পইলা সাঞ্ঝির কথা/৩৪
পইলা সাঞ্ঝির কথা
পর্ব - ৩৪
শুক্লা রায়
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
পাতা ঝাপসী টৌঙ্গুয়া থাকি মতিহারী
পৌষের মাঝামাঝি। ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে হাল নিয়ে মাঠে যাচ্ছে সুপেন। খালি পায়ের পাতার নিচে শিশিরের স্ফটিকগুলো ভেঙে গলে ভিজিয়ে দিচ্ছে ওর পা। সঙ্গে সঙ্গে শিরশিরিয়ে উঠছে গা। হাতাওয়ালা গেঞ্জির উপর একটা রঙ চটা ঢিলা হয়ে ঝুলে পড়া হাফ সোয়েটার। তার উপর ততোধিক বিবর্ণ একটা চাদর জড়ানো। ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে কতকটা আপন মনেই আলপথ ছেড়ে মাঠ দিয়ে হালটাকে নিয়ে চলেছে। নিজে ঘাড়ে নিয়েছে লাঙলটা। গরুদুটোর ঘাড়ে জোয়াল চাপানো। প্রতিবছর বিঘা তিনেক জমিতে তামাক করে সুপেন। গম করে বিঘাখানেক। আর বাড়ির সামনেটায় দেশি আলু, সর্ষে, নানাধকম শাক করে। রসবালার শাক না হলে মাথা গরম। শাকের যত্ন পুরোটাই রসবালার।
জমিতে নেমে প্রথমে কাঁধ থেকে লাঙলটা নামিয়ে জোয়ালের সঙ্গে জুড়ে দিল সুপেন। গরুগুলোও ঠান্ডায় যেন নড়তেই চাইছে না। ওদের গায়ে চটের বস্তা চাপিয়ে দেওয়া ছিল। গোয়াল থেকে বের করার সময় খুলে রেখে আসা হয়েছে। সুপেনের মায়া লাগে। কিন্তু কিছু করার নেই। উল্টে মুখে শব্দ করে তাড়া লাগায়,
"হেই, হ্যাট হ্যাট। হাটোখেনেরে পচপচে। বেলাটা উঠেছেকে।"
কয়েকদিন থেকেই ও টানা এই জমিটাই চষছে। কয়েকটা পাক দিতে না দিতেই অবশ্য শরীর গরম হয়ে যায়। আরো অনেকেই হাল নিয়ে মাঠে। তবে অনেকটাই দূরে দূরে। এবার একটু আরাম লাগছে। তবে খিদেও পেয়ে গেছে তার সাথে। আপনমনে আবারও গুনগুন করতে করতে হাল দিতে থাকে সুপেন, ডাক শুনে চমকে উঠে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়,
"হাল জুড়িসিত বাপোই? তাঙ্কু গারিবু?"
সুপেন মাথা নাড়ে।
"তাঙ্কু গারিমু বাহে, তাঙ্কু গারিমু।"
বুধেশ্বরের বাপ বলে,
"দাড়াক দাড়াক বেটা দুইটা থাইকতে তুই বুড়া মানষিটা যে হাল জুড়িছিত বাপোই? বেটালা না ধরে হালের মুঠি? এলকার ছাওয়ালা আলসিয়া বাহে!"
সুপেন হাসে।
"মোর বেটালা অমন না হয় বাহে। বড়ঝোন মোরে সদে হাল ধরি আসিল। বগলের ভুঁইখান উয়ায় চাষাছে। ছোটঝোন সুরেনকাকার বাড়ি হাজিরা গেইসে। উয়াও হোটে হালে বোয়াবে। তে মালিকেরে গরু, মালিকেরে মই।"
"হ, তে হইসে। অয় তাকে কং। এলকার বাউলা তো বাপের কষ্ট বুজে না আদেক লা।"
কথার মাঝখানে রসবালা আসে খাবার নিয়ে। ওকে দেখে হাল খাড়া করে সুপেন আলে উঠে আসে। বলে,
"মোরে ত্যানে আগোত আনিলু? আর বাউ?"
"বাউ যায়া খায়া আইচ্ছে। উয়ায় বগলোতে। খাড়ায় যায়া খায়া আসিল!"
রসবালা গামছার ভেতর থেকে পানিকফালার গামলা বের করতে করতে বুধেশ্বরের বাপকে বলে,
"তোমরাও কনেক পালিকফালা চাকো বা। খুরিটাত তোমাক দ্যাং। উয়ার বাপ এলায় গামলাটাতে খাবে।"
বুধেশ্বরের বাপ একটু ইতস্তত করে।
"বাপোইর কুলাবে সেলা?"
"আছে। বেশিবাসায় আনসুং কনেক।"
বলতে বলতে রসবালা এনামেলের বাটিটায় পানিকফালা ঢেলে পেতলের চামচটা দিয়ে বুধেশ্বরের বাপের দিকে এগিয়ে দেয়। বাটিটা হাতে নিতে নিতে বুধেশ্বরের বাপ বলে,
"আর চামুচ নাই যে। বাপোই এলা কি দিয়া খাবে।"
সুপেন ততক্ষণে এনামেলের জগ থেকে জল ঢেলে হাত ধুয়ে নিয়েছে। আলের উপর বসতে বসতে বলে,
"মোর এংকেরি হবে। নানাগে হাতা, চামুচ।"
বুধেশ্বরের বাপ পুরনো হালুয়া। শরীরে যতদিন শক্তি ছিল খাটতে পারত ভালো। এখনও একেবারে বসে সময় কাটায় না, যতটা পারে সংসারের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখে। তবে কিনা বয়সের ধর্ম, গল্প করতে, পুরনো কথা বলতে খুবই ভালোবাসে। এক চামচ পানিকফালা মুখে ফেলে জিজ্ঞেস করে,
"তাঙ্কুর পুলি কদ্দিন ফেলাইসেন?"
"ওই তো কাত্তিকের শ্যাষ শ্যাষ। অনেকটায় না হইসে।"
"তাঙ্কুর যে ঝামেলা বাহে! কয়ায় না যায়। আগোত হামরা পুলি ফেলাসি মাটির ঢিপলি বানাসি উঁচা করি। তার পাছে বিচি ছিটিয়া হোটে কনেক বান্নি দিয়া সামটে দিবার নাগে। তার পাছে ঝাপ দেক। এই কোলার পাত টাত কাটিয়া ঢাকা দিসি।"
সুপেন বলে,
"একে না বারে। এলাও না অংকরি পুলি ফেলের নাগে। গাজা বিরালে সেলা ঝাপ টানে ফেলে ঝারি দিয়া জল দিবার নাগে।"
বুধেশ্বরের বাপ বলে,
"হুটা তো হয় হয়। তে দিনকাল যাছে আর কিষ্যিও কেমন পাল্টেছে কও তো। তায় কুনো কুনো জিনিস একে আছে। যেমন ধরেক তাঙ্কুর বিচি থোওয়া। আগোতো যেমন করি থুসি এলাও তেমনে আছে।"
রসবালা দস্তার বড় গ্লাসে জল ঢেলে দেয়। বুধেশ্বরের বাপ এক ঢোঁক জল খেয়ে আবার শুরু করে,
"এইলা হামার আগোত হিসাব ছিল বাহে। এমনি কি আর কিষ্ষান হোওয়া যায়? এই মনে কর আর বছ্ছর তিনবিঘা তাঙ্কু করিবু। তে সেই মতোন গছ থুবার নাইগবে। পঁচিশটা তিরিশটা গছে তিনবিঘার মতোন ভুঁই গাড়িবার বিচি হয়া যায়। বিচি কিন্না হয় বাচ্চানি, নাল শাকের বিচির মতোন। এত্তোকোনা। ভুঁইখানের একপাশোত বিচির জইন্যে গছ থুসি। স্যাও গছ বড় হইলে কাটি আনি চটিত শুকিয়া নাটি দিয়া ডাঙে বিচিগিলা ঝাড়ি নিসি। তার পাছোত আরো ভাল করি শুকিয়া বোতোলোত ভরে গালাত দড়ি বান্দিয়া চাটিত থুসি, এখেরে মুসাকপ করি মুখাসি নাগেয়া।"
সুপেন গামলা তুলে পানিকফালার ঝোলটা চুমুক দিতে দিতে থেমে বলে,
"বোতোলের মুখাসি না থাকিলে যে হাওয়া পাবে বারে।"
বুধেশ্বরের বাপ আশ্চর্য হয়ে বলে,
"কেনে! মুখাসি নাই তে কাগজ মোচড়ে পল্টে এমন করি মুখ বন্ধ করা যায় হাওয়ার বাপো ঢুকির না পায়। খালি আর কি বাইষ্যালি দিনোত কনেক বাইর করি অউদোত দিবার নাগে।"
রসবালা এবার গ্লাসে চা ঢালে। বুধেশ্বরের বাপকে বলে,
"জলকেনা না খান তে ফেলে দ্যাও বা। ওটে চা ঢালি দ্যাছোং।"
বুড়ো খুশি হয়।
"চা আইনসেন? দ্যাও দ্যাও। এঠে দ্যাও।"
বলে জলটা ঢেলে ফেলে দিয়ে গ্লাসটা এগিয়ে দেয়। রসবালা বুড়োর গ্লাসে চা দিয়ে বাকিটা গ্লাসসুদ্ধ সুপেনকে দেয়। সুপেন দেরি করে না। চা-টা কোনোমতে গলায় ঢেলে চাদরটা রসবালার হাতে দিয়ে আবার গিয়ে হালের মুঠি ধরে। হাল ঘুরাতে ঘুরাতেই কথা বলতে থাকে।
"তাঙ্কুর ভুঁই যেমন তেমন করি চষিলে হয় না বাহে। কি কন তোমরা? মুকোত একেনা চকলেট য্যাং করি আস্তে আস্তে ক্ষয় হয় অংকরি তাঙ্কুর ভুঁইয়ের শক্ত মাটির ডিকাগিলা আস্তে আস্তে ভাঙি এখেরে ধুলধুলা করির নাগে। তবেসিনি হালুয়ার কেরামতি! দুই চাষ করি একবার মই। এংকরি পেরায় দশবার মই দিবার নাগে। তার পাছে তাঙ্কু গাড়িবু। তে কও এলা কেমতন কষ্ট!"
বুধেশ্বরের বাপ মাথা নাড়ে।
"খাটনি আছে বাহে! খাওনা ফাটা ভোক আগোত। ঘন্নি খালি ভাত দিবার সবুর পায় না।"
তারপর একটু থেমে বলে,
"দ্যাখো তো, দেইকতে দেইকতে এই তাঙ্কুর আবাদে কত পাল্টি গেল। তোমরা কুন জাতের পুলি ফেলাইসেন?"
সুপেন বাঁ দিকের গরুটাকে 'হাট হাট, হুরররু' বলে একটা তাড়া লাগিয়ে ধীরে সুস্থে উত্তর দেয়,
"এলা না সোগায় মতিহারীয়ে আবাদ করে। মুইও মতিহারীয়ে ফেলাসুং। আর বচ্ছরও মতিহারী আবাদ কচ্চি। ওইলারে বিচি এবচ্ছর।"
বুধেশ্বরের বাপ গলাটা খাঁকারি দিয়ে পরিস্কার করে নেয়। এর ফাঁকে রসবালা বাসনপত্র সব গুছিয়ে নিয়ে যেন হাওয়ার উদ্দেশ্যে বলে,
"মুই যাছোং তে। পচ করি খাবার আইসেন। প্যাটটা শুকিয়া না নন অংকরি দোলাখানোত পড়িয়া!"
আলতো হাসি সুপেনের ঠোঁট ছুঁয়ে থাকে। মুখে বলে,
"এই কয়দিন মোর খাবার চিন্তা না করেন। হাল বোয়া না হইলে বাড়ি যাবার না হং।"
স্বামী-স্ত্রীর এই চিরন্তন অনুভূতি ক্ষণিকের জন্য হলেও হয়ত বুড়োর মনকেও ছুঁয়ে ফেলে। একটু চুপ করে থাকে দুজনেই। রসবালা কিছু না বলে খালি বাসন হাতে ঝুলিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেয়। বুড়ো আবার পুরনো প্রসঙ্গে ফিরে যায়,
"সোগারে আগোত কচ্চি হামরা কদমের পাতের মতোন দেখিতে তাঙ্কুর পাতগিলা। নাম ছিলেক পাতা ঝাপসী। গছ বড় হইলে ছয়টা করি পাত থুয়া কুশি পাতারি গিলা ভাঙি দিসি। তার পাছোত আসিল টোঙ্গুয়া। তে টোঙ্গুয়ার গছ লম্বা হইসে বেশি। পাতা ঝাপসীর গছের একটার সতে একটার ফাঁক থুবার নাইগসে এই একহাত, মনে কর ষোল সতেরো ইঞ্চি, কিন্তুক টোঙ্গুয়াত বেশি ফাঁক থুবার নাইগসে। আঠারো ইঞ্চির মতোন। পাত থুসি সাতটা হইতে এই আটটা। আর এলা তো হুলা জাতের চল নাই। সোগায় মোতিহারী করে।"
সুপেন হাল ঘুরাতে ঘুরাতে জবাব দেয়,
"মতিহারী জাতের ফলনও বেশি ওজনও বেশি যে কাকা। তারে বাদে তো মানষি এলা মতিহারীয়ে করে। পাঁচটা করি পাত থুয়া বাদবাকি পাত কুশি সবে ভাঙি দিবার নাগে। খালি বিছনের জইন্যে থোয়া গছগিলাত কোনো হাত দেই না।"
বেলা বাড়তে থাকে। বাড়ি থেকে হাঁক আসে। বুধেশ্বরের ছেলের গলা। বুড়ো গল্প ছেড়ে তাড়াহুড়ো করে উঠে পড়ে।
"যাং বাপোই। তুই বোয়া।"
সুপেন একা একা গুনগুন করতে করতে হাল ঘুরাতে থাকে। মাঝে মাঝে গরুগুলোকে তাড়া লাগায়।
"হু হু, কী! হালুয়া পেন্টিটাক দেইখসেন! হ্যাট হ্যাট।"
মুখে ভয় দেখালেও পেন্টিটা কাজে লাগায় না অবশ্য। গরুগুলোর উপর সুপেনের বড্ড মায়া। আলতো করে লেজটা মুচড়ে দেয়। হাত দিয়ে পিছনে চাপড় মারে। এভাবেই বেলা দুপুর গড়িয়ে যায়। মাঠের মাঝে আর সবার গলার সাথে সুপেনের গলাও মিশে গিয়ে মাঠময় একটা অনবদ্য কর্মমুখর আওয়াজ সৃষ্টি করে।
"হুরররু, হ্যাট হ্যাট। কী? ঘুর ঘুর ঘুর। এদি ঘুরিস। কী! ডাইন ডাইন। হাট হাট। এদি.........। বাঁও বাঁও।"
আলাদা করে আর কারো গলা চেনার উপায় নেই যেন।
সুপেনরা দুই বাপ-বেটা মিলে বিঘা তিনেক জমি রেডি করে। দুপুরে শেষবার জমিতে মই টানা হয়ে গেলে বিকেলের দিকে এ-মাথা ও-মাথা দড়ি টেনে রেখে মাপ ধরে সুপেন খাচারিতে করে সার নিয়ে মাপ মতোন চৌকো খোপের ভেতর সার ফেলে যেতে থাকে। সব জমিতে সার ফেলা হয়ে গেলে পরদিন চারা উঠিয়ে খাচারিতে করে নিয়ে জমিতে চারা লাগানোর কাজ শুরু করে।
রসবালা একটা কুলোর মধ্যে কলার ঢোনা দিয়ে তৈরি ম্যান্ডোটা তুলে নেয়। ভেতরে একটা প্রদীপ ধরায়। বাক্সে তুলে রাখা খালি সিঁদুরের কৌটোর ভেতর থেকে সোনার কানের দুলটা বের করে। গলার রুপোর মালাটা খুলে নেয়। তারপর সুষেণকে বলে,
"বাউ, মানার পাতটা নেক। তোর বাপোক খাচারিটা নিবার ক। বাছা বাউ কোটে? উয়াক ক পান, সুপারি আর কি কি আছে ওইলা কনেক নেউক।"
জমিতে মানকচুর ডাঁটিটা পুঁতে দিয়ে প্রথমে পাঁচটা চারা বসায় সুপেন। গচুকুন্না করবে বলে আজকে পরিপাটি করে স্নান সেরে একটা সাদা ধুতি পরে নিয়েছে। চারা বসিয়ে চারাগাছগুলির গোড়ায় সোনা-রুপো ধোওয়া জল দেয়। প্রণাম করে। তারপর রসবালার কাছ থেকে পান চুন খেয়ে মুখ লাল করে সেই পানের পিক ফেলে গাছের গোড়ায়। ভূমিতে প্রণাম করে মনে মনে প্রার্থনা জানায় যেন মানকচুর পাতাটার মতোই বড় বড় আর পানের পিকের রঙের মতো রঙঅলা তামাক পাতা হয় তার জমিতে। রসবালা নিজেও প্রণাম করে বলে,
"বড় বড় ঢোপা ঢোপা পাত হয় ঝুনি ঠাকুর। এখেরে ডিবডিবা।"
গচুকুন্না শেষ হলে প্রায় সবাই মিলেই জমিতে চারা বসানোর কাজে লেগে পড়ে। রসবালা সকালেই রান্না শেষ করে ঢেকেঢুকে রেখে এসেছে। কাজ শেষে সবাই একসাথে ফিরবে।
তথ্যসংগ্রহ - ধনেশ্বর রায়(মনা), খগেন হাট, ফালাকাটা, আলিপুরদুয়ার।
ছবি : ময়ূখ রায়
................................................................
পচপচে - তাড়াতাড়ি
দাড়াক দাড়াক - উপযুক্ত জোয়ান ছেলে সম্পর্কে ব্যবহৃত বিশেষণ
আদেক লা - অর্ধেকই
বগলোতে - কাছেই
চাকো - চাখা বা test করা অর্থে
খুরি - বাটি
ঝাপ - আচ্ছাদন
থুসি - রেখেছি
মুসাকপ - শক্তপোক্ত করে ঢাকনা লাগানো।
মুখাসি - বোতলের ছিপি
চাটি - ঘরের বাঁশের বা পাটকাঠির বেড়া
মাটির ডিকা - মাটির ঢ্যালা
খাওনা - পড়ে থাকা শক্ত শুকনো জমি
ডিবডিবা - উজ্জ্বল গাঢ় রঙের
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴