সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
30-June,2023 - Friday ✍️ By- শুক্লা রায় 492

টুপটাপ উত্তর-৩/শুক্লা রায়

হরলিক্স
শুক্লা রায়

বুড়িটাকে অনেকক্ষণ থেকে ভোঁতা মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিক দেখছে। কোনো গ্রাম থেকে এসেছে। এসে দোকানটার সামনের রাস্তাটায় দাঁড়িয়ে। মলিন একটা শাড়ি পরনে, ততোধিক মলিন ভীতু ভীতু চেহারা। পা দুটো কোনোমতে দুটো ছেঁড়া স্যান্ডেলের উপর ভরসা করে দাঁড়িয়ে আছে। ধুলিধুসরিত ফাটা ফাটা পায়ের ফাঁকে ফাঁকে ধুলো। বয়স যে খুব থুত্থুরে, তা কিন্তু নয়। আসলে অভাব আর অপুষ্টি এবং অত্যধিক পরিশ্রমেই সম্ভবত একটু বেশিই বুড়ো বুড়ো লাগছে। দোকানে ওঠার সিঁড়িটার দিকে একবার এগোয়, পরক্ষণেই পা-টা নামিয়ে আনে। সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। একবার আমার চোখে চোখ পড়ল, কিন্তু সাহস করে আমাকেও কিছু জিজ্ঞেস করতে পারল না। জিজ্ঞেস করবে কী! আমার চেহারাতেও শহুরে বাবুয়ানার ছাপ স্পষ্ট। এই সব চেহারা মানুষকে কাছে টানে না, আরো দূরে ঠেলে দেয়।
অবশেষে  দোকানের একজন কর্মচারী বুড়িটাকে ডেকে বেশ একটা কম্যান্ডিং গলায় জানতে চাইল, 'কি চাই?'
বুড়ি থতমত। কিছুটা জড়সড়। কোনোমতে যেন শক্তি সঞ্চয় করে ঠোঁটদুটো ফাঁক করল। কিছুই না, জাস্ট একটা হরলিক্সের দাম জানতে চাইল। কর্মচারি হেঁকে যান্ত্রিক ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল, কৌটা না প্যাকেট? বুড়ির মুখ দেখে বোঝা গেল প্রশ্নটার মানে বুঝতে পারেনি। মালিকের ইশারায় কর্মচারিটি একটা প্যাকেট আর একটা কৌটো এনে দেখাল, কোনটা নেবে? তারপর উত্তরের অপেক্ষা না করেই মুখস্ত বিদ্যার মতো বলে গেল, প্যাকেট নিলে দাম কম, কৌটো নিলে দাম বেশি। কৌটার দামসহ দিতে হবে। প্যাকেট নাও, প্যাকেট। দাম কিছুটা কম পড়বে। দোকান যেহেতু বেশ বড়সড়, কাস্টমারের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। কেনাকাটি করতে এসে ফ্রিতে কিছুটা মজা পাচ্ছি আমরা। তাই অনেকেই  নিজের খর্চা-পাতি নেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে বুড়ির দিকে তাকিয়ে আছি। কিছুটা কৌতুহল আর কিছুটা যেন তাকিয়ে থেকে বুড়িকেই কৃতার্থ করছি। দাম শুনে বুড়িটা একটু ইতস্তত করে তার হাতের ঝোলাটায় হাত ঢোকাল। সেখান থেকে একটা নোংরা, কালচে জীর্ণ রুমাল বের হল। রুমালটা এতই কালচে হয়ে গেছে যে এর আসল রঙ বোঝার বিন্দুমাত্র উপায় নেই। অজান্তেই নাকের মাথাটা আমাদের কুঞ্চিত হয়ে উঠল। তবু চোখ সরালাম না। একপাশে পোঁটলা করে কিছু টাকা-পয়সা গিঁট দিয়ে রাখা। আরেকটা দিক খোলা। খোলা দিকটা দিয়ে একটু মুখটা মুছে নিল। ওই কালো রুমালে! এ মা! তারপর গিঁট খুলে পয়সাগুলো গুণতে শুরু করল। পাঁচ টাকার কয়েনসহ দশটাকা, বিশটাকার দলা পাকানো, দোমড়ানো মোচড়ানো খুচরো নোট। সব মিলিয়ে একটা হরলিক্সের দাম। বোঝাই যাচ্ছে, বুড়ি দামটা জেনেই এসেছে। টাকাটা দোকানদারের হাতে দিতে দিতে কতকটা অসহায় গলায় জানতে চাইল, হাঁ বাবা, হরলিক্স খেলে কী মাথার বুদ্ধি হয়? নাতিটার জন্য নিচ্ছি। বুদ্ধি এমনি আছে। তাও খেলে যদি আর একটু বাড়ে! পড়াশুনায় খুব মাথা। হরলিক্স খেলে নাকি রেজাল্ট ভালো হয়? বলে একবার দোকানির দিকে পরক্ষণেই আমাদের মুখের দিকে তাকাল। বোঝা গেল কষ্টে জমানো টাকাটা দোকানে দিতে দিতে আসলে হয়ত আমাদের বলার উপর কিছুটা ভরসা করতে চাইছে। সকলেই এবার সচেতন হয়ে উঠল।কেউ কেনাকাটায় ব্যস্ত, কেউ খরচের লিস্ট বের করে চোখ বুলানোয় মন দিল। আমরা শহুরে শিক্ষিত মানুষ। এই প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর কী সত্যিই আমাদের জানা? 
আমারও কেনাকাটি হয়ে গেছে অনেকক্ষণ। ব্যস্ত হয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে টোটো ডাকলাম।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri