সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

28-November,2022 - Monday ✍️ By- বিমল দেবনাথ 461

শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

শালসিঁড়ি-৩৩
বিমল দেবনাথ
^^^^^^^^^^^^^

ঠক্ ঠক্   ঠক্ ঠক্ ...
দরজায় কে যে আবার আঘাত করে। ফুলমনি কালির দোয়াতের কেরোসিন তেলের কুপি জ্বালায়। সবে ঘুমটা চোখে লেগে আসছে, সন্ধ্যা রাতে কে এসে দরজায় ঠক্ ঠক্ করে ডাকছে। এদিকে ঘরের লোকটাও আজ বলে গেছে বাড়িতে ফিরবে না। মাঝে মধ্যেই আজকাল ও এই রকম করে। ছেলেটা মেয়েটা ফালাকাটায় মিশনারি স্কুলের হোস্টেলে থাকে।  মধ্য তিরিশের ফুলমনির এই বস্তিতে ভয় বলে কিছু নেই। এই বস্তিতে জন্ম, এই বস্তিতেই বিয়ের পরেও আছে। বাপ মায়ের দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে শুধু ফুলমনি বেঁচে আছে। বড় ভাই শানিচারোয়ার মৃতদেহ পাওয়া যায় এক  শনিবারে সকালে বাঘমারি হাট থেকে সুজনাই চাবাগান হয়ে বস্তিতে ফেরার রাস্তার উপরে - চাবাগানের ভিতরে। ভাইটা যে কেন হাড়িয়া ছেড়ে বাঘমারা হাটে দেশি মদ খাওয়া শুরু করল। সেটাই কাল হল। কখন যে চাবাগানের ভিতরে মাতাল অবস্থায় হাতির সামনে পড়ে মারা গেল কেউ দেখেনি। ছোট ভাই সোমারুকে কামড় দেয় বুনো শুঈরে ( শুকর)।  সকালে বনে  ছাতু  (মাশরুম) সংগ্রহ করতে গিয়েছিল। ছাতু তোলার নেশায় খেয়াল করতে পারেনি কখন পড়ে যায় বুনো শুঈরের সামনে। শুঈর কামড়ে খুবলে ছিঁড়ে নেয় জননাঙ্গ, তণ্ডুর আঘাতে পেট চিরে বেরিয়ে আসে নাড়িভুঁড়ি। বনেই পড়েছিল, মরে অধিক রক্ত ক্ষরণের কারণে। গ্রামের কত লোকের গায়ে বুনো প্রাণীদের এই রকম আঘাতের চিহ্ন এখনো জ্বল জ্বল করছে। শুধু ফুলমনির ভাই দুটো আঘাতের পরে বাড়ি ফিরে আসেনি।  তারপরে ফুলমনির আর গ্রাম ছেড়ে, বাবা মাকে ছেড়ে বাইরে যাওয়া হয়নি বিয়ে করে। ওর বাবা চাবাগান থেকে এক অনাথ ছেলেকে এনে বাড়ি রেখে বিয়ে দিয়েছে তাকে।                
ওদের বস্তিতে রাভাদের মধ্যে এই প্রথার প্রচলন এখনো আছে। মেয়েরা অন্য জায়গা থেকে ছেলে বিয়ে করে আনে। আদিবাসিদের মধ্যে ফুলমতিই শুধু বিয়ের পরে বাবার বাড়িতে  থেকে গেল বাবার নামডাক নিয়ে। 
রাভাদের এই মাতৃতান্ত্রিক প্রথার জন্য গ্রামে অনেক নতুন নতুন ছেলে আসে। তারা গ্রামের ইতিহাস বা বনজ সংস্কার জানেনা। বনবস্তির রাভারা শুধু বিয়ের ক্ষেত্রেই মাতৃতান্ত্রিক। গ্রামের অন্য সব বিষয়ে এখন পুরুষের কথা বেশি মান্যতা পায়। এই বস্তির মেয়েকে বিয়ে করে আসা নতুন বাসিন্দাদের অনেকে তো জীবনে বন দেখেনি।  ফুলমনি বুঝতে পারে আস্তে আস্তে ওদের গ্রাম কেমন যেন পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। বনের বড় বড় গাছ, হৃষ্ট পুষ্ট বুনো শূকর হরিণ ইত্যাদি দেখে গ্রামের নতুন বাসিন্দাদের চোখ লোভে লাল হয়ে ওঠে।  ফুলমনির বাবা যতদিন  গ্রামের মণ্ডল ( সর্দার) হয়ে বেঁচেছিল, সবার চোখের লোভ মনের লোভ সবার মনেই ছিল। বন ও বুনো প্রাণ ছিল অক্ষত।  অবশ্য মাঝে মধ্যে ওরা যে শামুকের মতো লোভের শুঙ্গ বের করত না তা কিন্তু নয়। তবে কোন দিন বস্তিতে কেউ আঘাত করতে আসেনি বন অপরাধের কারণে। ফুলমনির বাবা বলতেন- এই বন আমাদের দেবতা। লাকড়ি দেয়, কান্দা (Tuber) দেয়, ফল দেয়, জল দেয়, মাটি দেয় গরমে ঠাণ্ডা হওয়া দেয় ছায়া দেয়… সব দিয়ে আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। ঐ  যে লম্বা লম্বা শাল গাছ দেখছিস সেই গাছকে সিঁড়ি করে আমাদের পূর্ব পুরুষরা স্বর্গে যায়। এই বনে আমাদের পূর্ব পুরুষের হাতে লাগানো কত গাছ আছে! প্রতি গাছে কত কথা আছে। সেই গাছ বেআইনি ভাবে নষ্ট  করলে ভালো লাগে না।     
ফুলমনির বাবা মারা যাবার পর, বিয়ে করে থেকে যাবার জন্য ফুলমনি গ্রামের মণ্ডলনি হয়। কিন্তু সেই মণ্ডলনির দরবার ওদের উঠোন পার হতে পারেনি কোনো দিন। অন্য অনেক গ্রাম গঞ্জের মতো ফুলমনির ক্ষমতা চলে যায় বিশরামের হাতে। এখন গ্রামের অধিকাংশ পুরুষ বিশরামের মতো অন্য গ্রামের অন্য সংস্কারের। তাই বিশরামের সাগরেদ বা সঙ্গী  মিলে যায় অনেক। ওদের মনে নেই বনের জন্য সম্মান এবং গ্রামের উন্নতির কথা। এরা সবাই সারাদিন অলস জীবন যাপন করে, বউ-এর পরিশ্রমে খায়  আর বউয়ের উপর খবরদারি করে। ফুলমনির বাবা বেঁচে থাকলে কবে গ্রামে  বিদ্যুতের বাতি জ্বলত। এই মরদগুলোর এইটুকু মুরোদ নাই যে গ্রামে বিজলী নিয়ে আসে, পাশের চাবাগান থেকে।    
আলোর অভাবে এখন গ্রামের সবাই সন্ধ্যায় রাতের খাওয়া সেরে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে যখন বনের মুরগ ঘরের মুর্গি ডেকে ওঠে তখন সবাই উঠে গিয়ে চুলায় লাকড়ি দেয়। তারপর যে যার মতো জমিতে বনে জন খাটতে যায়। আগে শুনশান রাতে শুধু কুকুর ডাকত যখন চিতাবাঘ গ্রামে কুকুর ধরতে আসত। এখন তো গ্রামে কুকুরের থেকে ছাগল বেশি, চিতাবাঘ কখন চুপি চুপি ছাগল নিয়ে যায় বুঝতেই পারে না কুকুর। তবুও মাঝে মধ্যে কুকুর ডাকে। এই কয়দিন আগে রাতে কি প্রচণ্ড জোরে জোরে কুকুর ডাকছিল। পরে সকালে জানা গেল, রতন রাভা আর কালি ওঁরাও কে বন অফিসের লোকেরা ঘর থেকে তুলে নিয়ে গেছে গাছ চুরির দায়ে। কেউ বুঝতে পারে না গ্রামটা কী ভাবে আস্তে আস্তে পালটে যাচ্ছে। পূর্বপুরুষের রক্ষা করা বনের কথা না ভেবে নিজেদের মনে লুকোনো লোভের কথা শুনে চলে। 
আজকেও কেন এমন কুকুরগুলো ডাকছে! ফুলমনি দোয়াতের জ্বালানো কুপি হাতে দরজা খুলতে গিয়ে থেমে যায়।  জীবনে এই প্রথম ভয় পায়। তাহলে গতকাল যে মেহমানগুলো আসছিল তাদেরকে নিয়ে ফুলমনির যে সন্দেহ হয়েছিল, সেটা ঠিক? ওরা হাতির দাঁত, গজমুক্তা কী সব কথা বলছিল! ফুলমনি গান্টে গাছের গায়ে ফলের মতো বুকে সাহস এনে বলে-   
- কে?
উঠোন থেকে বুলবুল নাইনের বিটবাবু বলে -
-  বিশরামকে বাইরে আসতে বল।
- ও তো ঘরে নাই। 
- কোথায় গেছে?
- বলে যায়নি। বলেছে কালকে আসবে। 
- আচ্ছা।
বিটবাবুর কথা শুনে ফুলমনি দরজা খুলে ডান হাতে কেরোসিনের কুপি ধরে কাঠের নড়বড়ে খাড়া সিঁড়ির দশ বারোটা পাদানি ভেঙ্গে নেমে আসে উঠোনে এক মুহূর্তে। বিকাশরা দ্রুত সরে যায় সিঁড়ির সামনে থেকে। ঘরের তলায় বেঁধে রাখা ছাগলগুলো ভ্যেঁ ভ্যেঁ করে ডেকে উঠে মালকিনকে দেখে। পাশের বাড়ি পিসির ছেলে রতিয়া চেঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করে- দিদি কী হয়েছে। ফুলমনি বলে – না কিছু হয়নি। কুপি তুলে দেখে বিটবাবু একা দাঁড়িয়ে আছে। ফুলমনি বলে-  
- তুই একা একা আসছিস, কেন।  
- আরে হাতির চিতায় আরো লাকড়ি লাগত…
- অ… অহ তো নেই, দেখ অন্য কেউ যদি যায়। তোকে বলছিলাম না, রাতে একা একা ঘুরিস না। গ্রামটা এখন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে।  
- আচ্ছা ঠিক আছে, ও কালকে আসলে দেখা করতে বলবে। 
- আচ্ছা।     
ফুলমনি এক চেঙারি (ঝুড়ি) বিরক্তি নিয়ে ফু-দিয়ে কুপি নিবিয়ে চৌকির তলায় রেখে শুয়ে পড়ে। বন দপ্তরের দেওয়া  কাঠের ঘরের কাঠের বেড়ার জয়েন্টের বিটগুলো পচে কবে খসে পড়ে গেছে। সেই ফাঁকে চাঁদের আলো ঢোকে ফুলমনির বিছানায়- ঘরে। ফুলমনির চোখে ঘুম আসে না। চাঁদের আলোয় ঘরের ভিতরে যে লম্বা লম্বা ছায়া-দাগ পড়েছে সেগুলো কেমন যেন তেঁতুল বিছার মতো কিলবিল করছে। বিটবাবুকে অবিশ্বাস করতে মন চায় না ফুলমনির। তবু কেন যেন  কালকের মেহমানগুলোর প্রতি সন্দেহ আরো বাড়তে থাকে। মনে পড়ে কালকে রাতের বেলায় হাড়িয়া খেতে খেতে কাঁচা লংকা চিবানোর সময় ফুলমনিকে কেমন দেখছিল বেহায়ার মতো। মরদটাও আজকাল কেমন হয়ে গেছে। যত দিন বাপ বেঁচে ছিল ওর মতো আর দুটো মানুষ ছিল না গ্রামে। বাবা মরে যাবার পর বেড়ে গেছে ওর মাতলামি। ঘরে আনাগোনা বাড়তে থাকে  কত লোকের। কিছু বললেই বলে – আমিই তো গ্রামের আসল মণ্ডল। আমার ঘরে লোক আসবে না তো কি আসবে বস্তির আম গাছ তলে। তাই ফুলমনি কিছু বলে না। কাঁচা লংকা পিয়াজ মাছ পোড়া দিয়ে- মেহমান খাতিরদারি করে। 
- হয়েছে, হয়েছে আর লাগবে না, তুই গিয়ে শুয়ে পর একটা ঘরে, আমি চিতার দিকটা দেখে আসি- বিশরাম বলে। 
- না। আমি চললাম, পাশের বাড়ি, আজ রাত রতিয়ার মার সাথে শুতে। তোদের তো ঠিক ঠিকানা নাই ঘরে উঠবার।
ফুলমনি চলে যায় রতিয়াদের বাড়ি। তারপর আর কী করেছিল ওরা কিছুই জানে না ফুলমনি। সেই রতিয়া আজকে আবার দিদির খবর নেয়। রতিয়া কি কিছু সন্দেহ করছে? ফুলমনির মনে কত কথা জাগে, ওর ছেলের কথা মনে পড়ে, মেয়ের কথা মনে পড়ে। নানা হিজিবিজি ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়ে।   

- স্যার একবার ঘরে ঢুকে দেখা দরকার ছিল- আমরা তো ঘর না দেখে চলে এলাম, ফুলমনিকে বিশ্বাস করে।
- বিশ্বাস ভাঙতে নেই তাপস। তুমি কাউকে বিশ্বাস নাও করতে পার কিন্তু সেটা বাইরে আনবেনা। অবিশ্বাস বাইরে আনলেই দেখবে অনেক খবর আর পাবে না। তাছাড়া দেখলে না বিটবাবুর নাম শুনতেই কী অগাধ আস্থায় ফুলমনি ঘর থেকে নেমে এল। 
- স্যার আমরা কী আবার বনে ঢুকব?- নির্মলবাবু জিজ্ঞাসা করে। 
- না। আমরা নদী নদী যাব। 
এই নদী আজীবন শুয়ে আছে উত্তরে হিমালয়ে শিথান দিয়ে, পুবে পশ্চিমে, বুকের দুই পাশে ঘাস বন গভীর বন আর বুনো প্রাণ নিয়ে। দ্বিতীয়ার চাঁদের আলোয় অদ্বিতীয়া লাগছে নদীটিকে। প্রাক বর্ষায় পাহাড়ের বৃষ্টিতে নদীর বুক ফুলে উঠেছে কিশোরীর মতো। নদীর বাজনায় (পাথুরে অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গা) যেখানে প্রাণ ছিল না, গান ছিল না সেই বাজনা এখন প্রাণময় নতুন জলের কল কল শব্দে, গানময়- চঞ্চল কিশোরের মতো। কে যেন বলেছিল- ময়ূর কোনো দিন যুবক হয় 
না, কিশোর থেকেই মন ভোলায় ময়ূরীদের, প্রতি বছর নতুন ভাবে মোহন সাজে। পশ্চিমের সন্ধ্যার কালো অন্ধকার চুপি চুপি হেঁটে নদী পার হয়ে লুকিয়ে যাচ্ছে পুবের গভীর বনে। দ্বিতীয়ার চাঁদের আলো শালের মগডাল ছুঁয়ে পশ্চিম পাড়ের বন থেকে নেমে আসে পুবের বনে। নির্মল বাবু বলে-   
- স্যার আমরা কি নদী পার হবো? 
- না।  
- আমরা তো হাতিটির দণ্ডী ধরে যেতে পারি। - নিলয় বলে।    
- কোন লাভ হবেনা। কারণ সারাদিন তিন বিটের স্টাফ হাতিটিকে চারদিকে খুঁজেছে। হাতিটিকে পায়নি, কোন মানুষজন পায়নি। তাহলে হাতিটিও কোথাও লুকিয়েছে, আর যদি কোন শিকারির দল হাতিটির পিছনে লেগে থাকে তারাও লুকিয়েছে।   
- হাতির দণ্ডী ধরে বনে ঢুকলে হাতিটি কোথায় লুকিয়েছে দেখা যেত। 
- সেটা হবার হলে আমাদের থেকে অভিজ্ঞ স্টাফরা দিনের আলোতে খুঁজে পেত। 
- তাহলে হাতিটি গেল কোথায়। 
- তাপস তুমি কি বলছিলে তখন হুদুমদেও থানে, হাতি কখন আসে কখন যায় বোঝা যায় না।   
- হ্যাঁ সার।  
- ঠিক তাই, হাতি তার এই বড় শরীর ইচ্ছা করলে এমন নিঃশব্দে গভীর বনে লুকাতে পারে যে তুমি খুঁজে পাবে না কিছুতে। হাওয়ার দণ্ডী পাবে না পায়ের ছাপের দণ্ডী পাবে না। নিজেকে বাঁচানোর জন্য নিজের গা বাঁচিয়ে পা বাঁচিয়ে শুকনো মাটি খুঁজে হাঁটবে।   
- হাতির পায়ের দণ্ডী হয় জানি, কিন্তু হাওয়ার দণ্ডী সেটা যে আজ প্রথম শুনলাম।  
- এই বন সমুদ্রের মতো, আমরা তার কতটুকু জানি। হাতি যখন লুকাতে চায় তখন প্রথমে মাটি দেখে নেয়। শক্ত মাটি দেখে হাঁটে যাতে পায়ের ছাপ না পড়ে। তারপর হাঁটা আর খাওয়া – দুটো থেকেই বিরত থাকে কিছুক্ষণ। কারণ ডালপালা ভেঙ্গে কিছু খেলে, কিছু ডাল চিহ্ন হিসাবে পড়বে; আবার গাছের ভাঙ্গা ডাল চিহ্ন হিসাবে দেখা যাবে। তবুও এতবড় শরীর হাঁটা চলার সময় কিছু তো চিহ্ন ফেলবেই।   
- সেটা কী স্যার।   
- হাতি যখন চলতে থাকে তার বড় শরীরের চাপে গাছে সরু ডাল পাতা লতা চলার পথের দিকে বেঁকে থাকে। গাছের এই বাঁকানো অংশ বেশিক্ষণ থাকে না। স্বাভাবিক কারণেই আগের অবস্থায় ফিরে আসে। সেই সামান্য পরিবর্তন থেকে হাতির চলার পথ খুঁজতে হয়।   
- এই যে অসম্ভব ব্যাপার।   
- কুনকি হাতির অভিজ্ঞ মাহুত না হলে সে সকল দণ্ডী খুঁজে পাওয়া যায় না। আমাদের তো কুনকি হাতি নেই যে অভিজ্ঞ মাহুত থাকবে।    
- তা হলে! - নির্মলবাবু বলে।     
- দেখুন হাতিটি গতকাল সারা রাত্রি লড়াই করেছে। তারপর গা ঢাকা দিয়েছে। বিশ্রাম নিচ্ছে কোনো গোপন জায়গায়। যুদ্ধ জয়ের খবর ছড়িয়ে দিচ্ছে গোপন জায়গা থেকে। আজ সারা দিন বনে যে ভাবে সব স্টাফ হাট বাজার বাদ দিয়ে বনে টহল দিয়েছে, মনে হয় না কোথাও বের হতে পেরেছে। ঘুমিয়ে আছে বনের ভিতরে কোন দুর্গম জলা জমিতে। তাই আজ রাত খুব গুরুত্বপূর্ণ।  
- কেন?
- আমার মনে হয় আজ হাতিটি নদীর পরিষ্কার জল খেতে বের হবে। 
- তাহলে কি হবে?
- যদি দেখা পাওয়া যায়, তাহলে কালকে পাশের বন থেকে কুনকি হাতি এনে হাতিটিকে ভালো করে খেয়াল রাখতে হবে। 
- যদি শিকারি দলের দেখা পাই?
- সেটাই সমস্যা, ওরা একবার দেখলেই বুঝে যাবে আমরা কারা। কারণ ওদের যে এলাকা দখল করা থাকে। এই এলাকায় ওরা ছাড়া আর কেউ আসবে না। ওরা পালিয়ে যাবে।   
- পালিয়ে গেলেও ভালো। অপরাধ তো প্রতিরোধ করা হল।  
- কিন্তু কতদিন প্রতিরোধ করে রাখা যাবে। শিকারিদের কিং পিনকে ধরতে না পারলে যে রক্ষা করা খুব মুশকিল। 
পিছনের বন বস্তির কুকুরেরা ডাক বন্ধ করে দিয়েছে। বনবস্তি ডুবে গেছে গভীর নিস্তব্ধতায়। চাঁদের আলোয় জমির আলগুলোকে মনে হয় মাকড়সার জাল। যে বন বস্তি গড়ে উঠেছিল বনের বেড়া হিসাবে সেই বস্তিকে কেন যেন মনে হচ্ছে চক্রান্তের জাল। বস্তির কিছু লোকের নাম জালের সিসার গুলির মতো বুকে ধাক্কা মারে। এই ধাক্কার কথা বলা যাবে না কাউকে যতদিন না ধরা পড়ে কিং পিন। 
বিকাশরা বনবস্তির চৌহদ্দি পার হয়ে বনের ভিতরে নদীর পাড়ে ঢুকে যায়। বুলবুল নাইনের বিটবাবু ঘরে ফিরে যায় স্টাফ নিয়ে ফিরে আসার জন্য। যাবার আগে জেনে যায় ফিরে আসতে হবে নদীপাড়ের চালতা গাছের কাছাকাছি জায়গায়। চালতাতলা যে হাতিদের এক বন থেকে আর এক বনে যাবার রাস্তা। এখন বনের ভিতরে কারো মুখে কথা নেই। ইশারায় বিকাশরা হেঁটে চলে নদীর বালুচরে। প্রবাদ আছে যে বনে যে ঢোকে প্রথমে সেই জিতে যাবে লড়াইয়ে। গজ মুক্তার সন্ধানে যারা বেরিয়েছে, তারা যদি দেখে নেয় বিকাশদের তাহলে দুটো বিষয় ঘটতে পারে। প্রথমত লুকিয়ে বিকাশদের অনুসরণ করতে পারে-যাতে ওদের শিকার পরিকল্পনা সঠিক করতে পারে। দ্বিতীয়ত হঠাৎ বিকাশদের  আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে বনে তৈরি করতে পারে আতঙ্ক। নির্মলবাবুরা চারদিকে নজর রেখে সাবধানে হাঁটে।   সন্ধ্যা রাতে নদীর পাশে বনের ভিতরে দিয়ে হাঁটা সব সময় বিপদ সঙ্কুল। যেকোনো সময় সাপ থেকে শুরু করে হাতি - যেকোনো বুনো প্রাণীর দ্বারা  আক্রান্ত হতে পারে। বালু চরে থেকে বনের প্রান্ত রেখা পর্যন্ত বজায় রাখার চেষ্টা করে নিরাপদ দূরত্ব। বিকাশদের সাথে চাঁদ হাঁটে নদীর জলে গলে গলে। চাঁদের আলোয় জল থেকে মাথা উঠে থাকা বোল্ডার চরের বালু চিক চিক করে। হঠাৎ নিলয় দাঁড়িয়ে পড়ে। 
- স্যার, নদীর মাঝে বোল্ডারের ওপরে কে যেন বসে আছে। ঐ যে নড়ে চড়ে।  
সবাই দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে বিষয়টি। নির্মলবাবু বলে-
- আরে ওটা পেঁচা। মাছ ধরে খাচ্ছে।
- মনে হয় ব্রাউন ফিস আউল -বিকাশ বলে।        
আকাশের চাঁদ পশ্চিমে হেলে গেলে উত্তরে দূরে বন বস্তিতে আবার কুকুরের ডাক শোনা যায়। বুলবুল নাইন থেকে আসতে গেলে যে ঐটাই একমাত্র রাস্তা। এই রাস্তা কত কথা বলে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri