সংখ্যা ১০৭০ জন এবং মোট জনসংখ্যা ৭০৮০ জন। বাগিচায় স্থায়ী শ্রমিক ১০৬৮ জন যারা দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ পাতা তোলার বিনিময়ে নির্দিষ্ট মজুরি পায়। বিগত আর্থিক বছরে অস্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ছিল গড়ে ৪৫০ জন। ফ্যাক্টরিতে নিযুক্ত স্টাফ এবং শ্রমিক সংখ্যা ১৫৮ জন। চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৩৭ জন। কমপিউটর অপারেটর ছিল ১ জন। ক্ল্যারিক্যাল, টেকনিক্যাল এবং স্থায়ী শ্রমিক মিলে মোট শ্রমিক সংখ্যা ৪৩ জন। মোট কর্মরত শ্রমিক ১৪১১ জন এবং শ্রমিক নয় এমন সদস্যদের সংখ্যা ৫৬৬৯ জন। নাগরাকাটা চা-বাগিচায় ব্যক্তিগত ইলেকট্রিক মিটার সহ পাকাবাড়ির সংখ্যা ৬৩৩ টি। সেমি পাকা বাড়ি ২১২, বৈদ্যুতিক সংযোগবিহীন শ্রমিক আবাস নেই। অন্যান্য বাড়ির সংখ্যা ৫১। সরকারি সহযোগিতাতে তৈরি বাড়ি নেই। মোট শ্রমিক আবাস ৮৯৬। শ্রমিক সংখ্যা ১৪১১। বাগিচায় শতকরা ৬৪ শতাংশ শ্রমিক আবাস এবং অন্যান্য বাসগৃহ।
এবারে চা বাগিচা সমীক্ষা করতে গিয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য করলাম। শীতের সুখা মরশুমে চা বাগান থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলে চাষ-আবাদের জন্য সেচের জলের উৎস উত্তরের পাহাড় থেকে নির্গত ডুয়ার্সের বিভিন্ন নদী ও ঝোরাগুলি যেগুলির প্রায় সব কটিই চা বাগান, গ্রামাঞ্চল ও বনাঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এই সমস্ত নদী ও ঝোরাগুলি সারা বছর চা বাগিচা এবং গ্রাম্য এলাকায় চাষবাস ও বনাঞ্চলের বন্যপ্রাণীর পানীয় জলের জোগান দেয়। কিন্তু চা বাগানগুলি উজানে থাকায় তারা বিভিন্ন নদীতে ও ঝোরায় অবৈধ বাঁধ তৈরি করে সেচের জন্য জল তুলে নেবার ফলে নীচের দিকে গ্রামাঞ্চলে ও বনাঞ্চল এলাকায় নদীগুলি শুকিয়ে যাচ্ছে। এতেই সমস্যায় পড়ছে নদীর ভাটি এলাকার মানুষ ও বনাঞ্চলের পশুপাখি। ডুয়ার্সের নদীগুলির উজান এলাকায় ঘুরলে দেখা যায় বিভিন্ন নদী ও ঝোরার মধ্যে জেসিবি দিয়ে বড় পুকুরের মত গর্ত বানিয়ে নদীর জল সঞ্চয় করা হচ্ছে। তারপর বাঁধ দিয়ে সেই জল তুলে সেচ ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করছে একাধিক চা বাগান কর্তৃপক্ষ। এই কারণে নদীর নীচের দিকে অববাহিকা এলাকা জলহীন হয়ে পড়ছে। এতেই শুকিয়ে যাচ্ছে বনাঞ্চলের তৃণভূমি। বহু চা বাগানই বর্তমানে এভাবে চা বাগানে জল দিচ্ছে। নদীর জল আটকে চা বাগানে জল দেওয়ার অভিযোগ করেছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও। তাদের বক্তব্য এভাবে জল তুলে নেওয়া ঠিক নয়। এটা অস্বীকার করে লাভ নেই সীমিত ক্ষমতার মধ্যে রাজ্য সরকার চা বাগিচাগুলির জন্য যথেষ্ট কাজ করছে। প্রত্যেকটি চা বাগানে স্বাস্থ্যসম্মত পাণীয় জল প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকার প্রচেষ্টা নিয়েছে। পাশাপাশিভাবে জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারের সাংসদ ডাঃ জয়ন্ত রায় এবং জন বারলা নিজেরাও তাদের সংসদ তহবিলের বরাদ্দকৃত অর্থ চা বাগিচাগুলিতে বিশুদ্ধ পাণীয় জল সরবরাহের জন্য ব্যয় করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং বিক্ষিপ্তভাবে হলেও কাজ চলছে।
নাগরাকাটা এসেছিলাম বাসে করেই। জাতীয় সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাস বাঁ-দিক দিয়ে ঢুকে পড়ল নাগরাকাটার ভেতরে। পিডব্লিউডি বাংলো হয়ে নাগরাকাটা বাজার প্রদক্ষিণ করে আবার উঠে আসে জাতীয় সড়কে। নাগরাকাটা বাজার এবং রেলস্টেশন-এর গা ঘেঁসেই বাসস্ট্যান্ড। পরিচ্ছন্ন ছোট্ট রেলস্টেশনে নামকে ওয়াস্তে এক-দুইখানা প্যাসেঞ্জার ট্রেন আগে দাঁড়াত। এখন অবশ্য কয়েকটা ট্রেন দাঁড়ায়। বেশিরভাগ লোক বাসেই যাতায়াত করে। দেখলাম বাজার বড় নোংরা। বর্ষায় নরককুন্ড। বাজারকে ঘিরে মারোয়ারি, বিহারি, বাঙালি সবাই ব্যবসা করছে। নাগরাকাটা বাগানটির লিজ হোল্ডার কোয়ালিটি টি প্রডিউসিং কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড। লিজের ভ্যালিডিটির সময়সীমা ২০২১ পর্যন্ত ছিল। এই লিজের ভ্যালিডিটি বাড়ানোর জন্য যথোপযুক্ত জায়গাতে জানানো হয়েছে। বাগানে শতকরা ৬৪ % শতাংশ শ্রমিক আবাস এবং অন্যান্য বাসগৃহ আছে। এই শ্রমিকেরাই হাটের দিন নাগরাকাটাতে ভিড় করে। আসলে জলপাইগুড়ি জেলা গঠিত হয় তৎকালীন পশ্চিম ডুয়ার্স জেলা এবং রংপুর জেলার জলপাইগুড়ি মহকুমা নিয়ে। নাগরাকাটা মৌজা অতীত স্মৃতি রোমন্থন করে চলেছে বর্তমানকালের ছোট্ট এক জনপদকে অবলম্বন করে। এই জনপদের কোন উন্নতি চোখে পড়ে না। চা বাগিচায় হাসপাতাল ১ টি। আবাসিক ডাক্তার আছেন। প্রশিক্ষিত নার্সের সংখ্যা ১ জন। বাগিচায় নার্সের সহযোগী মিড ওয়াইভস ১ জন। কম্পাউন্ডার ১ জন। স্বাস্থ্য সহযোগী ১ জন। মেল ওয়ার্ডের সংখ্যা ১০ টি, ফিমেল ওয়ার্ডের সংখ্যা ১০ টি। আইসোলেশন ওয়ার্ড ২ টি, মেটারনিটি ওয়ার্ড নেই। বাগিচার হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার আছে। অ্যাম্বুলেন্স আছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। চিকিৎসার জন্য গড়ে ২৫০-৩০০ শ্রমিককে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রেফার করা হয়।
বাগিচায় লেবার ওয়েলফেয়ার অফিসার সোনম তামাং ২০১০ সাল থেকে আছেন। বাগিচায় ওষুধ সরবরাহ হয়। উন্নত মানের পথ্য সরবরাহ এবং নিয়মিত ডায়েট চার্ট অনুসরণ করা হবার কথা বলা হলেও শ্রমিকদের অভিযোগ অন্য কথা বলে। স্থায়ী ক্রেশের সংখ্যা ২ টি। ক্ৰেশে পর্যাপ্ত জলের ব্যাবস্থা, শৌচালয় আছে। দুধ, বিস্কুট বা পুষ্টিকর খাবার ক্রেশের শিশুদের দেওয়া হয় না। পর্যাপ্ত পানীয় জল ক্ৰেশে এবং চা বাগানে সরবরাহ করার ব্যাবস্থা আছে। তবে পাণীয় জলের উৎস বাগিচার ঝোরা অথবা ট্যাঙ্কার। তা কতটা স্বাস্থ্যসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বাগিচায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। বাগিচা সংলগ্ন উচ্চ বিদ্যালয় নাগরাকাটা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল। এছাড়া একটা হিন্দী হাই স্কুলও আছে। শ্রমিক সন্তানদের বিদ্যালয়ে নেবার জন্য যানবাহনের ব্যাবস্থা হিসাবে দুটো ট্রাক আছে। বাগানে ক্লাব, খেলার মাঠ আছে। নাগরাকাটা চা বাগানে নিয়মিত পিএফ বা গ্র্যাচুইটির টাকা জমা পড়ে। বোনাস চুক্তি অনুযায়ী মিটিয়ে দেওয়া হয়। শ্রমিকদের মজুরি, রেশন এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা চুক্তি অনুযায়ী দেওয়া হয়। আসলে অতীতের নাগরাকাটা সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানা যায় না। এই এলাকা তখন ছিল শ্বাপদসংকুল। গভীর অরণ্য এবং যে অরণ্যের ফাঁকে ফাঁকে ছিল লম্বা লম্বা ঘাস, বাঁশবন আর শিমূল গাছে পরিপূর্ণ। ভিতরে প্রবেশ করার মত দুঃসাহস খুব কম লোকেরই ছিল। বন্যপ্রাণীদের ছিল অবাধ রাজত্ব এবং প্রাণীদের মধ্যে মানুষ ছিল নিতান্তই নগণ্য। সেই যুগে নাগরাকাটা ছিল একটা ক্ষুদ্র জনপদ এবং যেটা ছিল সমতল ও ভুটানে ব্যবসায়িক কারণে যাবার ক্ষণিকের বিশ্রামস্থল। তাই হয়ত এখানে কোন প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া যায় না। পাওয়া যায় না কোন ঐতিহাসিক সত্যের সাক্ষী হিসাবে কোনও তথ্য। যে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী এখানে বসবাস করত তারাও রাখেনি কোন প্রমাণপত্র উত্তরসূরিদের জন্য।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴