সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

46.শালসিড়ি-৪৬/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

45.শালসিঁড়ি-৪৫/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

44.শালসিঁড়ি-৪৪/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

43.শালসিঁড়ি-৪৩/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

42.শালসিঁড়ি-৪২/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

41.শালসিঁড়ি-৪১/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

40.শালসিঁড়ি-৪০/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

39.শালসিঁড়ি-৩৯/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

38.শালসিঁড়ি ৩৮/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

37.শালসিঁড়ি-৩৭/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

36.শালসিঁড়ি-৩৬/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

35.শালসিঁড়ি-৩৫/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

34.শালসিড়ি-৩৪/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

33.শালসিঁড়ি-৩৩/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

32.শালসিঁড়ি-৩২/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

31.শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

30.শালসিঁড়ি-৩০/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

29.শালসিঁড়ি-২৯/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

28.শালসিঁড়ি-২৮/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

27.শালসিঁড়ি ২৭/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

26.শালসিঁড়ি - ২৬/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

25.শালসিঁড়ি-২৫/বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

24.শালসিঁড়ি ২৪/ বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

23.শালসিঁড়ি-২৩/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

22.শালসিঁড়ি-২২/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

21.শালসিঁড়ি-২১/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

20.শালসিঁড়ি-২০/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

19.শালসিঁড়ি-১৯/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

18.শালসিঁড়ি-১৮/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

17.শালসিঁড়ি-১৭/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

16.শালসিঁড়ি-১৬/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

15.শালসিঁড়ি-১৫/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

14.শালসিঁড়ি-১৪/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

13.শালসিঁড়ি-১৩/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

12.শালসিঁড়ি-১২/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

11.শালসিঁড়ি-১১/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

10.শালসিঁড়ি-১০/বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

9.শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

8.শালসিঁড়ি -৮/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

7.শালসিঁড়ি-৭/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

6.শালসিঁড়ি –৬/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

5.শালসিঁড়ি-৫/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

4.শালসিঁড়ি - ৪/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

3.শাল সিঁড়ি-৩/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

2.শাল সিঁড়ি-২/বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

1.শালসিঁড়ি/১ বিমল দেবনাথ

28-November,2022 - Monday ✍️ By- বিমল দেবনাথ 425

শালসিঁড়ি-৩১/বিমল দেবনাথ

শালসিঁড়ি-৩১
বিমল দেবনাথ 
^^^^^^^^^^^^^

বর্ষা আসার ঢের দেরী। তার আগে মাঝে মাঝে আকাশ এখন গাড়াম-গুড়ুম করে। বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ করে কিশোরীর মতো মুখ গোমড়া করে ওঠে। মাঝে মধ্যে কিশোরের বাচালতা চঞ্চলতা উন্মত্ততা এমন আকার ধারণ করে যে কখনো কখনো বাঁচার আশাকে ক্ষীণ করে দেয়- কালবৈশাখী। শুষ্ক শীতের পর বসন্তের রঙিন হাসিকে ফুলে ফোটাতে বৈশাখের নরম নরম বৃষ্টি অপরিহার্য। কত জীবনের সৃষ্টির পূর্বরাগ।   
আজ সকাল কী সুন্দর ছিল। মানুষ প্রিয় পাখি শালিক চাকদোয়েল  দোয়েল শ্যামা বুলবুল চড়াই ফিঙে পাড়ঘুঘু তিলেঘুঘু  টুনটুনি  যেন গলা সাধে বন-ঘরের কাছাকাছি গাছে। মাঝে মধ্যে টিয়া বেনেবউ বসন্তবৌরি কাঠঠোকরা ঘরের সাথে ঠক্কর খেতে খেতে নিজেদের বাঁচিয়ে নিয়ে উড়ে চলে যায় অন্য কোন গাছে। যেদিন সকাল নির্ঝঞ্ঝাট থাকে সকালের কসরৎ করে সুনীল আসার আগেই এক মগ দার্জিলিং লাল চা নিজে বানিয়ে নিয়ে বসে বারান্দায়। বারান্দার সামনে তারে এসে বসে একটি দোয়েল। শিষ মেরে মেরে যেন কী বলতে চায়। বুঝতে চাইলেও বোঝা যায়না। কিন্তু হুস করলেই সব পাখি উড়ে যার এদিক ওদিক ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ  করে।  মনে হয় বুনোরা সব মানুষের ভাষা বুঝতে পারে।  সুনীলের উপর মনে মনে  রাগ হয় বিকাশের। ঘরে ঢোকার মুখে একটা শালিক দেখে অমঙ্গলের আশঙ্কা করে এক শালিক তাড়াতে গিয়ে  হাততালি দিয়ে হুস করতেই শালিক সহ উড়ে চলে যায় সব পাখি। বন্ধ হয়ে যায় পাখিদের গান।    
চা শেষ হবার আগেই শেষ হয়ে যায় সকালের নরম আলো। আকাশটা ঢেকে যায় কালো মেঘে। বিদ্যুৎ চমকানোর সাথে সাথে চলতে থকে গভীর গর্জন। গুড় গুড় ঘুড়ুম… আর প্রবল হাওয়া। হাওয়াতে ওড়ে ঘরের জানালার পর্দা, ছুঁয়ে যায় বিকাশকে। সুনীল তাড়াতাড়ি করে জানালা বন্ধ করতে গেলে বারণ করে বিকাশ। পর্দার ছোঁয়াতে খুঁজে পায় অপরূপার আঁচলের স্পর্শ।   
যখন এই বন-ঘরে অপরূপা আসে সুনীলের মেদ কমে যায় অনেকটা। অবশ্য এই নিয়ে সুনীলের কোন অভিযোগ নেই। আনন্দ করে ঘর সাজায় অপরূপার তত্ত্বাবধানে। গৃহ সজ্জার আর রান্নার খুঁটিনাটি ম্যাডামের কাছে শিখে ওর যে কদর বাড়ে ওর ঘরে! গতবার সুনীলের কপালে জুটেছিল প্রচণ্ড ঝাড়। বারান্দা থেকে ঘরে ঢুকতে গিয়ে দরজার উপর অপরূপা দেখতে পায় একটা সিগনেচার মাকড়সা। যত বোঝাই যে সব মাকড়সা বিষাক্ত নয়… কিন্তু কে কার কথা শোনে… 
- সুনীল।   
- হ্যাঁ ম্যাডাম।
- এখুনি সারা ঘরের ঝুল ঝাড়। তারপর অপরূপার কোমরে আঁচল গুঁজে আর সুনীলের ঘাম ঝরে…
ম্যারেড ব্যাচেলারদের এই এক জ্বালা। ঘরকন্নায় পদে পদে ভুল ধরা পড়ে। ঘরের ভিতর অফিসারের রঙিন বেলুন তিরস্কারের খোঁচায় গরম হাওয়া ছাড়ে। হালকা হয়ে বিকাশ বলে-
- সেই যে এসে কোমর বেঁধে লেগে পড়েছ, এবার থাম।  
- থামবো কী! এই নোংরায় আমি থাকতে পারবোনা। সুনীলটাও হয়েছে ফাঁকিবাজ। দ্যাখে যে স্যার ঘরে থাকেনা, যেমন তেমন করে, করে রাখলেই হলো। এর পরতো ঘরে পোকামাকড় বাসা বাঁধবে।   
- সে ঠিক আছে আমার কিছু হবেনা। বনের মানুষ একটু আধটুকু বুনো প্রাণ থাকলে কিছু হবেনা। 
- সে নাহোক, কিন্তু হাইজিন বলে একটা কথা আছে, নাকি! 
সে বার সব সাফ সুত্রো করে টান টান করে পর্দাগুলো লাগিয়ে নিয়েছিল অপরূপা। হঠাৎ করে বুকশেলফ-এর কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে- 
- তুমি কি জিম করবেট অমনিবাস আবার পড়ছ?
- না তো!
- যাক খুশি হলাম তুমি সত্যি কথা বললে বলে।  
- মিথ্যা বলার কী আছে। সেই কবে পড়েছি তোমার মনে আছে! তখনো অংশু হয়নি। তুমি আর আমি একসাথে  “ট্রী টপ্স” গল্পটি পড়ছিলাম। তুমি বলছিলে তোমাকে ঐ রকমের গাছ-বাড়িতে নিয়ে যেতে। তুমি মনে মনে কেমন রাণী রাণী হয়ে উঠেছিলে আর আমি কখনো করবেট কখনো ফিলিপ…হা হা হা...   
- দেখ ঐ ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে ভুলানোর চেষ্টা করোনা। এই দেশে এখন তো গাছ -বাড়ি নাই আর বিদেশে যাবার এখন উপায় নেই। 
- দেখবে একদিন আমিই গাছ-বাড়ি বানাব। 
- সে যেদিন বানাবে সেই দিন দেখা যাবে। এখন বলতো কে এসেছিলো ঘরে। 
কী সাংঘাতিক চোখরে বাবা। এ যে দুঁদে গোয়েন্দার চোখ। বুক সেলফে বই দেখে বলে দিচ্ছে, ঘরে কেউ এসেছে! ম্যারেড ব্যাচেলারদের বউগুলো কি সব এই ধরণের গোয়েন্দা চোখ নিয়ে জন্মায়! যখনই বন-ঘরে আসে জিনিসপত্রের বিন্যাস আলনা জুতোর বাক্স কী তোপসের কাজ করে? অথচ অংশুর শালবাড়ি প্রাইমারি স্কুলে যাতায়াত শুরু করা পর্যন্ত, যখন   অপরূপা একসাথে বন-ঘরে ছিল, এই গোয়েন্দা চোখের খোঁজ পায়নি বিকাশ। সেই সময় বন-ঘর বৃন্দাবন না হলেও ছিল বিশ্বাসের আশ্রয় স্থল। হঠাৎ কি হলো ভাগ হয়ে গেল বন-ঘর। উত্তরবঙ্গ শিরোনামে ওঠে এলো সরকারিভাবে স্বীকৃত উগ্রপন্থীদের আক্রমণে। খুন হতে থাকল শিক্ষক রাজনৈতিক নেতা। শালবাড়ি গ্রামে রাতের বেলায় বাড়তে থাকে ভাতের খোঁজ। খবর আসতে থাকে দিনে বনে নাকি বনে লুকিয়ে আক্রমণকারীরা। খবর আসে আসামের মতো এখানেও হতে পারে দোহন। এক সন্ধ্যা রাতে যোগেনের ঘরে রান্না ঘরের জানালায় উঁকি মারে এক অচেনা মুখ। দাবি করে ভাতের।   সেই দাবি শুনে ফুলটুসির মা আঁতকে চিৎকার করে ওঠে অজ্ঞান হয়ে যায়। পরদিন সকালে বন-ঘর ভাঙ্গে বিকাশের।   
তখন থেকে অপরূপা শহরে বিকাশ বনে। বিকাশের শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে বেড়েছে উৎকণ্ঠা আর সুনীলরা হয়ে ওঠেছিলো উৎকণ্ঠা নিরসনের সংস্থান। প্রতিদিন ফোনে বিকাশকে না পেলেও পাওয়া যেত সুনীলকে অফিসের প্যারালাল ল্যান্ড লাইনে। সকাল থেকে বিকাল কী ভাবে কী রান্না হবে শরীর স্বাস্থ্য কেমন কত কথা হয় সুনীলের সাথে, কিন্তু এই কথাটি ঠিক চেপে গেল। বিকাশ বুঝতে পারে ঘরের হাওয়া ঘুরছে। বন- ঘর ভাঙ্গার পর অপরূপা অল্পতেই মেজাজ হারায়। রক্তে বেড়েছে থাইরয়েডের পরিমাণ বেড়েছে রক্তের চাপ। বিকাশ ডাকে-   
- রূপা!!!
- সোনা, এখন মলম লাগালে আর হবে না। আজকে সুনীলকে বকা খেতে হবে। 
- কত দিন পরে এলে একটু বস, সব বলছি। 
অপরূপা সোফাতে বসে। অশান্ত সমুদ্র শান্ত পুকুর হয়ে বিকাশকে পাড় দেয় ঘাট দেয়। বিকাশ বলে-
- সুরঞ্জনদা এসেছিল। 
- তাই, বৌদি এসেছিল!   
সুরঞ্জনদা, বৌদি, শালবাড়ি, কাবুদের কথা শুনলে অপরূপা পুলকিত হয়ে ওঠে। বিকাশের বন্য জীবনের সে সময়ে অপরূপা ছিলোনা বনে। পরে কত কথা গল্প শুনেছিল ওদের সম্পর্কে বিকাশের কাছে। অপরূপা বলে- 
- আমাকে ঠকাচ্ছ না তো?
- না না সত্যি বলছি, সুরঞ্জনদা “জিম করবেট অমনিবাস” বইটি দেখে হাতে নিয়ে বলল, সেই কবে কলেজে বইটি পড়েছিলাম, সব ভুলে গেছি। আবার পড়তে হবে। ঐ হাতে নেওয়া সারা। পড়া হলো আর কই।  তারপরতো আড্ডায় বসলো। পর দিন সকালে আমি বইটি তুলে রাখলাম। 
- তোমাদের দেখছি দেখা হলেই আড্ডা জমে ওঠে। দাঁড়াও বৌদিকে বলছি ফোন করে। 
মিথ্যা অভিমান করে ওঠে যায় অপরূপা। বিকাশের ঠোঁটে কাঠজামের ফুলের মতো হাসি ফুটে ওঠে। সকালের কালো মেঘ উড়িয়ে নিয়ে যায় ঝড়ো হাওয়া। বিষাদে স্মৃতি ক্ষণিকের সুখ দেয় কিন্তু ভোলাতে পারে না মনের কষ্ট। সেদিন মাস্টারদা যাবার পর যে ফোন বেজে উঠেছিল তার রিঙের অনুরণন এখনো চলছে মনে। দুই দিনের বনটহল হাতির পোস্টমর্টেম-এর ধকলেও কমেনি “মানিয়ে নাও” কথার ফলার ব্যথা।  
- স্যার অফিস করবেন নাকি আজও বাইরে পোগ্রাম, সেই বুঝে ব্রেকফাস্ট বানাব। 
সেই অপূর্বর শ্মশানঘাট থেকে হাতির চিতা এই কয় দিন যা গেল, আজ অন্য কোনো খবর না থাকলে অফিস করা ভালো। বলে- অফিস করব…    
- নমস্কার। 
- বল রতিয়া। হাতিটি পোড়ানোর কাজ শেষ হয়েছে। 
- স্যার ওটাতো বিশরাম দাদা দেখছে। মনে হয় এখনো হয়নি, সকালে আবার বৃষ্টি হল। স্টাফরা আছে। আমি একটা অন্য কাজে আসছিলাম। কত দিন ধরে বলবো করছি আপনাকে, বলতে পারছিনা। আপনাকে যে অফিসে পাইনা। ভাবলাম আজ অফিসে আপনাকে পাব, তাই এলাম।
- কী বলবে, বল। 
- বনের ধারে জমিগুলোতে চাষআবাদ কিছু হয়না। সব সময় খালি পড়ে থাকে, ভাবছি ঐ জায়গায় সুপারি বাগান করব। এবার যদি কিছু সুপারির চারার ব্যবস্থা করে দেন।
- কেন এমনিতে যা হচ্ছে তাতে তো চলে যাছে।  
- সে চলে যাচ্ছে। কিন্তু সুপারি চাষ আর একটু ভালো ভাবে থাকতে পারব।  
- শোন রতিয়া তোমাকে একটা গল্প বলি। এক জায়গায় তোমাদের মতো একটা ছোট গ্রাম ছিল। মোট পরিবার তের। প্রতিটি পরিবারের তেরটি দুধের গরু ছিল। 
- সে তো আমাদেরও আছে। সেটা আবার তেমন বড় কথা কী। আপনি…
- আগে শোন পুরো গল্পটি… তোমাদের এখন এই হয়েছে সমস্যা। একটু ধৈর্য ধরতে পার না।  
- বলেন বলেন…
- তেরটি গাই এক মনের ওপর দুধ দিত। সেই দুধ কিনতে আসত শহর থেকে এক গোয়ালা। সেই গোয়ালা নিজের ব্যবসা বাড়ানোর জন্য গ্রামবাসীদের গরুর সংখ্যা বাড়াতে বলে। প্রথম দিকে গাইয়ের সংখ্যা বাড়ার সাথে  সাথে দুধের পরিমাণও বাড়তে থাকে কিন্তু একটা সময়  গাইয়ের সংখ্যা বাড়া সত্ত্বেও দুধের পরিমাণ বাড়ে না আর। গোয়ালার ব্যবসার স্থায়িত্বের জন্য গাইয়ের সংখ্যা বড়তে থাকে। আস্তে আস্তে গরুর সংখ্যা এত বেড়ে যায় যে  গাইয়ের স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে। দুধ কমতে থাকে ক্রমশ। গরুর অত্যাচারে বনের অবস্থা খারাপ হতে থাকে। গোয়ালা তখন দুধ ছেড়ে গোবরের ব্যবসা শুরু করে।   
- স্যার তার সাথে সুপারি গাছের কী সম্পর্ক।  
- বুঝতে পারলেনা তো?  বন থেকে শুরু করে মানুষ, সবার কোন কিছু দেবার একটা নির্দিষ্ট ক্ষমতা থাকে। সে ক্ষমতার থেকে বেশী চাইলেই বিপত্তি ঘটে। মানুষ হলে তার যক্ষ্মা হয় আর বন ধ্বংস হয়।   
- চাইতে এলাম সুপারির চারা তার বিনিময়ে আমাকে বন ধ্বংসের কারণ বলছেন। 
রতিয়ার মনঃক্ষুণ্ণ হয়। মনে রাগ হয়। বিকাশের চেম্বার ছেড়ে বেরিয়ে যেতে যায়। বিকাশ জানে বন বস্তিবাসীদের মন খুব সরল হয়। সেই বিদ্যা মুণ্ডা থেকে শুরু করে এই রতিয়া খেরোয়ার, সবার সাথে একটা আত্মীক সম্পর্ক করে রাখতে চায়। বিদ্যার সাথে রতিয়ার দুই পুরুষের পার্থক্য হলেও চিন্তাধারায় কয়েক পুরুষের তফাৎ। ফারাক থাকলেও এখনো কিছু ইতিহাস রেখা বয়ে চলে উত্তরের নদীর মতো। আসলে এখানকার বনের ব্যবস্থাপনা আর বনবস্তির পত্তন সমসাময়িক। বন ব্যবস্থাপনার পুঁথির তথ্য যে বনের অভ্যন্তরে দাঁড়িয়ে থাকে সেই ইতিহাস চিনতে বনবস্তির মণ্ডলরা বা বস্তির কিছু মানুষ বেশ সাহায্য করতে পারে। এই বনাঞ্চলে আসার পর এক দিন রতিয়া সাথে নিয়ে বনে হেঁটেছিল বিকাশ। অবলীলায় চিনিয়ে দিয়েছিল ১৯৫৬, ১৯৫৭, ১৯৬২… সালের প্লানটেশন। 
স্যার ১৯৬২ আমার জন্ম বছরের প্লানটেশন। আমার দাদু এই প্লানটেশনের মণ্ডল ছিলেন। দাদু বলতেন আমার আগে   আমার দুই ভাই জন্মের পর ম্যালেরিয়ায় মারা যায়। এই প্লানটেশন করার সময় শাল গাছ পূজা করে বলত- বন দেবতা এবার আমার মেয়ের ছেলেটা শাল গাছের মতো যেন বেঁচে যায়। বিকাশ কিছু বলে না। গভীর বনে রতিয়ার কথা শোনে। কারো জন্মের সাথে বনের গভীরে প্লানটেশন থাকতে পারে ভেবে রোমাঞ্চিত হয় বিকাশের মন। গ্রীষ্মের দুপুরে শাল গাছ নিজের ছায়া নিজের মাথায় রাখে। সূর্যের আলো শাল চাপ চিলৌনি টুন গামার গাছের ডাল ও পাতার ফাঁকে ছুঁয়ে থাকে রতিয়ার কপাল মুখ। বনের পাখি থেকে ঝিঁঝিঁ পোকারা যেন পালন করছে মৌনতা। মনে হয় ওরাও যেন শুনতে চায় বন বালকের কথা।  
স্যার আমি খুব ছোট অবস্থায় দাদুর কাঁধে চড়ে আসতাম এই প্লানটেশনে। তারপর দাদুর হাত ধরে হেঁটে হেঁটে এই প্লান্টেশন দেখতাম। এই যে শাল গাছের লাইন এটা আমার বাবার লাগানো। আর তার পাশেরটা আমার আর আমার মায়ের। তখন তো আমি আমার মায়ের পেটে। হাঃ হাঃ হাঃ 
বিকাশের মন হু হু করে ওঠে। আগের দুটো সন্তান ম্যালেরিয়া মারা যাবার পরেও পেটে সন্তান নিয়ে ম্যালেরিয়ার ডেনে কেউ আসে!  একটা মানুষ কত সরল হলে এই ভাবে হেসে ওঠে। বিকাশ বলে-
- চল রতিয়া অন্য প্লানটেশন দেখি। 
- স্যার একটু দাঁড়ান। এই যে দেখেন, এটা কাইচি লাইন- মানে দুইটি প্লানটেশনের ভাগ। এইটি বাউন্ডারি লাইন। কোন তফাৎ পাচ্ছেন। 
- না।
- বাউন্ডারির ডান দিকটা দেখুন ওটা হাই ফরেস্ট (ন্যাচারাল)। এটা আমাদের প্লানটেশন।   বুঝতেই পারবেন না। শাল চাপ চিলৌনি টুন গামার লালি লসুনি থালি কুরচি ভাঁট কেমন ধাপে ধাপে নেমে গেছে।
মানুষ কত বুদ্ধিমান প্রকৃতির কাছে শিখে নিয়েছে প্রকৃতির মতো শালসিঁড়ি বানাতে। পশ্চিমে হেলে যাওয়া সূর্যের আলোর ছায়া চিকন সবুজ শাল পাতা হয়ে পড়ে বিকাশদের শরীরে। রতিয়া বলে
- কী ভাবছেন স্যার।
- না কিছু না। বলছি চল এবার অন্য প্লানটেশন দেখি। 
- স্যার, আর একটি কথা বলি শুনুন। ঐ যে দেখছেন কাইচি লাইনে অনেক বড় বড় দুটি শাল গাছ। ওটি কিন্তু আমরা লাগাই নি। ওটা আগেই থেকেই আছে। ওদের আমরা রাম লক্ষ্মণ বলি। সবাই চেনে। ১০০ বছরের ওপর হবে বয়স। যখন বন সাফ কাটা হচ্ছিল, দাদু ওদুটিকে রেখে দিয়েছিল, টং বাঁধবে বলে। তখন তো দাদুরা এই সব প্লানটেশন দুই বছর চাষ করতাম। টং করে ফসল পাহারা দিতে হতো। আমি ছোট বেলায় কত দিন ঘুমিয়েছি ঐ টঙে। বাবা মা কাজ করতো প্লানটেশনে।  
- তাই নাকি? - বিকাশ উৎসাহ বাড়িয়ে বলে। 
- হ্যাঁ শুনেন স্যার। একদিন আমি সে টঙে শুয়ে ছিলাম। শীত কাল। বিকাল হবে হবে করছে। প্লানটেশনে শালের চারাগুলো তিন ফুট- চার ফুট হয়ে গেছে। অন্য চারাও বেশ বড় হয়ে গেছে। চারার লাইনের মধ্যখানে বাবারা চাষের কাজ করছে। তখন দেখতে পেল এক দল হাতি কাইচি লাইন বরাবর হেঁটে আসছে আর আমি সেই কাইচি লাইনের ওপরে শাল গাছের টঙের ওপর ঘুমাছি। সব বস্তিবাসী কাজ বন্ধ করে হাতি দেখতে থাকে।  হাতির বাচ্চাগুলো কাইচি লাইনের দুই পাশে ফাঁকা জমি দেখে ঢুকতে যায়। বড় হাতিগুলো গুড় গুড় করে এমন ডাক দেয় যে বাচ্চা হাতিগুলো আবার লাইনে ঢুকে যায়। হাতিগুলো শাল গাছ দুটির নিচে এসে দাঁড়িয়ে যায়। গাছের গায়ে গা ঘষে। গা ঘষাতে টং নড়ে ওঠে আর আমি কেঁদে ওঠি। বাবা চিৎকার করে বলে – যা মহাকাল যা, ওখানে আমার ছেলে ঘুমাচ্ছে। তারপর নাকি হাতিগুলো  কাইচি লাইন ধরে সোজা নদীর দিকে চলে যায়। একটাও শালের চারা নষ্ট করেনা, আমারও কোন ক্ষতি করেনা। আর এখন তো হাতিরা প্লানটেশনে শালের চারা রাখতেই দেয়না। সব তুলে নরম মিষ্টি শিকড় খেয়ে নেয়।  শালের প্লানটেশন করা যাচ্ছেনা। 
- স্যার যাই তা হলে… আপনি তো কিছু আর বলছেনা। সুপারির চারা আর পাবোনা। 
- আরে বস বস। কথা যে শেষ হয়নি।   
যে মানুষটি শালের প্লানটেশন করা যাচ্ছেনা বলে আক্ষেপ করেছিল একদিন, এখন তাকে কী করে বোঝান যায় যে বনের পাশে বা বনের মধ্যে যে ফাঁকা জায়গা থাকে সেটা বুনো প্রাণীদের খুব প্রয়োজনীয়। এই জায়গাগুলো বুনো প্রাণীদের বেড়ানোর জায়গা, নিঃশ্বাস নেবার জায়গা। এই জায়গাগুলোর কেতাবি নাম যে ফরেস্ট লাউঞ্জ। এখানেই মনে হয় বিদ্যা আর রতিয়ার পার্থক্য। যেখানে বিদ্যা বুনোদের জন্য দুই তিন বিঘা জমি চাষ করে রাখতো সেখানে রতিয়া ফাঁকা জায়গাটাতে লাগাতে চায় সুপারি!   
- রতিয়া তোমার বাড়িতে উঠোন আছে।  
- হ্যাঁ স্যার। 
- সেই উঠোনে ভুট্টা লাগালে কেমন হবে। অনেক ভুট্টা পাওয়া পাওয়া যাবে। 
- সেকি! তাহলে বিকালে বসব কোথায়। 
- সে জন্য তো বললাম, বনের পাশের জমিটা ছেড়ে দাও। ওটাযে বনের ছোট বড় প্রাণীদের উঠোন। মানুষের কাছে ঐ জায়গাগুলো জঞ্জাল জমি মনে হলেও বনের ছোট বড় সব প্রাণীদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। 
- বনের চার পাশের পতিত জমিগুলো বাইরের টুরিস্ট থাকার জন্য রিসোর্ট হয়ে যাচ্ছে আর যত বাধা বন বস্তির সাথে…
বিকাশ রতিয়ার চোখে চোখ রাখে। বাইরে মরে যাওয়া শিশু গাছে চিই চিইই করে চিল ডাকে…

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri