সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
62.পইলা সাঞ্ঝির কথা-শেষ পর্ব/শুক্লা রায়

62.পইলা সাঞ্ঝির কথা-শেষ পর্ব/শুক্লা রায়

61.পইলা সাঞ্ঝির কথা-৬১/শুক্লা রায়

61.পইলা সাঞ্ঝির কথা-৬১/শুক্লা রায়

60.পইলা সাঞ্ঝির কথা-৬০/শুক্লা রায়

60.পইলা সাঞ্ঝির কথা-৬০/শুক্লা রায়

59.পইলা সাঞ্ঝির কথা=৫৯/শুক্লা রায়

59.পইলা সাঞ্ঝির কথা=৫৯/শুক্লা রায়

58.পইলা সাঞ্ঝির কথা-৫৮/শুক্লা রায়

58.পইলা সাঞ্ঝির কথা-৫৮/শুক্লা রায়

57.পইলা সাঞ্ঝির কথা-৫৭/শুক্লা রায়

57.পইলা সাঞ্ঝির কথা-৫৭/শুক্লা রায়

24-November,2022 - Thursday ✍️ By- শুক্লা রায় 616

পইলা সাঞ্ঝির কথা/৩৭

পইলা সাঞ্ঝির কথা
পর্ব - ৩৭
শুক্লা রায়
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷

ব্যালপাতা-সীতাহার

   "ছেকাপাড়া দিসিস মাই?"
উঠোনে বাইরের উনুনে বড় একটা দস্তার হাঁড়িতে ফুটতে থাকা গরমজলে লম্বা বাঁশের একটা কঞ্চি দিয়ে চারদিকে কাপড়গুলো ভালো করে খুঁচিয়ে ভেজাতে ভেজাতে বসমতী উত্তর দেয়,
     "হ্যাঁ দি। বইসখেনে ওদি পিঁড়াখান নিয়া কনেক।"
মনেশ্বরের মা বসে না, দাঁড়িয়েই থাকে। 
    "ভাত কায় আন্দেছে এইলা দিন?"
বসমতী হাঁড়ির কাপড়গুলো কঞ্চি দিয়ে ওলোট-পালোট করে দিতে দিতে বলে,
   "মাই আন্দেছে, মালতী। কয়দিন থাকি উয়ায় আন্দেছে, মুই না পাং তে উয়ার কাকাক কলুং, মাইটাকে আনো, কয়দিন আন্দিবে, সেলা কোনো একখান দিয়া থুয়া আসিমো।"
মনেশ্বরের মা মুখটা ব্যাজার করে বলে,
   "তোমরা বলে জল ছিটাবেন?"
তারপর উত্তরের অপেক্ষা না করেই বলে,
    "তোমরা হইলেন পাইসাওলা মানষি, তোমাকে না জলছিটির কবে। মুই বাচ্চা হাতে কোলাত মানষি কল্লুং, কতয় আশা করনু জলছিটির। মোক এলা পুছে না!"
বসমতী অবাক হয়। তারপর বলে,
     "হামাকো নাই কয় তো। উয়ার কাকায় যায়া কয়া আইচ্চে জলছিটির কাথা। তে ছিটাবু তে ছিটাখেনে।"
মনেশ্বরের মা একটু থতমত খায়। বলে,
      "কায় কায় যে কছে তোমরা বলে জল ছিটাবেন। মালতীর মাও বলে কয়া গেইসে। তে মুই আরো কং ছিটায় তে উমরায় ছিটাউক। ভাল দান দিবে, বেটি জাঙোইক আনি মসং ভাতও খোয়াবে। হামরা কী অত পাই?"
বসমতী কথার ঠেস বুঝতে পারে। কথায় তা প্রকাশ না করলেও মুখটা কালো হয়ে ওঠে। উনুনে খড়ি গুঁজে দিতে দিতে বলে,
      "ছিটাবেন তে ছিটাও তোমরায়। যার যেমন আবস্তা তায় তেমন দিবে। উমরা তো আর চান্দায় নাই! হামরা কী বড়লোক তে, দেওয়ানির মতোন। দিলি হয় কোনোখান একখান। 'যদ্দুর শক্তি, তদ্দুর ভক্তি।' চান্দায় তো নাই কোনো!"
মনেশ্বরের মা বুঝতে পারে বসমতীর উষ্মা। তড়িঘড়ি বলে ওঠে,
      "না হয় মাই, না হয় মাই। মুই হুটা কাথা না কছোং। মালতীর বিয়ার দিনা মোর নন্দের বেটিরও বিয়াও। হামরা না ওটে যামু।"
বসমতী আর কথা বাড়ায় না। উনুনে বসানো হাঁড়ি থেকে বাঁশের তৈরি লম্বা খুন্তির আদলে বানানো 'ঘাটা' দিয়ে একে একে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে কাপড়গুলো বালতিতে তুলে কলপাড়ে নিয়ে যায় কাচার জন্য। যেতে যেতে মনেশ্বরের মাকে বলে,
   "বোইসখেনে। কেনে আসিলু তে।"
মনেশ্বরের মা এবার পরিবেশ হালকা দেখে হাসে,
         "অয় কোনেক গেলুং পুবমাথা, কল বোসা দেখির। অভয়ের বাপ সরকারি কল পাইসে একটা। তাকে বসের ধোইচ্চে তে গেলুং। ভালে হোইল। উমার এখেরে খুব জলের কষ্ট গেল বা। কদ্দুর থাকি মানসিঘরের চুয়ার জল আনির নাগে।"

ছুটির দিন। রবিবার হলেই কান্তেশ্বরের নানারকম খুটখাট কাজ চলতে থাকে। আজ সেসব নাই। সকালের দিকেই মালতীদের বাড়ি গেছে। এখন বাচ্চাদের খাইয়ে, হাতের কাজ সেরে বসমতীও যায়। গিয়ে দেখে মালতীর মা উঠোনের এক কোণে গোবর ছেনে গৈটা বানাচ্ছে। ওকে দেখে মালতীকে ডেকে বলে, 
       "মালতী, মাই। অয় যে তোর কাকি আইচ্চে। বসির দেক।"
তারপর বসমতীর দিকে তাকিয়ে বলে,
     "বোইস মাই।"
উঠোনে অপরিচিত লোক দেখে বসমতী মালতীর মাকেই জিজ্ঞেস করে,
     "কায় ইমরা, মাইর না মামা?"
পরনে ঢোলা পাজামা, গায়ে একটা ফতুয়া। তেল চুপচুপে মাথায় পান খাওয়া দাঁতে লোকটা আন্তরিক হাসে।
       "মুই হনু ছোট মামা। বড়ঝোন আছে বাড়িত। দুইটা ছাওয়া আনি নাই। হুলাক কায় দেখে। বৌদি আইচ্চে, দাদার বড় মাইটা আইচ্চে।"
বসমতীও সহজ হয়। চোখ থেকে অপরিচয়ের দূরত্ব মুছে ফেলে জিজ্ঞেস করে,
       "তে কিসোত আসিলেন? তোমার বাড়ি ঝুনি ব্যাঙকান্দি? হুদি তো গাড়ি-ঘোড়া কোনোয় চলে না।"
লোকটা বসমতীর কথা শুনে হেসে রসিকতা করে,
         "হামার না নিজেরে গাড়ি আছে। মুই হনু ডেরাইভার। মুয়ে না চালে আনলুং!"
বসমতী হাসতে হাসতে বলে,
      "হ, ওই তো দেকা যাছে তোমার ভ্যান গাড়িখান।"
মালতীর মা এবার রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে তাগাদা দেয়,
      "কী মাই চা হইল! এ মতোন চলিলে বেলাটা যাবে এলায়। ভাত আন্দিতে তিনদুপ্ফোর। খাইয়াক খোয়াবেন আতিত এলায়।"
বলতে না বলতেই লাল ফুলছাপের নতুন শাড়ি সামলাতে সামলাতে মিনতীর ছোট মামি চা নিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হয়। উঠোনে এত লোক দেখে নগেন বুড়োও ঢুকে পড়ে বাড়িতে। মিনতীর মার দিকে তাকিয়ে বলে,
      "এত মানষি আরো কায় কায় বারে শাশুড়ি মাও?"
মিনতীর মা হাসিতে ঝলমল করে ওঠে।
       "এলানি আর শাশুড়ি মাও কয়া লাবে নাই বা। হামার বেটির বিয়াও ঠিক হয়া গেইসে।"
           "হ। ততকরায়? কোটে? মোর থাকি আরো বস কম বারে?" নগেন বুড়ার উত্তরে মিনতীর মা বলে,
        "তোমার মতোন এমতোন হালকা বস না হয় বারে। এখেনা বসটা বেশি হবে।"
কথা শুনে সবাই হেসে ওঠে। চা খেতে খেতে নগেন কাকা জিজ্ঞেস করে,
       "তে কেমতোন কেমতোন দেখিলেন?"
এবার মিনতীর বাপ উত্তর দেয়। মাথা চুলকায়। তারপর থেমে থেমে, টেনে টেনে বলে,
      "চেহারা-পেহেরা না ভালে। আছে। কর্মঠও আছে বলে।"
         "দাবি-দাওয়া কেমন তে?"
মালতীর মামা উত্তর দেয় এবার। 
        "দাবি না আছে বারে। দশ হাজার টাকা, এই আন্দনের খরচাটা। উমারো না জমি-জোমা অল্পই। হাতের 'পর খায়! আর ঘড়ি, আংটি, সাইকোল -এইলায় না আজকাল দাবি। ছাওয়াটাক নালে-সাদায় সাজে দিবার নাইগবে।"
মালতীর বাপ বলে,
       "তে সাইকোল বলে 'হিরো' না হোবে, 'হারকিলিস' নাইগবে। ঘড়িও চান্দাইসে এইচ.এম.টি, ছিরি আংটিটাও সোনায় চান্দাইসে। তে হামরা কী আর অতলা দিবার পাই?"
মিনতীর ছোট মামা বলে,
        "দাদা বলে সাইকোলখান দিবে। আর হামার গিত্থানি মাইর নাসকানের গিলা বানাইসে। কী কয় ব্যালপাতা ডিজেন না কি। ওই তো মাইরো বলে মনোত খাইসে।"
মালতীর মা বলে,
       "গালারখান মুই আগোতে বানাসুং। আর বচ্ছর একটা খাসি ব্যাচেয়া।"
মালতীর ছোটমামি আগ্রহ নিয়ে বলে,
     "কেমতোন দি? কেমন ডিজেন? কতলা আছে?"
মালতীর মা বলে, 
        "ওটে বাক্সটাত আছে, দেখেকখেনে। মাইঠ্টে ছোরানি আছে। খুলির ক।"
তারপর একটু থেমে বলে,
      "আছে একতোলাত কয় আনা বেশি। সীতাহার না কি কয় ওইলা। মুই মাছিহার বানের চালুং। তে বানিয়া মড়া কছে বলে সীতাহারে বানাও। তে বানালুং। তে ফির ভালে হইসে।"
         "হাতোত সেলা কী দিবু তে?"
ছোটোমামির কথায় মালতীর মা হাসে। মোর কাজ মুই করি থুসুং। হুলা চিন্তা নাই। মোরে উলিগিলা পিন্দিবে। আর ঠ্যাঙোত তোরা বানে থুসুং। সাজোন-গোজোনের জিনিস-পাতি এখেনা এখেনা করি সাজাসুং যেজ্ঞোনে আগোতে। হুটুৎ করি বিয়াও নাগিলে কোটে পাইম?"
এবার কান্তেশ্বর কথা বলে। 
         "তে এলা বাকি থাকিল খাওয়া খরচ। এই চাউল টাউল, কালাই কুল্টি আর মাছ। আর হিদি ঘড়িটা? তোর ক্ষমতা কদ্দুর আছে খুলামিলা ক।"
মালতীর বাবা এবাল মাথা নিচু করে।
       "সবলায় তো কিনির নাইগবে ভাইয়া। মোর তো বন্দক দিবার মতোন এক কাণিও জমি নাই। গরুটা বেচাইম। ছাগল আছে চাইরটা। চাইরোটায় বেচাইম। তাতে যদ্দুর হয়। আর তোমরা দশে দেখিবেন এলা। কি করিবেন তে। মোর উপায়ে নাই।"
কান্তেশ্বর একটু চুপ করে থাকে। তারপর বলে,
        "মুই মাছটা দেছোং। আর দুই একঝোন কাহো চাউলটা, ডাইলটা দিলে না হবে ভাগ ভাগ করি। তোর বেটিটা না আজি হামারো ছাওয়া। হামরা এমনিই দেখিমু।"
বিয়ে নিয়ে মালতীর মা আর বাপ খুব দূশ্চিন্তা করলেও শেষ পযর্ন্ত কোনো কিছুতেই আটকাল না। দুজন মিলে ডাল দিতে স্বীকার হল। তিনজন মিলে চাল। একজন একটু অবস্থাপন্ন সে দিল সম্প্রদানের কাঁসার থালা-বাটি, ঘটি, জলের গ্লাস। ঘড়িটা ওর বাবা নিজেই পছন্দ করে কিনল। নগেন বুড়ো বলল,
       "কইনা-বরের পাঁচ কাপড়া দোনোটায় মুই দিম বারে। তোমাক পাইসা দিম তোমরা যায়া ধূগগুড়ি হাট থাকি আনেন।"
বিয়ের আলোচনা যত এগোতে লাগল মালতী তত সংকুচিত আর জড়সড় হয়ে পড়ল। তাছাড়া তার হয়ত মনখারাপও লাগছিল এত খরচ কীভাবে টাকা যোগাড় করবে ওর বাবা। ওর ছোটোমামি হারটা খুলে দেখার জন্য ঘরে গিয়ে দেখে নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে মেয়েটি।
................................................................
ছেকাপাড়া - বীচি কলার গাছ পুড়িয়ে ক্ষার বা ধুলা তৈরি করে গরমজলে কাপড় ভিজিয়ে সেই ক্ষার দিয়ে কাপড় কাচার পুরো প্রক্রিয়াটিকে ছেকাপাড়া বলে।
ততকরায় - সত্যি 
আন্দন - বৌভাত
মনোত খাইসে - পছন্দ হয়েছে।
ছোরানি - চাবি
উলি - রূপোর বালা
তোরা - নূপুর
পাঁচ কাপড়া - ছেলের ধুতি পাঞ্জাবি গেঞ্জি ইত্যাদিসহ একটা সুতির উত্তরীয়।
মেয়ের ও তাই। তবে উত্তরীয়ের পরিবর্তে ওড়না।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri