বাতাবাড়ি চা বাগান/গৌতম চক্রবর্তী
বাতাবাড়ি চা বাগান
গৌতম চক্রবর্তী
------------------------
এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এবারের বাগিচা সফর শুরু করেছি। এবারের সফর বাতাবাড়ি টি এস্টেট। ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত অ্যামালগামেটেড প্ল্যান্টেশন লিমিটেড কোম্পানি চা কোম্পাণীগুলির মধ্যে একটি বিশিষ্ট নাম। মালবাজার মহকুমার বাতাবাড়ি টি গার্ডেনটির পরিচালক গোষ্ঠীও অ্যামালগামেটেড প্ল্যান্টেশন লিমিটেড যা পরোক্ষভাবে টাটাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ডিবিআইটিএ এর প্রত্যক্ষ ম্যানেজমেন্ট সহায়তা নিয়ে বাগানটি পরিচালিত হয়। বাগানে মোট ম্যানেজারিয়াল স্টাফ তিনজন। বাগানে স্বীকৃত ট্রেড ইউনিয়নগুলি হল সিবিএমইউ, পিটিডব্লিউইউ, ডব্লিউবিটিইএ, ডব্লিউবিসিএমসি। সিবিএমিউ বাগানের স্বীকৃত ট্রেড ইউনিয়ন ছিল একসময়ে। এখন সবকিছুই যেন উলটপুরাণ। বড়দীঘি চা বাগান সার্ভে করে বাতাবাড়ি চা বাগানে ঢুকলাম। মৃদুমন্দ সমীরণে ঝরে পড়ছে শাল সেগুনের পাতা। চারিদিক ধূসর, বিবর্ণ। আমলকি বনে ঝাঁকে ঝাঁকে বনটিয়া, ময়ূর, দোয়েল, ফিঙে, বুলবুলি, খঞ্জনি পাখিদের মেলা। ঝরে পড়ছে রাশি রাশি সেগুন, শালপাতা, হাওয়ায় হাওয়ায় উড়ছে শিমূল তুলো। চা বাগানের পথে হঠাৎ চোখে পড়ে লম্বা লম্বা গাছ। হাতির জন্য সেরা জায়গা। দেখলাম বনদপ্তর অনেকগুলো জায়গাতেই ওয়াচ টাওয়ার তৈরি করেছে। উত্তরে প্রতিবছর অসময়ের অতিরিক্ত বৃষ্টি এবং পোকার হানাদারি চা বাগানকে সমস্যায় ফেলে দিচ্ছে। আবহাওয়ার খামখেয়ালীপনার মাশুল গুনতে হচ্ছে চা বাগানকে। আবহাওয়ার খামখেয়ালীপনাতে দিন দিন ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। আসলে আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে উত্তরবঙ্গে চা চাষ যেভাবে সংকটে পড়ছে এবং পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তা উত্তরবঙ্গের জন্য মোটেই সুখদায়ক নয়। সাম্প্রতিককালে আবহাওয়ার খেয়ালখুশিতে বাড়ছে রোগপোকার সংক্রমণ, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ডুয়ার্সের চা। বাতাবাড়ি চা বাগানের আয়তন এবং চাষযোগ্য আবাদিক্ষেত্র ৪৮৭.৫৯ হেক্টর। আপরুটেড এবং নতুন বপনযোগ্য আবাদীক্ষেত্র ৩০৮.৭ হেক্টর। ড্রেন এবং সেচের সুবিধাযুক্ত অঞ্চল ১৬৩.৮৫ হেক্টর। মোট চাষযোগ্য উৎপাদনক্ষম আবাদিক্ষেত্র ২৯৯.৫৬ হেক্টর। প্রতি হেক্টর উৎপাদনযোগ্য প্ল্যান্টেশন এরিয়া থেকে ১৮১৩ কেজি করে চা উৎপাদিত হয়।
চা শিল্পের উন্নয়ন, চা এর উৎপাদন বৃদ্ধি ও গুণগত মানোন্নয়নের জন্য বাগানগুলিকে বিভিন্ন খাতে টি বোর্ডের মারফত ভর্তুকি দেয় কেন্দ্র। বাণিজ্য মন্ত্রক সেই খাতে অর্থ বরাদ্দ করে। চা বাগানের পরিচালন কর্তৃপক্ষ চায়ের গুণগত মান আরও উন্নত করবার জন্য শীতকালে চা গাছে কাটিং এবং প্রুনিং করে। প্রুনিং এর সময় টি বোর্ডের নির্দেশ অনুসারে কাঁচা চা পাতা উত্তোলন যেমন বন্ধ থাকে, তেমনি চা প্রক্রিয়াকরণের কাজও হয় না। প্রুনিং সম্পন্ন হলে বর্ষার পর চা গাছে আশানুরূপ পাতা আসে। অভিজ্ঞতার নিরিখে বাগান মালিকেরা দেখেছে গুণগত ভালো মানের চা হলে চায়ের দাম একাধারে যেমন ভালো পাওয়া যায়, তেমনি চা বিপণনের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যায় পড়তে হয় না। চা বিশেষজ্ঞদের অভিমত প্রুনিং-এর কাজ সঠিকভাবে করা হলে চা বাগানগুলিতে উৎপাদনের ক্ষেত্রে নতুন দিশা দেখতে পাবে চা শিল্প সংশ্লিষ্ট মানুষজন। চায়ের গুণগত মান ভালো হলে সস্তায় চা পাতা বিক্রির কোনও প্রশ্নই নেই। সার, কীটনাশকের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তা গ্রহণ করার জন্য বাড়তি অর্থ খরচ হচ্ছে। সঙ্গত কারণেই চায়ের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। বৃহৎ চা বাগানগুলির মতো ক্ষুদ্র চা বাগানগুলিতেও শ্রমিকদের সঙ্গতভাবেই মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই কাটিং এবং প্রুনিং এর জন্য সিটিসি ও অর্থোডক্স, উভয় ধরনের চায়ের জন্যই ভর্তুকি দেয় টি বোর্ড। অর্থোডক্স চা তৈরি, সেচের উন্নয়ন, চায়ের গুণগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে পুরনো চা গাছ তুলে নতুন গাছ বসাতে, চা গাছের উপর ‘শেড ট্রি’ রোপন করতে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপরুটিং ও রিপ্ল্যান্টিং এ ভর্তুকি বন্ধ হবে কেন? প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ভর্তুকি প্রদান করা একান্তই জরুরী। তার বেশিরভাগই যায় অসম-সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে সেই ভর্তুকিতে কিছুটা রাশ টেনেছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় বরাদ্দ না মেলায় উন্নয়ন প্রকল্প ধাক্কা খাচ্ছে বলে অভিযোগ চা শিল্প মহলের। উত্তরবঙ্গে দু দুজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এক জনেরও চা বাগিচা নিয়ে পরিকল্পিত প্ল্যানিং নেই।
প্রকৃতপক্ষে উত্তরবঙ্গের ৪৪৬ টি বড় এবং ছোট চা বাগান চায়ের গুণগত মান বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে চা পাতা তোলার কাজ শুরু করে। বাগানগুলিকে ফার্স্ট ফ্লাসে উচ্চ মানের পাতা আসার জন্য কিছুটা অপেক্ষা করার উপদেশ বোর্ডের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়। অনেকক্ষেত্রে শীত একটু বেশি থাকলে বা বাগানে তাজা পাতা চলে এলে কাঁচা পাতা তোলার বিধিনিষেধ এবং সময় কিছুটা শিথিল করার দাবি জানিয়ে বাগানগুলি টি বোর্ড এর কাছে আবেদন করে নির্ধারিত তারিখের আগেই তাদের চা পাতা তুলতে চায়। টি বোর্ড তখন বাগানগুলির ওই আবেদন খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি নিয়োগ করে। ওই কমিটি চা বাগানগুলিতে সরেজমিনে গিয়ে যদি বাগানগুলিতে ভালো মানের পাতা এসে গিয়েছে বলে সার্টিফিকেট দিয়ে পাতা তোলার সুপারিশ করে তবেই বাগানগুলির আবেদনটি বিবেচনা করা হয়। উত্তরবঙ্গে ২০২০ এর ১১ ই ফেব্রুয়ারি থেকে রাজ্যের বাগানগুলোতে পাতা তোলার কথা জানানো হয়। আসলে প্রুনিং না করে ছেড়ে রাখা অংশ থেকে কাঁচা পাতা তুলে যদি ফার্স্ট ফ্লাশের উৎপাদন বলে চালিয়ে দেওয়া হয় তাহলে চায়ের বাজার আরও সংকুচিত হবে। কারণ চায়ের বিপণনে ফার্স্ট ফ্লাশের দরই সর্বাধিক। দামেও অন্য মরসুমের চা-কে টেক্কা দেয় ফার্স্ট ফ্লাশ। বাতাবাড়ি চা বাগানে দেখলাম বর্তমানে ফার্স্ট ফ্লাশের মরশুমে বাগানগুলিতে পাতা তোলার কাজ চলছে। বাতাবাড়ির পাশেই ময়নাগুড়ির রামশাইকে ঘিরে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট প্রচুর ক্ষুদ্র চা বাগিচা যা বাতাবাড়িতে আসার সময় চোখে পড়ল। সার্বিকভাবে ক্ষুদ্র চা শিল্পে স্বাস্থ্যকর পরিবেশের উপস্থিতিকে দীর্ঘস্থায়ী করতে চাই পরিকল্পিত পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনার অঙ্গস্বরূপ ক্ষুদ্র চা বাগানগুলির সময়োচিতভাবে মাটি পরীক্ষা করা প্রয়োজন। পিএইচ ভ্যালু যথাযথ রয়েছে কিনা সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ ক্ষুদ্র চা বাগানগুলির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের বিরাট সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব।
অফিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বাতাবাড়ি চা বাগিচার সাব স্টাফের সংখ্যা ৩৮ জন। করণিক ৯ জন। ক্ল্যারিক্যাল এবং টেকনিক্যাল স্টাফ ১৩ জন। বাগানে শ্রমিক পরিবারের সংখ্যা ৪৪৬ জন এবং মোট জনসংখ্যা ৩১৮২। স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ৫৮০ যারা দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ পাতা তোলার বিনিময়ে নির্দিষ্ট মজুরি পায়। ফ্যাক্টরিতে নিযুক্ত স্টাফ এবং শ্রমিক সংখ্যা ৫৬ জন এবং চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক ৫৫ জন। ফ্যাক্টরির টেকনিক্যাল এবং ক্ল্যারিক্যাল শ্রমিক মিলে মোট শ্রমিক সংখ্যা ২৯ জন। বাগিচায় মোট কর্মরত শ্রমিক ৭৫৮ জন এবং শ্রমিক নয় এমন সদস্যদের সংখ্যা ২৪২৪ জন। অস্থায়ী বা বিঘা শ্রমিক/ চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক মাঝে মাঝে প্রয়োজনে নেওয়া হয়। বাতাবাড়ি টি গার্ডেন ইউকো ব্যাংক এর কাছ থেকে আর্থিক সুযোগ সুবিধা লাভ করে থাকে এবং বাগান পরিচালনার কার্যকর মূলধন আসে ব্যাংক এবং নিজস্ব চা বিক্রি বাবদ অর্থনৈতিক আয় থেকে। বাগানটির লিজ হোল্ডার অ্যামালগামেটেড প্ল্যান্টেশন লিমিটেড। বাতাবাড়ি চা বাগিচায় আলাদা আলাদা ব্যক্তিগত ইলেকট্রিক মিটার সহ পাকা বাড়ির সংখ্যা ৪৪২ টি এবং বৈদ্যুতিক সংযোগবিহীন শ্রমিক আবাস এর সংখ্যা খুবই কম। মোট শ্রমিক আবাসের সংখ্যা ৪৪৬ টি এবং মোট শ্রমিক সংখ্যা ৭৫৮ জন। বাতাবাড়ি চা বাগিচায় শৌচাগারের সংখ্যা ৪৪৬ টি। বাতাবাড়ি চা বাগিচায় একটি হাসপাতাল আছে এবং ডিসপেনসরিও আছে একটি যেখানে মেল ওয়ার্ড আছে ১১ টি, ফিমেল ওয়ার্ড ১০ টি, আইসোলেশন ওয়ার্ড ২ টি, মেটারনিটি ওয়ার্ড ২ টি। ক্ষেত্রসমীক্ষার সময়ে বাগিচায় আবাসিক ভিত্তিতে ডাক্তার ছিলেন। বাগিচায় প্রশিক্ষিত নার্স আছেন দুজন এবং নার্স এর সহযোগী রয়েছে একজন। স্বাস্থ্য সহযোগী রয়েছেন একজন। বাগিচায় পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করা হয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহযোগিতায়। বাগিচাতে অ্যাম্বুলেন্স আছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। চিকিৎসার জন্য গড়ে বছরে ১০০ জন শ্রমিক রেফার করা হয়।
দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারের টি বেল্টে কেন্দ্রীয় শাসকদলের সাংসদ শেষ যে উত্তরবঙ্গ কবে পেয়েছে তা মনে পড়ে না। উত্তরবঙ্গে সবচেয়ে বেশি বাগান ডুয়ার্সে। এর পরেই পাহাড়। তারপর তরাই। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের পর আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বারলা এবং জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায় নির্বাচিত হওয়ার পর আশান্বিত হয়েছিল চা শিল্পমহল। ২০২০ সালে কেন্দ্রীয় বাজেটের আগে শিলিগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রে বাগান মালিকদের একটি আলোচনায় ডাকা হয়েছিল আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বারলা এবং জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায়কে। চা বাগিচার সমস্ত সমস্যা জানিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাজেট দেখে হতাশ হয়েছিলেন বাগান মালিকরা। করোনার জেরে চা শিল্পে ক্ষতিপূরণের আলাদা আর্থিক প্যাকেজের দাবি মানল না কেন্দ্রীয় সরকার। উত্তরের চা বাগিচার উন্নয়নে কার্যত উপেক্ষার শিকার হয়েছিল চা বলয়। চা শিল্পের জন্য কেন্দ্র কী করেছে তা সবিস্তারে জানিয়ে দিয়েছিল অর্থমন্ত্রকের ইকনমিক অ্যাফেয়ার্স দপ্তর। ফলে কেন্দ্রের ভূমিকায় সন্তুষ্ট হল না চা মালিকদের সংগঠনগুলি। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংসদে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবে অসম ও পশ্চিমবঙ্গের চা বাগানের মহিলা ও শিশু কল্যাণে ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দের কথা বলা হয়েছিল। লকডাউনের পরিস্থিতিতে এল বিধানসভা নির্বাচন। নির্বাচনী প্রচারে চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য ২ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজের কথা জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শা। এর আগে কোনও কেন্দ্রীয় সরকার সুনির্দিষ্টভাবে উত্তরবঙ্গের চা বাগান, জনজাতি ও নানা সম্প্রদায়ের কথা ভাবেনি। তাই স্বাভাবিকভাবেই সারা রাজ্যব্যাপী ভারতীয় জনতা পার্টি শোচনীয়ভাবে পরাস্ত হলেও উত্তরবঙ্গের চা বলয়ে তারা জমি ধরে রেখেছিল।
লকডাউনের পরিস্থিতিতে ২০২১ সালে এসেছিল বিধানসভা নির্বাচন। অমিত শা বলেছিলেন উত্তরবঙ্গ চা বাগান দিয়ে ঘেরা। বহু মানুষের রোজগার এর সঙ্গে জুড়ে আছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার চা শ্রমিকদের জন্য ২ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজের কথা ঘোষণা করেছে। ওখানে ভালো স্কুল হবে। চা শ্রমিকদের জন্য বাড়ি হবে। জনস্বাস্থ্য কেন্দ্র হবে। শ্রমিকদের ব্যাংকের খাতা খুলে মজুরির টাকা সোজা অ্যাকাউন্টে যাবে। জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ আরো এক ধাপ এগিয়ে জানিয়েছিলেন বাজেটে চা বাগানের জন্য ১ হাজার কোটি টাকার ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাবের বাইরেও স্বাস্থ্য ও পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতেও প্রচুর টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব বাজেটে রয়েছে। তা থেকে চা বাগানের জন্য খরচ হতেই পারে। বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যায় নি। আইন অনুসারে চা শিল্পের ৮৩ শতাংশ দায়িত্বই কেন্দ্রের। রাজ্যের দায়িত্ব স্রেফ ১৭ শতাংশ। অথচ এখানে কেন্দ্র কার্যত হাত গুটিয়ে বসে আছে। তাই স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে সারা বছরব্যাপী শ্রমিক-কর্মচারীদের কাছ থেকে একদিনের বেতন নিয়ে এবং রাজ্য সরকারগুলিকে একই স্কিম নেবার উপদেশ দিয়ে যে বিপুল পরিমাণে তহবিল সংগ্রহ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার তার কিয়দংশ চা বাগিচার মালিক এবং শ্রমিক উভয়ের জন্য তথা উত্তরবঙ্গের জন্য কেন ব্যয় করবে না কেন্দ্রীয় সরকার? উত্তরবঙ্গে কেন্দ্রীয় শাসকদলের মতাদর্শ সম্পন্ন নির্বাচিত সাংসদেরা রয়েছেন। প্রশ্ন উঠতেই পারে কেন তারা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আর্থিক প্যাকেজের দাবি করবেন না? গত দেড়শ বছরের চা বাগিচার ইতিহাসে লকডাউনের মত সংকট মনে হয় না আগে কখনো এসেছিল। তাই রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার যদি আপতকালীন সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক দর কষাকষি ভুলে চা বাগিচার চোখের জল মুছতে এগিয়ে না আসে তাহলে মানুষের চোখের জল তাদের রাজনৈতিক জীবনে হয়তো অভিশাপ হয়ে নেমে আসতে পারে একথা যে কেন তারা বোঝে না তা বোধগম্য হয় না।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴