বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে
পর্ব : ৩
মিশা ঘোষাল
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
হিস্পা"পাহাড় : টোটোদের দেবতা
প্রকৃতির
পূজারী টোটোরা দেবতাজ্ঞানে পূজা করে টোটোপাড়ার উত্তরদিকে অবস্থিত একটি
পাহাড় "হিস্পা"কে । "হিস্পা" বা "ইস্পা" বলে ডাকে তাঁরা তাঁদের এই
দেবতাকে।
টোটোপাড়ার মারুয়ার ক্ষেত, বাঁশের ঝাড়,
মেম্বে বা ভূট্টা ক্ষেতের সবুজ বাগান পেরিয়ে আর একটু উত্তরের দিকে এগোলেই
দেখা মেলে তোর্ষা নদীর নীল জলের প্রবাহ। এই তোর্ষা নদীর জল অতিক্রম করলেই
টোটোপাড়া থেকে উত্তরের দিশায় ভূটান সীমান্তে দেখা যায় এই
"হিস্পা"পাহাড়টিকে। বৃষ্টি-স্নাত নীল আকাশের গায়ে এই পাহাড়টির অপরূপ রূপেই
মিশে আছে টোটোদের দেবতা,"হিস্পা"। এই হিস্পা পাহাড়ের দিকে একমনে তাঁকিয়ে
থাকলে তার অসাধারণ সৌন্দর্যের কাছে এমনিতেই শ্রদ্ধা ও ভক্তিতে মাথা নত হয়ে
আসে। এই পাহাড়টি যেন প্রকৃত অর্থেই এক দৈব শক্তির সাক্ষাৎ নিদর্শন!
আকাশ
পরিস্কার থাকলে আমাদের বিদ্যালয়ের ছাদ থেকেও এই "হিস্পা"কে দেখা যায়। আমি
লক্ষ্য করে দেখেছি যে, বৃষ্টি থামার পর বৃষ্টি-স্নাত "হিস্পা" আরও সুন্দর।
নীল পাহাড়ের উপর বলাকা মেঘের সফেদ উড়ান-
মন ভেসে যায় ঐ সুদূরেই...
সে এক অপূর্ব অনুভূতি!
টোটোদেরই
একজন,টোটোপাড়ার প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠা ঁলক্ষ্মীদা ছিলেন একজন পূজারী ।
ঁলক্ষ্মীকান্ত টোটো বলেছিলেন যে, "হিস্পা" দেবতা তাঁদের (টোটোদের)
প্রতিকূলতায় ভরা টোটোপাড়ায় প্রবল ঝড়-বৃষ্টি, বন্যার হাত থেকে রক্ষা করে ।
টোটোপাড়ার উত্তরদিকে খাঁড়া প্রাচীরের মত দাঁড়িয়ে থাকা এই পাহাড়টি প্রকৃত
অর্থেই টোটোদের এই ভূখণ্ডটিকে রক্ষা করে।
ঁলক্ষ্মীদা আমাদের ধনপতি টোটো মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের গ্রুপ-ডি
(পিওন) কর্মী ছিলেন। তাঁর বিশ্বাস থেকে তিনি একদিন বলেছিলেন যে, যখন
টোটোপাড়ায় প্রবল ভূমিকম্প ও বৃষ্টিপাত সহ বজ্রপাত হয়, তখন তাঁরা একমনে
তাঁদের এই হিস্পা-দেবতাকে ডাকেন। একমনে ডাকলেই এই দেবতা তাঁদের মৃত্যুর
হাত থেকে রক্ষা করেন।
বর্ষাকালে
বৃষ্টির সময় প্রচন্ত বজ্রপাতও হতে থাকে টোটোপাড়ায়। প্রবল হাওয়া ও ঝড়ের
তান্ডব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য টোটোপাড়ার "টোটো-ঘর"গুলিরও একটি বিশেষ
ভূমিকা আছে। ঐতিহ্যবাহী এই আদিম টোটোঘরগুলির এখনো দেখা মেলে টোটোপাড়ার এই
সবুজ মারুয়াক্ষেত্রের পটভূমিতেই ; হিস্পা পাহাড়ের পাদদেশে।
টোটো কবি সত্যজিৎ টোটোর একটি টোটো লোকগানে উল্লেখ আছে এই হিস্পা পাহাড়র নাম...
"ন্যুই বাকাং জোরা
দিবাকাং ইয়াগো
ডাংটা কাং "হিস্পা"
মাংতা কাং চুংচা
আকো পাকোতা ইয়োংকো
জেজেংকোয়া লোই...
লেই বারবাই লেই,লেই বারবাই লেই"...
...সত্যজিৎ টোটো
টোটো ভাষার এই গানটির উল্লিখিত এই অংশের অর্থ মোটামুটি এরকম...
"আমাদের টোটোপাড়ার
পুবদিকে আছে ঝোরা...
পশ্চিম দিকে আছে সবুজ বনভূমি...
উত্তরদিকে রয়েছে
আমাদের হিস্পা পাহাড়-
আর দক্ষিণে অবস্থান করছে
ঘন সবুজ জংগল...
এই নিয়ে আমাদের সুন্দর গ্রাম টোটোপাড়া।
এসো বন্ধুরা এসো,
আমাদের এই সুন্দর সবুজ গ্রামে এসো"...