সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
25.তোর্সার ঘরবাড়ি-২৫

25.তোর্সার ঘরবাড়ি-২৫

24.তোর্সার ঘরবাড়ি-২৪

24.তোর্সার ঘরবাড়ি-২৪

23.তোর্সার ঘরবাড়ি-২৩

23.তোর্সার ঘরবাড়ি-২৩

22.তোর্সার ঘরবাড়ি-২২

22.তোর্সার ঘরবাড়ি-২২

21.তোর্সার ঘরবাড়ি-২১

21.তোর্সার ঘরবাড়ি-২১

20.তোর্সার ঘরবাড়ি-২০

20.তোর্সার ঘরবাড়ি-২০

19.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৯

19.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৯

18.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৮

18.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৮

17.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৭

17.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৭

16.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৬

16.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৬

15.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৫/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

15.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৫/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

14.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৪/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

14.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৪/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

13.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৩/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

13.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৩/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

12.তোর্সার ঘরবাড়ি-১২/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

12.তোর্সার ঘরবাড়ি-১২/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

11.তোর্সার ঘরবাড়ি-১১/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

11.তোর্সার ঘরবাড়ি-১১/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

10.তোর্সার ঘরবাড়ি-১০/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

10.তোর্সার ঘরবাড়ি-১০/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

9.তোর্সার ঘরবাড়ি-৯/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

9.তোর্সার ঘরবাড়ি-৯/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

8.তোর্সার ঘরবাড়ি-৮/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

8.তোর্সার ঘরবাড়ি-৮/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

7.তোর্সার ঘরবাড়ি-৭/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

7.তোর্সার ঘরবাড়ি-৭/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

6.তোর্সার ঘরবাড়ি-৬/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

6.তোর্সার ঘরবাড়ি-৬/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

5.তোর্সার ঘরবাড়ি-৫/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

5.তোর্সার ঘরবাড়ি-৫/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

4.তোর্সার ঘরবাড়িত-৪/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

4.তোর্সার ঘরবাড়িত-৪/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

3.তোর্সার ঘরবাড়ি-৩/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

3.তোর্সার ঘরবাড়ি-৩/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

2.তোর্সার ঘরবাড়িত-২/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

2.তোর্সার ঘরবাড়িত-২/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

1.তোর্সার ঘরবাড়ি-১/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

1.তোর্সার ঘরবাড়ি-১/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

তোর্সার ঘরবাড়ি-৩/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

তোর্সার ঘরবাড়ি/৩য় পর্ব
মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস
----------------------------------

কত আলো জমে যায় দেখ ধুলো আঁচলে...
প্রতিদিন বিকেল চারটে মানে 'বেড়া বিনুনী'। মাথার উপর দু বেনী তুলে ফিতেয় গেঁথে নেওয়া ফুল। সে জেঠিমার হাতেই বাঁধা। ছটফটানি তো প্রাণ। দলবলের আসার সময় হলযে! দুপুরে মিনি পুনু দুজনেই সকাল থেকে ঠাকুমার জল চৌকির ধারে আর বেলা মধ‍্যগগন হলেই ঘুমের আঁকিবুকি। ঘুম না এলেও চোখ বুজে জোর করে জেঠিমার পাশে শোওয়া। নট নড়ন চড়ন। এমন ভাব যেন কত ঘুম। ঐ তো ও বাড়ির মানার মা জেঠির বুজম্ ফ্রেন্ড। গল্পের ছালা নিয়ে দু:খের বিনুনি গায়, ভাবে কেউ বুঝি শোনে না, বোঝেও না। মিনির কান খাড়া। ঘনা বাঁধে উঠে রতুদের জড়ো করলেই এদিকে তির তির কাঁপে মন।... কখন যাব কখন হবে সময়! না, ভেজা চুল থাকলে, সে ঘামই হোক বা জলে ভেজাই হোক অথবা স্নান দেরি করে করলে যে ভেজা নেতানো থাকা চুল, সে চুল বাঁধবে না জেঠি। হাতই দেবে না।... না না, শুকায় নাই। নেড়া হবি যে ভিজা চুল বাঁধলে।...সুতরাং ভয় আছে। একে ওকে টেপাটেপি করলেও মরার অভিনয় ভালই পারবে। জেঠি জানে দুটিতে ভালই ঘুমিয়েছে।....কি বলি রে সুধাদি...ঐ শুরু মানার মার দু:খ কাঁদন।...থাকি তো অন‍্যের সংসারে তা আমার আর কে-ই বা আছে বল, একটা মেয়ে বিয়া দিয়া দিছি ব‍্যস্। এখন ভাড়া দিয়া পেট চইল‍্যা যায়। ওর বাবার তো আর সরকারি চাকরি ছিল না। না, কোনো পেনশন নাই তোমার মতো।.....ব‍্যস্ 'তোমার মত' শুনেই শুরু হয় জেঠির নাক ঘ‍্যান ঘ‍্যান।- হ,আছিগ ভাল ই রে মানার মা, দেওর দেখতেছে এ পর্যন্ত ,কয়দিন দেখবে জানিনা,কে বলতে পারে, কালই বইল‍্যা দিল, তোমাদেরটা তোমরা বোঝো গিয়া...
এই কথা কইবা না সুধাদি। তোমার দেওর তো দেবতা। কিভাবে সেজদা মানে নুটুদা চইল‍্যা যাইতেই তোমাদের আগলাইছে ও কথা কবানা। পাপ লাগবে।....সে ঠিক কইছিস। অগোও তো সংসার বাড়ছে, শাশুড়ী ঠাকরুন আর আমি একসঙ্গেই খাওয়া দাওয়া নিরামিশ...ঐ চইল‍্যা যায়। পেনশনটা লাগে না এখনো বলতে পারিস।...ছোট বউটাও তো তোমাগো যেমন রূপে লক্ষ্মী, গুণে সরস্বতী, শুনছি খুব ভাল কবিতা কয়, নাটক করে।- হয়, ওইর্ জন‍্যই তো আমাদের অভির লগে আন সাই, সবাইতো জানে.../ গলাটা ফিস ফিস করে। মিনি কিন্তু স্পষ্ট শোনে এ ঘোটেলা গাল গল্প। মা বাবার বিয়াটায় কিছু গোলমাল ছিল মনে হয়, বুকে প্রচুর উদ্বেগ তৈরি হয়, ভাবে মা আসুক, মাকেই জিজ্ঞাসা করবে। পুনু চোখ দিয়ে তাড়া দেয়...'চল চল চাইরটা বাজছে তো! হ‍্যাঁ চল চল...
হুস হুস করে দুজনেই উঠে বসে। খিচ ধরে থাকে মিনির বুকে। ওর মার নরম মুখ মনে পড়ে।সন্ধে লাগার আগে বাঁধের উপর থেকে সরসরিয়ে নামে। সূর্য ডুবছে, মা রাস্তা হেঁটে আসছে, বাড়িতে গিয়ে ওঠেনি তখনো, নির্ঘাৎ কান মলা, চুলে টান, হাত ধরছ হিড় হিড় বাড়ি মুখো টান। কোন ক্ষমা নাই। রাগ জমে ভাবলে, তবু মাতো, জেঠির কথাগুলো কেমন যেন শেল বেঁধানো থাকে। মা গিলে নেয় সব।অদ্ভুত করুন তখন মার মুখখানা। আজ মানার মার সঙ্গে ফিস ফিস কথাগুলো শব্দগুলো ও কি ভুলে যাবে! না ভুলবে না। একদম না।
জেঠি তো ওদের আগলায়, তড়িঘড়ি চুল বাঁধে। মাথা নাড়লে চুলে টান ধরে। জেঠিকে এগুলো করতে হয় আসলে, ভাল লাগেনা তার। এখন একটু একটু  বোঝে মিনি। সরলা হই হই করে খুব জোরে হেঁটে ধপাধপ ঢোকে। টপাটপ কলস নেয়... জেঠির চিৎকার... হাত ধুলিনা সরি?- তোমারে বলতি হবেনা গ। দেখছ আমারে? সব পরিষ্কার, দেইখ‍্যা আসোগা গিয়া।- আচ্ছা বেশ চুপ কর।- তুমিই বলবা নাকি সব কথা? আমারে ঐ ছুট বৌদি পাও নাই যে সব কথা হজম কইর‍্যা আবার তোমার কাছেই ছুইট‍্যা আসে। পাইছ ভাল দেওর ঘরখান।-- অ্যাই অ্যাই, চুপ থাক।  গজ গজ করতে করতে সরলা রাস্তায়। ফাঁক দিয়ে ঐ দুই বাচ্চাও পগার পার। মানে সেই বাঁধ বরাবর উঠে যায়। এতো সেই ওদের পাহাড়ী পথ ভাঙা। আজ পাতা আনা খেলা, সক্কলে এলে বেশ হয়। একদল ছেলে, অন‍্যদলে সব মেয়েরা। কোন বন বাদাড় থেকে পাতা চিনে নিয়ে আসতে হবে। একদল অন‍্যদলের একজনকে এমন গাছের পাতা আনতে বলবে, যেটা সবাই চেনে, কিন্তু খুঁজে পেতে দূর বন বাদাড়ে ঢুকে সংগ্রহ করতে হবে। যাকে প্রথম খুঁজে পাবে, সেই আবার পরের বারের পাতা খুঁজে আনতে দৌড়বে জঙ্গলে। এ খেলায় রোমাঞ্চ খোঁজে মানি। বন বাদাড়ে একা হয়। স্বপ্ন দেখে পথ হারানো রাজকুমারী যেন। এই তো কবে যেন গাছের পাতা বলা হল জলপাই...ঐ মগডাল ধরতেতো পারেনা এবার নীচে থেকে তুলতে গিয়ে অন‍্যমনস্ক হয়ে একটা সবুজ সবুজ গাঢ় ভেলভেটের মতন পাতা ছিঁড়ে নিয়েছে সকলকে দেখাবে বলে। হাতে নিয়ে বেশ করে লুকিয়ে জামার নীচে নিয়ে ফিরছে। শুরু হল জ্বলুনি। ঘনা বলে, দেখি মিনি কি পাতা?  ওকেই খুঁজে পেয়েছিল প্রথম। চোর চোর বলে চিৎকার করার কথা।তা মিনির গলায় উ: জ্বলে গেল জ্বলে গেল। ...ঘনারাম গেল ঘাবড়ে...দেখি দেখি..হুঁ ঠিক যা ভাবছি! ওইটা তো বিচুটি পাতা, হা ভগবান! মিনিকে নিয়ে সবাই বড় বিপদে তখন। পুনু পিছন পিছন বাড়ীর দিকে। বাঁধ থেকে নামছে সব হুড়মুড় করে। মিনি কাঁদবে কি! জ্বলছে তো বেজায়।...বাড়ি যাওয়া মাত্র ভ‍্যাঁ...এবার ঘনাই রাস্তা দেখায়।...জেঠিমা, গোবর আনব তুইল‍্যা? ঘোষদের গোয়াল থিক‍্যা? ...যা যা তো।দৌড়া। জেঠিও জানে গোবর লাগালে বিচুটির জ্বালা কমবে। ঘনা মুহূর্তে ঘোষেদের বাড়ি যায়, তুলে আনে গোবর। প্রলেপ দেয় মিনির পায়ে হাতে, যেখানে যেখানে বিচুটির রোম আছে,জ্বলন আছে। জেঠিমা বলে, চুপ কইর‍্যা বইস‍্যা থাক এখন এনে। মা আসুক। দিবানে এক্কেরে। ভয়ে মরে মিনি।
মা কিন্তু কিচ্ছু বলে না। বরং ঘনার প্রশংসা করে। মাও জানে বিচুটি লাগলে গোবর দিতে হয়। মিনি শান্তি পায়। অনেকটা শুকিয়ে উঠেছে গোবর প্রলেপ। এবার জ্বলুনিও কমেছে।
সন্ধ‍্যায় ওচারীর সঙ্গে ঘনা এসেছে কাঁচুমাচু মুখে। ভেবেছে বুঝি মিনির উত্তম মধ‍্যম চলছে। ওমা...তার বদলে রুটি গুড় পায়  মিনির মা, কাইম্ মার কাছে। ফিক করে হাসে ঘনা।...কি রে, আর যাবি ঐ ভাঁটফুল জঙ্গলে? ধুতরা বনে বাঁধের পাড়ে? গাছ চেনস্ না, একলা আর যাওয়া লাগবে না।...না: খেলাটা ঐ বন বাদাড়ে আর যাবেনা মিনি বুঝলে? ঐ 'পাতা আনা খেলা' এখন বন্ধ। কত্ত খেলা আছে। বউ বাসন্তী, হাডুডু,,লুকোচুরি, কুমীর ডাঙা...এসব খেলবে ঘনা...সবাইকে বলে দেবে বুঝলে? কাল থেকে যেন আর ওসব না দেখি। ঘনা লক্ষ্মী ছেলের মত মাথা নাড়ে। মিনি দূরে চেয়ারে বসে আছে। ঘনার ও হাত জ্বলছিল, ওও সবার অলক্ষ‍্যে গোবর লাগিয়েছে। আবার তোর্সার জলের সঙ্গে মোলাকাত হয়ে গেছে। সভ গোবর তুলতে হয়েছে, ঐ জলে, সাবান চায়নি আর দিদা বা মার কাছে। ঘরে কোথায় ই বা সাবান! ধুন্ধুলের ছোবা ডলান দিয়েই কাজ সারা। সকালে স্নানের সময় সাঁতরে এপাড় ওপাড়। মার কাছে জেদ ধরেছিল মিনি।....মা, সব্বাই নদীতে স্নান করতে যায়, আমাকে যেতে দাওনা তুমি! বন্ধুরা হাসে। এমনকি পুনুও আজকাল নিমু কাকার সঙ্গে নদী যায়। রাস্তার টাইম কলেও স্নান করে। আমি যাব মা।...মা তো জানে,মিনিকে এসব ঝুঁকি নেওয়া কাজকর্মে কোনদিন ই পাঠাবেনা অভিজিৎ। এই বুঝি মেয়ে জলে তলিয়ে গেল...এই বুঝি জ্বর এল। তবু...বহু কাকুতি মিনতিতে মিনি টাইম কলের জলে রাস্তার ধারে স্নানের অনুমতি পায়,সেটা কোন ছুটির রবিবার।হাবুডুবু জলের নীচে বসে,সঙ্গে গামছা হাতে মা প্রস্তুত। এরপর বন্ধুরা একা একাই হাপুস হুপুস স্নান, আহা! অবশ‍্য মা সবসময় বলবে, ওরা তো সবাই বড় হয়েছে, সব পারে, তুমি তো ছোট। তুমি কি একা পার? নদীতে গামছা নিয়ে তুমি নাইতে গেলে যে আমাকে যেতে হবে বাবু... সেওতো ছুটির দিন হওয়া চাই।
    হ‍্যাঁ, এল সেই দুপুর। প্রতিবছর রঙ খেলার পর দল বেঁধে পাড়ার ব উ ঝিরা বাচ্চা কাচ্চা সহ তোর্সার দিকে। উঠছে বাঁধে পিল পিল। নামছে চরের দিকে জলের দিকে।তর তর। খুঁজে পেতে পরিষ্কার বড় বড় বোল্ডারে পা রেখে ওরা নামে,নামতে থাকে জলের অতলের ডাকে। আর মিনি করুন চোখে স্নান টান সেরে রঙ তুলে বাঁধে গিয়ে দাঁড়ায়। অন‍্যদের স্নান করা দেখে। পিছনে লাগা ছোট একটু বড় রতু, মিলু সবাই কেমন দয়ার চোখে ওকে দেখে--তোর তো স্নান হয়ে গেছে। বাব্বা...লক্ষ্মী মেয়ে একবারে। রাগ হয় মিনির তবু দাঁড়িয়ে ওদে্য স্নান দেখে সুখ পায়। যেন নিজেই নেমেছে জলে। সে বছর বেজায় মুখ ভার মন কষাকষি। বাবার অনুমতি আদায় সব হল। লাল টুকটুকে এক নতুন গামছাও এসে গেল, মিনির স্নান বলে কথা! মা হাতে একখানা মগ দিয়েছে।...শোন, ডুবতে গেলে দম বন্ধ লাগবে, এ মগটা দিয়ে জল নিয়ে পারে দাঁড়িয়েই স্নান করে নিস। মিনি অনিচ্ছা ভরেই মগখানা সঙ্গে আনে। ছুটতে ছুটতে সব্বাই পাহাড় পাহাড় বাঁধটায় উঠছে, ওদিকে গাড়ায় নামছে তরতরিয়ে। বড়রাও কয়েকজন তেলের শিশি সঙ্গে এনে ডলে নিচ্ছে গা হাত পা। মিনিকে মা তো সব মাখায়েই দিয়েছে তেল টেল। রতু মিলু,ঘনা,ওদিকে মোড়ের মাথার বাড়ীটার সীমা, মান্তু সবাই এসেছে...জলে ঝাঁপ দিচ্ছে, মাথা ডুবিয়ে দিচ্ছে। অন‍্যদিক দিয়ে মাথা ভেসে উঠছে আবার। মিনি জানে, এটাকে ডুব সাঁতার বলে। ও অনেকক্ষণ পাড়েই দাঁড়িয়ে থাকে। টিপি টিপি পাথরে পা রেখে জলে নামে। পাড়ের কাছাকাছি। মিলু একটু দামাল আর পিছনে লেগে পড়াও বড়।...আরে আয়না এদিকে, জলে কি মরে যাবি নাকি!! সবাই ঝাঁপাচ্ছে দেখছিসনা? মিনির ভয় করে, ঢিব ঢিব করে বুখ। ঘনা, রতু ওরা সাঁতার দিচ্ছে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে। চোখের নিমেষে মিলু মিনিকে হ‍্যাঁচকা টান দিয়ে জলে নামায়। হাকু পাকু করে জল খায় মিনি। প্রাণ যেন বেরিয়ে যাবে। এত ভয়। তোর্সা কি দূর থেকেই এত সুন্দর! কাছে এসে বন্ধু হবেনা ওর। ততক্ষণে মিলু ওর ঘাড় ধরে মাথা ডুবিয়ে ধরে রেখেছে জলে। দম বন্ধ হয়ে আসছে মিনির। এটা কি মিলু ইচ্ছে করে করছে, একি! জলের নীচে সব অন্ধকার। ওতে উঠতে পারছেনা, মুহূর্তে সব কেমন হয়ে যায়...
যখন পাড়ে ওকে তুলে চোখ খোলানোর চেষ্টা হচ্ছে তখন দেখে ঘনারাম। আর ওকে ঘিরে জটলা। মিলুকে দাবড়ানি দিচ্ছে বড়রা। ঘনারাম সময়ে সাঁতরে এসে মিলুর হাত থেকে ওকে না ছাড়ালে মিনির জল খেয়েই দম বন্ধ হয়ে অক্কা পেতে হত। যাক, সবাই মিলে মিলুকে বহু তিরষ্কার করল। আর বাড়ি গিয়েও কিচ্ছুটি বলা যাবেনা বলে ঠিক হল। মিনিও যেন বাড়ি ফিরে মা বাবাকে না বলে। পুনুকেও শেখানো হল। সে'ত পাড়ে দাঁড়িয়ে মগ দিয়ে স্নান সেরেছে। মাথা ডোবাতেও চেষ্টা করেছে, নিমুকাকা সরিয়েছে ওকে। মিনির খুব কান্না পায়। ঘনা ছাড়া আর কেউ বন্ধু নয়। বুঝে গেছে ও। আশপাশে ওচারী, তিত্তিরী, নমিতারাও ভীড় করেছে। মিনিকে শুকনো জামা পরিয়ে মাথা মুছে দিয়েছে তিত্তিরী। ঘনা হাত ধরে বোল্ডারে পা রেখে পরিষ্কার জায়গা বেছে বেছে মিনিকে পৌঁছে দিতে যাচ্ছে বাড়িতে। পিছন পিছন অনেকেই যারা স্নান সারতে এসেছিল সকলে চলছে, কেউবা স্নান করেই চলেছে এখনো। মিলুও এক ছুট্টে বাড়ি চলে গেছে। একটা অন‍্যায় যে করেছে নিজে বেশ বুঝেছে। ওর মার কানে দিলেওতো কিল চড় আরো কি জুটবে কে জানে! তবে ঐ মিনিটার জন‍্য  মা ও মিলুকে তুলনা দিয়ে দিয়ে বকা ঝকা করা, পড়ার কথা বলা...এসব লেগেই থাকে। ঐজন‍্য ইতো মিনির ব‍্যর্থতায় ওর আনন্দ হয়।...এখন ভয় করে। ছুটে ঘরে যায় জামা বদলে নিতে। মিনি শান্ত মেয়ে। ঘনার হাত ধরে এই ভেজা চোখে ভেজা মাথায় রোদ লাগাতে লাগাতে খেজুর গাছের সবুজ দেখে। বাঁধের ধারের মধু ফুলের গাছে কত সাদা ফুল, সবার বোঁটায় মধু আছে। ওরা খেলার ফাঁকে সে মধু মুখে টানে। ক'দিন পরই ভাঁট ফুলের সৌন্দর্যে মন ভরবে। সঙ্গে ফাঁকে ফাঁকে ধুতুরার সন্ধান।....
বাড়ির পুলে দাঁড়িয়ে মার ঢেলে দেওয়া জলে পায়ের বালি ধুয়ে নেয় মিনি। মাকে বলতে পারেনা আজ মিলু কি করতে চেয়েছিল। আতঙ্কে আর ভরসায় মাকে জড়িয়ে ধরে।....শখ মিটেছে তো? চল... মাংস দিয়ে ভাত খাবে। বাবা বসে আছে তোমার জন‍্য। মন ভাল হয়ে যায় মুহূর্তে।
ঘনারাম পুল পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েই দৌড় দিয়েছে। ভেজা শরীরে ও আবার পৌঁছবে নদীর কাছে ছনের ঘরে।ওদের ঠান্ডা লাগেনা, ভেজা থাকলেওনা। রোদে চলতে ফিরতে সকলেরই ভেজা জামা,কাপড় শুকিয়ে উঠেছে শরীরেই।...
 রবিবারের দুপুর। চার উঠোনের দুটো পাকা বারান্দায় সবাই আসন পিঁড়ি পেতে খেতে বসে। ঘরে বাজতে থাকে বড় ফিলিপ্ সের রেডিও।...অনুরোধের আসর। বাংলা আধুনিক গান। আহা! মন এক লহমায় খুশিতে ভরে। মার মাখিয়ে রাখা মাংস ভাতে মন দেয় মিনি। পুনুকে তখন কাকিমা খাইয়ে দিচ্ছে। সরলা, ওচারী ভাত নিয়ে চলে গেছে বাড়ির দিকে। স্নান সেরে ভাত খাবে। উঠোন লেপে পুঁছে ঝক ঝক করবে। আর ঠিক তখন ই...হেমন্ত,শ্রাবন্তীর গাওয়া 'আয় খুকু আয়...'গানটা বেজে উঠবে। মিনি আবার উদাস হবে। বাবার কাছ ঘেঁষে চটপট খেয়ে নেবে ভাত কটা। আর ভাবতে বসবে আমিও কি থাকবনা বাবার কাছে... বাবা কি এভাবেই ডাকবে আমাকে....
তোর্সার পাড় ঐ বাঁধ ছেড়ে যাবে কোথায় মিনি! এই পুনু, ঠাকুমা কাকু, ঐ বন্ধুদের ছেড়ে না, হারিয়ে যাবেনা ও।...বিছানায় বাবার পাশে শুয়ে'ঝুমঝুমি'র গল্প শোনে ও। তোর্সা হো হো হেসে ওঠে স্রোতের মতো।উদ্দাম ছোটে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri