সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

28-November,2022 - Monday ✍️ By- বিমল দেবনাথ 410

শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

শালসিঁড়ি-৩২ 
বিমল দেবনাথ
^^^^^^^^^^^^^

সুপারির চারা না পেয়ে রতিয়া চলে যায় অসন্তুষ্ট হয়ে। অপরূপার ফোন আসে। 
সময় নদীর মতো বয়ে চলে। নদীতে জল আর সময়ে সাথে বয়ে আসে ঘটনা প্রবাহ। মাঝে মধ্যে ঘটনার ঘনঘটা এমন ভাবে ছেয়ে যায় যে ছায়া পড়ে মনে। মন ভালো রাখার জন্য কথা বলতে হয় কথা শুনতে হয়। অপরূপার ফোন ভাল করে দেয় মন। মাঝে মধ্যে ফোন যেন ফুল হয়ে ওঠে। ফোনের বুলি ফুলের ওলি হয়ে ওঠে। মন মৌ মৌ করে ওঠে। মন ভালোতে মনখোরাকি চিন্তাগুলোকে কালোনুনিয়া চালের সুরভিত পায়েস মনে হয়। কথায় কথায় কত কথা মনে পড়ে যায়… 
সবে অফিসের গাড়ি বনে চালিয়ে চালিয়ে হাত পাকা করেছে বিকাশ। বনের কাঁচা রাস্তায় পাকা ড্রাইভারে মতো গাড়ি চালায়। চাঁদের আলো ছায়ায় গাড়ি ছুটে চলে বনের ভিতরে। ড্রাইভারের সিটে বিকাশ। মাঝে অপরূপা উল্টো দিকের জানালায় মাধুরী। পিছনের সিটে ড্রাইভার। অপূর্ব আসেনি হাতে কাজ থাকার জন্য। কিছুটা গাড়ি চলার পর গাড়ির হেড লাইট বন্ধ হয়ে যায়। চাঁদের আলোয় চলতে থাকে গাড়ি। মাঝে মধ্যে গাছের গুঁড়ি ঝোপঝাড় কে হাতি গণ্ডার গাউর হরিণ মনে করে মাধুরী অপরূপা উল্লাস করতে গিয়ে আঁতকে উঠে বলে-
- সত্যি সত্যি যদি হাতি গাড়ির সামনে এসে পড়ে, কী হবে!
- যা হবার তাই হবে। খুব শখ হয়েছে পূর্ণিমা রাতে বন বাংলোতে থাকতে। দেখ বন বাংলোতে পৌঁছাতে পারি কিনা।  
- বন বাংলো আর কত দূর? 
- বন বাংলো আসতে এখনো অনেকটা বাকি। 
অপরূপা মাধুরীর চোখ তখন- হাসের ডিম। সেই চোখ চাঁদের আলোয় কেমন ভুতুড়ে লাগছে। হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে দেয় বিকাশ। কি হলো বলতে গিয়ে অপরূপা বুঝতে পারে গলা দিয়ে স্বর বের হচ্ছে না।  
- সামনে রাস্তায় দেখ, এপার থেকে ওপার অজগর শুয়ে আছে। 
মাধুরী অপরূপা উইন্ড স্ক্রিনে ঝুঁকে দেখতে থাকে অজগর। আতঙ্ক ভয় উত্তেজনায় অজগর দ্যাখতে গিয়ে ভুলে যায় যে পিছনে বসে আছে ড্রাইভার, রবি। 
- মনে হয় কিছু খেয়ে রাস্তার উপর শুয়ে আছে। অপরূপা ফিস ফিস করে বলে। 
- তাই তো মনে হচ্ছে। মাধুরী বলে।  
- এই অজগরের তো ঘুম ভাঙবে বলে মনে হচ্ছেনা। কি হবে তাহলে। বিকাশ তুমি গাড়ি ব্যাক করতে পার? চল ফিরে চলি।   
সাপ নিয়ে গাড়িতে হতে থাকে হিস হিস শব্দ। রাস্তার উপর পড়ে থাকা অজগর সাপ নড়ে না চড়ে না, হিস হিস করে না। চাঁদনি রাতের মায়াবী বন যেন অশরীরী হয়ে ঢেকে রাখে গাড়িকে। নানা পতঙ্গের ডাক অশরীরীর হাত হয়ে যেন ছুঁয়ে যায় মাধুরী কে অপরূপাকে। চারদিক এত নির্জন যে গাছের একটা পাতা খসে পড়লে সর সর শব্দ শোনা যায়। তার মধ্যে বিকাশ আবার ফিস ফিস করে বলে-   
- এই বনে কিং কোবরা বা শঙ্খচূড় সাপ আছে। ওরা এই সময়ে শিকারে বের হয়। অজগর ধরে খায়। যদি অজগর ধরতে এসে গাড়িতে ওঠে আসে! 
আতঙ্কে অপরূপা বিকাশের হাত চেপে ধরে। মাধুরী চেপে ধরে অপরূপাকে। মাধুরী তাড়াতাড়ি জানালার কাচ তুলে দেয়। অপরূপা বলে- 
- গাড়ির লাইটা আজকেই খারাপ হতে হল। রবি গাড়ি চালালে এই বিপদে পড়তে হত না। না, নিজে গাড়ি চালাবে। গাড়ি চালানো শিখেছে দেখাতে হবে! সেটা দেখাতে গিয়ে বিয়ের আগে ইয়ে হয়ে যাচ্ছে।  
মাধুরী চাঁদের আলোর আধারে অপরূপাকে ইশারায় চুপ করতে বলে। বলে-
- জীবনে প্রথম রাতে বনে ঢোকার ব্যাপারটি লোমহর্ষক হতে গিয়ে না আত্মঘাতী হয়ে পড়ে! 
বিকাশ বলে- 
- এতই যখন বলছ, আমি যাচ্ছি নেমে। গিয়ে ল্যাজ ধরে টেনে অজগরটাকে রাস্তার উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে আসি।
বিকাশ দরজার লক খুলে নামতে যেতে চাইলে অপরূপা বিকাশের হাত ধরে এমন চিৎকার করে যে থেমে যায় সব পতঙ্গের ডাক আর জ্বলে ওঠে গাড়ির হেডলাইট। হেড লাইটের আলোতে পরিষ্কার দেখা যায় যে রাস্তার উপর পরে আছে একটা শুকনো ডাল। যা জ্যোৎস্নার আলোতে সাপ বলে মনে হচ্ছিল। অপরূপা মাধুরী হতবাক হয়ে যায়। জ্যোৎস্নায় বনে এত বিভ্রম হয়! তবে কী রাতে বনে যে সাদা পরি দেখা যায় সেটা শুধু ইল্যুশন! বিকাশ বলে-
- এ যাত্রায় বেঁচে গেলে, সত্যি সত্যি রাতে রাস্তায় সাপ শুয়ে থাকে। 
- তাহলে বনের রাস্তায় রাতে সাদা পরি যে হাঁটে বলে সেটাও সত্যি! 
গাড়ি চলতে শুরু করে। শুকনো ডালটি গাড়ির চাকার চাপে মট মট করে শব্দ করে ভেঙ্গে যায়। বিকাশ বলে –
- সামনের দিকে দেখ, সাদা পরি দেখলেও দেখতে পার। তবে ঐ রকম চিৎকার করবে না, যদি আবার চিৎকারে লাইট বন্ধ হয়ে যায়, ঘটে যেতে পারে অন্য কোন কাণ্ড। 
- তুমি লাইট ইচ্ছা করে বন্ধ করেছিলে। মাধুরী জিজ্ঞাসা করে। 
- ভেরি ইনটেলিজেন্ট! ভাবলাম জ্যোৎস্না রাতে বনে গাছের ফাঁকে ফাঁকে আঁকাবাঁকা পথে তোমরা রোমাঞ্চিত হবে। 
- বেশি কেতা নেবে না। রাখাল বালকের কথা মনে আছে তো! 
- রাখাল বালক কী। এতো আমাদের প্রতি দিনের ঘটনা। চল বনবাংলোতে, বলব সব অদ্ভুত গল্প…  
কত দিন কত কথা বলা হয় না। অপরূপা আজ আবার কত কথা মনে করিরে দিল। মাধুরীর চেঞ্জের সাথে ওদেরও তো চেঞ্জ হবে। নিয়ে আসতে হবে আবার ওদের বনে কিছু দিনের জন্য। বিকাশ হালকা মেজাজে ওঠে যায় অফিস থেকে।    
- নির্মলবাবু আফটার লাঞ্চ চলুন টিম্বার লটের কাজটা শেষ করা যাক।  
- আজকে লেবার নেই যে।– নির্মলবাবু বলে।  
- আজকে হাটবার। সপ্তাহে একদিন ওরা হাট বাজার করে। 
বনের বা বন সন্নিহিত গ্রামের মানুষজন এখনো সপ্তাহে একদিন হাটবাজার করে। গ্রামের ঘরবাড়ির মতো বনের ক্যাম্পগুলো প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। হাটের দিনটিতে বিকাশের টিম গ্যাপ টাইম কভার করার চেষ্টা করে। ডিপোর কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করে বনে যাবার কথা। মাঝে মধ্যে ভেসে আসে দুশ্চিন্তা। কাঠের লগের লটের মধ্যে মিশে থাকা পচা লগগুলো মতো। লট থেকে পচা লগ বের করে দেওয়া সহজ হলেও – সহজ নয় দুশ্চিন্তার থেকে মুক্তি পাওয়া। । ডিপোটি যেন কেমন নীরব, নেই শ্রমিকের সমবেত গীতের উচ্চ সুর।  
- স্যার অনেক লগ যে বাদ যাচ্ছে।– সুবলবাবু বলে।   
- ভালো দাম পেতে গেলে পচা লগ বের করে দিতে হবে। পচা লগগুলো আলাদা ভাবে লট করে দেবেন। তবে কড়া মন্তব্য লিখে দেবেন। যাতে পচাকে ভালো বলে চালিয়ে দিতে না পারে। 
- রেসপন্ডিং কনট্রোল- নিলয় বলে। 
- কড়াই জোতের হুদুম থানে একটা হাতি দাঁড়িয়ে আছে। 
- কে খবর দিল।
- সাকালু বলে একটা লোক এসে বলে গেল। 
- সেটা কী করে সম্ভব! সারা দিন কোন খবর নেই, বিকালে হাতির খবর! থানটি তো গ্রামের ভিতর। হাতিটি কি উড়ে এল। খবরটা ভালো করে নাও নিলয়। - নির্মল বাবু বলে। 
- খবর ঠিক আছে, নির্মলবাবু। মনে নেই মিশানদেও থান, মহাকাল থান, কালির থান, পীর থান, বিষহরির থানের কথা। - বিকাশ বলে। 
- সেই থান কী আর আছে! আগে ঐ সব থানে কত ধরণের গাছ ছিল। কত পরিবেশ বন্ধু বুনো প্রাণ ছিল।  
- সেটা ঠিক, সেই সব ছোট ছোট সেক্রেড ফরেস্ট বা পবিত্র বন যুক্তিবাদী মানুষ শেষ করে দিয়েছে। শুধু কি সেক্রেড ফরেস্ট, বনের সীমানাতে যে সকল আপাতদৃষ্ট অব্যবহৃত অনাবাদী জমি ছিল সেগুলো দিন দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে।  
- বনের সীমানার সাথে বাড়ি ঘর হচ্ছে। আগে বনের সীমানা থেকে অনেক দূরে বাড়ি ঘর গ্রাম গড়ে উঠতো। বন থেকে হাতি বা অন্য বুনো প্রাণী বের হলে দেখা যেত। মানুষ বা বুনো প্রাণী উভয়ে উভয়কে বুঝে নিতে সুবিধা হতো। নিলয় স্টাফ রেডি হতে বল। -বিকাশ বলে।    
গ্রামের এই সকল থানের একটা নির্ঘণ্ট থাকে। সব সময় এই সব থানে মানুষের তেমন যাতায়াত থাকেনা। নির্ঘণ্ট   অনুযায়ী বিশেষ বিশেষ দিনে এখানে গ্রামের মানুষ পূজা আর্তি করতে আসত। সে সময় এই সব বনে কেউ সাপ ব্যাঙ ছাড়া অন্য কোন বন্য প্রাণ দেখেছে বলে শোনা যায় না। লোকজন ইষ্টদেবতার পূজা করে চলে যেত, তার পর পড়ে থাকতো নীরবে নিভৃতে সেই সব সেক্রেড ফরেস্ট। সন্ধ্যায় শিয়াল দলের হুক্কা হুয়া ডাক সে বনকে আরো বেশি ভৌতিক করে তুলত। মাঝে মধ্যে কারো হাঁস মুরগি ছাগল হারিয়ে গেলে সন্দেহ বসত ঝগড়া হত প্রতিবেশীদের মধ্যে। ছাগল হারানো কারণ খুঁজে পেত না কোনো দিন। মাঝে মধ্যে চিতাবাঘও যে বাসা বাঁধত এই বনে।  আজ সেই রকম একটি বনে একটি আস্ত হাতি দাঁড়িয়ে আছে! নির্মলবাবুর ব্যাপারটি কেমন যেন সন্দেহ লাগে। কয়েকবার বিকাশ কে বলে চায়- এতে দুষ্কৃতীদের কোন চক্রান্ত নেই তো। পর পর মাস্টারদা, মন্টু ঘোষ সর্ব শেষ বিশরাম খেরোয়ার… নির্মলবাবু কিছু বলতে পারেনা। ওরা পৌঁছে যায় কড়াইজোতে হুদুমদেও থানে।  
হুদুমদেও’র থানে আশে পাশে কোন লোক জন নেই। দূরে ঘর বাড়িগুলোতে যে যার কাজ করছে। একটা হাতি এই বনে দাঁড়িয়ে আছে কোন লোক জনের ভিড় নেই। আশ্চর্য!  নির্মলবাবু জিজ্ঞাসা করে-
- স্যার হাতি কোথায়।  
- স্যার, হাতি কখন যায় আসে কিছু বোঝা যায়না। সেবার ঘুম থেকে ওঠে দেখি বাড়ির উঠোনে হাতির অনেক পায়ের ছাপ। রাতে কখন যে আমাদের উঠোনের ওপর দিয়ে ঘরের পাশ দিয়ে চলে গেছে আমরা টের পাইনি। শুধু  বাইরের কলা বাগান থেকে চারপাঁচটা কলা গাছ তুলে নিয়ে গেছে  - তাপস আগ বাড়িয়ে কথা বলে।  
- এই রকমই হয়। হাতি যখন যায় তখন ওরা যদি চায় একটুকু শব্দ না করেও চলতে পারে। আবার চাইলে সব লন্ড ভণ্ড করে দিতে পারে। -বিকাশ বলে।
- কিন্তু হাতিটা এখানে এল কি করে। আসলো কোথায় থেকে। - নির্মলবাবু জিজ্ঞাসা করে। 
- দেখুন আমাদের ডান দিকে বাম দিকে দূরে হাতিদের বন আছে। মাঝখানে গড়ে উঠেছে মানুষের বসতির পর বসতি। তার মাঝে এই ছোট বন, যেগুলো কোনো না কোনো  
কারণে রক্ষা করেছিল গ্রামবাসী, সেই গুলো হাতিদের হয়ে পড়েছে স্যাটেলাইট হ্যাবিটেট বা উপগ্রহ আবাস।  এই সব উপগ্রহ আবাসে এক বন থেকে অন্য বনে যাবার সময় দিনের বেলায় হাতিরা বিশ্রাম করে- নিভৃতে।    
- এখন আর ঐ সব বন কোথায় আছে, সব তো শেষের পথে। তাই হাতিরা এক বন থেকে অন্য বন যাবার সময় দিন হয়ে গেলে গ্রামের মধ্যে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু এখানে হাতি কোথায়। - নির্মলবাবু বলে। 
হুদুমদেও-এর হালকা কালো বন দেখতে দেখতে কখন বেলা ডুবে গ্যাছে খেয়াল করেনি কেউ। দূরে গ্রামের ঘরে ঘরে জ্বলে উঠছে প্রদীপ। দিনের আলোর অভাব কিছুটা দূর করতে পুব আকাশে উঠে আসে গোল হলুদ চাঁদ। পূর্ণিমার চাঁদ রূপোলী হবার সাথে সাথে ডেকে উঠে বেঁচে থাকা কয়েকটি শিয়াল। চাঁদের আলোয় দেখা যায় পুবের গ্রাম থেকে হেঁটে আসছে এক ছায়া মানুষ। পিছনের চাঁদের আলো এত প্রকট যে চেনা যায় না মানুষটিকে।   
- স্যার আমরা কি ক্যামোফ্লাজ করেছি এখানে। - নির্মলবাবু জিজ্ঞাসা করে।   
- হুম। আপনারা এখানে বসুন। আমি ওর সাথে কথা বলে আসি। 
- না স্যার। আমি যাচ্ছি আপনার সাথে। তাপস নিলয় তোমরা বন্দুক রেডি রাখবে। রবি স্টিয়ারিং-এ থাকবি। 
বিকাশ নির্মলবাবুর আপাদমস্তক দেখে। নির্মলবাবুর চাঁদের আলোয় চিক্ চিক্ করছে। বিকাশ বলে – 
- আমি কি যুদ্ধে যাচ্ছি? এই লোকটি আমার লোক।
- আপনার লোক আমার জানা আছে। সব চোর ডাকাত। ওরা কখন কি করবে কোন ঠিক থাকেনা।  
- দেখুন এটা একটা ব্রেইন গেম। এই গুপ্তচর বৃত্তিতে সবাই সবার হিসাব কষে। দেখতে চায় কে কত সাহসী কত ভয়ানক। সেই হাতিদের লড়াইয়ের মতো। যার শক্তি বেশী তার বশ্যতা স্বীকার করতে হয় দুর্বল কে। না হলে যে মাথায় চড়ে বসবে। অপনার চর আপনাকে ব্ল্যাকমেল করবে। তাছাড়া ওরা কোন সাক্ষী রাখতে চায়না। আপনারা এই বনে থাকুন। রবি তো আছে গাড়িতে। 
অগত্যা নির্মলবাবুরা বসে থাকে হুদুমদেও-এর উদরে। চাঁদের আলোয় পরিষ্কার দেখা যায় লোকটির পরনে লুঙ্গি- গোটানো আছে হাঁটুর কাছাকাছি। কোমরে গামোছা বাঁধা বেল্টের মতো। খলি গা। তেঁতুলের বিচির মতো চিক্ চিক্ করছে লোকটির পিঠ। তাপস বাঁ হাত ঝেড়ে বলে- 
- কী যে পড়লো, উপর থেকে। বিশ্রী গন্ধ। 
- উপরে তাকিয়ে দেখ, তেঁতুল গাছে বাদুর ঝুলে আছে। - নিলয় বলে।    
নির্মলবাবু তর্জনী ঠোঁটে লাগিয়ে ওদের চুপ থাকতে বলে। এখন নির্মলবাবুদের প্রতীক্ষা তপস্যার একাগ্রতার থেকেও বেশী গাঢ়। গায়ে সাপ ওঠে গেলেও থাকতে হবে পাথর মতো কঠিন নিশ্চল হয়ে। লোকটি  বিকাশের সাথে আসতে থাকে  গাড়ির দিকে। রবি জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকে হুদুমদেও-এর বনের দিকে। নির্মলবাবু উত্তেজনায় আঙ্গুল কামড়ায়। কোথায় বন অফিস আর কোথায় হুদুমদেও-এর বন। রাতে এক ভয়ানক নির্জন জায়গায় কার সাথে কী যে কথা বলছে, গাড়ির আড়ালে, কিছু বোঝার উপায় নেই। এই সব লোকের কাছে যে সব সময় আগ্নেয়াস্ত্র থাকে। স্যারের তো খালি হাত। রবির ওপর প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে নির্মলবাবুর- কোথায় স্যারের প্রতি নজর রাখবে, না ক্যাবলার মতো জানালা দিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।  পর্বটা নির্ঝঞ্ঝাট কেটে যাক, রবিকে বুঝিয়ে দিতে হবে, কখন কী ভাবে থাকতে হয়। কিছুক্ষণ পর দেখা যায় ওরা দুজনে আবার হেঁটে হেঁটে চলে যাচ্ছে দক্ষিণ পুব দিকে, গ্রামের দিকে। আবার কেন একা ঐ দিকে যাচ্ছে স্যার! হঠাৎ করে এক ঝাঁক বাদুর চি চি করে উড়ে যায়। আবার কী হলো, সাপ কি বাদুড় ধরল। ভাইপার যে বড় বিষাক্ত। নির্মলবাবুদের গায়ের লোম খাঁড়া হয়ে যায়। লোকটি হুদুমদেও বনের দিকে তাকায়। বিকাশ গাড়ির দিকে ফিরে আসে। লোকটি জ্যোৎস্নার ছায়ায় মিশে যায় দূরে…    
- আপনি তো আমাদের আয়ত্তের বাইরে চলে গিয়েছিলেন।  
- না গেলে কী করব! আপনারা কী করে বের হতেন। 
- আর রবি কেমন গরধপ, আপনাকে চোখে চোখে না রেখে আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিলো। 
- আরে ওকে বকছেন কেন, ওটাও আমার প্ল্যানে ছিল।   
- কী বলল স্যার?
- হাতিটি এই হুদুমদেও বনে শেল্টার নিয়েছিল পাঁচ ছয় দিন আগে। তারপর পুবে আমাদের বনের দিকে চলে যায়। হাতিটি মস্তিতে ছিল, দাঁতাল। তবে হাতিটি নাকি খুব শান্ত। সাধারণত মস্তিতে থাকা দাঁতাল হাতি এমন ধরণের হয় না। হাতিটি পশ্চিমের বন থেকে আসে। সেই পশ্চিমের বন থেকে নাকি তিন জন লোক হাতিটির পিছু নিয়েছে। 
- সেই পাঁচ ছয় দিনের পুরনো খবর দেওয়ার জন্য এই ভাবে এখানে ডেকেছে। এই খবর ঠিক নয়।
- এই খবর একদম ঠিক নির্মলবাবু। ভাবছি বুলবুল নাইন বস্তির লোকও এর সাথে জড়িত আছে!! 
- সে কি করে সম্ভব। কোথায় বুলবুল আর কথায় হুদুমদেও। কোথাও ভুল হচ্ছেনা তো স্যার। 
- না। আপনার বুলবুলের বুধনী হাড়িয়ার কথা মনে আছে।
- স্যার। 
- আজকে ওই লোকটি হাঁটে বুধনীর হাড়িয়া খেতে যায়। লোকটি যে বুধুনীর বাঁধা। হাসি মস্করায় বুধনী বলে- সে আর হাড়িয়া বেচবেনা। গল্পে গল্পে জানায় যে ওদের বনে গজমুক্তার হাতি ঢুকেছে। কালকে ওর পাশের বাড়িতে এই নিয়ে অনেক খোশ গল্প হচ্ছিলো। গজমুক্তা পেলে নাকি গ্রামের চেহারা পালটে যাবে। তাই বিষয়টা খুব গোপন রাখতে বলেছে। আর কী বলেছে জানেন! 
- কী স্যার?
- বলেছে, তিনটা বাইরের লোকের সাথে গ্রামের একটা ছেলে হাতিটির লাদি বনে বনে খুঁজছে।
- কি বললেন স্যার হাতির লাদিতে গজমুক্তা!!! 
- তাই নয় তো কী… 
গাড়ি ছুটে চলে বুলবুল নাইনের দিকে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri