বামনডাঙ্গা তন্ডু চা বাগিচা/গৌতম চক্রবর্তী
বামনডাঙ্গা তন্ডু চা বাগিচা
গৌতম চক্রবর্তী
--------------------------------
জলপাইগুড়ি, রাজগঞ্জ, মালবাজার এবং মেটেলি সার্কিট শেষ হল। এখন পর্যন্ত সহজ উঠোনের “বাগিচা বৃত্তান্ত” তে ঠাঁই পেয়েছে ৩৫ টি চা বাগিচা। এই সপ্তাহ থেকে শুরু হল নাগরাকাটা চা বাগিচা। নাগরাকাটা, ভগতপুর, কুর্তি, বামনডাঙ্গা তন্ডু, জিতি, হিলা, হোপ, নয়া সাইলি, গ্রাসমোর, গাঠিয়া, লুকসান, ক্যারণ, চ্যাংমারী, ধরণীপুর, সুরেন্দ্রনগর, রেডব্যাঙ্ক, ডায়না, কলাবাড়ি চা বাগিচাগুলিকে নিয়ে কলম ধরব এবার। এবারে প্রতিটি সার্কিট সফরে তুলে আনব পর্যটন, ইতিহাস, লোকসংস্কৃতি, জনজাতি সংস্কৃতি এবং ডুয়ার্সের জনপদ পরিচিতি। আজকে লকডাউন এবং লকডাউন পরবর্তীকালে ডুয়ার্সের নাগরাকাটা সার্কিটের চা বাগিচাগুলির সালতামামি পর্যালোচনা করব। চা বাগিচাগুলিতে সফর করতে গিয়ে প্রথমেই আমার যেটা মনে হয়েছে উত্তরের চা বাগিচায় প্রয়োজন কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়। সমন্বয় প্রয়োজন ট্রেড ইউনিয়ন, মালিকপক্ষ এবং সরকারের মধ্যে। তবেই বাঁচতে পারে এই সুবিশাল ইন্ডাস্ট্রি। লকডাউনের সেই ভয়ঙ্কর দূর্দিনের কথা মনে পড়ে। সংকটে থাকা উত্তরবঙ্গের চা শিল্পের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উভয়ের কাছেই আর্থিক প্যাকেজ চেয়েছিলেন বাগান মালিকরা। কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রীর প্রতি উত্তরবঙ্গের মানুষের ভরসা ছিল। কারণ কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছিল লকডাউনের বছরে অর্থাৎ ২০১৯ এর ২০ এপ্রিল থেকে চা শিল্প এবং পরিপূরক অনুসারী শিল্পক্ষেত্রেও একাধিক ছাড় দেওয়া হবে যার জেরে হয়তো চা শিল্পের ওপর ঘনীভূত সংকটের অনেকটাই লাঘব হতে পারে। কিন্তু চা শিল্পের জন্য বড় কোন প্যাকেজের কথা ঘোষণা করে নি কেন্দ্র।
মোদ্দাকথা করোনার মত মহামারী জনিত সঙ্কট এলে বাগান এবং উত্তরের শ্রমিক কর্মচারীদের বাঁচাতে হলে এবং সামগ্রীকভাবে উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স, তরাই এবং দার্জিলিংয়ের চা বাগিচা শিল্প এবং শ্রমিকদের বাঁচাতে হলে বিশাল বড় মাপের আর্থিক প্যাকেজ চাই। উত্তরবঙ্গ থেকে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। তার একাংশ খরচ করা উচিত মালিক তথা শ্রমিক-কর্মচারীদের বাঁচাতে। চা শিল্পের সংকট নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বাগান মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে কথা বলুক সেটা আইটিপিএ-র উপদেষ্টা অমিতাংশু চক্রবর্তীরা চাইছিলেন। এটা সত্যিকথা শ্রমিকদের পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে রাজ্যের বাজেটে চা বাগানগুলির উপর থেকে সেই সময় কৃষি কর মকুব করে রাজ্য। এছাড়াও বাগানে অব্যবহৃত জমি পর্যটনে ব্যবহার করা এবং চা সুন্দরী প্রকল্প ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার চা শিল্পের জন্য বিশেষ প্যাকেজ করে নি। চা শিল্পের জন্য বিশেষ প্যাকেজ না করার পিছনে কেন্দ্রের যুক্তি ছিল যেহেতু চা বাগানের সিংহভাগ শ্রমিকই মহিলা তাই প্রধানমন্ত্রী জন-ধন যোজনার অ্যাকাউন্ট হোল্ডার হলে তারা ২০২০ সালের ২৬ মার্চ অর্থমন্ত্রীর ঘোষিত প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ প্যাকে জন-ধন যোজনার ৫০০ টাকা করে আর্থিক সাহায্য পাবেন। চা শ্রমিকদের আর্থিক সাহায্যের দাবির বিষয়ে অর্থমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছিল যে সমস্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক টার্নওভার ১০০ কোটির বেশি তাদের কার্যকরী মূলধন বৃদ্ধিতে বর্তমান ঋণের ওপর আরও ২০ শতাংশ ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া অর্থমন্ত্রক জানিয়েছিল, প্রভিডেন্ট ফান্ডের ক্ষেত্রে শ্রমিক-মালিক উভয়পক্ষকেই তিনমাসের জন্য ১২ শতাংশের প্রদেয় পরিমাণ কমিয়ে ১০ শতাংশ টাকা পিএফ খাতে জমা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
করোনাকালীন লকডাউন পিরিয়ডে জানানো হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ প্যাকেজে কর্মচারী ভবিষ্যনিধিতে সংশোধনী এনে তাতে মহামারিকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এর ফলে পিএফে জমা থাকা মোট অর্থের ৭৫ শতাংশ অফেরতযোগ্য অগ্রিম হিসেবে অথবা তিনমাসের মজুরি যেটা পরিমাণে কম হবে সেটা তারা পাবেন। অর্থমন্ত্রকের এই বক্তব্যে চা শিল্পের জন্য আখেরে আলাদা করে কিছুই ছিল না বলে রুষ্ট হয়েছিল মালিকপক্ষের সংগঠনগুলি। প্যাকেজের মধ্যে তাদের অন্যতম দাবি ছিল শ্রমিকদের যে গ্র্যাচুইটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ড বকেয়া পড়ে রয়েছে তা প্রদানে সরকারের এগিয়ে আসা। অন্তত ৫ বছর যদি সরকার শ্রমিকদের পিএফ ও গ্র্যাচুইটি বাবদ নিয়োগকর্তা প্রদেয় টাকা দেওয়ার দায়িত্ব নেয় তবে ধুঁকতে শুরু করা চা শিল্প কিছুটা হলেও চাঙ্গা হয়ে উঠবে। আরেকটি সংগঠন ডিবিআইটিএ-র দাবী ছিল কয়েকমাসের জন্য পিএফের টাকা প্রদান থেকে পুরোপুরি অব্যাহতি দেওয়া প্রয়োজন। সংগঠিত ক্ষেত্রে পিএফ প্রদান নিয়ে যে সুবিধা সাময়িক সময়ের জন্য দেওয়া হচ্ছে তাতে কেবলমাত্র ১০০ জনের কম শ্রমিক কাজ করেন এমন প্রতিষ্ঠানই উপকৃত হবে। চা শিল্পে শ্রমিকের সংখ্যা অনেক বেশি। এই সুবিধা সর্বজনীন করা প্রয়োজন ছিল। আসলে লকডাউন ছিল নিমিত্তমাত্র। মালিকপক্ষের চিরকালীন গলা শুকানো কান্নারই প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছিল সেই সময়ে। তবে একথা সত্যি লকডাউনে সামগ্রীকভাবে এই শিল্পের করুণ অবস্থা হয়েছিল। অতএব সরকারি সাহায্য ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানো অত্যন্ত কঠিন ছিল।
রাজ্য সরকারের একাধিক মন্ত্রী এবং বিভিন্ন সমবায় ব্যাংকগুলির চেয়ারম্যানেরা আছেন উত্তরবঙ্গে। হাস্যকর রকমের প্রশ্ন ওঠে কেনই বা সবকিছু মুখ্যমন্ত্রীকে একা দৌড়াদৌড়ি করে সামলাতে হবে? কেনই বা উত্তরবঙ্গের নির্বাচিত বিধায়ক বা সাংসদেরা রাজ্য সরকারের সঙ্গে লিয়াজোঁর ভিত্তিতে সঠিক তথ্য রাজ্য সরকারের কাছে তুলে ধরে বাগিচার জন্য আর্থিক প্যাকেজ নেবেন না এটাও বোধগম্য হয় না। এটা বাস্তব এবং সত্যিকথা যে চা মালিকদের সংগঠনগুলির মত ছিল লকডাউনের সময় চা শিল্পে দৈন্যদশা চলছিল এবং উৎপাদন খরচ বাড়ছিল হু হু করে। উৎপাদন খরচের ৬০ শতাংশই শ্রমিকদের মজুরি। বিগত বছরগুলিতে ওই খাতে খরচ বৃদ্ধির পরিমাণ ৩২ শতাংশ ছিল। অথচ তৈরি চায়ের দাম ৩ বছর ধরে কার্যত একই ছিলো। সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হিসেবে সেই মুহূর্তে তারা তুলে ধরেছিল চায়ের উদ্ধৃত্ত জোগানের বিষয়টি, যা দাম না বাড়ার একটি অন্যতম প্রধান কারণ ছিল। লকডাউনের সময় চাহিদা ও যোগানের অসামঞ্জস্যতা ধীরে ধীরে উত্তরবঙ্গের বহু বাগানকে রুগণ অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্চ্ছিল। এই কারণেই শ্রমিকদের পাওনাগন্ডার বিষয়টি প্রকট আকার ধারণ করলেই বাগান বন্ধ হয়ে যাবে বলে চা মালিকরা জানিয়েছিল সরকারের কাছে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সরকারি প্যাকেজ ছাড়া কোন গতি নেই বলে বাগানগুলির বক্তব্য ছিল। এই ধরণের ভয়ঙ্কর টালমাটাল অবস্থার প্রেক্ষাপটে এসে পৌছেছিলাম নাগরাকাটার বামনডাঙ্গা টন্ডুতে।
তন্ডু শব্দের অর্থ কেউ বলেছেন এক প্রকার বৃক্ষ। আবার কারো মতে তন্ডু আসলে আদিবাসী উপজাতি যাদের দেখা মেলে বামনডাঙ্গা এবং টানাটানি নদীর কাছে। এরা গভীর জঙ্গলে ঢুকে জংলী ইঁদুর ধরে পুড়িয়ে খায়। ইঁদুরের মাথাগুলি দেখতে বাঁদরের মাথার মতো। কিছুটা হলুদ রংয়েরও বটে। তাছাড়া খাবার লোভে গরুমারার হাতিরা চলে আসে তন্ডুতে। হাতিদের করিডোর তন্ডু। কোন কোন সময় হাতিরা হাঁড়িয়ার আসরে যোগ দেয়। এখন যেখানে তন্ডু নজরমিনার সেখান থেকে গয়েরকাটা হয়ে সোনাখালি, মরাঘাট, টানাটানি, বামনডাঙ্গা অঞ্চল পর্যন্ত কোনো এক সময়ে ছিল কাঠ মাফিয়া বা চোরাকারবারীদের স্বর্গভূমি। বনদপ্তর যে কাঠচুরি একশ ভাগ বন্ধ করতে পেরেছে তা নয়। কারণ সর্ষের মধ্যে ভূত-এর অবাধ বিচরণ এখনও কমে নি। তবু বনবস্তি বা বন লাগোয়া গ্রামগঞ্জের মানুষজনের বন সুরক্ষা, প্রকৃতি পর্যটন বা পারিবারিক পর্যটন অথবা স্বনির্ভর প্রকল্পের মত নানাবিধ কর্মসূচির মাধ্যমে বনজ সম্পদ বা বন্যপ্রাণী রক্ষা করার প্রচেষ্টা দিন দিন বাড়ছে। এখন কাঠচোর, বন্যপ্রাণী পাখি কিংবা ভেষজগাছের চোরাকারবারিরা বনে প্রবেশ করলে বনবস্তির লোকেরাই বাধা দিচ্ছে কিংবা খবর পাঠাচ্ছে। এটা উত্তরবঙ্গের কোথাও কোথাও বনদপ্তরের বিরাট সাফল্য। শুধুমাত্র একজন রেঞ্জার বা বিট অফিসার আর দুজন গাদা বন্দুকধারি রক্ষী দিয়ে বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষা করা কোনওমতেই সম্ভব নয়।
জলপাইগুড়ি জেলার নাগরাকাটা ব্লকের বামনডাঙ্গা তন্ডু চা বাগানটির পরিচালক গোষ্ঠী আমবোটিয়া টি গ্রুপ এক্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড। কোম্পানী ২০০৯ সালে বাগানটির দায়িত্বভার যখন গ্রহণ করে তখন কোম্পানির মালিক তথা বোর্ড অফ ডিরেক্টরের নাম ছিল সঞ্জয় প্রকাশ বনশল এবং রীণা বনশল। তাঁর কাছ থেকে হাতবদল হয়ে কোম্পাণীর নতুন মালিকানা হস্তান্তরিত হয় প্রসন্ন রায়ের হাতে। বর্তমান চা বাগানের মালিক প্রসন্নকুমার রায় ঘটনাচক্রে এসএসসিকাণ্ডে জেলবন্দি রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ভাগ্নিজামাই। প্রসন্ন রায়কেও এসএসসি কান্ডে সিবিআই গ্রেফতার করার ফলে বাগানের মালিকানা এখন প্রসন্ন রায়ের ভাই জয়ন্ত রায়ের হাতে। ফলে সমস্যার মধ্য দিয়ে চলছে বামনডাঙ্গা-তন্ডু চা বাগিচা। ডিবিআইটিএ ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কিত সহায়তা দিয়ে থাকে। বাগানে প্রতিষ্ঠিত ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা ২ টি। একটি হলো সিবিএমিউ এবং অপরটি পিটিডব্লিউইউ। চা বাগানটির গ্রস এরিয়া এবং গ্র্যান্ট এরিয়া ৭৩৪.৫০ হেক্টর। এক্সটেন্ডেড জমি ৮০ হেক্টর। আপরুটেড এবং নতুন বপনযোগ্য আবাদীক্ষেত্র ১৪ হেক্টর। ড্রেন এবং সেচের সুবিধাযুক্ত অঞ্চল ১৬০ হেক্টর। ড্রেনের সুবিধাযুক্ত অঞ্চল এবং সেচযুক্ত প্ল্যান্টেশন এরিয়া ৪৪১.৪৬ হেক্টর। ড্রেন এবং সেচযুক্ত প্ল্যান্টেশন এরিয়া থেকে প্রতি হেক্টরে গড়ে ৮০০ কেজি কাঁচা চা পাতা উৎপাদিত হয়। চা বাগিচার সাব স্টাফের সংখ্যা ৭৮ জন। করণিক ৭ জন। ক্ল্যারিক্যাল এবং টেকনিক্যাল স্টাফ ১৩ জন। বাগানে শ্রমিক পরিবারের সংখ্যা ৮৬৭। মোট জনসংখ্যা ৪২৫০ জন। স্থায়ী শ্রমিক ১০৫৬ জন। প্রতি বছর গড়ে ২০০ জন ক্যাসুয়াল শ্রমিক বাগানে নিযুক্ত করা হয়।
ফ্যাক্টরিতে নিযুক্ত স্টাফ এবং শ্রমিক সংখ্যা ১০৭ জন। মোট কর্মরত শ্রমিক ১৩১০ জন। অ-শ্রমিক সংখ্যা ২৯৪০ জন। চা বাগানে নিজস্ব চা পাতা উৎপাদনের গড় ১২-১৪ লাখ কেজি। ফ্যাক্টরিতে নিজস্ব উৎপাদিত চা ৩-৪ লাখ কেজি। বাইরের বাগান থেকে কাঁচা পাতা সংগৃহিত হয় না। ব্লেন্ডেড টি বা প্যাকেজড টি উৎপাদিত হয় না। মোট বাৎসরিক উৎপাদিত ইনঅরগ্যানিক সিটিসি চা ৩-৪ লাখ কেজি। বাগানটি চরিত্রগত দিক দিয়ে উন্নতমানের বাগান। বাগান পরিচালনার কার্যকর মূলধন আসে নিজস্ব অর্থনৈতিক সোর্স থেকে। বাগানটির লিজ হোল্ডার আমবোটিয়া টি গ্রুপ এক্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড। বাগিচায় ব্যক্তিগত ইলেক্ট্রিক মিটার সহ পাকাবাড়ির সংখ্যা ৫৫৩ টি। বৈদ্যুতিক সংযোগবিহীন শ্রমিক আবাসের সংখ্যা । আধা পাকাবাড়ির সংখ্যা ১০৪ টি। সরকারি এবং অন্যান্য আবাস ২১০ টি। মোট শ্রমিক আবাস ৮৬৭ টি। মোট শ্রমিক ১৩১০ জন। বাগানে শতকরা ৬৬ শতাংশ শ্রমিক আবাস এবং অন্যান্য বাসগৃহ আছে। চা বাগিচায় হাসপাতাল ১টি। ডিসপেনসারি ২ টি। উত্তম পাল নামে এক আবাসিক ডাক্তার অনেকদিন আগে ছিলেন। যদিও তিনি এমসিআই দ্বারা অনুমোদিত ছিলেন না। সাম্প্রতিককালে ডাক্তারের অস্তিত্ব চোখে পড়ল না। মেল ওয়ার্ডের সংখ্যা ৮ টি, ফিমেল ওয়ার্ডের সংখ্যা ৮ টি। আইসোলেশন ওয়ার্ড ১ টি, মেটারনিটি ওয়ার্ড ২ টি।
বাগিচার হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার আছে। অ্যাম্বুলেন্স আছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। প্রশিক্ষিত নার্সের সংখ্যা ২ জন। বাগিচায় নার্সের সহযোগী মিড ওয়াইভস ১ জন। কম্পাউন্ডার ১ জন, স্বাস্থ্য সহযোগী ১ জন। চিকিৎসার জন্য শ্রমিকদের বাগানে অবস্থিত প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রেফার করা হয়। বাগিচায় লেবার ওয়েলফেয়ার অফিসার নেই। ভ্রাম্যমান ক্রেশের সংখ্যা ২ টি। ক্রেশে অ্যাটেন্ডেন্ট ৮ জন। ক্ৰেশে পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যাবস্থা, শৌচালয় আছে। দুধ, বিস্কুট বা পুষ্টিকর খাবার ক্রেশের শিশুদের দেওয়া হয় মাঝেমাঝে। বাগিচায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। শ্রমিক সন্তানদের বিদ্যালয়ে নেবার জন্য যানবাহনের ব্যাবস্থা হিসাবে একটা ট্রাক আছে। বাগানে বিনোদনমূলক ক্লাব, খেলার মাঠ আছে। বামনডাঙ্গা তন্ডু টি গার্ডেনে নিয়মিত পি এফ বা গ্র্যাচুইটির টাকা জমা পড়ে। এতদিন বোনাস চুক্তি অনুযায়ী মিটিয়ে দেওয়া হত। কিন্তু প্রসন্ন রায় দায়িত্ব নেবার পর পি এফ বা গ্র্যাচুইটির পাশাপাশি বোনাস নিয়েও সমস্যা হয়েছিল। তবে এখনো শ্রমিকদের মজুরি, রেশন চুক্তি অনুযায়ী দেওয়া হয় ।
তবে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে বামনডাঙা চা বাগান কতৃপক্ষ ২৭ ডিসেম্বর থেকে বাগানে সাসপেনশন অব ওয়ার্ক নোটিশ দিয়ে বাগান ছেড়ে চলে যান। তাদের অভিযোগ ছিল এক অংশের শ্রমিক ইউনিয়ন বাগানের কাজে অরাজকতা সৃষ্টি ও অবাঞ্চিত হস্তক্ষেপ করছে। চা বাগান মজদূর ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক জিয়াউল আলম কথাপ্রসঙ্গে জানালেন, ইদানীং চা বাগানে এক শ্রেণীর শ্রমিকের মধ্যে দুর্নীতি, কামকাজে অলসতা, দুর্নীতিতে মদতদান ইত্যাদি প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন চা বাগানে আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে অবাঞ্চিত হস্তক্ষেপ হচ্ছে। বাগানের মালিকানাকে অস্বীকার করে বাইরে থেকে নিজেদের পছন্দ মত লোককে মালিকানায় বসাতে চাইছে কেউ কেউ। বেশ কিছু বাগানে এইরকম প্রবনতা দেখা দেবার ফলে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে এইভাবে চললে চা বাগান শ্রমিকরা পড়বেন বিপদে। তাই এসব ক্ষেত্রে এই বিপদগুলি সন্বন্ধে প্রশাসনকে ওয়াকিবহাল হয়ে দ্রুত প্রশাসনিক ব্যাবস্থা নেওয়া দরকার। এর আগেও দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বন্ধ ছিল বামনডাঙা চা-বাগানটি। তা খোলা হয়েছিল কিছু দিন আগে।
শ্রমিকদের সূত্রে জানা গিয়েছিল ওই বাগানে তেমন কোনও সমস্যা ছিল না। তাঁদের দাবি, শীতের শুখা মরসুমে বাগান বন্ধ করে দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে চা-বাগানের মালিকদের একাংশের। বামনডাঙা চা-বাগানটি সেই কারণেই বন্ধ হয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শ্রমিকরা। বাগানের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার সৌম্য ঘটকের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি জানিয়েছিলেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য শ্রমিকরাই দায়ী। কর্মসংস্কৃতির অভাব-সহ মোট ৯টি কারণ তুলে ধরেছিল মালিকপক্ষ। তাই লক আউটের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ছাড়া তাদের আর কোনও বিকল্প ছিল না। অবশ্য বাগানের তৃণমূল প্রভাবিত চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা কৈলাস গোপ বলেন, ‘‘শ্রমিকদের নিয়ে যদি কোনও সমস্যা থাকত তবে তো সে ক্ষেত্রে পরিচালকরা ইউনিয়নের সঙ্গে কথা বলতেন। সে সব তো কিছুই হয় নি। ওঁরা আগে থেকেই বাগান বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছিলেন তলে তলে।’’ যাই হোক, উৎকন্ঠার অবসান হয়। প্রায় তিরিশ দিন পর খুলে যায় নাগরাকাটা ব্লকের বামনডাঙা চা বাগান। বাগানের ১২০০ শ্রমিকের উপর থেকে অনিশ্চয়তার কাল মেঘ সরে যায়। শ্রমিকেরা তাদের বিভিন্ন বিভাগের কাজে যোগদান করেন।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴