লাল পরী-৩/মধুপর্ণা রায়
লাল পরী/৩
মধুপর্ণা রায়
:- কি করবেন জোনাকি দিয়ে? চচ্চড়ি খাবেন?
মেয়েটার গলায় কি তীব্রতা এল?
:- তুমি মদ খাও না? আমার তেষ্টা পেয়েছে।
:-- মদ তো খাই। আমরা সবাই খাই। শুধু পদ্ম খায় না। খেলেই বমি করে।
:-- এখানে খাবে? না ঘরে?
:-- মদ খেলে কি বেহুঁশ হয়ে যান? আমাকে লাশ টানতে টানতে ঘরে নিয়ে যেতে হবে?
:-- তুমি বড্ড বাজে বকো তো!
:-- ও.... বাব্বা! শালা কথাও শুনবেন না, কাজও করবেন না..… আমি কি ফ্যালনা নাকি?
সেল বাজছে মল্লিকার। সে কানে ফোন ধরে খিলখিল হেসে উঠল।
:-- এ্যাই আনাড় শালা! একদম এসব বলবি না! কী? আজ বসাসনি নাকি?.......ধুর! না রে। এ অন্যরকম ক্লায়েন্ট। পদ্মর কাছে একটা মাল আসত না? ছবি ফবি আঁকে! ওইরকমই মনে হচ্ছে।......... কী বলছিস? এ্যাই না না মিতা। নুড়ির কোনো কিছু আমি নেব না। মাসিকে বলে দিস। তুই নিয়ে নে না! ধুশ! ওই মাগী কি আর সাধে মরল রে?! রাখলাম।
:-- ওহ! কত ঢ্যামনা দেখলাম জীবনে মাইরি! রক্তচোষা বদমাইশ সব। সেল বন্ধ করে স্বগতোক্তি করল মেয়েটা।
শাক্য দেখছিল। অল্প চাপা নাকে ঝকমক করছে পাথর। নাসারন্ধ্র স্ফীত। শ্যামল মুখে লালচে আভা। চোখের তলে জলের আভাস স্পষ্ট।
সে এবার বলল:-- মদ খাবেন তো ঘরে চলুন। নাকি আকাশের তলে গিলবেন? আপনি তো আবার গপ্প লেখেন! ওর গলায় ঝাঁঝ টের পেল শাক্য।
কটেজের সামনে একফালি বারান্দা। দুটো চেয়ার। বাঁশের টেবিল। সামনে অন্ধকার। ভাঙা চাঁদের আলো। ওপারে জঙ্গল।
:-- হুইস্কি চলে? নিজের গ্লাসে হুইস্কি ঢালছিল শাক্য।
মেয়েটা হাত বাড়িয়ে টপ করে ডালা হুইস্কিটুকু গিলে নিল। হাঁ হাঁ করে উঠল শাক্য :-- এ্যাই মেয়ে এ্যাই! কী হচ্ছেটা কী?! হোয়াট দ্য হেল আর য়ূ ডুয়িং?!
এই তো, এইব্বার ভদ্দরলোক হলেন।
:-- মানে?!
:-- ইংরেজি বললেন। ডুয়িং নাথিং।
:-- এ্যাই, তুমি ইংরেজি বলতে পার?! এ্যাই মেয়ে,অহেতুক হাসবে না!
মেয়েটা শব্দ করে হাসছে। শাক্যর ভেতরটা গরম হচ্ছিল। সে একটু ধমকেই উঠল। হাসি থামাল মল্লিকা। নিজের গ্লাসে হুইস্কি ঢেলে সোডা মেশাল। তারপর সোজা শাক্যর দিকে তাকিয়ে বলল--
:--আমার নাম এ্যাই মেয়ে না। আমি মল্লিকা।
একটু হাসল শাক্য। ঘড়ির দিকে তাকাল।
:-- স্যরি। এখনো পকোড়া দিচ্ছে না কেন? বেলটা বাজাও তো।
:-- আমি পারব না। আপনি বাজান।
মেয়েটার বেয়াড়াপনায় হতবাক হয়ে গেল শাক্য।
বলল:-- খালি পেটে কাঁচা হুইস্কি খেলে কেন?
:-- বেশ করেছি। আমরা পারি।
:-- আমরা মানে?
:-- মানে, আমরা বেশ্যারা। একটা কথা বলুন তো, আপনি আমাকে বেকার আনলেন কেন?
:-- বেকার কেন হবে?
শাক্য কাজুর প্যাকেট খুলছে। :-- তোমার তো একটু বেড়ানো হল।
:-- লে হালুয়া! হেসে উঠল মল্লিকা। শাক্য দেখল, সমান সাজানো ঝকঝকে দাঁতের সারি।
:-- আমি ঢের ঘুরি। দীঘা, পরী, গোপালপুর, দিল্লি, আগ্রা, লখনো, খাজুরাহো..... আরো শুনবেন?
:-- কতদিন করছ এ কাজ?
:-- যখন আমার বয়স ঠিক পনের।
:-- পালাতে পার নি?
:-- পালাব?! আমার নিজের জায়গা ছেড়ে আমি পালাব?!! মল্লিকা সবটুকু চোখ দিয়ে শাক্যকে দেখছে একরাশ বিস্ময়ে।
পকোড়া এসে গেছে। বাঁ হাতের তিন আঙুলে সন্তর্পণে তারি একটা ঘোরাচ্ছে মল্লিকা। চোখও সেখানে। শাক্য কিছু বলছিল না। মল্লিকা গ্লাস তুলে ঢকঢক নি:শেষ করে দিল মদ। একবারে। তার বুক বেয়ে গলগল নামল তরল ঝাঁঝ। বলল:-- পালালে মাকে বাঁচাত কে? আমার পরের বোন দুটোকে? আপনি? আপনার মতো কোনো লেখক?
শাক্য তরলে হাল্কা সিপ করল।
:-- তুমি কাউকে ভালোবাস?
:-- কী?
ভ্রুতে আয়ত ভাঁজ একটু যেন কাঁপল মেয়েটার। শাক্যর মনে হল, আর একটু ঘাড় কাত করলেই ও যেন রঞ্জা! হঠাৎ কোন সুদূরলোক থেকে জেগে উঠে একাকী হয়ে বলে ওঠে -- কী?
হাসছে মল্লিকা। ঝাঁ করে প্রশ্ন করল-- আপনি?
শাক্যর বুকে ঢেউয়ের মতো এক রাইয়ের মুখ। এক থেকে দুই.... তিন.....করে করে........ সে নি:শব্দে হুইস্কিতে চুমুক দিতে লাগল। মল্লিকার দুই চোখে ঝিকঝিক করছে কৌতুক।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴