শূন্য আমি পূর্ণ আমি/৩
শূন্য আমি পূর্ণ আমি/পর্ব : ৩
অমর চক্রবর্তী
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
'হৃদয়ে তোমার দয়া যেন পাই
সংসারে যা দিবে মানিব তাই'
লড়াই আর দু:খ কষ্টের এই জীবনে আনন্দ কোথায়! আছে তো! হে অজানা, তোমায় তবে জেনেছিলাম অনুভবে।
দুর্গা পূজা। একমাস বৃষ্টির পর নীল আকাশ।পেঁজা তুলোর মতো সাদা মেঘ। তোর্সার দু পাড়ে কাশ ফুলের গুচ্ছ। বাতাসে শিউলি ফুলের গন্ধ। মাঠে ফড়িং আর প্রজাপতি। আমরা দল বেঁধে ছুটেছি ফড়িং ধরার জন্যে..। সেই সময় শিউচরণ কাকা মাথার উপরে একটা সিনেমা হল নিয়ে এল। একটা বায়োস্কোপ। মুড়ির টিনের মতো মুখ খুললেই সিনেমা। শিউচরণ কাকা মুখে গেয়ে চলেছে দিল্লিকা কুতুব মিনার দেখো, আগ্রাকা তাজমহল। মা অন্যের বিড়ির পাতা কেটে কটা পয়সা জমিয়েছেন ছেলের আবদারে পাঁচ পয়সা দিলেন। সিনেমা দেখা হল। দূরে ফণিভূষণ কাকার ঢাকের শব্দ। হয়তো পুজোয় কোথাও বায়না পেয়েছে। ঢাক সারিয়ে নিচ্ছেন। কি আনন্দ। জ্ঞানগম্যি হবার পর পাড়ার পুজো দেখব। কয়েক বছর হল পুজো হচ্ছে পাড়ায়। এবার বড় হয়েছিল দাদা আর বন্ধুদের পুজো দেখব। আর কোথাও যাওয়া হবে না কারণ এক পুজো আর এক প্যান্ডেল বহুদূর! মা যেতে দেবেন না। বাবা বললেন তিনি একটা মন্দিরে দুর্গা পূজার পুরোহিত হয়েছেন। কটা টাকা হাতে আসবে। এবং আমাদের বললেন "আমি অফিস থেকে ফিরব তোমরা ভগবতী বস্ত্রালয়ে অপেক্ষা করবে জামা কাপড় কিনব।" আমাদের চোখে মুখে খুশি উপচে পড়ছে। বাবা এলেন। আমাদের কাপড়ের মাপ নিলেন সুধীরকাকা। সবার জন্য রঙিন ডোরাকাটা বালিশের খোলের মতো ছিটের পায়জামা আর সাদা হাফ শার্ট। বড়দা আসতে পারেনি। অসুখে ছোটখাটো হয়ে গেছিল। আমার মাপের জামা কাপড় নেওয়া হত। প্রতিবার নেওয়া হত কিন্তু বড়দা কোনোদিন পড়েননি! তাঁর শরীরে শুধু একটা গামছা আর সঙ্গী ডোডেয়ার হাট থেকে কিনে আনা বাছুর। সারাদিন ওর সাথে কথা। মা গরীব বামুনের বৌ। পড়নে লাল পাড় শাড়ি। এবার পুজোয় বাবা কিনলেন একটা রোলেক্সের শাড়ি। শেষবার এই শাড়ি পড়েই একটা সিনেমা দেখেছেন "মহাতীর্থ কালিঘাট।" সম্ভবত মাস তিনেক চলেছিল ছবিটি 'নিউ সিনেমায়'। পুজো দেখতে গেলাম পাড়ার মন্দিরে হাতে টিনের বন্দুক আর ক্যাপ। তাই ফাটিয়ে আনন্দ প্রকাশ। বন্ধুদের সঙ্গে বসে খিচুড়ি খাওয়ার আনন্দ। শুনলাম যাত্রাগান হবে। বাইরের অপেরা নয়, পাড়ার অভিনেতারা করবেন। শুনলাম বাবাও আছেন ফিমেল রোল। বাবা সুন্দর মিস্টি ভাষী। তার এককণাও আমি পাইনি। পালার নাম কি 'কে কাঁদে'! আজ ঠিকঠাক মনে পড়ছে না! বাবা অভিনয় করেছেন। আমার দেখা হয়নি। যেমন দেখা হয়নি তিনি ফুটবল খেলতেন কিন্তু আঘাত পেয়ে শয্যাশায়ী হয়েছিলেন। মা দিনরাত সুশ্রুষা করেছেন। বাবা অভিনয় করবেন, ফিমেল রোলে। সেইদিন আবিষ্কার করেছিলাম আমাদের ঐ এক ট্রাঙ্কে মেয়েদের অভিনয়ের সাজের কিছু বস্তু। আমি কি তাই নাটকে এসেছিলাম। কিন্তু অভিনয়টা হত না। এসেছিলাম নাটক লেখা ও পরিচালনায়।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴